উন্নত বিশ্বে বর্ণবাদের শিকার হন অনেক মানুষ। এ নিয়ে গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার করা হয় আর সারা পৃথিবীর মানুষ জানতে পারে সেসব ঘটনা। সম্প্রতি এ রকম একটি ঘটনা ঘটেছে রাজশাহী জেলার তানোরের প্রধান উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান 'তানোর আবদুল করিম সরকার ডিগ্রি কলেজ'-এ। এ কলেজের তেরো আদিবাসী শিক্ষার্থী অস্পৃশ্যতার শিকার হয়েছেন। কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টির সুরাহা করতে গিয়ে গত মঙ্গলবার চার আদিবাসী নেতাও একই অবস্থার শিকার হয়েছেন।
সূত্রে প্রকাশ, 'তানোর আবদুল করিম সরকার ডিগ্রি কলেজ' ছাত্রাবাসে আদিবাসী ছাত্রদের জন্য আগে তিনটি আসন বরাদ্দ ছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে আদিবাসী ছাত্রদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় গত বছর তেরোজন আদিবাসী ছাত্রকে ছাত্রাবাসে জায়গা দেওয়া হয়। এতদিন আদিবাসী ছাত্ররা অন্য ছাত্রদের সঙ্গে একই পাতিলের রান্না খাওয়াসহ একই থালা-গ্লাসে ভাত-পানি খেত। কলেজ অধ্যক্ষ আফজাল হোসেন জানান, সম্প্রতি ছাত্রাবাসে আসা নতুন কিছু ছাত্র আদিবাসী ছাত্রদের সঙ্গে একই পাতিলে রান্না ও থালা-গ্লাসে খাওয়া-দাওয়ায় আপত্তি জানায়। ফলে আদিবাসী ছাত্রদের জন্য পৃথকভাবে রান্না ও পৃথক থালা-বাসন ক্রয় করা হয়। এদিকে এটাকে অস্পৃশ্যতা উল্লেখ করে তেরো আদিবাসী ছাত্র গত ২ জুন ছাত্রাবাস ত্যাগ করে চলে যান। তাঁরা এখন পর্যন্ত ছাত্রাবাসে ফেরেননি।
এ দিকে আদিবাসী ছাত্রদের সঙ্গে একই পাত্রে রান্না-বান্না ও খাওয়া-দাওয়া প্রসঙ্গে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মাসুদ রানা বলেন, আমরা মুসলমান হিসাবে বিধর্মীদের সঙ্গে একই পাতিলে রান্না করা খাবার একই থালা-বাসনে খেতে পারি না। আদিবাসী ছাত্রদের জন্য যে পৃথক ব্যবস্থা করা হয়েছে সেটাই ঠিক। কর্তৃপক্ষ আমাদের সঙ্গে ওদের (আদিবাসী) রাখতে চাইলে আমরাও ছাত্রাবাস ছেড়ে যাব। একই ধরনের মতামত দেন কলেজের ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মোবারক হোসেন ও জোবায়ের হোসেন। তাঁরা বলেন, কর্তৃপক্ষ আবার সিদ্ধান্ত বদল করলে আমরা সেটা মানব না। আদিবাসীদের সঙ্গে আমরা একই থালা-বাসনে খাবার খেতে পারি না। কারণ, আমরা মুসলমান হিসাবে এটা করতে পারি না।
এদিকে কলেজ ছাত্রাবাসের এই অস্পৃশ্যতার ঘটনার সুরাহা করতে গিয়ে গত মঙ্গলবার চার আদিবাসী নেতা নিজেরাই শিকার হন একই ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির। 'উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম'-এর সাধারণ সম্পাদক ভাগবত টুডু জানান, মঙ্গলবার কলেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষে তাঁরা চারজন দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য তানোরের গোল্লাপাড়া বাজারে 'হোটেল রুচিতা'য় খেতে যান। কিন্তু হোটেল মালিক তাঁদের খাবার দিতে অস্বীকার করেন। তিনি জানান, 'হোটেলের রুচিতা'র মালিক সালাহউদ্দিন তাঁদের সরাসরি জানিয়ে দেন, কোনো আদিবাসীকে এই হোটেলে খাবার দেওয়া হয় না। কারণ, হোটেলে আদিবাসীদের জন্য পৃথক থালা-বাসনের ব্যবস্থা নেই। এ নিয়ে আদিবাসী নেতাদের সঙ্গে হোটেল মালিকের তীব্র বাদানুবাদ হয়। শেষে খাবার না খেয়েই আদিবাসী নেতারা ফিরে যেতে বাধ্য হন। বিস্তারিত এখানে
পুনশ্চ : দেশের জাতীয় কোনো পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদ আমার চোখে পড়েনি। সংবাদকর্মীরা বিষয়টি কেন এড়িয়ে গেছেন তা আমার বোধগম্য হচ্ছে না। তবে একজন সহব্লগার চার আদিবাসী নেতার অপমানিত হওয়ার কথা ব্লগে শেয়ার করেছেন। কিন্তু তার আগের ঘটনা উল্লেখ করেননি। তাই আমার এ পোস্টটি লেখা।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুন, ২০১০ রাত ৯:৩১