উপদেশ বড় মহামূল্যবান, তবে ইতিহাসের মীরজাফর যে উপদেশ দিয়ে ছিল- তাহা ছিল বদ-উপদেশ এবং মহাধংসময়। যুগে যুগে মীরজাফর বদ-চরিত্র যেমন আসবে, সিরাজউদ্দৌলা চরিত্রও থাকবে ভালো চরিত্র হিসেবে। যে যাহা গ্রহণ করে নেয় সময়ে। যখন খুব ছোট ছিলাম, হাকলবেরি ফিন অথবা দস্যু রবিনহুড হতে ইচ্ছে করতো। আশি দিনে বিশ্ব ভ্রমণ পড়তে পড়তে স্বপ্ন দেখতাম বিশ্বটাকে ঘুরে দেখতেই হবে। কিন্তু স্বপ্ন গুলো আসলেই সব পূর্ণতা পায় না, ঠিক তেমনি স্বপ্নগুলোও পূরণ হবে না জেনেও মানুষ স্বপ্ন দেখে। আমি সিরাজউদ্দৌলার মত করুন পরিণতি যেমন চাই না, তেমনি দস্যু রবিনহুডও আমি কি চাইলেই হতে পারি? সবাই পারে না।
একদিন রাশিফল এ দেখলাম- ‘কর্কট রাশি আপনি, মেজাজ আজ গরম করবেন না বেশি।’ আমি হয়ত মেজাজ আরও বেশি গরম করে তুলকালাম কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছি। আপনি হয়ত ভাবছেন- আজ আমার মন খারাপ করার মতন কিছু ঘটবে। কিন্তু সেদিনই দেখলেন- আপনার দিনটা কাটল আনন্দে। এই তো সব কিছুই। মোদ্দা-কথা যে কোণ কিছুরই পক্ষে-বিপক্ষে, এপিঠ-ওপিঠ, ভালো-খারাপ থাকবেই।
সেদিন শাহবাগে ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ গানটি বাজছিল একটি জায়গায়। পাশ দিয়ে যাচ্ছি আর আমিও গাইছি গুনগুন করে। এরই মধ্যে স্পষ্ট শুনলাম এবং দেখলাম, কাধে ঝুলানো ভ্রাম্যমান পান-সিগারেট বিক্রেতা দোকানি ছেলেটিও গাইছে বেশ উচ্চস্বরেই একই গান আর হাঁটছে। বেশ পুলকিত বোধ করলাম। এই ভেবে পুলকিত বোধ করলাম। যে দেশে দেখতে হয়েছে, শুনতে হয়েছিল এমনও সত্যি ঘটনা- রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে যখন যান্ত্রিক গোলযোগ এর কারণে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এর সিডি বাজানো যাচ্ছিল না, ফলে অনুষ্ঠান শুরু করা যাচ্ছিল না। সেখানে মুখে জাতীয় সঙ্গীত পূর্নাঙ্গভাবে শুধুমাত্র বলবে, এমন একজনকেও উপস্থিত এর কাতার থেকে পাওয়া যাচ্ছিল না! একটি রাজনৈতিক দলের কেউই তার জাতীয় সঙ্গীত এর কথাগুলো জানেন না বিধায় শব্দযন্ত্রর উপরই নির্ভর করতে হয়েছিল। আফসোস এর ব্যাপার ছিল সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সরকারী কর্মকর্তারাও পারছিলেন না! আমি অধম আম জনতাকে তাও লাইভ দেখতে হয়েছিল ইলেক্ট্রনিক্স গনমাধ্যমের বদৌলতে।
লুঙ্গী পড়েন লেখক আবুল মকসুদ, আবার ফরহাদ মজহারও লুঙ্গী পড়েন। তাই বলে দুজনকেই কেউ যদি একই কাতারে ফেলেন, তাহলেই তো হয়ে গেলো ভুল। আমার এক বন্ধু প্রশ্ন করছিলো সেদিন- পহেলা বৈশাখ কতটা প্রাচীন, তুমি কি জানো? বললাম- মনে নেই। ও বলল- তুমি কি মনে করার চেষ্টা করবে না? আমি বললাম- হ্যাঁ মনে করার চেষ্টা করবো, কিন্তু যদি না জানি তাহলে জানার চেষ্টাও করবো। পালটা প্রশ্ন ছুড়ে দিলাম- কেন? উত্তরে সে বলল- ফরহাদ মজহার তো এখন নাকি রাজাকারদের মুক্তিযোদ্ধা বলে! মুক্তিযোদ্ধারা শত্রু পক্ষকে যেভাবে ঘায়েল করেছে, তার কারণে নাকি মুক্তিযোদ্ধাদেরও বিচার হতে পারতো বিশেষ ট্রাইব্যুনালে। আসো আমরা তারও আগের ইতিহাসে ফিরে গিয়ে দেখি কোনটা ভুল আর কোনটা শুদ্ধ। শুধু হাসলাম আর ভাবলাম। যে দেশটি তার স্বাধীনতার জন্য অনেকটা বছর লাঞ্ছনা-বঞ্চনা সয়েছে, যে দেশটি তার স্বাধীনতার জন্য তিরিশ লাখ লোকের প্রাণ বিসর্জন হয়। যে দেশের তিনলক্ষ নারীর ইজ্জত লুটে নিয়েছিল শত্রু পক্ষ। সে শত্রুপক্ষের সুরে কথা বলার মতন মানুষ এখনও এ দেশে আছে। মুক্তিযোদ্ধাদেরও বিচার হওয়া উচিত শত্রুদের ঘায়েল করা অপরাধে, এরকম কথা বলার ধৃষ্টতা দেখানোর মতন একজন সুশীল ঘরানার জ্ঞানপাপী লুঙ্গী মজহার যদি থাকতে পারে। সে দেশে হাসনাত আব্দুল হাইরা তো থাকতেই পারে, তাই তো স্বাভাবিক। আশার কথা- হাসনাত আর জ্ঞানপাপী মজহাররা হিট হতে পারে ডিজিটাল যুগে, তবে তারা কখনোই সর্বজন গ্রাহ্য হয় না।
রাজু ভাস্কর্যের সামনে ব্লগারদের গ্রেফতার এর প্রতিবাদে আয়োজিত সমাবেশে আগ বাড়িয়ে কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছিল তরুণ কলাম লেখক ফারুক ওয়াসিফ এর সাথে। উনার প্রতিক্রিয়া জানার জন্য, আমি সরাসরি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছিলাম জানার জন্য- পুরনো সুশীলদের তালিকা আমাদের কি কাচি দিয়ে কেটে ছোট করে ফেলা উচিৎ না? উত্তরে ফারুক ওয়াসিফ বলছিলেন- এত কষ্ট কেন করবেন। আসুন আমরা শত্রু না খুঁজে, মিত্র খুঁজি। আমাদের এখন মিত্র খোজা দরকার। কে যে শত্রু আর কে যে মিত্র, তা যেহেতু বুঝতেই পারি আমরা। আপাতত মিত্র খোজার দিকেই দৃষ্টি দেই। বিপক্ষরা সংগঠিত, আমাদের সবাইর সুসংগঠিত হওয়া দরকার। আমি তৃপ্ত মন নিয়ে বলি- ধন্যবাদ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


