পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীকে প্রত্যাহার ও ডাঃ দিপু মনির পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি
২৩ জুন : বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবী ও পানি বিশেষজ্ঞদের সম্পর্কে ঔদ্ধত্যপূর্ণ মন্তব্য করার দায়ে ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে বিএনপির সংসদীয় প্রতিনিধি দল। তারা বলছেন, কুটনীতিক নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছেন। তাই তাকে বাংলাদেশ থেকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। আজ (মঙ্গলবার) জাতীয় সংসদে এক সংবাদ সম্মেলনে বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ জয়নাল আবেদনি ফারুক এই দাবি করেন। একই সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ভারতীয় হাইকমিশনার দেশ ও দেশের বিশেষজ্ঞ মহল সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করলেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার কোন প্রতিবাদ করেননি। তাই তারও পদত্যাগ দাবি করেন বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ। জয়নাল আবেদিন ফারুক বলেন, একের পর এক ভারতীয় হাইকমিশনার বাংলাদেশ বিরোধী বিভিন্ন ধরণের মন্তব্য করলেও সরকারের পক্ষ থেকে তার কোন প্রতিবাদ জানানো হচ্ছে না। বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ বলেন, একটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে কি করে আরেকটি দেশের হাইকমিশনার দেশ বিরোধী কথা বলতে পারেন তা প্রশ্নাতীত। জয়নাল আবেদিন ফারুক বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে দেশের পানি বিশেষজ্ঞরা যখন ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলছেন তখন ভারতীয় হাইকমিশনার তাদের দোষারোপ করে এ ধরণের মন্তব্য করছেন। যাতে দুটি দেশের সম্পর্কের মধ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। বিরোধী দলীয় চীফ হুইপ বলেন, ভারতীয় হাইকমিশনার সেদিন তার বক্তব্যে প্রধান বিরোধী দল সম্পর্কেও কটুক্তি করেছেন-যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। তিনি বলেন, আমরা সংসদে গিয়ে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে কথা বলতে চাইলেও সরকারই সংসদে যাবার পরিবেশ সৃষ্টি করছে না। জয়নাল আবেদিন ফারুক ভারতীয় হাইকমিশনারকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করে নেয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী গত রোববার বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি আয়োজিত এক সেমিনারে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশের পানি বিশেষজ্ঞরা যে সব কথা বলছেন তার সমালোচনা করে বলেছিলেন, 'এই সকল তথাকথিত পানি বিশেষজ্ঞরা না বুঝেই টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণের বিরোধীতা করছেন।' তার এই মন্তব্যের পর পরই দেশের পানি বিশেষজ্ঞ সহ রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তার তীব্র সমালোচনা করেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরাও বলছেন পিনাক রঞ্জনের এই মন্তব্যের কারণে তাকে বহিষ্কার করতে হবে।
বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্ল্রেষক ডক্টর বদরুদ্দিন ওমর পিনাক রঞ্জনের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, তাকে অবিলম্বে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করতে হবে। তিনি আরো বলেন, সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সামনে পিনাক যে ভাবে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ মহলের সমালোচনা করেছেন তাতে মনে হচ্ছে এই সরকার ভারতের মাধ্যমেই পরিচালিত হচ্ছে । সরকারের মন্ত্রীরা ভারতের দালালী করছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন। ডক্টর বদরুদ্দিন ওমর বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ হলে বাংলাদেশের বিশাল অংশ মরুভূমিতে পরিণত হবে। অথচ ভারত কি করে বলতে পারে যে, এতে বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হবে না! তিনি বলেন, আসলে এই সরকার ভারতের দ্বারা পরিচালিত সরকার কাজেই তারা কখনই ভারতের বিরদ্ধে কথা বলতে পারবে না। বদরুদ্দিন ওমর বলেন, দেশের জনগণকেই এই আধিপত্যবাদি সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া উৎকন্ঠার কথা জানিয়ে গতকাল ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, টিপাইমুখ বাধ নির্মাণ বন্ধের ব্যাপারে ভারতের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে মোর্চা গঠন করে আন্দোলন কর্মসূচি দেয়া হবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, টিপাইমুখ নিয়ে সরকারের অবস্থান এখনো পরিষ্কার নয়। তারা বলছেন, সরকারের অবস্থান যদি স্বচ্ছ হতো তাহলে সরকারের মন্ত্রীদের সামনে ভারতীয় হাইকমিশনার দেশ বিরোধী মন্তব্য করার সাহস পান কি করে ? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারকে টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে যে জটিলতা দেখা দিয়েছে তার সংকট নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তারা বলছেন, টিপাইমুখ ইস্যু নিয়ে যদি দেশে রাজনৈতিক সংঘাত দেখা দেয় তাহলে তা সরকারের জন্য শুভ লক্ষণ হবে না। #
যথাশীঘ্য দাবি পূরন হোক
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০০৯ বিকাল ৫:২৮