প্রবাসে পাড়ি দেয়া ভিন্ন জীবন ...
জীবন - ১/
রুবেল, বয়েস ২৮-৩০; সদাহাস্য পরিশ্রমী এক সুঠামদেহী। আমার সাথে কাজ করতো এক সুপারমার্কেটে। ব্যবসার পাশাপাশি আমার খেয়াল'ও রাখতো একটা বড় বোনের স্নেহে। বয়েসে আমার ১০/১২ বছরের ছোট ভাইয়ের মতো হলেও সত্যিই আমার প্রতি তার ছিল বড় বোনের স্নেহ-মমতা। রোজার দিনে কাজের মধ্যে ইফতারের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে যাবতীয় কাজে সহায়তা করে মন জয় করে নিলো। নিয়তি আমাকে নিয়ে গেলো অন্য পেশায়। সহকর্মী হয়ে গেলো প্রাক্তন সহকর্মী। তারপর বেশ কিছুদিন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। শুনলাম রুবেল ওখানেই কাজ করছে, দ্বায়িত্ব পালন করে চলেছে সংসারের। দেশে বোনের বিয়ে দিয়েছে।
তারপর একদিন; হাঁটছি ব্রুসেলসের রাস্তায় হাজার মানুষের ভিড়ে, ফোন এলো, ফাঁকা হয়ে গেলো পৃথিবী। রুবেলের লাশ পাওয়া গেছে দুইদিন পর, খালি বাসায় খাবার সাজিয়ে চলে গেলো। মৃত্যুর কারণ; হৃদয়ে বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ। রুবেলের মা বললেন লাশ দিয়ে কি করবো? যত জলদি সম্ভব যত, কাছে সম্ভব সমাহিত করে দিন।
জীবন - ২/
আমি মেয়েটির নাম জানিনা, শুধু তার জানাজায় উপস্থিত ছিলাম। নতুন বিয়ে হয়ে এসেছে বেলজিয়ামে। বয়স কত হবে; ২০ থেকে ২৫? মসজিদের ইমাম সাহেব বললেন, 'একটু অপেক্ষা করবেন সবাই, নামাজের পর জানাজা আছে'। তার লাশ পরে ছিল খালি বাসায়। দুইদিন পুলিশ অনুসন্ধান চালিয়েছে বাসায়; কোনো সন্দেহজনক কিছু পায়নি খুঁজে। মৃত্যুর কারণ; হৃদয়ে বা মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ।
লাশ দেশে পাঠাতে মেয়েটির স্বামীকে সবাই আর্থিক সহায়তা করলেন। স্বামী পুনরায় বিবাহ করে বেলজিয়াম ফিরে এলেন ৪০ দিনের আগেই।
আমি আজও জানিনা মেয়েটির সাথে তার ৮ মাসের গর্ভজাত সন্তানটিকে দেশে পাঠানো হয়েছিল কিনা। মুসলিম আইনে এমন মৃত্যুর সমাধি কি নিয়মে হয়? শেষ বিচারের দিনে কি এরা ঈশ্বরের সামনে দাঁড়ায় একসাথে? নাকি ঈশ্বরও এক ফোঁটা জল ফেলবেন?
জীবন - ৩/
নতুন এক প্রজন্ম। এদের কাজ-কর্ম, চাল-চলন, জীবনযাত্রা বা মানসিকতা; কোনো কিছুর সাথে আমার কোনো পরিচয় নেই। চেহারা বা পোশাক পরিচ্ছেদ, কোনো কিছু দেখে আন্দাজ করতে পারিনা এরা আমার বা আমার আশেপাশের কোন দেশের নাগরিক। তড়িৎ গতিতে ইউরোপের পাসপোর্ট প্রাপ্তির কারণে এরা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করে। দেশের রাজনৈতিক উন্নতি-অবনতি বা নিজের মান-সম্মানের সাথে কোনো সম্পর্ক না থাকাতে এদের দাবিও হয় ভিন্ন। এরা নিজেদের সমকামী বলে দাবি করে, সমকামিতা বাংলাদেশে মৌলবাদীদের দ্বারা বিপদ বয়ে আনে, তাই ইউরোপ রাজনৈতিক আশ্রয়। ছেলেদের সাথে ছেলেদের অন্তরঙ্গ ছবি আর ভিডিও দেখিয়ে মিলেও যায় আশ্রয়; তারপর শুরু হয় আবার এদের স্বাভাবিক জীবন। বিয়ে করে বা না করে এক বা একাধিক নারীর সাথে সন্তান উৎপাদন। সুখে থাকে এরা, নির্লজ্জের হাসি আর দম্ভের চলনে।
জীবন - ৪/
এক স্বামী বিয়ে করে এরা আসে বিদেশে।
আরেক স্বামীর হাত ধরে বিদেশের পাসপোর্ট।
আবার স্বামী বদলে বিদেশের ব্যবসা, বাড়ি, গাড়ি।
তারপর; অল্প বয়েসী ছেলে বন্ধুর হাত ধরে রঙিন জীবন।
এভাবেই চলতে থাকে এদের পঞ্চাশোর্ধ জীবন।
এদের নির্লজ্জতা আমাকে লজ্জিত করে।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ২:০২