somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ূন আহমেদ- দায়িত্বহীন স্বজন-সন্তান বনাম দায়িত্বপালনকারী স্ত্রী

২৪ শে জুলাই, ২০১২ দুপুর ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুমায়ূন আহমেদ (আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করুন , তাঁর আত্মাকে মাগফেরাত দিন) - আমি তাঁর বইএর একজন পাঠক মাত্র। গত কাল সারা দিন তার লাশের অধিকার নিয়ে তর্ক চলেছে। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে (যত টুকু দেখেছি, পত্রিকায় পড়েছি), যতটুকু কমন যুক্তি আসে তা নিয়ে আমার এই লেখা । লেখাটা সংক্ষিপ্ত আকারে আমি ফিফা ভাই এর ব্লগে কমেন্ট হিসাবে লিখে ছিলাম। কেন জানি (আমি কোন বিবেকের বা সামাজিক দায়বদ্ধতার ভড়ং নেব না ) সেটাই একটু ডিটেইল লিখতে ইচ্ছা করল।


ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে হুমায়ূন আহমেদ গত এক বছর যাবত অসুস্থ ছিলেন। এ জাতীয় অসুস্থতায় আর্থিক সাহায্য ছাড়াও রোগীর জন্য শারীরিক মানসিক আশ্রয় অনেক অনেক বেশি প্রয়োজন হয়, হাসপাতালে ও হাসপাতালের বাইরে ২৪ ঘণ্টাই ছুটোছুটি করতে হয় (আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় আমি জানি)। তাঁর অসুস্থতায় গত এক বছর কে তার পাশে ছিল? আপনি ছিলেন? আমি ছিলাম? নাকি তার তিন কন্যারা ছিলেন?? ছিলেন শাওন ।(আমরা অনেকে তাঁকে ধান্দাবাজ মহিলা বলছি।) কিন্তু পৃথিবীতে মরহুমের শেষ মুহূর্তের আশ্রয় কেবল তিনিই ছিলেন।



সমাজের চোখে যত দৃষ্টিকটুই হোক না কেন, শাওন তাঁর বৈধ স্ত্রী, যিনি তাঁর সম্পর্কের জন্য প্রায় সমাজচ্যুত হয়েছিলেন।এখনও তিনি মরহুমের দুই নাবালক ছেলের মা। হুমায়ূন আহমেদ (আমরা নিজেরা যার ভক্ত, যাকে ভালবাসি বলে দাবি করছি) নিজেই তার আগের স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে শাওন কে স্ত্রী হিসাবে গ্রহন করেছিলেন (ধর্মীয় ও আইনসঙ্গত ভাবেই)। তাঁর ভাই বোন, পুত্র ও তিন কন্যা একই কারনে, (ঘৃণায়, লজ্জায় বা সামাজিক কারনে - যা ই হোক) বাবাকে ত্যাগ করেছিল (আমরা বেশিরভাগ মানুষ তা-ই করি)।


অসুস্থ থাকাকালীন তাঁর স্বজনরা তাকে কেবল দেখা করতে গিয়ে ছিল, কোন দায়িত্ব নিতে যান নাই। অসুস্থ থাকাকালীন হুমায়ূন আহমেদের লেখাতেও এই বিষয়গুলো স্পষ্ট ভাবে এসেছে।


মৃত্যুর পর মরহুমের লাশের উপর অবশ্যই সন্তানের দাবী আছে। কার অধিকার বেশি এই প্রশ্ন উঠলে? সেই সব দায়িত্বহীন স্বজন-সন্তান দের অধিকার কি দায়িত্বপালনকারী বৈধ স্ত্রির চাইতে বেশি হবে? হুমায়ূন আহমেদের জায়গায় আপনি নিজে হলে, আপনি কি চাইতেন/ অসিয়ত করতেন?


আমরা তার ভক্তরা আজ গলার রগ ফুলিয়ে চিৎকার করছি, লেখকের স্ত্রী, পরিবার কে গালাগালি করছি। কিন্তু আমরা কয়জন মরহুমের জন্য কন্ট্রিবিউট করছি? কয়জন নামাজ পড়ে দোয়া করেছি? কয়জন তার চিকিৎসার জন্য ফান্ড রেইজ করছি? আমরা কিভাবে তাঁকে পাবলিক প্রপার্টি বলে দাবি করছি? এটা কি আমাদের দায়িত্বহীন আহ্লাদ হয়ে যাচ্ছে না?


আর যে সব সুযোগ্য সন্তানরা জীবিত বাবা কে ত্যাগ করেছিলেন, (যত দোষই থাকুক না কেন) অসুস্থ বাবার চিকিৎসার দায়িত্ব নেন নাই, জীবন সংকটে বাবার পাশে থাকেন নাই, আজ সেইসব ভাই-বোন- সন্তানরা কোন যুক্তিতে বাবার লাশ নিয়ে মিডিয়ার সামনে কাড়াকাড়ি করেছেন???


অনেক যুক্তি দেখাইছি, লাশ নিয়া ব্লগে কাঁদা ছোড়া –ছুড়ি দেখে মেজাজ খারাপ হইছিল। অনেকে কষ্ট পাইছেন । লেখকের পরিবারকেও কষ্ট দিছি। আমি ক্ষমা চাচ্ছি।


হুমায়ূন আহমেদ- আমরা আপনার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভেজা শিখেছি, জোছনায় ছাদে গিয়েছি, দারুচিনি দ্বীপ - সেইন্ট মারটিন চিনেছি। আপনার মৃত্যুতে আমরা সবাই কেঁদেছি। আল্লাহপাক আপনাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহপাক আপনার আত্মাকে মাগফেরাত দিন। আপনি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন


ডিসক্লেইমারঃ হুমায়ূন আহমেদ যখন শাওনকে বিয়ে করলেন, আমার ভাল লাগে নাই। নিজের মেয়ের বান্ধবীকে বিয়ে করে তিনি বাজে দৃষ্টান্ত তৈরি করেছিলেন। কিন্তু মুখরোচক সম্পর্কের চাইতে বিয়ে উত্তম (ধর্মীয় দৃষ্টিতে)। আবার বিষয়টা সম্পূর্ণ তাঁর ব্যক্তিগত ইস্যু। একজন ক্ষুদ্র পাঠক হিসাবে আমি লেখক হুমায়ূন আহমেদের ভুল-শুদ্ধ বিচার করার মতো ধৃষ্টতা দেখাব না।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:২১
২০টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×