somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদ্য রজনী শেষ রজনী

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছেলে-মেয়েরা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে চলে যায় মাঝরাত্রির অনেক আগেই। ধর্ম-চর্চার দুর্বোধ্য আরাধনা শেষ করে কিছুক্ষন পর সহধর্মিনীও বলেন 'শুভ রাত্রি।' ব্যাস, সব চুপচাপ। ছেলে-মেয়েরা অনেক সকালে বিদ্যাপীঠে যাবার কালে শুরু করবে তান্ডব। তবুও, নিদ্রাহীনতার পর্দায় গভীর রাতের পরে ভেসে ওঠে যৌবনের ফেলে আসা স্বর্ণালী দিন আর ভুলে যাওয়া ভুলগুলো।
মনে পরে ২০০৪ সালের মার্চের দ্বিতীয় কোনো এক সপ্তাহের কথা। বিজ্ঞাপন উৎসব শেষ হলো সেদিন পাতায়া শহরে, কাল ফিরে যাবো ব্যাংকক। সেখান থেকে দুদিন পর আবার ঢাকা শহর। অদ্য রজনী শেষ রজনী, শেষ নৈশ-ভোজের সন্ধানে সাগর পারে এক ছোট্ট বাজারে। থাইল্যান্ড; এখানে আনন্দের মেলা বসে প্রতিরাত। বৈধতার সীমারেখায় সেই আনন্দ ফুর্তির কোনো বাঁধন নেই। শরীর আর পকেটের জোড়ে জীবনের সব আনন্দ লুটে নিচ্ছে সবাই। রঙিন কাগজে মোড়ানো জীবনের আনন্দ আর প্লাস্টিকে মোড়ানো যৌবনের আনন্দ। বাধনহীন জীবন। আমার মনের বন্ধন শুধু আমার স্ত্রী আর মস্তিষ্কের বন্ধন অসুস্থ দ্বিতীয় মেয়েটি। এক সপ্তাহ বয়সের অসুস্থ মেয়েটিকে ভুলতে পারছিলাম না। নৈশভোজ শেষে এদিক সেদিক ঘুরে দূর থেকে সাগর দেখতে দাঁড়ালাম। পাশে এসে দাঁড়ালো এক রমণী 'আমার নাম ডায়না।'
'ওহ, ভালো লাগলো তোমার সাথে পরিচিত হয়ে।'
'আমি এশহরেই থাকি, পর্যকদের সর্বপ্রকার সেবা প্রদান করা আমার পেশা। তুমি চাইলে আমার সাথে শহরটা ঘুরে দেখতে পারো।'
'যথাযথ সম্মান পূর্বক বলছি; আমি কাল সকালে চলে যাবো। আমার সে সময় হবে না।'
'তুমি চাইলে আমি তোমার সাথে হোটেলে সারারাত থাকতেও পারি।'
'যথাযথ সম্মান পূর্বক বলছি; আমি ঠিক আছি। আমাকে একটু একা থাকতে দেবে?'
'অবশ্যই! আমি যাচ্ছি, কিন্তু যাবার আগে তোমার মুখে একটা হাসি দেখে যেতে পারি। অমন মুখ শুধু রাতের প্যাঁচার থাকে।'
আমি যথাস্বভব আমার ঠোট প্রসারিত করে, দন্ত বিকশিত করে হাসলাম। বললাম 'ভালো থেকো ডায়না।'
'হাসলে তোমার চেহারা অতটা খারাপ লাগে না হে আগন্তুক। হাসিটা চেপে রাখো কেন ওভাবে?'
অনেক দ্বিধার জালে আবেগকে আটকে রাখতে পারলাম না, বললাম 'আমার মেয়েটা একটু অসুস্থ, আমার স্ত্রী ও'কে নিয়ে হাসপাতালে। বড় মেয়েটাকে নিয়ে বাসায় ওদের নানী।'
ডায়না আমার কাঁধে হাত রাখলো, কোনো সুন্দরী রমণীর হাত প্রথম শিহরিত করলোনা আমার যৌবনের বাসনাকে। বড়'ও পবিত্র ছিল সে স্পর্শ। বলে চললো 'আমার ছেলেটিও আজ অসুস্থ। আমার মা'র কাছে থাকে, এখন থেকে বেশ কিছু দূরে একটা গ্রামে। অনেক ইচ্ছা সত্বেও যেতে পারছিনা। আমার চেয়ে আমার টাকা তাদের আজ প্রয়োজন বেশি। বাবা ছেড়ে যাওয়া ছেলের মা'এর অভাব পূরণ হচ্ছে তার নানীকে দিয়ে। টাকার অভাব পূরণ করছি আমি আমার নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে।'
আরো অনেক কথা। ডায়নার চোখ ভিজে যাচ্ছে। একটু থেমে আবার বলে চললো 'অপবিত্র এই শহরে ঈশ্বর একজন কারো পবিত্র এক প্রার্থনার সন্ধান করছেন নিশ্চই, তাকে ডাকো। আমার কথাও বলো তাকে। আমি ঈশ্বরের সামনে দাড়াই না। অনেকদিন পরে যখন একদিন পবিত্র হবো সেদিন দাঁড়াবো। তোমার কথাও সেদিন স্বরণ করবো নিশ্চিত।'
'না ডায়না, এটা ঠিক নয়। ঈশ্বর সবার কথা'ই শোনে।'
'আমার নাম ডায়না নয়।'
'সে আমি জানি।'
তারপর আরো অনেক্ষন কথা হলো তার সাথে। আমার সহকর্মী বন্ধুরা অর্ধউলঙ্গ নৃত্য দেখে ফিরে আসছে। আমি বললাম 'আমাকে যেতে হবে।'
'ভালো থেকো আগন্তুক।'
'আমাকে দেয়া তোমার সময়ের জন্যে ধন্যবাদ। আমি কি তোমাকে এর জন্যে কিছু টাকা দিতে পারি ডায়না? ওহ, তোমার আসল নামটা জিজ্ঞাসা করা হয়নি!'
চোখ তুলে তাকালো সেই মহিয়সী নারী, অমন ঘৃণা আমার জন্য কোনো চোখে আমি দেখিনি।
'কথার শুরুতে বার বার বলছিলে, যথাযথ সম্মান পূর্বক; তুমি আসলে কোনো নারীকে এখনো সম্মান করতেই শেখোনি।'

মাথায় বজ্রপাত হয়ে নিস্তব্ধ হয়ে গেলো ভিতরটা; এ আমি কি করলাম?
তারপর অনেক ভেবেছি, সত্যিই কি শিখেছি নারীকে সম্মান করতে। ভিতর থেকে, ভিতর দিয়ে?আমি জেনে শুনে হাসি-ঠাট্টাও করিনা কোনো নারীকে নিয়ে। তবুও দু-একজন তো রয়েই যায় আমার ক্ষমা চাইবার দাবিদার। তাই, মাঝে মাঝে আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ মেলে ক্ষমা চাই। মানবের ভাষা বোঝেন না যে ঈশ্বর তিনি নিশ্চই অন্ধ'ও নন। অতদূর আকাশ থেকে মাঝরাত্রির পর আমার দু'খানি চোখ দেখা যায়?

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৭ সকাল ৯:৪২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×