.
কমপক্ষে ৫০০০ বছরের চীন দেশীয় ইতিহাস বিশ্বের দলিলে লিপিবদ্ধ। চীন দেশীয় শিল্প, চারুকলা, জীবনধারা, জীবন ধারার রূপশৈলী অভিভূত করেছে পৃথিবী। বাণিজ্যনীতি নির্ধারণে চীনারা বহুযুগ আগে থেকেই ছিল বিশ্বখ্যাত। একটু একটু করে চীনারা ছড়িয়ে পড়েছে সারাবিশ্বে, বিশ্ব গ্রহণ করেছে চীন'কে। জীবন ধারণ, জীবনধারা, শিল্পকলার প্রকরণ বা ব্যাবসা শৈলী, যাই হোক না কেন বহু সভ্যতায় ছোঁয়া আছে এই চীনাদের। এই সভ্যতায় প্রবর্তিত হয়েছে অনেক ধর্ম -গ্রন্থ। সেই ধর্ম'ও চীনাদের সংস্কৃতি, সভ্যতা আর ব্যবসার সাথে পারি জমিয়েছে পৃথিবী আনাচে কানাচে। দুর্গম পাহাড়ে ঘেড়া সেই খন্ড খন্ড সভ্যতা খুঁজেছে পৃথিবীর অলি গলি, নিশ্চই আমাদের'ও কিছু শেখার ছিল চীন দেশে। দেড় হাজার বছর আগের ইসলাম ধর্মের ইতিহাসেও চীন সভ্যতার কথা শোনা যায়। 'বিদ্যা অর্জনের জন্যে সুদূর চীনে যাও'। অনেক জোড় দিয়ে বলা হয়েছে জ্ঞান বাড়ানোর কথা। কারণ; বহুমুখী জ্ঞান'ই কেবল পারে কোননা কোনো দৃষ্টিকোণ থেকে জীবনের যেকোনো সমস্যা সমাধান করতে।
চোখ যতদূর যেদিকে গেলো, এড়িয়ে গেলো না চীনাদের রং। আনন্দে হাসলাম, প্রেমে ভাসলাম, কিছুদূর বহুদূর চীন সভ্যতার হাত ধরে। তারপর, একদিন, আজ সকালে থমকে দাঁড়ালাম। ইসলামিক আলোচনা অনুষ্ঠানে জনৈক আলোচক পত্রপাঠ বলে ফেললেন 'না এমন কোনো সহি হাদিস ইসলামের ইতিহাসে নেই'। উপস্থাপক তবুও চাইলেন চীন সভ্যতা নিয়ে আলাপচারিতা চালাতে। কিন্তু আলোচকের প্রত্যাখ্যানে চীন দেশীয় সভ্যতার এই যাত্রা এখানেই মুখ থুবড়ে পরে গেলো। ইসলাম এগিয়ে চললো এক ঈমানদার কাণ্ডারির হাত ধরে আল্লাহ'র পথে, রাসূলের পথে! জীবনকে বড়'ও সংকীর্ণ করে দেয় এই পথ। সততার গলায় এখানে পরানো থাকে ভয়'এর শিকল। আল্লাহ আর রাসূলের প্রেম বা আদর্শ নয়, তাদের ভয়ে এদের জীবন। তাদের ভয়ে ত্যাদড় জীবন। আল্লাহ আর রাসূলের পথ ছাড়া অন্য কোনো পথে জান্নাতবাসী হওয়া যাবে না, ব্যাস; এই কথা শেষ কথা। ভয় যেখানে শেষ, সেখান থেকে হয় তীর্থঅব্দি রমরমা ব্যবসা। সভ্যতা এগিয়ে গেলেও পাপ-পুণ্যের মাপকাঠি রয়ে গেছে দেড় হাজার বছরে পুরানো। সেখানে তরল পদার্থের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ মাপার ভুল ব্যাখ্যাও বিশ্লেষণ করা হয় আত্মবিশ্বাসের সাথে।
দেড় হাজার বছর আগে বলা হয়েছে ভালো-মন্দের কথা; তাতে পছন্দ করে নিতে বাধা নেই। দেড় হাজার বছর আগে বলা হয়েছে পোশাকের কথা; তাতে রং আর সেলাই করে নিতে বাধা নেই। যে বৃক্ষ রোপন করা হয়েছে দেড় হাজার বছর আগে তার ডাল-পালা মেলতে বাধা নেই। মানেনি বাধা, ডাল-পালা মেলেছেও সে বহুদূর। শুধুমাত্র আমাদের চোখ বাধা ওই সব আলোচকের কালো অথবা আরবীয় নিচোল দিয়ে। কোনো সভ্যতার আলো দেখতে দেয় না আমাদের এইসব আলোচকেরা। নিজের মাতৃভাষার উপর যাদের জ্ঞান গ্রহণযোগ্য নয় তাদের কোন যোগ্যতায় বসিয়ে দেয়া হয় ক্যামেরার সামনে? পরিণামে টেলিভিশনের পর্দায় দেখা বা পত্রিকায় চাপানো যেকোনো কিছু পরিগ্রহনে ওস্তাদ এই জাতি শেখে আরেকটা ভুল ব্যাখ্যা।
ধর্ম নামের সেই গোল গোল রেখার ভিতরেই থাকতে হবে, এর বাইরে গেলেই ভয়। সেই ভয়কে জয় করা তোমার কাজ নয়। তোমার কাজ শুধু ধর্ম চর্চা করতে করতে ভয়ে ভয়ে মৃত্যুবরণ করা। না, জীবন মানে কিছুর ভয় নিয়ে বাঁচার নাম নয়। যা আপনাকে ভয় দেখাবে তা জীবনের বিধান নয়। হয় বুঝতে ভুল হচ্ছে বা লুসিফার আপনাকে ভুল বোঝাচ্ছে। বুঝতে হলে ভালোবাসতে হয়, ভালোবাসা দিয়ে বুঝতে হয়। প্রেম দিয়ে, প্রেম নিয়ে। সে বিবাহ হোক বা ব্যবসা, শিল্প হোক বা সংস্কৃতি, ধর্ম হোক বা জীবনধারার দর্শন।
2nd November, 2016.
Antwerp. Belgium.
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:০৮