somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর আগে যা ভাবতে হবে

১১ ই মে, ২০১১ সকাল ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

‘সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠানো নিয়ে উদ্বেগ’ সংবাদটি ৬.৫.২০১১ তারিখের প্রথম আলোয় পড়ি। সংবাদে বিষয়ের বিস্তারিত আলোচনা আছে। সৌদি আরবে অন্যান্য দেশের নারী ভুক্তভোগীদের অভিজ্ঞতার আলোকে কয়েকটা মন্তব্যও আছে। কিন্তু সরকারের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী খন্দকার মোশারফ হোসেন প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ ও দুশ্চিন্তা না করতে বারণ করার পর দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে গেলো। তিনি কোন ধরনের প্রশিক্ষণ দিয়ে সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠালে সমস্যা হবে না বলছেন, বোধগম্য নয়।
বিভিন্ন ধরনের ভয়ে নারীদের ঘরে বেধে রাখার সময় আর নাই। নারীদেরও জনসম্পদ মনে করার সময় এখন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নারীরাও পুরুষের সঙ্গে তালমিলিয়ে সবধরনের পেশাতেই নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে আমাদের দেশের নারীরা কেন পিছিয়ে থাকবে। কিন্তু উদ্বেগের বিষয়টি হল দলে দলে তৃতীয় বিশ্বের গরিব দেশগুলো থেকে আধাশিক্ষিত, অশিক্ষিত যুবতী গৃহপরিচারিকা নেয় আরবের কয়েকটি দেশ। ইতিমধ্যে মালয়েশিয়া, ফিলিপিন, শ্রীলংকা এই দলে দলে যুবতী গৃহকর্মী পাঠানোর যথেষ্ট তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তারা মধ্যপ্রাচ্যে নারী রপ্তানি বন্ধ করেছে প্রায়।
যাইহোক উদ্বেগের বিষয়টা অন্য জায়গায়। জীন পি স্যাসন নামের দক্ষিণ আফ্রিকার এক ডাক্তার কিং ফয়সাল স্পেশালিস্ট হসপিটাল ও রিসার্স সেন্টারে কাজ করতে গিয়েছিলেন। তিনি প্রায় একযুগ সৌদি আরবে অবস্থান করেন। ইতিমধ্যে সৌদি রাজপরিবারের এক প্রিন্সেস সুলতানার সঙ্গে চিকিৎসাসূত্রে তার পরিচয় হয়। সুলতানা শিক্ষিত মহিলা। তার ভেতরে প্রচলিত সৌদি রীতিনীতি সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন দেখা দিলেও শেষ পর্যন্তু তিনি নিজে না লিখে বন্ধু জীন পি স্যাসনকে অনুরোধ করেন তার কথামালা নিয়ে একটা বই লিখতে। যেন সৌদি আরবের সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে বিশ্ববাসীকে অবহিত করা যায়। জীন পি স্যাসন তাতে সায় দেন।
সুলতানার কথামালা একটা বইতে সংকুলান না হয়ে তিনটা বইয়ে পরিণত হয়। এই ট্রিলজি ইতিমধ্যে বিশ্বের ব্যাপকসংখ্যক পাঠকের বুকশেলফে স্থান করে নিয়েছে। যথাক্রমে বই তিনটির নামÑ প্রিন্সেস, ডটার অব এরাবিয়া, ডেজার্ট রয়েল। এই বইগুলোর ভেতর মোটামুটি আরবের অভিজাত শ্রেণী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, আরবে নারীদের স্থান, নারী-পুরুষের সম্পর্ক, বিদেশি নারী শ্রমিকদের পরিস্থিতি ইত্যাদি এসেছে সাবলীলভাবে।
‘প্রিন্সেস’ নামের বইটায় ‘সৌদিয়ায় বিদেশি নারী’ নামের একটা অধ্যায় আছে। সেটাই আমাদের আলোচ্য বিষয়। সুলতানা প্রথম বিদেশি নারী গৃহকর্মীদের সম্পর্কে জানেন ফিলিপিনি যুবতী মারকির কাছে। কারণ মারকি সরাসরি সুলতানার গৃহপরিচারিকা। সৌদিয়ায় গৃহপরিচারিকাদের মধ্যে ১৫ থেকে ৩০ বছরের নারীদের কদর বেশি। আবার শুধু বয়স ঠিক থাকলেও হবে না। স্বাস্থ্য ভালো থাকতে হবে। যেসব নারীর স্বাস্থ্য ভালো তারা পুরুষদের ভাগে আর যাদের স্বাস্থ্য খারাপ তারা মেয়েদের ভাগে।
জীন পি স্যাসন লিখিত সুলতানার ভাষ্যমতেÑ ‘আরো কয়েক সপ্তাহ পর মারকির সাহস কিছু বাড়লে সে তার বান্ধবী মেডেলিনের কথা আমাকে বলল। মেডেলিন সম্পর্কে বলতে গিয়ে সে আমার দেশের নৈতিক মূল্যবোধ সম্পর্কে প্রশ্ন তুললো। তার মাধ্যমেই আমি প্রথম জানলাম তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলো থেকে আমার দেশ সৌদি আরবে যেসব মহিলা কাজ করতে আসে তাদের যৌনদাসী হিসাবে ব্যবহার করা হয়।’
শুধু পুরুষদের হাতে নয়, সৌদি নারীদের হাতে কীভাবে বিদেশি নারী পরিচারিকারা নির্যাতিত হয় তার একটা উদাহরণÑ ‘পাকিস্তান থেকে আগত এক কম বয়েসি পরিচারিকাকে সিঁড়িতে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ায় সে মাথায় গুরুতর আঘাত পায়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগÑ সে দ্রুত কাজ করে না। ময়লা চাদর ও তোয়ালে ধোয়ার জন্য নিচে নামতে গিয়ে অসাবধানতাবশত বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর গায়ে ধাক্কা লাগে। এতে তিনি রেগে গিয়ে মেয়েটার পেটে লাথি মারেন। সে সামলাতে না পেরে সিঁড়ি দিয়ে গড়িয়ে পড়ে যায়। বাবার স্ত্রী মেয়েটার কাছে গিয়ে আবার পেটে লাথি দেয় আর গোঙানি বন্ধ করতে বলে। মেয়েটা নিথর হয়ে গেলে বাবার স্ত্রী বলে, সে ভান করছে। মূলত মেয়েটা তখন আর বেঁচে নেই।’
আরেক মালয়েশিয়ান নারী গৃহপরিচারিকা মেডেলিন প্রথম কাজে যোগ দিয়ে ‘পরিবারের মায়ের মাধ্যমে শিগগিরই জানতে পারলো যে, তার উঠতি বয়সের দুই ছেলের যৌন তাড়না নিবারণের জন্যই তাকে আনা হয়েছে। তাকে বলা হলোÑ একদিন পরপর তার পুত্র রাসেল ও দ্বিতীয় পুত্র ফরিসের সঙ্গে শুতে হবে। কোনো আবেগ ছাড়াই মেডেলিনকে এ কথা বলার পর সে বিচলিত হয়ে পড়লো।’
মেডেলিন যেদিন কাজে যোগদান করে সেদিন গৃহকর্তা হজে মক্কা ছিলেন। কয়েকদিন পর ফিরে আসার প্রথম রাতেই তিনি মেডেলিনকে ধর্ষণ করেন। সে কাঁদছিল। ‘এ সবে সূচনা। কারণ তাকে তার পছন্দ হয়েছিল এবং তাকে ধর্ষণ করে যাচ্ছিল নিয়মিত।’
যাইহোক এই বলে এ অধ্যায়ের শেষ হয় ‘প্রাথমিক প্রচেষ্টাতেই আমার পক্ষে যা জানা সম্ভব হলো তা ছিল বহির্বিশ্ব থেকে আমার দেশে আগত মহিলাদের বিরুদ্ধে আমাদের পুরুষদের নির্মম, ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য পাপাচারের কাহিনী। কারণ, সৌদি মহিলারাও মনে করে তাদের পবিত্রতা রক্ষার জন্যই নারী গৃহকর্মীদের ব্যবস্থা করতে হয়। প্রাচ্যের মেয়েরা কার সঙ্গে বিছনায় গেল তা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। কেননা সৌদি মায়েদের চোখে তাদের পুত্রেরা বাদশাহ।’
বইটিতে সৌদি আরবে বিদেশি নারী শ্রমিকদের অনেক দুর্দশা লিপিবদ্ধ আছে। যদিও আমাদের দেশের নারীরা এর চেয়ে ভালো অবস্থানে নেই। চারদিকে এসিড নিক্ষেপ, অনবরত শিশু ও নারী হত্যা, ধর্ষণ, গণধর্ষণ, শিশু ধর্ষণ, ইভটিজিংয়ের নামে যৌন নিপীড়ন যেন এখন মামুলি ব্যাপার। তবু অন্তত সৌদি আরবে নারী গৃহকর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকারের এ বিষয়গুলো আমলে নেয়া দরকার বলে মনে হয়। কেননা, সৌদিতে যেসব গরিব দেশ দলে দলে নারী গৃহকর্মী পাঠিয়েছিল বিশ্বে তাদের মর্যাদা ইতিমধ্যে যথেষ্ট নিচের দিকে। হারানো মর্যাদা পুনরুদ্ধারের যুদ্ধে নেমে রেমিটেন্সের লোভে আরো গভীর কোনো খাদে পড়ছি কিনা তাও আমাদের ভেবে দেখতে হবে।


৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×