somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বদনাম

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আজ একটু বদনাম করার ইচ্ছে জাগছে মনে। একটা সময় ছিল, কাজের বিরতিতে সিগারেট টানতে ইচ্ছা হলে সহকর্মীদের বলতাম 'চলেন একটু বারান্দায় গিয়ে কারো গিবত করে আসি'। বদনাম করার মত ছিল না কেও, থাকলেও আমাদের কারো সময় বা রুচি ছিলনা কারো দোষ নিয়ে ঘাটাঘাটি করার। অপূর্ব, অসাধারণ কিছু সহকর্মী পেয়েছি বিজ্ঞাপন জগতে কাজ করতে গিয়ে। তাদের সাথে বিজ্ঞাপনের ভিতরে থেকে বিজ্ঞাপনের বাইরে জেনেছি অনেক কিছু। তাই ১০ বছর আগে ছেড়ে আসা ৭ বছরের সহকর্মীরা আজও আমার ভাই বোন। বদনাম করার কোনো সুযোগ কেও আজও দেয়নি।

মামা, খালা, চাচা আর ফুপুদের সংসারে বড় হওয়া আরো ৩৮'টা ভাই-বোন। দুএকটা পাগল, দুএকটা খেয়ালী, দুএকটা একটু আধটু বদ আছে বৈকী, কিন্তু বদনাম করার মত বদ-নাম কারো নেই।

বন্ধু'ও জীবনে এসেছে সব এভাবেই। প্রথম দিন ইস্কুলে যাদের সাথে দেখা হয়েছিল আজও তারা তেমনি আছে। সেদিনের মত আজও নিঃস্বার্থ। কার বদনাম করব আজ?

পূর্ণতাপ্রাপ্ত আমার আশেপাশের কার বদনাম করব অধম আমি? বদনাম সব আমার, তবুও আজ আমদের বদনাম করব আমি।
কোরবানীকে ‘meat festival’ আর ‘মাং-show’ বলে, অনুভূতিহীন কিছু মানুষের ধর্মীয় অনুভুতিকে আঘাত করে বদনাম হয়েছি আমি। তাদের চারপাশের বহু মানুষ এখনো মাসে একবার গোস্ত খেতে পায় না। পূর্ণ বয়স্ক মানুষ ছাড়ুন, তাদের চারপাশের অনেক বাচ্চারা আজও আধা পেট না খেয়ে ঘুমাতে যায়। উনাদের পেট দিনকে দিন বাড়ছেই। ফিতা ছাড়া জুতা পরেন তারা। এই সংক্রান্ত কিঞ্চিত নোংরা পুরুষ কৌতুকটি এড়িয়ে যাচ্ছি।

আল্লাহকে ঈশ্বর, ঈশ্বরকে ভগবান আর ভগবানকে আল্লাহ বলে নাস্তিক হবার বদনাম আমার। সব ধর্ম গ্রন্থে সত্য খুজতে গিয়ে, 'পাগল' হওয়ার বদনাম আমার।

অল্প কিছুদিনের অসুস্থতা কাটিয়ে আবার নিয়মিত জীবনে ফিরে এলাম। কাজ, আড্ডা, খেলাধুলা আর যথারীতি সামাজিক অনুষ্ঠান। এক আফ্রিকান বন্ধুর বিয়ে। আফ্রিকান; শুনলেই নাকে আমাদের ভাজ দেখা দেয়, দু’চোখের ভুরু উচু-নিচু হয়। আমরা বাঙালি, হাজার বছরের পুরানো আমাদের সভ্যতা। ছেলে বিদেশ গিয়ে সাদা মেম বিয়ে করেছে তো পুরো পরিবার জাতে উঠে গেছে। ছেলে আফ্রিকান মেয়ে বিয়ে করলেই সর্বনাশ। যেন সব সভ্য মানুষের বাস পশ্চিমে, আর আফ্রিকানরা অচ্ছুত। কিছু আফ্রিকান কালো মানুষ যে অসভ্য নেই, আমি তা বলছি না। হাজার বাঙালিও'তো আজ হাজার বছর পরেও অসভ্য রয়ে গেছে। সাদা সাদা সাহেবরা কোট-টাই পরে আজও তেল চুরি করেই চলেছে, নইলে ৫ পয়সার ৫ সের লোহা গলিয়ে মারনাস্ত্র বানিয়ে হাজার হাজার ডলারে বিক্রি করছে ওই কালোদের আফ্রিকাতেই। আবার চুপি চুপি চলছে হীরার খনি খেকে হীরা চুরি, সেও আফ্রিকাতেই। তাই আজ; আমাদের বদনাম আমার মাথায়।
বিয়েবাড়ি; ছেলে, বুড়ো, বাচ্চা-কাচ্চা, প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ লোকের সমাগম। বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন আর কিছু সহকর্মী। মৃদুস্বরে কথা বলছে সবাই, বাচ্চাগুলো দৌড়াচ্ছে পুরো হল জুড়ে। ভিনদেশী এক ভাষায় ঘোষণা হলো, এক এক করে সবাই বসে গেল দুপাশে রাখা সারিবদ্ধ চেয়ারগুলোতে। একপাশে বরপক্ষ, অন্যপাশে কনেপক্ষ। মঞ্চে উঠে, বরের বাবা পরিচয় করিয়ে দিলেন তার পরিবারের সবাইকে, কনের বাবা দিলেন তার পরিবারকে। বিয়ে পরানো হলো সনাতনী প্রথায়। সারিবদ্ধ হয়ে একে একে সবাই বর-কনেকে অভিনন্দন জানালো, আর হাতে গুজে দিল ছোট একটা খাম। তারপর শুরু হলো নাচ, ঐতিহ্যবাহী আফ্রিকান বাদ্যযন্ত্রের সাথে নাচ, অসাধারণ। খানিক্ষণ নাচলাম। তারপর এলো খাবার পালা। হালকা খাবার, সাথে পানীয়। ব্যাস। সভ্যতা আর আফ্রিকাকে প্রতিনিধিত্ব করা সেই অনুষ্ঠানে শিখেছি অনেক কিছু, আর লজ্জিত হয়েছি বার বার। আর ফন্দি এটেছি বদনাম করার।
যাক, এবার ফেরার পালা। বর কনে'কে বিদায় দিয়ে ফিরছি। বর পিছু পিছু এলো, বললো 'তোমার নাকি অসুখ করেছিল?'
বললাম 'তেমন কিছু না রে'।
বলল 'দুঃখিত, বিয়ের ঝামেলার জন্য যেতে পারিনি। এটা তোমার অসুস্থতার উপহার', বলে একটা ২০ ইউরোর নোট ধরিয়ে দিল।
ভাবলাম ঠাট্টা করছে, মনে করতে চেষ্টা করলাম কোনদিন কি ঋণ নিয়েছিল নাকি ২০ ইউরো? মনে পড়ল না। বললাম 'বদমাইশ, ফাজলামি করছিস'?
বলল 'না, বিশ্বাস না হলে বাবাকে জিজ্ঞাসা কর।'
বাবা এগিয়ে এলেন, বললেন; 'আমরা বিশ্বাস করি সুখে-দুখে, আত্মীয় আর স্বজনের পাশে দাড়াতে হয়, তবেই ঈশ্বরের দেখা পাবে পরকালে। বিয়েতে অনেক খরচ হয় বলে আমরা উপহার সামগ্রী না কিনে হাতে খাম গুজে দেই। কেও অসুস্থ্য হলেও তাই করি।'
এক প্যাকাট সিগারেটের দাম ৫.৫০ ইউরো হলেও সেই ২০ ইউরোর মূল্যায়ন করা ছিল আমার সাধ্যের অতীত। অপূর্ব এই শিক্ষার কি মুল্য দিবো আমি? নিম্ন মধ্যবিত্ত অনেক আত্মীয় উপহার কেনার ভয়ে ধনী আত্মীয়'র অনুষ্ঠানে যোগ দেন না, বাংলাদেশে আজও। তার সাধ্যের যে কোনো উপহার তার অনেক আত্মীয়র কটাক্ষ এড়াতে পারবে না জেনে বিয়ের দিন বাহানা খোজেন তিনি। ৫০,০০০ টাকা দিয়ে ফোন কিনে কি হবে যদি আমার কোনো মেধাবী আত্মীয়'র অপরিশোধিত শিক্ষা ব্যায় খরচ হয় ওই ফোন? আজ আমার ৫০,০০০ টাকা দিয়ে ফোন কিনে কি হবে যদি আমার আশেপাশে কোনো একটি শিশু শিক্ষা বঞ্চিত হয়ে আমার জন্য বিপদ ডেকে আনে কাল?

Frankenstein তো আসলে আমি নিজেই, বদনাম তাই আমার, কাকে দোষ দিবো? দানশীল যিশু, মুহাম্মদ আর হাজী মহসিনদের কাহিনী রূপকথার গল্পের মত শোনাতেই ভালো লাগে আমাদের।

হায়রে হাজার বছরের সভ্যতা!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৫৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×