somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বইপাগল মানুষদের নতুন ঠিকানা : শুক্রবারের ‘বইয়ের হাট’

১৬ ই মে, ২০১০ বিকাল ৪:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নানা পেশায় সৃজনশীল মানুষ কিংবা যারা একটা বিষয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিচরণ করতে চায় বা জানতে চায় তাদের বই বিনা গতি নাই। আর এই নানান ধরণের বই ছাপানোর স্বপ্ন নিয়ে গড়ে ওঠে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। প্রকাশনা, বাংলাদেশে না ব্যবসায় হিসাবে দাঁড়াতে পারল, না তৈরী হল সৃজনশীল বইয়ের কোনো সুস্থ বিপণন ব্যবস্থা। প্রকাশনা বাংলাদেশে বেশ বয়স্ক ব্যবসায় হলেও এ ব্যবসায় তেমন কোনো পরিপূর্ণ রোডম্যাপ নাই বললেই চলে। সম্ভাবনার অনেক ক্ষেত্র থাকা স্বত্বেও দেশীয় প্রকাশকদের মধ্যে তেমন স্বপ্নালু মানুষ না থাকার কারণে এই ব্যবসাটা বলতে গেলে একটা আবদ্ধ ঘরে বন্দি। ভাগ্য ভাল চিত্তরঞ্জন সাহা মহাশয় বাংলা একাডেমীতে বই নিয়া বসছিলেন। যার ক্রেডিট আজকে বাংলা একাডেমীর ঝোলায় ভরার চেষ্ঠা করা হচ্ছে। মূলত এই মেলার নাম হওয়া উচিত ছিল ‘চিত্তরঞ্জন সাহা বইমেলা’। তা না হলে এই ব্যবসাটা আজকে ‘নাই’ হয়ে যেত।
কেননা সবার একটাই লক্ষ্য বাংলা একাডেমী বইমেলা। যেন বাংলাদেশে শুধু বই ছাপা হয় বইমেলায় বিক্রি করার জন্য। অথচ সারাবছর সারাদেশে সার্বক্ষণিক বইমেলা করার উদ্যোগ নেয়াটা কত জরুরি ছিল। ব্যাক্তিগতভাবে যেমন প্রকাশকরা এটা করতে পারতেন তেমনি করতে পারতেন সরকার। যেহেতু বাংলাদেশে কোনো শিক্ষিত বইপত্র পড়া সরকার ইতোমধ্যে আসেনি সেহেতু তাদেরকে দোষ দেয়া যায় কিনা ভাবার বিষয়। পুরাতন প্রকশনা প্রতিষ্ঠানগুলো নির্দিষ্ট কয়েক জায়গায় বই বিক্রি করে তৃপ্ত। কারণ তাদের অন্য ব্যবসা আছে।

আবার সরকারি ভাবে গণগ্রন্থাগারের জন্য বই কেনার নিয়ম থাকলেও সেখানে দেখা যায় দূর্ণীতি। আমলা অথবা রাজনীতিকদের অপাঠ্য বইগুলোই লাইব্রেরীতে বিক্রি হয়ে চলে যায়। অন্যদিকে অনেক তরুণ লেখক ও প্রকাশক এই ব্যবসায় নেমে ইতোমধ্যে হতাশায় স্তদ্ধ হয়ে আছে। কারণ তাদের তৈরী করা বা ছাপানো বই বিক্রি করবার সুনির্দিষ্ঠ কোনো ব্যবস্থা এই ব্যবসায় নাই। কিন্তু এমন হবার কথা ছিল না। স্বাধীনতা উত্তর একটা দেশে, যে দেশের মানুষরা আবার ভাবুক শ্রেণীর, প্রকাশনা ব্যবসাটা দাঁড়াতেই পারলোনা এখনও! কিন্তু সরকার সহ বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্যোগে দেশব্যাপী একটা বিপণন ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারতো। স্কুলে, কলেজে, জেলায়-জেলায়, বা উপজেলা অথবা মহল্লায়-পাড়া পর্র্যায়ে বিভিন্ন মেলার আয়োজন করে অথবা একটা নতুন ছবি রিলিজ হলে অথবা একটা গানের ক্যাসেট রিলিজ হলে যে ধরণের দৃষ্ঠিরোচক বিজ্ঞাপন দেয়া হয় একটা বই বের হলে একই ধরণের বিজ্ঞাপন দেয়ার মাধ্যমে পণ্যটাকে আকর্ষণীয় করে তোলার কোনো উদ্যোগ নেয়া যেত। কিন্তু এই উদ্যোগ সরকার অথবা প্রকাশক সমিতি কারো দিক থেকেই নেয়া হয় নি। ফলে এখন এমন একটা জট তৈরী হয়েছে যে প্রকাশকরা ঢাকায় বসে যতটা বই বিক্রি করতে পারছেন তা তে তাদের দোকান ভাড়া বইয়ের খরচ উঠে আসে কিনা সন্দেহ। ওদিকে জেলা পর্যায়ের পাঠকরা অভিযোগ করছে তারা বই পায় না। তাই শোনা যায়, অনেক তরুণ প্রকাশকরাও জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন দূর্ণীতিতে। যেমন লেখকের টাকা দিয়ে বই ছেপে সেটা লেখককেই বিক্রি করার মত ভয়াবহ অপরাধে মেতে উঠছে একশ্রেণীর তরুণ প্রকাশক।
যাইহোক এটা যখন হলোনা ব্যবস্থাটা একেবারে নিজের নিজের ধরণে গড়ে তুলতে হবে সন্দেহ নাই।

ঢাকাতে শাহবাগস্থ আজিজ মার্কেট একটি বইয়ের মার্কেট হিসাবে বেশ পরিচিতি পেয়েছিল। বইপ্রেমীদের একমাত্র ঠিকানা ছিল সেটা। সম্ভবত টি শার্টের ব্যবসার কল্যাণে সেটা হারাতে বসেছে বইয়ের ব্যবসায়ীরা। আজিজ মার্কেটে বইয়ের দোকানগুলো ক্রমে ফ্যাশানেবল টিশার্টের দোকানে পরিণত হওয়া শুরু হয়েছে।


আজিজ মার্কেট কেন্দ্রিক একটা বই ব্যবসায়ী গ্রুপ প্রচেষ্টা করছে নীলক্ষেতের কাটাবনস্থ কনকর্ড এম্পোরিয়াম শপিং সেন্টারের বেজমেন্টটাকে বইয়ের নতুন ঠিকানা হিসাবে পরিচিত করতে। নি:সন্দেহে এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এরই প্রক্রিয়া হিসাবে কনকর্ড এম্পোরিয়ামের সামনের বিশাল উঠোন জুড়ে শুরু হয়েছে প্রতি শুক্রবারে ‘বইয়ের হাট’। ব্যাপারটা এ দেশের জন্য অভিনব ও প্রশংসণীয় । গ্রামীণ হাটবাজারের আদলে টুকলিতে বই সাজিয়ে বসে পড়েছে সব প্রকাশক বা দোকানদাররা। এই উদ্যোগের একজন উদ্যোক্তা পড়–য়া প্রকাশনীর সত্তাধিকারী কবির আহমদ। তিনি বলেন বেচাকেনা প্রধান উদ্দেশ্য নয়, প্রচারটাই আসলে লক্ষ্য, লোকজন জানুক যে এখানেই এখন বইয়ের নতুন ঠিকানা। হয়তো জমে উঠতে আরো সময় লাগবে।
তাদের এই প্রক্রিয়াকে সাধুবাদ জানাই। সম্প্রতি এটার উদ্বোধন করলেন আরেক বই পাগল মানুষ পলান সরকার। প্রতি শুক্রবারে বিকাল ৩টা থেকে ৯/১০ পর্যন্ত এই হাট চলতে থাকে। উদ্যেক্তারা জানান মানুষের আসাযাওয়া বা বইকেনাও মোটামুটি সন্তোষজনক। গত শুক্রবারে মেলায় গিয়ে দেখা যায় তরুণরা যেমন এসেছে, এসেছে বাচ্চাদের হাত ধরে বয়স্করাও। মহিলাদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মত। অনেক লেখক, কবিদেরকেও চোখে পড়ল। আবার বইয়ের হাটের পক্ষ থেকে বাতাসা চকলেট ও বিভিন্ন ধরণের মিষ্টান্নও ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে ক্রেতাদের। মিষ্টি যোগ করতে করতে বই হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখা, ভাল লাগলে একটা দুইটা কিনে ফেলা সত্যই ব্যাপারটা আনন্দদায়ক।
বইয়ের হাটের আয়োজকদের মত আমরাও বাসনা করি একদিন চিত্তরঞ্জনদার মত এই জায়গা থেকেই শুরু হবে নিত্যবইমেলার।
এবং পাঠকদের প্রতিও অনুরোধ শুক্রবারে বিকালে যেন ঘুরতে ঘুরতে একবার দেখে আসেন সত্যিকার অর্থে ‘বইয়ের হাট’ দেখতে কেমন। যেহেতু এটা কোনো গতানুগতিক পণ্যের হাট নয়। বইয়ের হাট।
১০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×