হাসপাতালের বাথরুমের জানালা দিয়ে সূর্যের আলো। আয়নার সামনে আমাকে আধো আলোকিত করে, অর্ধেক থাকে অন্ধকারে। আমার মাথায় কবিতার ছন্দ উদ্বাহ নৃত্য করে। আমার কলুষিত স্মৃতি, যেখানে আলো পরেনা কোনোদিন, তাই কেও দেখতেও পায়না। আমার মনে পরে ফেলে আসা স্মৃতি, যে স্মৃতির সাথে আজও আমার অন্যায় সহবাস। নিজের অবয়বে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজেকে ভালোবেসে ঘৃণা করি আবার। ভাবি; স্বার্থপর এই আমি আমার নিজেরই একান্ত। আমার এই নশ্বর জীবন আর যৌবন আমার ভোগের সামগ্রী মাত্র। আমার ছেলের অক্সিজেনের নল খুলে গেছে, চিৎকার করছে, যাই। ছেলে শান্ত হয়ে ঘুমালে আবার এসে দাঁড়াবো আয়নার সামনে, নিজের চোখে তাকিয়ে সব স্বীকার করবো।
.
৭১'এর একজন মুক্তিসেনার কথা ভাবি; তার উদ্দীপনা আর অনুপ্রেরণার কথা ভাবি। সত্যি সত্যি মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ৭ কোটি মানুষের মুক্তি ছিনিয়ে এনেছিল। আমি হলে পারতাম?
.
ফটোগ্রাফির কাজে অনেক মানুষের মুখোমুখি হয়েছি, বেলজিয়ামের রাজা থেকে বাংলাদেশের রানীদের। আজ আমার কাজ বিদেশে বিভুঁইয়ে এক মসজিদে। তহবিল বৃদ্ধির জন্যে অবশেষে হারাম করা ছবির সহায়তা নিবেন কর্তৃপক্ষ।
'আপনাকে আপনার ন্যায্য পাওনা দিতে পারবোনা তবে কিছু হাদিয়া দিবো অবশ্যই'।
'জ্বি আচ্ছা, আমি চলে আসবো'।
আরবী ভাষায় চলছে অনুষ্ঠান। চা বিরতিতে এক ভদ্রলোক হেটে গেলেন ধূপদানি হাতে নিয়ে। জনৈক নব্য এক মুসলমান এসে বললেন 'কেমন লাগছে অনুষ্ঠান'।
'জ্বি, ভালো'।
'ধুপ দেয়াতে বাংলাদেশের কথা মনে পরে গেলো'।
'আমার মনে পরলো রাম-কৃষ্ণ মন্দিরের কথা'।
আমার বিনোদনের খোরাক জোগাতে 'আস্তাগফিরুল্লাহ' বলে শুরু করলেন তিনি; ইরাক-সিরিয়া, আফগানিস্তান, বার্মা হয়ে তিনি পৌঁছুবেন হলি-আর্টিসনে। ইতালিয়ান সেই অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভে একটু একটু করে জন্মের আগেই মরেছে যে সন্তান; তার জন্যেও কোনো সমবেদনা বা মানবতা রেখে কথা বললেন না তিনি।
'দেড় হাজার বছর আগের সব সত্য, তার আগে বা পরে সব মিথ্যা'?
সেই প্রশ্ন তিনি বুঝলেন কিনা জানিনা তবে আমার প্রশ্নের কোনো জবাব তিনি দিলেন না বা তার জানা নেই? শুধু বিচারের বাণী শোনালেন, নিশ্চিত করলেন আমার জাহান্নাম। দেশাক্তবোধ আর ধর্মীয় উদ্দীপনা আর অনুপ্রেরণার সবচেয়ে খারাপ উদাহরণ আমার সামনে দাঁড়িয়ে। আমি কিংকর্তব্যবিমূঢ়।
.
আবার দাঁড়ালাম আয়নার সামনে, নিজের চোখে তাকিয়ে আজ সব স্বীকার করবো। বিক্ষিপ্ত ব্যাক্তিত্বহীনতার ব্যাধি আমাকে নিয়ে যায় ১৯৭১ সালে, প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, কাওরাইদের উনিয়নের কোনো গ্রাম, আমার হাতে ক্যামেরা নয় একটা রাইফেল। আমি গুলি করে হত্যা করি আরো একজন মুক্তিসেনা। দেশ গড়ার মোহে যারা দেশের উত্তরাধিকারী করেছে ইয়াহিয়া সাহেবকে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:০৬