somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদেশে চাকুরির অফার পেয়েছেন?ঠকছেন নাতো?

২০ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কেইস স্টাডি ১ : রতন মার্কেটিং এ কাজ করে একটা বাংলাদেশি কোম্পানিতে। অনলাইন এ চাকুরি খুঁজতে গিয়ে UKতে নিশান মটর কোম্পানিতে এপ্লাই করে।কিছুদিন পর রিপ্লাই আসে যে তিনি সিলেক্ট হয়েছেন, সাথে অফার লেটার এটেস্ট করা আছে, তিনি যেন অতিসত্বর অফার লেটার সাইন করে স্ক্যান করে পাঠান। মেইলটা পাঠিয়েছেন কোম্পানির HR, উনার নামের নিচে কোন কন্টাক্ট নাম্বার বা এড্রেস নাই। লন্ডনে চাকুরি তাও আবার ৫ বছরের কন্টাক্ট, বেতন মাসে ১০ লক্ষ টাকার মত।তাছাড়া কোম্পানির পক্ষ থেকে থাকার ব্যবস্থা আছে। তাই রতন আর দেরি না করে অফার লেটার প্রিন্ট করে তাতে সাইন করে স্ক্যান করে পাঠালো।বিষয়টা সাপ্রাইস দেবার জন্য কাউকে জানালোনা।পরের দিন HR থেকে আরেক মেইল আসলো যেখানে একটা সলিসিটরস ফার্ম এর ঠিকানা দেয়া এবং রতন যেন তাদেরকে মেইল করে, ওরা রতনের ভিসার প্রসেস করবে। রতনের আর তর সইছে না। সে সাথে সাথে মেইল করলো সলিসিটরস ফার্মকে। রিপ্লাইতে তারা কিছু এটেচমেন্ট পাঠালো এবং বললো সরকারি ট্যাক্স পে করার জন্য ৯৫০ পাউন্ড পাঠাতে। এ টাকা সে লন্ডনে গিয়ে ফেরত পাবে।

কেইস স্টাডি ২ : অপু কাস্টমার সার্ভিস এ কাজ করে একটা বাংলাদেশি প্রাইভেট কম্পানিতে। দেশের লিডিং একটা জবসাইটে প্রতিদিন একটু ঢু মারা তার অভ্যাস। সাইটে বিদেশী জবস এ কাতারের একটা জব তার নজর কাড়লো। কাস্টমার সার্ভিস এক্সিকিউটিভ, সেলারি ১লক্ষ টাকা থাকা খাওয়া সব কম্পানির। নজর কাডা এই জবে অপু এপ্লাই করতে দেরি করলোনা। ২দিন পর মেইল আসলো, কম্পানি তাকে একসেপ্ট করেছে সে যেন তাদের বাংলাদেশী রিপ্রেজেনটেটিভের মিঃ সেলিমের সাথে যোগাযোগ করে। মোবাইল নাং দেয়া আছে মেইলে। মেইলের শেষে HR এর নাম দেয়া আছে শুধু। অপু দেরী না করে কল দেয় ঐ নাম্বারে। তিনি জানান দুদিনের মধ্যে সাটিফিকেট কাতার এম্বেসি থেকে এটেসটেট করে তাকে মেইল করতে। অপু তৎক্ষনাৎ কাতার এম্বেসিতে ফোন করে এ বিষয়ে, তারা জানান যে এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ ব্যাপারে সাহায্যের জন্য মিঃ সেলিমকে ফোন করে অপু। সেলিম সাহেব বললেন এটা কোন ব্যাপার না, এম্বেসিতে উনার লোক আছে, উনি একটা মেইল এড্রেস দিচ্ছেন অপু যেন তার সাটিফিকেটগুলো স্ক্যান করে ঐ মেইলে পাঠায়। অপু তৎক্ষনাৎ মেইল করলো। মেইলের রিপ্লাইতে একটা বিকাস নাং দেয়া আছে, ৩৮৫০টাকা পাঠাতে হবে, এক ঘন্টার মধ্যে টাকা না পাঠালে কাজ হবে না।

এইবার আসল কথায় আসি। কিভাবে নিশ্চিত হবেন আপনি ঠকছেন না।


জব এপ্লিকেশনঃ
১। জব এপ্লাই করার আগে কম্পানি সম্পকে নিশ্চত হয়ে নিন। তাদের ফিজিকাল এ্যড্রেস আছে কিনা, জব এ্যাডে যে এ্যাড্রেস দেয়া আছে তার সাথে কম্পানি এ্যড্রেস মিলে কিনা।
২।ভালো কম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব ফরমেটে এপ্লাই করতে বলে, শুধু সিভি এক্সেপ্ট করেনা। তাদের কোন রিপ্রেজেনটেটিভ বাংলাদেশে থাকলে তাদের ওয়েবে তা পাওয়া যাবে।
৩। বিদেশি কম্পানিগুলো এক্সপাট পছন্দ করে। বেশিরভাগ দেশ তাদের দেশের প্রয়োজন অনুযায়ী লোক আনে অন্য দেশ থেকে। ধরুন কাতারে টেকনিক্যাল লোকের চাহিদা বেশী কিন্তু দেশে সেরকম লোক কম তখন তারা অন্য দেশের লোকের ব্যাপারে আগ্রহী হয়। সুতরাং আপনি কি সেটা ভেবে এপ্লাই করুন।
৪। সেলারি বিষয়টা ভেবে দেখতে হবে। যদিও বেশীরভাগ কম্পানি নেগোশিয়েবল লিখে। যদি দেখেন কাজের তুলনায় সেলারি আকাশচুম্বী তখন বুঝবেন এটা ভূয়া। কেইস স্টাডি ১ লক্ষ্য করলে দেখবেন রতনকে তারা ১০লক্ষ টাকা মাসে সেলারী দেবে আরো সুযোগসুবিধা ছাড়া শুধু মাত্র মার্কেটিং পোষ্টে, যেখানে বাস্তবে ১০ ভাগের ১ ভাগও না।
৫। জব ডিটেইলস ভালোভাবে আছে কিনা দেখে নিন।আপনার অভিজ্ঞতার সাথে পুরোপুরি না মিললেও বেশিরভাগ মিলে কিনা দেখুন। ফ্রেশাররা জব বাছাইয়ে ০-১ বছর অভিজ্ঞতা চায় এমন জবে এপ্লাই করুন।

অফার লেটারঃ আপনি কোন জবে সিলেক্ট হলে কম্পানির HR/PRO আপনাকে মেইল করবে এবং ফোনে বা সম্ভব হলে ভিডিও চ্যাটের মাধ্যমে ইন্টারভিও নিতে চাইবে দুজনের সুবিধামত সময়ে। কোন কম্পানিই এমন কোন লোককে জব দেবেনা যার সম্পে তারা কিছু জানেনা। ইন্টারভিওতে তারা আপনার সব বিষয় বিবেচনা করে আপনাকে সেলারি কত চান সে বিষয়ে আলাপ করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে কম্পানি তার সেলারি স্কেল আপনাকে জানাবে। আপনি সিলেক্ট হয়েছেন কিনা সটা তৎক্ষনাৎ জানাতেও পারে না জানাতেও পারে।
(কেইস স্টাডি ১ ও ২ এর ক্ষেত্রে এর কিছুই হয়নি।)
আপনি যদি সিলেক্ট হন HR/PRO আপনাকে মেইল দিবে, সাথে অফার লেটার পাঠাবে, যেখানে আপনার সেলারি ও আদার বেনিফিট উল্লেখ থাকবে।অফার লেটারে কম্পানির লগো এবং প্রেরকের নাম ঠিকানা ফোন নাম্বার থাকবে, এটা অফিসিয়াল কালচার। ভূয়া মেইলে যেটা হয়না, নাম আর HR/PRO ছাড়া কিছু থাকেনা মেইলের শেষে। অনেক কম্পানি অফার লেটার পোষ্ট করে থাকতে পারে।

অন্যান্য প্রক্রিয়াঃ অফার লেটার পাওয়ার পর আপনি তাদের সাথে যোগাযোগ করবেন পরের করনীয় সম্পকে। মূলত ওরাই আপনাকে গাইড করবে। একটা কথা মনে রাখবেন কোন কম্পানিই আপনার কাছে টাকা চাইবেনা।ওদের প্রয়োজনে ওরা আপনাকে সিলেক্ট করেছে আপনি টাকা দেবেন কেন? উল্টে কম্পানি লোক আর পজিসন ভেদে বিমান ভাড়া দিয়ে দেয় প্রাথী জবে আসার জন্য।

কোথায় টাকা দেবেনঃ
যদি মেডিকেল চেকাপ ঐ দেশের আইন হয়ে থাকে বিদেশী এক্সপাটদের জন্য, তাহলে তারা আপনাকে নিদিষ্ট মেডিকেল/ ডায়াগোনষ্টিক সেন্টারের ঠিকানা দেবে। আপনি প্রয়োজনে ঐদেশের এম্বেসীতে ফোন করে মেডিকেল চেকাপের ব্যাপারে পরামশ নিতে পারেন। মেডিকেল করতে সামান্য কিছু টাকা আপনার খরচ হবে যেটা নিধারিত মেডিকেল/ডায়াগোনষ্টিক সেন্টারের ফি।

এছাড়া এম্বেসীতে ভিসা বাবদ একটা ফি দিতে হতে পারে। যে ব্যাপারেই টাকা দিবেননা কেন গ্রহীতা আপনাকে অবশ্যই রিসিট প্রদান করবেন। ফি সংক্রান্ত যে কোন বিষয়ে এম্বেসীতে যোগাযোগ করবেন, নয়তো মেইল করবেন।আর মনে রাখবেন কোন ভাল কম্পানি মানি এক্চেন্জের মাধ্যমে আপনাকে টাকা পাঠাতে বলবেনা।

সবশেষে গুগলমামাতো আছেনই, কোন বিষয়ে খটকা লাগলে তার সাহায্য নিন।


এইবার সব বিষয় বিবেচনা করে দেখুন আপনি ঠকছেন নাতো। যদি না ঠকে থাকেন তাহলে ভাসমানের পক্ষ থেকে কনগ্রেটস এন্ড বেষ্ট অব লাক।

ও হ্যা, রতন আর অপু দুজনই এসেছিলেন আমার কাছে কিভাবে টাকা পাঠাবেন জানতে। আমি সব দেখে তাদের বুঝিয়েছি এসব ঠকদের ব্যাপারে।

৭টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×