পূর্ববর্তী পর্ব
ইমিগ্রেশন অফিসে লম্বা লাইন। যাত্রীর তুলনায় বুথও কম। একেকজন যাত্রীর ইমিগ্রেশনে আবার অনেক সময়ও লাগছিলো। সবমিলিয়ে প্রচণ্ড বিরক্ত হচ্ছিলাম। ইমিগ্রেশন অফিসারের বুথের ঠিক সামনে হসপিটালের আয়ার পোশাক –এর মতো পোশাক পরে বসে থাকা ২ মহিলাকে ট্র্যাভেল ট্যাক্সের(১) রসীদ দিলাম। একটু ছিঁড়ে ফেরত দিয়ে দিলেন।
লাইন একটু একটু করে এগুচ্ছিলো। নজরে পড়লো, মহামান্য পুলিশ ভাইদের সহযোগিতায় অনেকে পিছন থেকে নিয়ম নীতি অমান্য করে সামনে চলে আসছে। কেউ কেউ এই নিয়ে চ্যাঁচামেচিও করলো। কিন্তু কে কার কথা শুনে!!! আমাদের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ভদ্রলোক বেনাপোল কাস্টমস –এর পরিচালক উপজাতি মহিলার সাথে পুরনো পরিচয়ের সূত্র ধরে বাড়তি সুবিধা নিতে চাইলেন। কেন জানি মনে হলো, দিনদিন আমরা জাতিগত-ভাবে মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যাচ্ছি। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা নেই। প্রভাব প্রতিপত্তি না দেখালে যেন ইজ্জত থাকে না।
ঘড়ির কাটা তখন ৯:৩০ পেরিয়ে গেছে। যথাসময়ে আমার সিরিয়াল আসলো। ডেস্কে বসে থাকা পুলিশ কর্মকর্তার মুখোমুখি হলাম। পাসপোর্ট হাতে নিয়ে একনজর তাকিয়ে নাম জিজ্ঞেস করলেন। পাসপোর্টে নাম লেখা আছে, ছবি দেয়া আছে, তবুও কেন এমন অদ্ভুত প্রশ্ন!!! যাক, নাম বললাম। কেন ভারত যাচ্ছি জানতে চাইলেন। বেড়ানোর কথা বললাম। সাথে কেউ আছে কিনা জিজ্ঞেস করলেন। ভ্রমণ সঙ্গী পাশেই ছিলেন। ইশারায় দেখিয়ে দিলাম। পেশা জিজ্ঞেস করলেন। যদিও পাসপোর্টে লেখা রয়েছে প্রাইভেট সার্ভিস। তবে ট্র্যাভেল এজেন্সিতে কাজের কাগজপত্র সাথে ছিলো।
উত্তর দেবার পূর্বে সম্ভবত ডেস্কের ওপারে কাগজপত্র দেখে নিয়েছিলেন। উত্তর শুনে বললেন, সত্য বলার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। আর যাই হোক, ইমিগ্রেশনে সবসময় সত্য বলবেন। মুখে বললাম, জি। মনে মনে ......... সীল মেরে দিতেই বেরিয়ে এসে শ্বাস ফেললাম। উফফফ! কি দুঃসহ সময়ই না কাটিয়েছি।
ভিতরে থাকাকালীন একটি দুঃখজনক বিষয় প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হলো। ইমিগ্রেশন অফিসারের ঠিক সামনে আমি দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায় (সম্ভবত ওই অফিসেরই) এক ব্যক্তি আসলে, ইমিগ্রেশন অফিসার বললেন : সবার পাসপোর্টই দিয়ে দিচ্ছি। তবে কেবল অমুক মেয়েটাকে একটু দেখতে চাই। এই কথার সহজ অর্থ, লাইনে না দাঁড়িয়ে মানুষ ইমিগ্রেশন সীল পেয়ে যাচ্ছে!!! সত্যি অদ্ভুত এই দেশ। আরও অদ্ভুত এখানকার মানুষ! অথচ বিশ্বজুড়ে ইমিগ্রেশন অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিভাগ হিসেবে পরিচিত।
যাক, আমাদের ব্যাগেজ বাইরে রাখা ছিলো। চাইলে নিজেরা বহন করতে পারতাম। কিন্তু একটু স্বস্তি ও আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য কুলির কাছে লাগেজ দিয়ে বাংলাদেশ বর্ডার(২) ত্যাগ করে ভারতীয় সীমান্তের বাইরে লাইনে(৩) দাড়িয়ে পড়লাম। ভারতীয় কুলি ব্যাগ নিয়ে আমাদের সাথে সাথে হাটছিলো। ভারতীয় কর্মকর্তারা পাসপোর্ট চেক করে একজন একজন করে ভিতরে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছিলেন। ৪/৫ মিনিটের মধ্যে লাইন খতম। আমাদের পাসপোর্ট দেখে যাওয়ার অনুমতি দিলে বাংলাদেশের বেনাপোল ত্যাগ করে ভারতের পেট্রোপোলে পা রাখলাম। হাতে থাকা ঘড়ির কাটায় তখন ১০:৩৫।
সীমান্ত পেরিয়ে কয়েক মিটার যাওয়ার পর হাতের বামপার্শে অবস্থিত ঘরের ভিতর দিয়ে ইমিগ্রেশন অফিসে যাওয়ার সরু রাস্তা। সেই রাস্তা একমিনিটে অতিক্রম করে ভারতীয় ইমিগ্রেশন অফিসের সম্মুখস্থ উন্মুক্ত স্থানে আসতেই চেয়ার টেবিল নিয়ে লাইন ধরে বিভিন্ন বাসের কর্মচারীদের দেখতে পেলাম। আমাদের স্টিকার দেখে গ্রীন লাইনের ভারতীয় কর্মচারীরা Arrival/আগমনী কার্ড অল্প সময়ের মধ্যে পূরণ করে দিলো।
প্রথমেই খেয়াল করে দেখে নিয়েছিলাম যে, ফরম পূরণ হয়ে যাওয়া মাত্র মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে পড়ছিলো। তাই সময় বাঁচাতে আমি লাইনে(৪) দাড়িয়ে পড়লাম আর ভ্রমণসঙ্গী ফরম পূরণ করিয়ে নিলেন। লেখা পূর্ণ হয়ে যাওয়া মাত্র তিনি লাইনে এসে আমার জায়গা নিলেন আর আমি গিয়ে সাক্ষর দিয়ে ফরম নিয়ে আসলাম। এতে করে আমরা সিরিয়ালে অন্যদের চাইতে কিছুটা এগিয়ে থাকলাম।
লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় দেখলাম, চাইনিজদের মতো চেহারার একদল মানুষ দাওয়াত ও তাবলীগ –এর কাজে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। সবার কাপড়ে শ্যামলী পরিবহণের স্টিকার লাগানো। বেশ ভালো লাগলো। ভাবলাম, তাবলীগ জামাতের কারণে আজ বিশ্বজুড়ে কি কাজই না হচ্ছে! চলবে.......
>>>ভ্রমণ পরামর্শ ৪>>> অপরিচিত স্থানে কাউকে দিয়ে মালামাল বহন করানো অবস্থায় শতভাগ বিশ্বাস করে তার দায়িত্বে মালামাল রেখে দেয়া অনুচিত। কারণ টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, লঞ্চঘাট, এয়ারপোর্টে একশ্রেণীর মানুষ ধোঁকাবাজি করে মালামাল হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনায় লিপ্ত আছেই। আর সফরে মালামাল হারিয়ে গেলে বিভিন্ন ঝামেলার সম্মুখীন হতে হয়। তাই এই বিষয়ে পুরোপুরি সতর্ক থাকা জরুরী। আমাদের মালামাল বহনকারী ব্যক্তি যখন কিছুক্ষণের জন্য চোখের আড়াল হয়েছিলো, আমি চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম। আলহামদুলিল্লাহ্ যদিও কোনও সমস্যা হয়নি। তবে আমি মনে করি এই বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকা দরকার।