somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শেয়ার কেলেঙ্কারির হোতাদের বিচারে বাধা কোথায়

১৩ ই জুন, ২০১১ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শেয়ারবাজারে কারসাজির বিষয়ে এ পর্যন্ত মহাজোট সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তাতে সন্তুষ্ট হতে পারেননি দেশের ৩৩ লাখ বিপর্যস্ত বিনিয়োগকারী। তাঁরা বারবার বিভিন্ন ফোরামে সমাবেশ এবং মিছিল করে অবিলম্বে শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অবশ্য বিভিন্ন সময় বলেছেন, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের বিচার করা হবে, তারা যত শক্তিশালীই হোক বা যে দলেরই হোক না কেন। কিন্তু এ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তাতে ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীরা কোনোভাবেই সরকারের প্রতি সন্তুষ্ট হতে পারছেন না।
দীর্ঘদিন গড়িমসির পর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলেও কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিষয়ে এ পর্যন্ত তেমন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না। এতে জনমনে, বিশেষ করে শেয়ারবাজারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ক্ষতিগ্রস্তরা ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের নাম তদন্ত প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে, ছবি সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। দেশের মানুষ ইতিমধ্যে ভালোভাবেই জেনে গেছে কারা এই কেলেঙ্কারির হোতা।
বিরোধী দলের নেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বুধবার বিকল্প বাজেট ভাবনায় পুঁজিবাজার সামলাতে সরকারের চরম ব্যর্থতার কথা জোর দিয়ে বলেছেন। তিনি আরো বলেছেন, 'আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই শেয়ারবাজারে ধস নামে। শেয়ারবাজার কার্যত শিল্পায়ন, উৎপাদন ও উন্নয়নের একটি শক্তিশালী হাতিয়ারে পরিণত হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়েছে কিছু সংখ্যক দুর্বৃত্ত চরিত্রের ব্যবসায়ীর বিত্ত-বৈভব অর্জনের হাতিয়ার।' পুঁজিবাজার থেকে অর্থ লোপাটের অভিযোগ তুলে ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, 'এটি ছিল সরকারের চরম গভর্নেন্স ফেইলিওর। একটি
দেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো যখন যাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে তাদেরই দখলে চলে যায়, তখন আর সেই দেশের কিছুই অবশিষ্ট থাকে না। শেয়ারবাজার ধসের প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রতিবাদীরা হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আমাদের সরকার ক্ষমতায় এসে শেয়ারবাজারে সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনে আর আওয়ামী লীগ তা নস্যাৎ করে দেয়।'
ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে খোদ সরকারি দলের মধ্যেও। ২৩ মে জাতীয় সংসদে শেয়ার কেলেঙ্কারি নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা হয়। খোদ সরকারি দলের সদস্যরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শেয়ারবাজার কারসাজিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে। অস্থিরতা প্রশমনে ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের প্রতি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংসদ সদস্যরা। তাঁরা বলেন, 'গরিব মানুষের টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা মেনে নেওয়া যাবে না।' শেয়ারবাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও জানান তাঁরা।
জাতীয় সংসদে সরকারি দলের সদস্যরা সোচ্চার কণ্ঠে বলেছেন, 'সরকারি দলের কেউ জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।' সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে ক্ষমতাসীন মহাজোটের নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম কড়া ভাষায় অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে আলোচনার সূত্রপাত করেন। তিনি বলেন, 'আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য আওয়ামী লীগ নামধারী কিছু লোক এ কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে। দু-একজনের জন্য আওয়ামী লীগ বা সরকার এ দায় নেবে না।' শেখ সেলিম আরো বলেন, 'তদন্তে শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎকারী বাজিকরদের (গ্যাম্বলার) নাম প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অর্থমন্ত্রী, সংসদীয় কমিটির সভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর শেয়ার কারসাজির ব্যাপারে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'তাঁদের এই সমন্বয়হীন বক্তব্যে শেয়ারবাজারে অস্থিরতা দিন দিন বাড়বে।'
আলোচনায় অংশ নিয়ে এ সময় সরকারি দলের আরেক প্রবীণ সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, 'শেয়ারবাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে হলে অর্থমন্ত্রীকে সর্ষের মধ্যে ভূত খুঁজতে হবে। শেয়ারবাজারের ঘটনায় পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, সর্ষে দিয়ে ভূত তাড়ানো যাবে না। কারণ, ভূত সর্ষেতেই আছে।' অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, 'শেয়ারবাজার কারসাজির ঘটনায় কোথায় দরবেশ, কোথায় ইমাম, কোথায় মোয়াজ্জেম আছে, খুঁজে বের করুন।'
নেতাদের এই বক্তব্যের সময় বারবার টেবিল চাপড়িয়ে অন্য সংসদ সদস্যরা সমর্থন জানান। এ সময় ৩০০ বিধিতে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সংসদকে জানান, 'সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী শেয়ারবাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িত। কিন্তু প্রয়োজনীয় আরো কিছু তথ্যের জন্য তাদের ধরা যাচ্ছে না। তবে জড়িতদের চিহ্নিত করে ধরার চেষ্টা চলছে।' এই মহলটিই উদ্দেশ্যমূলকভাবে শেয়ারবাজারে নানা গুঞ্জন ছড়িয়ে বাজারকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
আমি কালের কণ্ঠের ১০ জুন সংখ্যায় 'যত দোষ তদন্ত কমিটির!' শিরোনামে এক প্রতিবেদনে বলেছিলাম, সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার কারণেই শেয়ারবাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িত প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সুযোগ নিয়েছে। সময়ক্ষেপণের কারণে নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে প্রতিবেদনের কার্যকারিতাকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়া, সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তারের কাজ করাসহ নিজেদের স্বার্থের পক্ষে যা যা করার তাই করে যাচ্ছে। তদন্ত কমিটির প্রধান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ একজন ভালো লোক। ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর স্বার্থে তিনি ভালো কাজটি করেছেন। সেটাকে বিতর্কিত করার জন্য ইতিমধ্যে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির নায়করা বিভিন্ন কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে। তাঁকে হেনস্তা করার জন্য মামলা পর্যন্ত করা হয়েছে। জনগণ ও রাষ্ট্রের পক্ষে কাজ করতে গিয়ে তাঁর এই অবস্থা। রাষ্ট্রের উচিত, তাঁকে প্রোটেকশন দেওয়া। তা না হলে ভবিষ্যতে তদন্ত কমিটির জন্য ভালো লোক পাওয়া যাবে না।
দেশের দুই শীর্ষ নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া চাইলেই পারেন দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করার। তাঁরা চাইলে দেশের চেহারা পাল্টে দিতে পারেন মুহূর্তেই। শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে নেওয়া দুর্বৃত্তদের বিষয়ে দুই নেত্রী এক অবস্থানে থেকে যদি কঠোর মনোভাব পোষণ করেন, তা হলেই কেবল সম্ভব এর বিচার করা। সেক্ষেত্রে দলীয় সংকীর্ণতার ঊধর্ে্ব উঠে দুই নেত্রীকে নিঃস্ব ও অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়াতে হবে। মানুষের প্রত্যাশাও তাই। তা হলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসবে, উচ্চ সুদে ব্যাংক ঋণের মুখাপেক্ষী না থেকে প্রকৃত শিল্পোদ্যোক্তারা শেয়ারবাজার থেকে অর্থ জোগাড় করতে আগ্রহী হবেন, পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় অবকাঠামো নির্মাণের অর্থের জন্য নিতে হবে না শর্তযুক্ত বিদেশি ঋণ। পুঁজিবাজারই তখন হয়ে উঠবে শিল্প ও অবকাঠামো খাতে অর্থায়নের বিকল্প উৎস।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×