কীভাবে যেন মাঝখান থেকে একটা বছর
স্রেফ হাওয়া গেল আল-আমিনের! যেন রাতে
ঘুমাতে গিয়েছিলেন। জেগে দেখলেন সকাল!
গত বছর নভেম্বরে এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে
দুটি ওয়ানডের পর মাঝের একটা বছর খেলা
হলো না আর একটি আন্তর্জাতিক ম্যাচও।
অথচ এ বছরটা শুরুই হয়েছিল দারুণভাবে।
বিশ্বকাপ দলে ডাক পেলেন। নিজের প্রথম
বিশ্বকাপ বলে স্বাভাবিকভাবেই ছিলেন
রোমাঞ্চিত। স্বপ্ন দেখছিলেন ক্রিকেটের
বড় মঞ্চে নিজেকে মেলে ধরার। ঠিক এর
পরই এক যাতনাময় অধ্যায়। এ নিয়ে কথা তো
আর কম হলো না। থাক না, সে সব দুঃসহ
স্মৃতির গল্প। বরং আল-আমিনের
প্রত্যাবর্তনের গল্পটাই শোনা যেতে পারে।
সিরিজ শুরুর আগে জানিয়েছিলেন, ‘চেষ্টা
করব, মানুষ যেন আগের আল-আমিনকেই
দেখতে পায়’। সিরিজ এখনো শেষ হয়নি। তবে
প্রথম দুটি ওয়ানডেতেই সেই ‘আগের আল-
আমিনে’র ফেরার সুসংবাদ পেয়েছে
বাংলাদেশ। অবশ্য উইকেট সংখ্যায় তাঁকে
বিচার করা যাবে না। উইকেট পেয়েছেন
মাত্র তিনটি। কিন্তু এই তিন উইকেটের
সংখ্যায় লেখা নেই, আল-আমিন প্রতিটা
বলেই কীভাবে নিজেকে উজাড় করে
দিচ্ছেন! নিরেট সংখ্যার সাধ্য কী বোঝায়,
আল-আমিন শুধু জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানদের
বিপক্ষে লড়ছেন না, তিনি লড়ছেন নিজের
বিপন্ন ক্যারিয়ার বাঁচাতে। যেন কোণঠাসা
হয়ে পড়া আহত এক বাঘ!
পেসার হয়েও ২.৮৪-এর ইকোনমি রেট আর
১২.৩৩-এর গড়ে তবু কিছুটা ধরা পড়ছে এই
সিরিজে আল-আমিনের মরিয়া লড়াই।
সিরিজে তিন উইকেট পেয়েছেন আরও ছয়জন।
কিন্তু বাকিদের চেয়ে আলাদা হয়ে যাচ্ছেন
তাঁর তিনটি উইকেটের ‘দাম’-এ। প্রথম ম্যাচে
ফিরিয়েছিলেন সেট হওয়া ব্যাটসম্যান
জঙ্গুয়েকে। কাল তো দলের সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ ব্রেক থ্রু এনে দিলে আল-আমিনই।
৭৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা
জিম্বাবুয়েকে যখন পথ দেখাচ্ছিল এলটন
চিগুম্বুরা-সিকান্দার রাজার পঞ্চম উইকেট
জুটি। চিগুম্বুরা-রাজার ৭৩ রানের জুটিটা
বেশ চোখ রাঙাচ্ছিল। আল-আমিন শুধু জুটিটা
ভাঙেননি, দুজনকেই ফেরানোর দায়িত্ব
নিয়েছেন। পর পর দু ওভারে ফেরালেন
দুজনকে। এর পরই তাসের ঘরের মতো ধসে পড়ল
জিম্বাবুয়ে। মজার ব্যাপার হলো, দুজনই ধরা
পড়লেন ইমরুল কায়েসের হাতে, যিনি নিজেও
লড়ছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ার বাঁচাতে!
বোলিংয়ের সময় ফিল্ডার সাজিয়ে
জায়গামতো বল করার কাজটা দারুণভাবে
করেছেন। লাইন-লেংথ ঠিক রেখে ক্রমাগত
প্রতিপক্ষকে চাপে রাখার কাজেও সফল। দুই
ম্যাচের বোলিং ফিগার তা-ই বলছে। প্রথম
ম্যাচে ৫ ওভারে ১৫ রানে ১ উইকেট;
পরেরটিতে ৮ ওভারে ২২ রানে ২ উইকেট।
কাল রাজাকে ফেরানোর পর তাঁর
উদযাপনটাও হলো দেখার মতো। তাতে ফুটে
উঠল দুঃসময় পেরিয়ে আসা আত্মবিশ্বাসী
আল-আমিনের চেহারাটাই।
এমন ফেরায় খুশির ঝিলিক আল-আমিনের
চোখেমুখে। পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা
ধরে রাখার প্রত্যয় ঝিনাইদহের এ পেসারের,
‘সব ম্যাচই চ্যালেঞ্জিং। প্রতি ম্যাচেই
চেষ্টা করি ভালো কিছু করার। পরিকল্পনা
অনুযায়ী সবকিছু বাস্তবায়ন করতে পারলে
অন্যরকম আনন্দ লাগে। ওই আনন্দেই কাল অমন
উদযাপন করে ফেলেছি! তবে এবার ফেরাটা
চ্যালেঞ্জিংই ছিল। নানা কথা হচ্ছিল।
আল্লাহর রহমতে ফেরাটা দারুণ হয়েছে।
চেষ্টা করব এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে।’
গত বছর ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ
উইকেট শিকারি। এর পরও আল-আমিনের
জীবনে কয়েকটি ঝড়ই গেল অল্প সময়ের
ব্যবধানে। প্রথমে উঠল অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন।
এর পর বিশ্বকাপ থেকে আকস্মিকভাবে
ফিরে আসা। সেসব সামলে দলের অন্যতম
সেরা পেসারের এভাবে ফিরে আসায় খুশি
মাশরাফি বিন মুর্তজাও, ‘ওর জীবনে একটা
বিরতি গেছে। সবার জীবনেই এমনটা ঘটতে
পারে। এমন বিরতির পর ফিরে আসাটা খুব
কঠিন। শুধু পরীক্ষা (বোলিং অ্যাকশনের)
নিয়ে টেনশন নয়, মনের ওপর দিয়েও অনেক ঝড়
যায়। বিশ্বকাপ থেকেও ফিরে এসেছিল।
সময়গুলো খুব কঠিন গেছে। সে হিসেবে মনে
করি, ও দারুণভাবে ফিরে এসেছে।’
ভুল থেকেই মানুষ শিক্ষা নেয়। ভুলের আগুনেই
পুড়ে মানুষ শুদ্ধ হয়। অধিনায়কের চাওয়া, আল-
আমিনও আর ভুল করবেন না, ধরে রাখবেন
ধারাবাহিকতা, ‘এ সময়টাতে মানসিকভাবে
অনেক দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে সে। দক্ষিণ
আফ্রিকা সফরে (‘এ’ দলের হয়ে) ভালো
বোলিং করেছে। বাংলাদেশ দলে ফিরেও
ভালো করেছে। আশা করি, আর কোনো ভুল
করবে না সে।’
-মাসুদ