দেশের নামকরা নারী মডেলরা আকর্ষনীয় ফিগার আর দৈহিক উচ্চতার অধিকারী হলেও বেশীরভাগ নারী শ্রমিকদের শারীরীক উচ্চতা ৪'৫'' ফিট এর কম৷ শুধু শ্রম আইনের ১০ ঘন্টা (৮+২=১০) না বেশীরভাগ গার্মেন্টসে ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা কাজ করে এরা বাংলাদেশের অর্থনীতি চালু রাখেন৷ আপনি যদি ঢাকার অধিবাসী হন তবে রাস্তায় এদের দেখতে পাবেন৷ সকালে-রাতে এরা দল বেধে যাতায়াত করেন৷ এছাড়া অফিস টাইমেও মাঝে মাঝে গাড়ি ভাংচুর করতে দেখা যায় এদের৷
খুপরী কোন ঘর অথবা বস্তিতে এক সাথে অনেক জনের একসাথে থাকা তো এদের জীবনানন্দর বহিঃপ্রকাশ৷ রাতে একবেলা ডিম রান্না করে খাওয়ার জন্যই এদের জন্ম৷ রাস্তায় দেখা টেলিভিশনে ফেয়ার এন্ড লাভলীর বিজ্ঞাপন দেখে এরাও স্বপ্ন দেখেন৷ ঈদ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবসে এরা ছুটে যান জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড, বোটানিকেল গার্ডেন, জিয়া উদ্যান, সংসদ ভবন বা রমনা পার্কের মত দর্শনী ফ্রী স্থান গুলোতে৷ কারন আর কিছু নয় ফ্যান্টাসি, বসুন্ধরা সিটি বা নন্দন পার্কে এই তরুন তরুনীগন স্বাচ্ছন্দবোধ করেন না৷
কাজের বিরতিতে ফ্লোর ইনচার্জের অশ্লীল ইংগীত, কাজের মাঝে গালাগালি এদের স্বাভাবিক রুটিন (যেমন কাজের বিরতিতে আমরা সাঃ ইনঃ এ ব্লগিং করি)৷ স্বভাব ভালো বলে কারখানা থেকে বের হবার সময় এদের বডিচেকআপ করা হয়৷ এরা বাঘের মত হিংস্র বলে গেটে ঝোলে তালা৷ আবার, অনেক গার্মেন্টস মালিকেরা এই শ্রমিকদের পাখীর মত ভাবেন, যার কারনে কারখানায় কোন ইমার্জেন্সি এক্সিট রাখার প্রয়োজন মনে করেন না৷
হয়তবা এদের ধর্ম-কর্ম প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন সবাই৷ তাই এই মানুষগুলোর ফরজ নামাজের বিরতি দেয়া হয় না৷ নিয়মিত দেয়া হয় না শবেক্বদর, শবেবরাত বা ঈদএ মিলাদুন্নবীর ছুটি৷ পত্রিকার কার্টুনের থেকেও এদের গুরুত্ব কম বলেই বোধহয় শ্রদ্ধেয় মরহুম মাওলানা খতিব ওবাইদুল হক এদের ব্যাপারে কখনও আন্দোলনে নামেন নি৷
বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের টাকা-পয়সার তেমন প্রয়োজন নেই৷ তাই তাদের ওভারটাইমের মূল্য দেরী করে দেওয়া হয়৷ এরা আসলে আন্দোলন করেন না৷ ভারতীয় দালালরা 'র' এজেন্ট দিয়ে ভাংচুর করিয়ে আমাদের সোনার বাংলায় গার্মেন্টস শ্রমিকদের দোষ দিয়ে থাকেন৷
আর তাই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষের দেশ বাংলাদেশের সবচেয়ে সুখী মানুষ হচ্ছেন এই গার্মেন্টস শ্রমিকরা, যারা বস্ত্রের সাথে সাথে স্বপ্নের জাল বোনেন৷
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে অক্টোবর, ২০০৭ রাত ১২:০৪