somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বই রিভিউ - ঠগী

১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




বই - ঠগী

লেখক - শ্রীপান্থ

জনরা - কাল্ট , ঐতিহাসিক নন ফিকশন

পথ চলছে জনাকয়েক পথিক। গন্তব্য এখনো অনেক দূর। রাস্তা বিপদসঙ্কুল। যে কোন মূহুর্তে হতে পারে চোর ডাকাতের হামলা। আর বাঘ, সাপ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের ভয় তো আছেই। তাই দুরদুরু বুকে পথ চলছে তারা। কিছুদূর যাওয়ার পর দেখা মিললো তাদের মতোই কয়েকজন পথচলা পথিকের সাথে। তাদের গন্তব্যও প্রথম পথিকদের কাছাকাছি। তারাও পথঘাটের চোর ডাকাত নিয়ে ভীত। আলাপ হল দুই দলের। ভালো ও লাগলো। তবে একসাথেই চলা হোক। এতে এক দলের বিপদে আরেকদল সাহায্য করতে পারবে। সম্মতি প্রকাশ করলো দুই দল। শুরু হল পথ চলা। গান বাজনা আর আনন্দ করতে করতে পথ চলছে ওরা। ইতোমধ্যে সবাই নিজ নিজ বাসায় আসার দাওয়াত ও দিয়ে দিয়েছে দুই দলের লোকজন। সানন্দে গ্রহণ করছে সেই দাওয়াত। সন্ধার পর বসে জমজমাট গল্পের আসর। সম্পূর্ণ আসর মাত করে রাখেন পথে দেখা হওয়া সেই দ্বিতীয় দলের দলপতি। নানা দেশ ঘুরেছে সে। অভিজ্ঞতা অনেক। তাই গল্পের স্টকও অনেক। সবাই তন্ময় হয়ে শুনে। প্রতিদিনের মত আজও আসর বসেছে। খাওয়া দাওয়ার পর যথারীতি গল্পের আসর বসেছে। হঠাৎ দলপতি তার দলের একজনকে আদেশ দিল "সাহেব খান, তামাকু লাও "। শ্রোতারা ভাবল নিশ্চয় তামাক খাবার শখ হয়েছে তার। তাই মুচকি হাসলো। আসুক তামাক। তারাও টানবে সাথে। কিছু বুঝে উঠার আগেই কে যেন একযোগে প্রথম দলের সবার গলায় রুমালের ফাসঁ পরিয়ে দিল। বাকিরা চেপে ধরল হাত পা। মিনিট দুইয়ের মধ্যেই বেরিয়ে গেল প্রাণবায়ু। তামাক আর খাওয়া হল না তাদের। হতভাগা পথিকরা জানতেও পারল না যে তামাক আনার কথা বলা হয়েছিল তা আসলে তাদের মৃত্যুর পরওয়ানা ছিল। পরের দিল সকাল বেলা দ্বিতিয় দল যথারীতি যাত্রা আরম্ভ করল। প্রথম দলের একজন লোকেরও কোন পাত্তা নেই। যেন স্রেফ হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়েছে। আসলেও তাই। পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে গেল কয়েকজন মানুষ। তাদের আর পাত্তা পাওয়া যাবে না। কেউ যানবে না কি হয়েছিল তাদের। শুধু কি এই অল্প কয়েকজন মানুষ হারিয়ে গেল পৃথিবী থেকে ? না! ঠিক একই কায়দায় এর আগেও হারিয়েছে লক্ষ লক্ষ মানুষ এই ভারতের বুক থেকে। আজকের মানুষ গুলো তাদের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। শুধুমাত্র দলনেতার একটি কথায় মরছে হাজারো হাজার মানুষ - "সাহেব খান, তামাকু লাও "। ব্যাস শুধু এই কথাটুকুই ছিল যথেষ্ট। কারা এরা? কেন একই কায়দায় মানুষ মারছে। তারা হচ্ছে তারা ঠগী। উপমহাদেশের ইতিহাসের এক দুর্ধর্ষ খুনে দল। তাদের দেবী মা কালী। তারা ডাকে ভবানী বলে যাদের উপস্থিত মানুষের অজানা ছিল প্রায় ৬০০ বছর। গড়ে প্রতিবছর যাদের হাতে মারা পড়তো ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ। লাশগুলো স্রেফ হাওয়া হয়ে যেত। কিভাবে মেরেছিল তারা এই হাজার হাজার মানুষ? উত্তর - স্রেফ একটি ৩০ ইঞ্চি রুমাল দিয়ে। জি হ্যাঁ ঠিকই শুনছেন। ৩০ ইঞ্চি রুমালের আঠারো ইঞ্চিতে থাকতো একটি গিট । আর রুমালের দুই পাশে দুটো তামার কয়েন বাধা। উপযুক্ত হাতে পড়লে এই ছোট্ট রুমালই হয়ে উঠতো মারাত্মক মরনাস্ত্র। একটি তিরিশ ইঞ্চি রুমাল দিয়ে এক একজন ওস্তাদ ঠগী জীবনে হাজার বারোশ মানুষ মেরেছে। আর যাদের ভাগ্য খুবই খারাপ তারাও ৩০ জনের নিচে মারেনি। তারপর হঠাৎ করেই নৃশংস এই খুনিরা পৃথিবীর বুক থেকে বিদায় নিল? কিন্তু কিভাবে? সেও আরেক ঠগীর বদৌলতে। নাম তার ফিরিঙ্গী ঠগী। উইলিয়াম হেনরি স্লীম্যান। কিন্তু কিভাবে? কিভাবে মানুষের নাকের ডগা দিয়ে ডগা দিয়ে প্রায় ৬০০ বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ মেরেছে ঠগীরা। কেন তাদের অস্তিত্ব আগে কেউ জানতো না। কারা এরা? কি তাদের উদ্দেশ্য। শুধুই কি টাকা পয়সায় জন্য নাকি অন্য কোন কারণ আছে পিছনে? যানতে হলে আপনাকে পড়তে হবে ঠগীদের একটি অসামান্য বই। যার প্রতি পৃষ্ঠা আপনাকে অবাক করবে। আপনি হবেন হতবাক। ঠগীদের কার্যক্রম আর জীবন যাপন আপনাকে শুধু বিস্ময়ই করাবে না বাকরুদ্ধ করে দিবে।

ভারতীয় উপমহাদেশের গোপন কাল্ট ঠগীদের নিয়ে এক অসামান্য বই। অসাধারণ বললেও কম বলা হবে। বইতে খুব সহজ ভাষায় উঠে এসেছে তাদের জীবন যাপন, আচার ব্যাবহার, কার্যক্রম ইত্যাদি। কিভাবে তারা মানুষের নাকের ডগা দিয়ে তারা টিকিয়ে রেখেছিল তাদের গোপণ এই ধর্মকে। সেখানে হিন্দু মুসলমানদের কোন ভেদাভেদ ছিল না। তাদের সবারই একই পরিচয়, তারা ভবানীর সন্তান। যাদের ইতিহাস কাল্ট নিয়ে আগ্রহ আছে তাদের জন্য একটি অবশ্য পাঠ্য বই। কোনভাবেই মিস করা যাবেনা

রেটিং - ৫/৫

কিছু কিছু জায়গায় সাল ভুল করেছে ! ব্যাপারটা খুবই দৃষ্টি কটু দেখিয়েছি। একই অসাধারণ বইয়ের এই ক্ষুদ্র ভুল সময়ের হিসেবে যেমন গোলমাল লাগিয়ে দেয় তেমনি পড়াও কিছুটা ব্যাঘাত ঘটে বটে।

ডাউনলোড লিঙ্ক - ডাউনলোড
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:৫০
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×