অতঃপর; তিনি উঠে দাঁড়ালেন, বললেন ... অরে ভাই, আপনি বসেন, বসেন বলছি তিনি কি বললেন।
হুজুরের সারাদিনের চুলকানি চরমে পৌঁছিল সান্ধ্য ভুঁড়িভোজনের পর। হুজুরের মন আর মস্তিষ্ক সারাদিন যাহার সাধনা করিল সেই নারী দেহ টেলিভিশনের সামনে বাংলা সিনেমার গানের অনুষ্ঠান 'ছায়াছন্দ' দেখিতে ব্যস্ত। অস্থির হুজুরের শত ডাকেও সারা দিলেন না হুজুরাইন। যেমন আমাদের হয় মাঝে মাঝে, যখন সব দোষ টেভিশনের ঘাড়ে চাপিয়ে পুরানো প্রেমিকার আফসোস নিয়ে ঘুমিয়ে পরি। যদিও পুরানো প্রেমিকা তখন অন্য কারো সংসারে সেই টেলিভিশনই দেখছে, একই অনুষ্ঠান। হুজুর ঘুমাতে পারেননা। অতঃপর; তিনি উঠে দাঁড়ালেন, বললেন 'টেলিভিশন হারাম'!
ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষা, ব্যাংকিং। পরীক্ষার হলে গিয়ে প্রশ্নপত্র হাতে নিয়ে সব ভুলে গেলাম। কোনো উত্তর মনে করতে পারলাম না। ১৫ মিনিটের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিলাম বেরিয়ে যাবো। কর্তব্যরত শিক্ষক বেরুতে দিলেন না, বললেন 'মনোযোগ দিয়ে তোমাদের শিক্ষকের শিক্ষাদান বক্তৃতাগুলো মনে করতে চেষ্টা করো, কিছু লিখতে চেষ্টা করো'। আরো ১৫-২০ মিনিট পর লিখতে শুরু করলাম। একের পর এক মনে পড়লো শিক্ষকদের ব্যাংকিং'এর বিভিন্ন বিষয়ের উপর আলোচনা। লিখলাম, যতক্ষণ না ঘন্টা বাজলো। আমাকে হতভম্ব করে ৬১% নাম্বার এলো একদিন। সেদিন বুঝলাম, আমার শেখার পদ্ধতি অন্য রকম। আমি পড়ে শিখি কম। আমি শুনে শিখি, দেখে শিখি আর বুঝতে চেয়ে ভেবে শিখি।
ন্যাশনাল জিওগ্রাফি বা ডিসকভারি ছাড়াও আরো শত শত চ্যানেল আছে যেখানে ক্যামেরা আর মাইক হাতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কিছু পাগল আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। তারাও আমার শিক্ষক। জ্ঞান বৃদ্ধি করতে আমাকে ঘর থেকে সুদূর চিনে যেতে হয়নি কোনোদিন। টেলিভিশনের বদৌলতে কিছু জ্ঞান আমার অর্জিত হয়েছে যার আলো অন্তত কিছু মানুষের মাঝে আমি ছড়াতে আজ সক্ষম। চাকু দিয়ে মানুষ খুন করে যদি চাকুর দোষ হয়, তবে বিবেচনার স্তর কত নীচে রয়ে গেলো আমার।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৩২