somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফুল আর অশ্রুতে বিদায় নিচ্ছেন পপগুরু

০৬ ই জুন, ২০১১ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা, জুন ০৬ - কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অগণিত মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছে পপগুরু আজম খানের প্রতি। ওই সময় আবেগাক্রান্তও হয়ে পড়েন অনেকে। ফুলেল শ্রদ্ধার পর মরদেহ নেওয়া হয়েছে বায়তুল মোকাররমে।

ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করে রোববার সকালে মারা যান বাংলাদেশে পপ সঙ্গীতের পথিকৃৎ আজম খান। এ মুক্তিযোদ্ধার বয়স হয়েছিলো ৬১ বছর।

ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমঘর থেকে সোমবার সকালে আজম খানের মরদেহ নেওয়া হয় কমলাপুরে তার বাড়িতে। সেখানে স্থানীয়রা শেষ বিদায় জানায় তাদের অতিপরিচিত জনকে।

কমলাপুরে একটি জানাজার পর আজম খানের কফিন আনা হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানে সঙ্গীতানুরাগী, শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোও ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় প্রয়াত শিল্পীকে।

আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন দল, ছাত্র সংগঠন, সাংস্কৃতিক সংগঠন একে একে শ্রদ্ধা জানায় তার প্রতি। শ্রদ্ধা জানানোর সারিতে ছিলেন পপ সঙ্গীতের অনেক অনুরাগী, যাদের চোখে ছিলো জল। ফুল দেওয়ার সময় কাঁদছিলেন অনেকে। সকাল পৌনে ১০টা থেকে পৌনে ১২টা পর্যন্ত শ্রদ্ধা জানানোর এ পর্বের ব্যবস্থাপনায় ছিলো সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট।

আজম খানের বড় মেয়ে ইমা খান, ছেলে হৃদয় খান, ছোট ভাই লিয়াকত আলী খান খোকা ছিলেন কফিনের পাশে।

কফিনে ফুল দেওয়ার পর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, "আজম খান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার চলে যাওয়ায় সঙ্গীত অঙ্গনে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার নয়। এ গুণী শিল্পীর কাছ থেকে জাতি যা পেয়েছে তা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।"

বিএনপির প্রচার সম্পাদক জয়নুল আবদীন ফারুক বলেন, "মহান এ শিল্পী স্বাধীনতা উত্তর গণসঙ্গীতের মাধ্যমে সঙ্গীত অঙ্গনকে এক উচ্চ আসনে নিয়ে গেছেন।"

আজম খানের দীর্ঘদিনের বন্ধু ফকির আলমগীর বলেন, "খুবই সাধাসিধে জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিলেন আজম খান। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর আমরা একত্রে গণসঙ্গীত গেয়েছি। তাকে হারিয়ে আজ আমি একা হয়ে পড়েছি।"

সবার ভালবাসার ফুলে শ্রদ্ধা জানানোর পর্ব শেষে আজম খানের কফিন নেওয়া হয় বায়তুল মোকাররম মসজিদে। সেখানে জোহরের নামাজের পর জানাজা হবে। এরপর মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে শায়িত হবেন দেশের মানুষের মন জয় করে নেওয়া এ সঙ্গীতশিল্পী।

ব্যান্ড দল উচ্চারণ গড়ার মধ্য দিয়ে সঙ্গীতাঙ্গনে আত্মপ্রকাশকারী আজম খানের মুখগহ্বরের ২০১০ সালে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এ জন্য দুবার তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়েও চিকিৎসা করানো হয়।

তবে আজীবন খেয়ালি আজম খান গত নভেম্বরে সিঙ্গাপুরে শেষ বারের চিকিৎসা সম্পূর্ণ না করেই ফিরে আসেন। শরীরের বিভিন্ন অংশে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ায় শারীরিক অবস্থার উন্নতির কোনো আশা দিতে পারেননি চিকিৎসকরা।

নয় দিন আগে আজম খানের অবস্থার অবনতি ঘটে। সে দিন থেকেই স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন বাংলাদেশে পপ সঙ্গীতের এই অগ্রপথিককে। পরে নেওয়া হয় সিএমএইচে।

১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্র"য়ারি ঢাকার আজিমপুরে জন্ম নেওয়া মাহবুবুল হক খান সঙ্গীতাঙ্গনে পরিচিত হয়ে ওঠেন আজম খান নামে।

৬৯ এর গণঅভ্যূত্থানের সময় বামধারার সাংস্কৃতিক সংগঠন ক্রান্তির সঙ্গে যুক্ত হয়ে গণসঙ্গীত গাইতে দেশের নানা প্রান্তে ছুটেছিলেন আজম খান। ২১ বছর বয়সে অস্ত্র হাতে মুক্তিযুদ্ধে নেমেছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর গঠন করেন ব্যান্ড দল 'উচ্চারণ'। পপ সঙ্গীতকে দেশীয় মেজাজে পরিবেশন করে অচিরেই জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশনে আজম খানের প্রথম কনসার্ট প্রচারিত হয় ১৯৭২ সালে। ১৯৭৪-৭৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে 'রেললাইনের ওই বস্তিতে' গেয়ে স্থান করে নেন বাংলার মানুষের হৃদয়ে। মুক্তিযুদ্ধে সময় বিটলসের জর্জ হ্যারিসনের গাওয়া 'বাংলাদেশ' গানটিই এর প্রেরণা বলে মনে করা হয়।

বাংলাদেশে পপ সঙ্গীতের জনপ্রিয়তা আজম খানের হাত ধরেই। দেশে এ জগতে কিংবদন্তী মনে করা হয় তাকে। আজম খানের কণ্ঠে 'ওরে সালেকা, ওরে মালেকা', 'আলাল ও দুলাল', 'অনামিকা', 'অভিমানী, 'আসি আসি বলে', 'একদিন তো চলে যাবো' গানগুলো এখনো ফেরে মানুষের মুখে মুখে।

আজম খানের জনপ্রিয়তা যে মাত্রার সে তুলনায় তার অ্যালবামের সংখ্যা কম, মাত্র ১৭টি। তার বন্ধুরা বলেন, অর্থ ও প্রচারের মোহে কোনোকালেই আচ্ছন্ন ছিলেন না তিনি।

সঙ্গীতের পাশাপাশি ক্রীড়ানুরাগী হিসেবেও নাম ছিলো তার। প্রায় দশককাল আগে 'গডফাদার' নামে একটি চলচ্চিত্রেও নাম ভূমিকায় অভিনয় করেন তিনি।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×