somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বঙ্গভঙ্গ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে যে আন্দোলন হয়েছিল তাকেই বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন বলা হয়েছে।বঙ্গভঙ্গ বাংলার ইতিহাসে একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবরে সেসময়ের বৃটিশ ঔপনিবেশিক সরকারের বড়লাট লর্ড কার্জনের আদেশে বঙ্গভঙ্গ কার্যকর করা হয়েছিল। বাংলা বিভক্ত করে ফেলার ধারনাটি অবশ্য কার্জন থেকে শুরু হয়নি। ১৭৬৫ সালের পর থেকেই বিহার এবং উড়িষ্যা বাংলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলে সরকারী প্রশাসনিক এলাকা হিসেবে বাংলা অতিরিক্ত বড় হয়ে যায় এবং বৃটিশ সরকারের পক্ষে এটির সুষ্ঠু শাসনক্রিয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। বঙ্গভঙ্গের সূত্রপাত সেখান থেকেই।কিন্তু ১৯১১ সালে প্রচণ্ড গণআন্দোলনের ফলশ্রুতিতে বঙ্গভঙ্গ রহিত হয়েছিল। দ্বিতীয়বার বঙ্গভঙ্গ হয় ১৯৪৭ সালে। তার ফলে পূর্ববঙ্গ পাকিস্তানে এবং পশ্চিমবঙ্গ ভারতে যুক্ত হয়। এই পূর্ববঙ্গই পরবর্তীতে পাকিস্তানের কাছ থেকে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করেন।
বঙ্গ প্রদেশের আয়তন ছিল ১,৮৯,০০০ বর্গ মাইল এবং এর জনসংখ্যা ছিল ৭৮.৫ মিলিয়ন। বঙ্গের পূর্বাঞ্চল ভৌগোলিক এবং অপ্রতুল যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে পশ্চিমাঞ্চল হতে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। ১৮৩৬ সালে উত্তরাঞ্চলের প্রদেশগুলোকে বঙ্গ থেকে পৃথক করে একজন লেফটেন্যান্ট গভর্ণরের অধিনে ন্যস্ত করা হয় এবং ১৮৫৪ সালে বঙ্গের প্রশাসনিক দায়িত্ব হতে গভর্নর জেনারেল ইন কাউন্সিলকে অব্যাহতি দিয়ে একজন লেফটেন্যান্ট গভর্নরের উপর অর্পণ করা হয়। ১৮৭৪ সালে সিলেট সহ আসামকে বঙ্গ হতে বিচ্ছিন্ন করে চিফ কমিশনারশীপ গঠন করা হয় এবং ১৮৯৮ সালে লুসাই পাহাড়কে এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়।১৯০৩ সালে প্রথম বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাবসমূহ বিবেচনা করা হয়। তখন বঙ্গ হতে চট্টগ্রামকে বিচ্ছিন্ন করা এবং ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলাদ্বয়কে আসাম প্রদেশে অন্তর্ভুক্ত করার একটি প্রস্তাবও ছিল। তেমনিভাবে ছোট নাগপুরকে মধ্যপ্রদেশের সঙ্গে আত্তিকরণেরও একটি প্রস্তাব ছিল। ১৯০৪ সালের জানুয়ারিতে সরকারীভাবে সেই পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয় এবং ফেব্রুয়ারিতে লর্ড কার্জন বঙ্গের পূর্বাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে এক সরকারী সফরের মাধ্যমে এই বিভক্তির ব্যাপারে জনমত যাচাইয়ের চেষ্টা করেন। তিনি বিভিন্ন জেলার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহে এই বিভক্তির বিষয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বক্তৃতা দেন।


পার্বত্য ত্রিপুরা রাজ্য, চট্টগ্রাম, ঢাকা ও রাজশাহী দার্জিলিং বাদে বিভাগ এবং মালদা জেলা আসাম প্রদেশের সঙ্গে একীভূত হয়ে এই নতুন প্রদেশ গঠন করবে। তার ফলে বঙ্গ শুধু তার বৃহৎ পূর্বাঞ্চলই হারাবে না তাকে হিন্দীভাষী পাঁচটি রাজ্যও মধ্যপ্রদেশকে ছেড়ে দিতে হবে। অন্যদিকে পশ্চিমে সম্বলপুর এবং মধ্যপ্রদেশের পাঁচটি ওড়িয়া ভাষী রাজ্যের সামান্য অংশ বঙ্গকে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। ফলে বঙ্গের আয়তন দাঁড়ায় ১,৪১,৫৮০ বর্গ মাইল এবং জনসংখ্যা ৫৪ মিলিয়ন যার মধ্যে ৪২ মিলিয়ন হিন্দু এবং ৯ মিলিয়ন মুসলিম।

নতুন প্রদেশটির নামকরণ করা হয় পূর্ব বঙ্গ এবং আসাম যার রাজধানী হবে ঢাকা এবং অনুষঙ্গী সদর দফতর হবে চট্টগ্রাম। এর আয়তন হবে ১,০৬,৫৪০ বর্গ মাইল এবং জনসংখ্যা হবে ৩১ মিলিয়ন যাদের মধ্যে ১৮ মিলিয়ন মুসলিম ও ১২ মিলিয়ন হিন্দু। এর প্রশাসন একটি আইন পরিষদ ও দুই সদস্যবিশিষ্ট একটি রাজস্ব বোর্ড নিয়ে গঠিত হবে এবং কলকাতা হাইকোর্টের এখতিয়ার বজায় থাকবে। সরকার নির্দেশ দেয় যে পূর্ব বঙ্গ এবং আসামের পশ্চিম সীমানা স্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট থাকবে সাথেসাথে এর ভৌগোলিক, জাতিক, ভাষিক এবং সামাজিক বৈশিষ্টাবলিও নির্দিষ্ট থাকবে।

১৯০৪ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি লর্ড কার্জন পূর্ববঙ্গ থেকে অস্থায়ী ভারত সচিবকে লেখা এক পত্রে উল্লেখ করেছেন বাঙ্গালিরা নিজেদের এক মহাজাতি মনে করেন এবং এক বাঙ্গালি বাবুকে লাট সাহেবের গদীতে বসাতে চান বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব তাদের এই স্বপ্নের সফল রূপায়ণে বাঁধা দেবে। আমরা যদি তাদের আপত্তির কাছে নতিস্বীকার করি তবে ভবিষ্যতে কোনদিনই বাংলা ভাগ করতে পারব না এবং আপনারা ভারতের পূর্বপাশ্র্বে এমন এক শক্তিকে জোরদার করবেন যা এখনি প্রবল এবং ভবিষ্যতে বর্ধমান বিপদের উৎস হয়ে দাঁড়াবে।
কার্জন ইতিপূর্বে গৃহীত প্রস্তাবের সঙ্গে দার্জিলিং বাদে মালদাহসহ পুরো রাজশাহী বিভাগ এবং ঢাকা বিভাগের বাকি জেলাগুলো আসামের সঙ্গে জুড়ে দেয়ার পস্তাব করেন। সে প্রসঙ্গে বৃটিশ আমলা রিজলি মন্তব্য করেছেন সংযুক্ত বাংলা শক্তিশালী, বিভক্ত বাংলা বিভিন্ন দিকে আকৃষ্ট হবে। কংগ্রেস নেতারা সে ভয় করছেন। তাদের আশঙ্কা নির্ভুল এবং সেটাই সেই প্রস্তাবের সবচেয়ে বড় গুণ। আমাদের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য বৃটিশ রাজত্বের বিরোধী একটি সুসংহত দলকে টুকরো করে দুর্বল করে দেয়া। ঢাকায় লর্ড কার্জন এক ভাষণে ঘোষণা করেন মুসলিমদের হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের জন্য আলাদা প্রদেশ রচনাই তার লক্ষ্য। ছোটলাট এন্ড্রু ফ্রেজার ফরিদপুর এবং বাখরগঞ্জ জেলায় ইতিমধ্যে তৎপর চরমপন্থীদের নতুন প্রদেশে দমন সহজ হবে বলে মন্তব্য করেন। লর্ড কার্জন মূল প্রস্তাবটি লন্ডন পাঠান ১৯০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ব্রিটিশ সরকারের ভারত বিষয়ক মন্ত্রী সেন্ট জন ব্রড্রিখ জুনে এই প্রস্তাব সঞ্চালন করেন। সরকার তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে ১৯শে জুলাই ১৯০৫ সালে এবং বঙ্গভঙ্গ কার্যকর হয় সে একই বছরের ১৬ই অক্টোবর।


আন্দোলনের সূত্রপাত যে ভাবে ঘটেছিল
বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাব কার্যকর হবার আগেই ১৯০৫ সালের ৭ই জুলাই তারিখে সুরেন্দ্রনাথ তার দি বেঙ্গলী পত্রিকার সম্পাদকীয়তে আসন্ন ঘটনাকে বলেছিলেন একটি ভয়ঙ্কর জাতীয় দুর্যোগ এবং সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে সরকার যদি তার সিদ্ধান্ত না পাল্টায় তাহলে সামনে সর্বোচ্চ মাত্রার একটি জাতীয় প্রতিরোধ অপেক্ষমাণ রয়েছে। বাস্তবেই সেই ঘটনা এক প্রচণ্ড রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে। পূর্ব বঙ্গের মুসলিমদের এই ধারণা হয় যে নতুন প্রদেশের ফলে শিক্ষা কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের সুযোগ বেড়ে যাবে। যদিও পশ্চিম বঙ্গের জনগণ এই বিভক্তি মেনে নিতে পারল না এবং প্রচুর পরিমাণে জাতীয়তাবাদী লেখা সে সময় প্রকাশিত হয়। ১৯০৬ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গভঙ্গ রদ করার প্রস্তাবকদের জন্য এক মর্মস্পর্শী গান আমার সোনার বাংলা লেখেন যা অনেক পরে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতে পরিণত হয়।সেই আন্দোলনের প্রাথমিক পর্যায়ে বৃহৎ বঙ্গের অধিবাসী বাঙালি হিন্দু মুসলমানের চেতনার জগতে আলোড়ন সৃষ্টির জন্যই কবিগুরম্ন রবীন্দ্রনাথ অসংখ্য দেশাত্মবোধক সঙ্গীত রচনা সুরারোপ এবং চারণ কবিদের যত মিছিলে মিছিলে সেসব সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ১৯০৫ সালের ১৬ অক্টোবর তারিখ থেকে ব্রিটিশ সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ওই আইন কার্যকর হওয়ার কথা। সুতরাং ওই তারিখে রাজধানী কলকাতায় হরতাল আহ্বান করা হয়। সেদিন কোন বাড়িতে রান্নাবান্না হবে না। বাঙালি জনসাধারণ অরন্ধন পালন করে উপোষ থাকবে। বাঙালির ঐক্য বজায় রাখার জন্য দেশজুড়ে হবে রাখিবন্ধন উৎসব।

১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ ঘোষণা এবং তা কার্যকর করার পর বাংলায় সশস্ত্র আন্দোলন বিকাশ লাভ করে। ১৯০৬ সালে কংগ্রেসের পূর্ণ অধিবেশনে স্বরাজ শব্দ গৃহীত হয়। স্বরাজ বলতে কংগ্রেসের নরমপন্থীরা বুঝলো ঔপনিবেশিক স্বায়ত্ত্বশাসন চরমপন্থীরা বুঝলো স্বাধীনতা। এর থেকে উৎপত্তি হলো বিদেশী পণ্য বর্জন প্রসঙ্গ। চরমপন্থীরা চাইলো সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে সর্বাঙ্গীণ বয়কট।
ইতিহাসবিদ সুমিত সরকার দেখিয়েছেন স্বদেশী আন্দোলন তিনটি ধারায় প্রবাহিত হয়েছিল সে সময়। প্রথমধারাকে বলা হয় গঠনমূলক স্বদেশী। স্বদেশী সমাজ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথ এই ধরনের গঠনমূলক কাজের কথা বিশদ করেছিলেন। তার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আত্মশক্তির উদ্বোধন। দ্বিতীয়ধারা বয়কটকে প্রাধান্য দিয়েছিল। তৃতীয়ধারায় ছিল চরমপন্থীরা। তাদের কাছে স্বদেশী আন্দোলন এবং বয়কট গৌণ হয়ে যায়। মুখ্য হয়ে ওঠে স্বরাজ। এই নিয়ে কংগ্রেসে তুমুল বিতর্কও হয়। তারই মধ্যে স্বদেশী আন্দোলনের পক্ষে জনমত সংগঠনের জন্য জেলায় জেলায় সমিতি গড়ে ওঠে। গৃহীত নীতি কার্যকর করার জন্য তৈরি করা হয় জাতীয় স্বেচ্ছাসেবীদল। বরিশালে স্বদেশ বান্ধব ময়মনসিংহে সুহৃদ ও সাধনা ফরিদপুরে ব্রতী আর সবচেয়ে বিখ্যাত ঢাকার অনুশীলন সমিতি। জেলা সমিতির অধীনে অনেক শাখাও স্থাপিত হয়।কলকাতায় গড়ে ওঠে যুগান্তর নামে আরেক সংগঠন। সেই দলের নেতা অরবিন্দ ঘোষ। সহোদর বারীন ঘোষ তার সহযোগী। তারা অস্ত্র হিসেবে বোমা ব্যবহার চালু করেন।
চরমপন্থীদের ভূমিকা
চরম্পন্থীদের নেতা ছিলেন বালগঙ্গাধর তিলক এবং মূলত অরবিন্দ ঘোষ।অরবিন্দ ঘোষ ছিলেন বিলাত ফেরত। আইসিএস পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েও তিনি চাকুরিতে যোগ দেননি। অরবিন্দ চরমপন্থী রাজনীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন৷ তার চিন্তায় আপোসের কোনো জায়গা ছিল না৷ ১৯০৭ সালে অরবিন্দ বলেছেন প্রথমে এবং সবার আগে চাই রাজনৈতিক স্বাধীনতাকে লক্ষ্যবস্তু হিসাবে গ্রহণ করা তা না করে জাতির সামাজিক সংস্কার শিক্ষা সংস্কার শিল্পে প্রসার ও নৈতিক উন্নতির চেষ্টা করাটা চরম অজ্ঞতা এবং অর্থহীনতা ভিন্ন অন্যকিছু নয়৷ ইতিহাসবিদ অমলেশ ত্রিপাঠীর মতে প্রকাশ্যে কংগ্রেসের মাধ্যমে এবং গোপনে বিপ্লবীদের মাধ্যমে অরবিন্দ যুগপৎ আক্রমণ করতে চেয়েছিলেন। তার অনুসারীরা পুরোপুরি সন্ত্রাসবাদে ঝুঁকে পড়ে। ১৯০৭ সালে সুরাটে অনুষ্ঠিত কংগ্রেস সম্মেলনে লাঠালাঠি ও চেয়ার ভাঙ্গাভাঙ্গি এবং মাথা ফাটানোর ঘটনা ঘটে। বৃটিশ সাংবাদিক নেভিনসন এই ঘটনার নিখুঁত বর্ণনা রেখে গেছেন। অরবিন্দ ঘোষ পরবর্তীতে লিখেছেন আমি তিলকের কংগ্রেস নেতা বালগঙ্গাধর তিলক সঙ্গে পরামর্শ না করেই হুকুম দিয়েছিলাম কংগ্রেস অধিবেশন ভেঙ্গে দিতে।
উনবিংশ শতকের শেষে ভারতবর্ষে বৃটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনের মূল হাতিয়ার ছিল পিস্তল, রিভলবার। আর সেসময় বোমার অনুপ্রবেশ ঘটায় বাঙ্গালিরা। নেতৃত্ব ছিলেন এই অরবিন্দ ঘোষ। বারীণ ঘোষ যুগান্তর নামে একটি উপদল গঠন করেন ১৯০৫ সালে অনুশীলন সমিতির কলকাতা শাখা ভেঙে। সেই সমিতি বোমা তৈরি শেখার জন্য হেমচন্দ্র কানুণগো নামে একজন বিপ্লবীকে প্যারিসে পাঠায়। উন্নতমানের বিস্ফোরক তৈরি শিখতে হেমচন্দ্র সুইজারল্যান্ড এবং প্যারিসে গিয়ে সুবিধা করতে না পেরে চলে যান লন্ডনে। সেখানে সুযোগ না পেয়ে ফিরে আসেন প্যারিসে। ফরাসি সমাজতান্ত্রিক সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে এবং বিস্ফোরক রসায়ন ও বিস্ফোরক ঘটাবার কায়দা কানুন শিখে নেন।
রুশ সন্ত্রাসবাদী দলের বিপ্লবী নিকোলাস সাফ্রানস্কির কাছে প্রশিক্ষিত হয়ে হেমচন্দ্র কলকাতায় ফিরে আসেন ১৯০৮ সালের জানুয়ারিতে। হেমচন্দ্র নির্মিত প্রথম বোমাটি কিংসফোর্ডকে ১০৭৫ পৃষ্ঠার বইয়ের ভেতরে করে পাঠানো হয়েছিল যা বিস্ফোরিত হয়নি। মার্চ মাসে হেমচন্দ্র বোমা তৈরির স্কুল খোলেন পাঁচ ছাত্রকে নিয়ে। তার তৈরি বোমাটিই নিক্ষেপ করেছিলেন ক্ষুদিরাম বসু। ক্ষুদিরামের সেই ঘটনার পর পুলিশ বিভিন্নস্থানে হানা দিয়ে ৩৪ জন বিপ্লবীকে গ্রেফতার এবং বোমা বানানো বিষয়ক বইপত্র এবং সরঞ্জাম আটক করে।
১৯০৮ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন কলকাতার মানিকতলা অঞ্চলে একটি বোমা প্রস্তুতের কারখানা আবিষ্কৃত হয়। সে ব্যাপারে অরবিন্দ ঘোষকে গ্রেফতার করা হয়। অরবিন্দের ভাই বারীন ঘোষ, উল্লাস কর দত্ত, কানাই লালসহ ৪৭ জন চরমপন্থী ধরা পড়েন।বালগঙ্গাধর তিলক ১৯০৮ সালে ছয় বছরের কারাদন্ডে দন্ডিত হন। অরবিন্দ ঘোষ ১৯১০ সালের দিকে পন্ডিচেরিতে চলে যান এবং সেখানে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন।
বঙ্গভঙ্গ রদবদল
এই সকল রাজনৈতিক প্রতিবাদের ফলশ্রুতিতে ১৯১১ সালে বঙ্গ আবার একত্রিত হয়। ভাষাতাত্ত্বিক এক নতুন বিভক্তির মাধ্যমে হিন্দি, ওড়িয়া এবং অসমি অঞ্চলগুলো বঙ্গ হতে বিচ্ছিন্ন করে আলাদা প্রশাসনিক কাঠামোর আওতায় আনা হয়। এরই সাথে ব্রিটিশ ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে নয়া দিল্লীতে স্থানান্তর করা হয়।
বৃটিশ যে প্রতিক্রিয়া হয়
বদরুদ্দীন উমরের ভারতীয় জাতীয় আন্দোলন থেকে জানা যায় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী যে আন্দোলন ১৯০৫ সালের পরে দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করতে শুরু করে সেটা প্রধানত মধ্যশ্রেণীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিলো। সেজন্য এই শ্রেণীর উপরই সরকারের নির্যাতন সবথেকে বেশি হয়। পূর্ব বঙ্গ এবং আসামের লেফটেনান্ট গভর্নর ব্যাম্পফিল্ড ফুলার বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকে ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশ্যে ব্যাপকভাবে নির্যাতন শুরু করেন এবং সেই সঙ্গে বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করেন সাম্প্রদায়িকতা। তিনি ঘোষণা করেন যে তার দুই স্ত্রী হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে মুসলমানই হলো প্রিয়পাত্রী। সেই সময় বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকারীরা বঙ্কিম রচিত বন্দে মাতরম সঙ্গীতকে জাতীয় সঙ্গীতের পর্যায়ে নিয়ে যান ও তার ব্যাপক প্রচার করেন। ফুলার বরিশালে বেঙ্গল প্রভিন্সিয়াল কনফারেন্সের অধিবেশনে বন্দে মাতরম সঙ্গীত গীত হলে পুলিশ দ্বিতীয় দিনে লাঠি চার্জ করে সমাবেশকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। কিন্তু সেই পুলিশী নির্যাতন সত্ত্বেও আবদুর রসুলের সভাপতিত্বে বরিশালের সেই অধিবেশনে সরকারের সঙ্গে অসহযোগীতা বঙ্গভঙ্গের বিরোধীতা বৃটিশ পণ্য বর্জন ইত্যাদি সম্পর্কে কয়েকটি প্রস্তাব গৃহীত হয়।

তথ্যঃ ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা ।

সর্বশেষ এডিট : ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১১:১১
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×