আমার বোনটার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। আজ গায়ে হলুদ, শুক্রবার বিয়ে। সেদিন বিকেলেই চলে যাবে পরের বাড়ী । ভীষণ মন খারাপ তাই। কি রকম যে লাগছে বলে বোঝাতে পারবনা। ১৯৮৬র বিজয় দিবসে রাত ১০টায় এই পৃথিবীতে সে এসেছিলো ছোট্ট গুটিসুটি এক সোনামনি হয়ে। মনে আছে অতরাতে কে যেনো এসে বলেছিলো 'বাবু তুমার সুন্দর একটা বইন হইসে, যাও দেইখা আসো'। বোন? আমার নিজের একটা বোন? কি যে অদ্ভুত ভালোলাগার এক শিহরণ জেগেছিলো সেই মুহূর্তে ! আমার ৯ বছরের ছোট্ট হৃদয়টা কি এক ভালোবাসায় যেনো টইটুম্বুর হয়ে গিয়েছিলো এক লহমায়।
নানুর কোলে তোয়ালেতে মোড়া পিচ্চিটাকে দেখি কি সুন্দর পিটপট করে তাকাচ্ছে। আস্তে করে, সাবধানে আদর করি। 'আমি কোলে নেবো, নানু?' উৎসাহে জিজ্ঞেস করি । 'আজ না নানু ভাই। কাল দিনের বেলা নিও। এখন যাও আম্মুকে দেখে আসো।' আনন্দে ছুটে চলে আসি আব্বুর কাছে। ' আব্বু, কি নাম রাখবে?' আব্বু হাসে। বলে ' তুমি রাখো। সুন্দর দেখে বোনের একটা নাম রাখো'। কি যে ভালো লেগেছিলো! কি যে মধুর ছিলো সেই অনুভুতি!
সেই বোনটা আমার কেমন করে যেনো আজ এত বড় হয়ে গেলো। এখন নাকি চলে যাবে অন্যের গৃহিণী হয়ে। মানতে না চাইলেও সময়ের কাছে হেরে যেতে হলো। নানু চলে গেছেন সেই ৯০-এ। আব্বু মাত্র কয়েক বছর হলো। অনেকটা একা আম্মু তাই বোনটাকে বড় বেশী কাছে কাছে রাখতেন। এখন সেই বাঁধনটাও যেনো একটু আলগা হয়ে গেলো। আর আমি? স্কুল থেকে ফিরে বোনটাকে কোলে নিয়ে দাপাদাপি করার ছোট্টবেলা সেই কবেই শেষ হয়ে গেছে। তার আইসক্রীম আর পিৎজা খাবার আবদারও মেটানো হ্য়না আজ কতদিন। ছুটি শেষে বাড়ী থেকে ভার্সিটি ফিরে আসার আগের রাতে এখন আর কেউ এই ভাইয়ের পাশে ঘুরঘুর করে না। সেই দিনও যে ফুরিয়েছে অনেক কাল হলো। আমি এখন বহুদূরে। বিলেতে। আকাশ কালো এক মেঘলা বিকেলে বসে আছি আনমনে। এইসাব ভাবছি......ভাবছি.....আর কাঁদছি...