কোরআনে মুসলিম পুরুষদের কোন বহুবিবাহ (৪টা পর্যন্ত) করার নিয়ম বা সুযোগ কিছুই নাই। কোরআন কখোনই একজন পুরুষকে চার বিয়ের অনুমতি দেয়নি। কোরআনের অর্থকে বদলে দিয়ে এই কাজ করেছে বহুগামীরা। আসুন আজকে সত্যিটা দেখে যান।
কোরআনের যে আয়াতকে পুরুষদের চার বিয়ে সপক্ষে উপস্থাপন করা হয় তাহলো ৪, সূরা নিসার ৩ নং আয়াতের খন্ডিতাংশ
আসুন সেই আয়াতাংশটি দেখে নিই
".....সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত।....[সুরা নিসা - ৪:৩]"
এবার আসুন পুরো আয়াতটা দেখি,
"আর যদি তোমরা ভয় কর যে, এতীমদের হক যথাথভাবে পুরণ করতে পারবে না, তবে সেসব মেয়েদের মধ্যে থেকে যাদের ভাল লাগে তাদের বিয়ে করে নাও দুই, তিন, কিংবা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায় সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে, একটিই অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদেরকে; এতেই পক্ষপাতিত্বে জড়িত না হওয়ার অধিকতর সম্ভাবনা। [সুরা নিসা - ৪:৩]"
ট্র্যাডিশনালিস্টদের একগ্রুপ বলে এই আয়াতে নাকি বলেছে এতীমদের দেখভাল করা ঝামেলা তাই সাধারণ মহিলাদের থেকে ৪ টা অবধি বিয়ে করা যাবে তবে, ন্যায়বিচার করতে না পারলে ১টি। অথচ যদি সূরা নিসার ১-১০ আয়াত পড়েন তাহলে একদম পরিষ্কার বুঝতে পারবেন এটি এতীমদের নিয়ে বিধান। এখানে অন্য কিছু নাই।
আবার ট্র্যাডিশনালিস্টদের আরেকগ্রুপ বলছে এই আয়াতে বলা হয়েছে এতীম মেয়েদের নিজের দায়িত্বে রাখার সময়ে তাদের দেখভাল করতে সমস্যা হলে তাদের বিয়ে করে তাদেরকে পরিবারের সম্পদকে ভোগ করা যায়, যাতে কোন সমস্যা নাই।
বিয়ে বলতে কুর'আনে 'না-কা-হা' মূল শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। বিভিন্ন আয়াতে 'বিয়ে করো' নির্দেশ এসেছে, আবার 'বিয়ে দাও' এমন নির্দেশও এসেছে,যা বাক্যসংগঠন ও শব্দে ব্যকরণগত দিকটি বিবেচনা করলে আমরা বুঝতে পারি। বিয়ে করা বলতে 'নাকাহা' এবং বিয়ে দাও বলতে 'আন/উনকিহু' শব্দ ব্যাকরণগতভাবে ক্ষেত্রেবিশেষে প্রযুক্ত হয়েছে। সেই বিশ্লেষণে ৪:৩ আয়াতে 'উনকিহু' কথাটির দ্বারা 'এতিমদেরকে বিয়ে দেয়ার' নির্দেশ দেয়া হচ্ছে প্রতীয়মান হয়।
৪:২৫ আয়াতে সুস্পষ্ট যে 'বিয়ে করো' কথাটি বুঝাতে 'ইয়ানকাহা' এবং 'বিয়ে দাও' বুঝাতে ইনকিহুহুন্না (নারীবাচক বহু বচন) বলা হয়েছে।
বিয়ে দেয়া সম্পর্কিত আয়াতগুলি হচ্ছে-২৮:২৭, ২৪:৩২, ২:২২১।
‘সে বললো, আমি চাই আমার দুই মেয়ের একজনের সাথে তোমায় বিয়ে দিতে (উনকিহা) ...।’ (কুর'আন,২৮:২৭)
‘তোমাদের মধ্যে যারা অবিবাহিত, তাদের বিয়ে দাও (আনকিহু) এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের (ইবাদিকু ওয়া আইমাকুম) মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ন, তাদেরও, যদি তারা গরীব হয়, তবে আললাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছ্বল করে দেবেন; আললাহ সর্বব্যাপী, সর্বজ্ঞ।’(কুর'আন,২৪:৩২)
‘মুশরিক নারীদেরকে বিয়ে করো না (লা তানকিহু) যতোক্ষণ পর্যন্ত না তারা বিশ্বাস আনে, এবং একজন বিশ্বাসী দাসী (আমাতুন, দাসী তৎকালীন সমাজে) মুশরিক নারীর চেয়ে উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মোহিত করে; আর তোমাদের নারীদেরকে মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিও (লা তুনকিহু) না যতোক্ষন পর্যন্ত না তারা বিশ্বাস আনে, এবং একজন বিশ্বাসী দাস (আবদুন) মুশরিক পুরুষের চেয়ে উত্তম,যদিও সে তোমাদেরকে মোহিত করে; তারা তোমাদেরকে আগুনের দিকে আহবান করে,আর আললাহ আহবান করেন জান্নাতের দিকে ও তাঁরই অনুগ্রহে ক্ষমার দিকে; আর তিনি মানুষের জন্য তাঁর নিদর্শনসমূহ পরিষ্কারভাবে বর্ণনা করেন, যেনো তারা স্মরণ করে।‘(কুর'আন,২:২২১)
কোরআন নাজিল হয়েছে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে। সেজন্য কোরআনের আরবির সাথে আধুনিক আরবির কিছু পার্থক্য আছে। কোরআনকে বুঝতে হয় প্যান টেক্সচুয়াল অ্যানালাইসিস, অর্থাৎ কোরআনেই কিভাবে বিভিন্ন শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে তার বিশ্লেষণ দেখে।
এবার চলুন দেখি কোরআন আসলে কি বলেছে। এই সূরা নিসার ১২৭ নং আয়াতে যদি যান তাহলে দেখতে পাবেন,
"আর তারা নারীদের ব্যাপারে তোমার মতামত জানতে চায়। বলো,আল্লাহ তাদের ব্যাপারে তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন এবং কুর’আনে তোমাদেরকে ঐসব এতিম নারীদের বিষয়ে যা যা পাঠ করে শোনানো হয়, যাদেরকে তোমরা নির্ধারিত অধিকার প্রদান করো না,অথচ বিয়ের (তানকিহুহুন্না) বাসনা রাখো; আর নিগৃহীত দুর্বল(/প্রতিবন্ধী) শিশুদের ব্যাপারেও, আর তোমাদের উচিত এতিমদের সাথে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করা। আর যা কিছু ভালো কাজ তোমরা করো, নিশ্চয় আললাহ তা জানেন। [সুরা নিসা - ৪:১২৭]"
তার মানে হলো ১২৭ নং আয়াতে আল্লাহ বলছেন তোমাদেরকে তো এতীমদের ব্যাপারে বিধানাবলী শোনানোই হয়েছে, যা ১-১০ আয়াতই নির্দেশ করে। এছাড়া আল্লাহ বলছে তোমরা মেয়েদেরকে তাদের সম্পত্তি ও প্রাপ্ত সম্পদ দিতে চাও না অথচ তাদের সম্পত্তির লোভে বিয়ে করতে চাও! যা [৪:৩] এ বিয়ে করার কথা বুঝলে পুরোই উল্টো হয়ে যায়। যেমন, আপনি এতিম মেয়েদের সম্পত্তি খরচ করে ফেলতে পারেন সেই ভয়ে আপনি তাদেরকে বিয়ে করে ফেললেন কিন্তু [৪:১২৭] এ যেয়ে আল্লাহ এই কাজটার সমালোচনা করেছেন ! তাহলে জিনিস মিলে নাতো। অর্থাৎ [৪:১২৭] থেকে একদম সুষ্পষ্ট যে এতিম মেয়েদেরকে সম্পত্তির লোভে বিয়ে করা আল্লাহর নির্দেশ লঙ্ঘন।
সূরা নিসা [৪:৩] এ মূলত বলা হয়েছে নারী এতীমদেরকে বিয়ে দিয়ে দিতে যদি তাদের দেখভাল করা সম্ভব না হয়। কখনোই এখানে চার বিয়ের পারমিশন দেয়া হয়নি।
সূরা নিসার প্রথম আয়াতে যদি লক্ষ্য করেন দেখবেন যে আল্লাহ পুরো মানবজাতিকে (ইয়া আয়্যুহান নাস) সম্বোধন করে কথা বলছেন। অর্থাৎ নারী ও পুরুষ উভয়ের উদ্দেশ্যে আল্লাহর কথাগুলো বলা। তো যদি ৪:৩ এ বিয়ে করা বুঝে কেউ তার মানে মেয়েরাও চাইলে মেয়েদেরকে বিয়ে করতে পারবে, অর্থাৎ লেসবিয়ানিজম ! মাজাআল্লাহ ! অর্থাৎ বিয়ে করা কোনভাবেই মিলে না।
এরপরে আরো বড় তামাশা দেখেন অনুবাদে। [৪:৩] এ যে আরবির অনুবাদ করেছে ২ (মাসনা), ৩ (সুলাসা) ও ৪ (রুবায়া) এগুলো কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ২, ৩, ৪ বুঝায় না।
২ এর আরবি হলো ইসনা
৩ এর আরবি হলো সালাসা
৪ এর আরবি হলো আরবা
তাহলে কোরআনের যে আয়াতের ইচ্ছাকৃত ভুল অনুবাদ করে মাসনা, সুলাসা আর রুবায়ার অনুবাদ ২, ৩, ৪ করেছে এগুলোর প্রকৃত অর্থ কি ?
মাসনা মানে ২টা একসাথে (Two's)
সুলাসা মানে ৩টা একসাথে (Three's)
রুবায়া মানে ৪টা একসাথে (Four's)
তার মানে কেউ যদি নিসা [৪:৩] এর অনুবাদে "নিজেই বহুবিবাহ করা' বুঝে তাহলে অর্থ দাঁড়াবে কেউ বহুবিবাহ করতে চাইলে তাকে একসাথেই ২টা, বা ৩টা বা ৪টা বিয়ে করতে হবে। একটা একটা করে বহুবিবাহ করতে পারবে না, একযোগে করতে হবে সব। এছাড়া বিয়েরও কোন লিমিট নাই, কারণ যেকেউ চাইলে ইচ্ছামতো একসাথে ২, ৩ বা ৪ টা করে বিয়ে করে নিতে পারবে। তাহলে কেউ একদিনে ৪টা বিয়ে করে করলে ১০ দিনে বউ দাঁড়াবে ৪০ টায় !!! এগুলো কোনভাবেই কোন সেন্স তৈরি করে না।
মাসনা বা two's এর প্রয়োগও রয়েছে কোরআনে, যেখানে এর দাঁড়া ২ বুঝানো হয়নি, সূরা সাবা, [৩৪:৪৬] এও "মাসনা" শব্দটা আছে [৪:৩] এর মতো। যেখানে এর অর্থ কিন্তু জোড়া (Two's) । তাহলে [৪:৩] দিয়ে যদি নিজেই এতিম মেয়েদেরকে বহুবিবাহ করা বুঝায় তাহলে এর অর্থ হবে একসাথে ২ বিয়ে করতে হবে। একবার একটা করে তারপরে আবার আরেকটার সুযোগ নাই। একসাথেই ২ জনকে বিয়ে করতে হবে। সুলাসার (এক সাথে ৩টা) ক্ষেত্রেও তাই, রুবায়াও (একসাথে ৪টা) একই।
৪ এর আরবি হলো আরবা, রুবায়া না, কোরআনে আরবা বা চার শব্দের প্রয়োগ দেখতে পারেন সূরা নূরের ৪ নাম্বার আয়াতে [২৪:৪]
কাজেই কোরআনের অর্থ বদলে দিয়ে কামনা চরিতার্থ করার একটা অংশ ক্লিয়ার করা হলো। এবার চলেন বিয়ে দেয়ার বিষয়টি আরো ক্লিয়ার হই।
সূরা নিসার ঐ বিয়ের পরের আয়াতেই অর্থাৎ [৪:৪] এ বলা হয়েছে (ট্র্যাডিশনাল অনুবাদকদের করা অর্থ)
"আর তোমরা নারীদেরকে সন্তুষ্টচিত্তে তাদের মোহর দিয়ে দাও, অতঃপর যদি তারা তোমাদের জন্য তা থেকে খুশি হয়ে কিছু ছাড় দেয়, তাহলে তোমরা তা সানন্দে তৃপ্তিসহকারে খাও। [সুরা নিসা - ৪:৪]"
অর্থাৎ [৪:৩] অনুযায়ী এতিম মেয়েদেরকে বিয়ে করে এরপরে ৪:৪ অনুযায়ী মোহরানা দিবেন, এবং তারা কিছু মাফ করলে সেটা ভোগ করতে পারবেন !
আসলেই কি তাই ?
[৪:৪] এ মোহরানা শব্দটাই নাই, আছে সাদাকা, সাদাকা মানে দান; মোহরানা নয়। কোরআনে মোহরানার জন্য স্পেসিফিক আরবি আছে, তাহলো "উজুর" । কোরআনের বিয়ে নিয়ে ৫টা আয়াতে আল্লাহ মোহরানা (mahr) বুঝাতে "উজুরাহুন্না" ব্যবহার করেছেন । মোহরানা অর্থাৎ "উজুরাহুন্নার" সবগুলো আয়াত দেখতে পারেন চাইলে প্রমাণ হিসেবে
মোহরানার নিজস্ব আরবি আছে, উজুর (৪:২৪, ৪:২৫, ৫:৫, ৩৩:৫০)
কাজেই একদম দিনের আলোর মতো স্পষ্ট যে [৪:৪] এ কোন মোহরানাই নাই ! আছে দান করার বা সাদকার কথা। সাদকা হয়ে গেছে মোহরানা !
তো এবারে কি দাঁড়ালো তাহলে, আল্লাহ কোরআনে কি বলেছেন এই কথিত চার বিয়ের আয়াতে ?
আল্লাহ প্রথমেই ইয়া আয়্যুহান নাস বলে পুরো মানবজাতিকে (নারী পুরুষ লিঙ্গ নির্বিশেষে) সম্বোধন করে এতীমদেরকে কিভাবে দেখভাল করতে হবে সেসব বিধান বর্ণনা করেছেন। এতিমদেরকে কিভাবে রক্ষা করতে হবে, দেখভাল করতে হবে, তাদের সম্পত্তি রক্ষা করার কথা, ফেরত দেওয়ার কথা বর্ণনা করেছেন।
[৪:৩] এ আল্লাহ বলেছেন,
‘আর যদি তোমরা সন্দেহ করো এতিমদের সাথে ন্যায়বিচার (তুক্ব'সিতু) করতে পারবে না তবে (এতিম) মেয়েদের মধ্য হতে যেমন সঙ্গত মনে করো বিয়ে দাও দু'জন, তিনজন বা চারজন করে...কিন্তু যদি আশংকা করো ন্যায়সঙ্গত আচরণ (তা'দিলু) করতে পারবে না,তাহলে একজনকে (একজন করে) অথবা যা তোমাদের ডান হাতের অধিকারভুক্ত হয়; এটিই হলো আরও নিকটবর্তী (কার্যকর) পথ, যাতে তোমাদেরকে অবিচার করতে না হয় । [সুরা নিসা - ৪:৩]'
অর্থাৎ এতিমদের লালনপালনে, দেখভাল করতে যেয়ে যদি কেউ (এই কেউ এটা পুরুষ বা নারী উভয়েই হতে পারে, যেহেতেু [৪:১] এ আল্লাহ লিঙ্গ নিরপেক্ষ শব্দ "নাস" বলে সব মানুষকে বুঝিয়েছেন) মনে করে সে সবার প্রতি সমানভাবে খেয়াল রাখতে পারবে না, ভালোমতো দেখাশোনা করতে পারবে না, সেক্ষেত্রে সে তাদের দৈহিক ও বুদ্ধবৃত্তিক ম্যাচুরিটি তথা বিয়ের বয়সে ([৪:৬] দ্রষ্টব্য) পৌঁছলে নারী এতিমদেরকে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। সে বিয়ে কিভাবে দিবেন ? হ্যাঁ সে কথাটাই আল্লাহ বলেছেন [৪:৩] এ। একসাথে ২জন, ৩জন বা ৪জন করে বিয়ে দিতে হবে, একসাথে দিলে বিয়ে আয়োজনের খরচ কম পড়বে যেহেতু, কিন্তু যদি একসাথে বিয়ে দিতে গেলে কারো প্রতি বৈষম্যের আশঙ্কা থাকে, অর্থাৎ কারো প্রতি বেশী খেয়াল রাখা বা কারো প্রতি কম, সেক্ষেত্রে একটি করেই বিয়ে দিতে হবে। বিয়ের সময় বিয়ে আয়োজনে আপনার হয়তো কিছু টাকা খরচ হবে। এই খরচের পরিমাণটা চাইলে এতিম মেয়েরা আপনাকে কম করতে বলতে পারে, যদি তারা বিয়েতে কম খরচের জন্য বলে, আপনি তা করতে পারেন, এটিই আপনার পক্ষ থেকে তাদের জন্য [৪:৪] উল্লেখিত সাদকাতিহিন্না বা দান যার ইচ্ছাকৃত ভুল অনুবাদ মোহরানা করেছে ট্র্যাডিশনালিস্টরা।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এতিম মেয়েদেরকে নাহয় বিয়ে দিলাম তো পুরুষ এতিমদের বেলায় কি হবে ?
এর উত্তরও কোরআনে আছে। চলুন দেখে আসি।
"আর তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে, এতীম সংক্রান্ত হুকুম। বলে দাও, তাদের কাজ-কর্ম সঠিকভাবে গুছিয়ে দেয়া উত্তম আর যদি তাদের ব্যয়ভার নিজের সাথে মিশিয়ে নাও, তাহলে মনে করবে তারা তোমাদের ভাই । বস্তুতঃ অমঙ্গলকামী ও মঙ্গলকামীদেরকে আল্লাহ জানেন। আল্লাহ যদি ইচ্ছা করতেন, তাহলে তোমাদের উপর জটিলতা আরোপ করতে পারতেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী, মহাপ্রজ্ঞ। [সুরা বাকারা - ২:২২০]"
অর্থাৎ আপনি তাদেরকে উপকার করবেন, প্রতিষ্ঠিত হতে সহায়তা করবেন। আর সবচেয়ে ভালো হয় তাদেরকে যদি পরিবারের একজন করে নেন, কারণ তারাও আমাদের ভাই।
কি চমৎকার আল্লাহর বিধান। এতিমদেরকে দেখভাল করার এতো সুন্দর বিধান যদি ঠিকই মানতো তাহলে কোন এতিমখানা লাগতো না মুসলিমদের মাঝে। সব এতিমরা কারো না কারো পরিবারের সদস্য হয়ে থাকতো। তাদের পড়ালেখা, দেখাশোনা, ভালোমন্দ দেখভাল সব করতে হতো সবাইকে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে দেয়া দায়িত্ব।
অথচ এই সুন্দর বিধানকে আজকে কিভাবে চার বিয়ের হাতিয়ার বানানো হয়েছে, ভাবুন একবার !!! যে বিধান আল্লাহ দিলেন এতিমদের কল্যাণার্থে সেটা হয়ে গেলো বহুবিবাহের হাতিয়ার ! এতিমরা এখন এতিমখানায় মানবেতর জীবনযাপন করে, অথচ কোরআনের শিক্ষা তথা আল্লাহর নির্দেশ এর পুরো উল্টা !
তো মানুষ এখন কয়টা করে বিয়ে করবে অর্থাৎ স্ত্রী রাখতে পারবে ?
উত্তর হলো ১টা। জ্বি এটাই কোরআন বলে। [৪:১২৯] এ আল্লাহ বলেন
"আর তোমরা চাইলেও নারীদের (স্ত্রীদের) মধ্যে কখনো সমআচরণ (তা’দিলু) করতে সমর্থ হবে না, অতএব একজনকে উপেক্ষা করে অন্যের প্রতি পুরোপুরি ঝুঁকে পড়ো না; আর যদি তোমরা ভুল সংশোধন করে নাও ও আললাহকে ভয় করো (আললাহ-সচেতন হও) আললাহ ক্ষমাশীল, করুণাময়। আর যদি তারা পৃথক হয়ে যায় তবে আললাহ তাঁর প্রাচুর্য্য থেকে তাদের প্রত্যকেকে স্বচ্ছল করবেন; আল্লাহ সর্বব্যাপী, প্রজ্ঞাময়।’ [সুরা নিসা - ৪:১২৯-১৩০]"
অর্থাৎ একাধিক স্ত্রী থাকলে কখনোই সমান আচরণ করা সম্ভব না, কাজেই বিয়ে করতে হবে একটা। এছাড়া সূরা নিসায় [৪:১০-১২] সম্পত্তিও আল্লাহর আইনে বণ্টন করা যাবে না। এছাড়া ৩৩:০৪ এ উল্লেখ আছে আল্লাহ কোন মানুষকে ২টা হৃদয় দেননি। [৪:২০] এ উল্লেখ আছে একজন স্ত্রীর বদলে আরেকজন স্ত্রী নিতে চায় মানুষ।
মূলত উপরের আয়াতসমূহ এবং [৪:১২৯-৩০] থেকে সুষ্পষ্ট যে একটি বিয়ে করাই কোরআনে বর্ণিত আল্লাহর বিধান।
এখন অনেকে বলতে পারেন রাসূল সা. তো অনেকগুলো বিয়ে করেছেন। তো বহুবিবাহে সমস্যা কি ! এটা তো ঠিকই আছে !
আসুন জিনিসটা একটু যাচাই করে দেখি, কোরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াতটা পড়া যাক,
"হে নাবী! আমি তোমার জন্য বৈধ করেছি তোমার স্ত্রীদেরকে, যাদের মোহর তুমি প্রদান করেছ এবং বৈধ করেছি ‘ফায়’ হিসাবে আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তন্মধ্য হতে যারা তোমার মালিকানাধীন হয়েছে তাদেরকে এবং বিয়ের জন্য বৈধ করেছি তোমার চাচার কন্যা ও ফুফুর কন্যাকে, মামার কন্যা ও খালার কন্যাকে, যারা তোমার সাথে দেশ ত্যাগ করেছে এবং কোন মু’মিনা নারী নাবীর নিকট নিজেকে নিবেদন করলে, এবং নাবী তাকে বিয়ে করতে চাইলে সেও বৈধ। এটা বিশেষ করে তোমারই জন্য, অন্য মু’মিনদের জন্য নয়; যাতে তোমার কোন অসুবিধা না হয়। মু’মিনদের স্ত্রী এবং তাদের মালিকানাধীন দাসীদের সম্বন্ধে যা আমি নির্ধারিত করেছি তা আমি জানি। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। [সুরা আহযাব - ৩৩:৫০]"
ভালো মতো আয়াতটা খেয়াল করুন, এখানে লিখা আছে, "এটা বিশেষ করে তোমার জন্যই, অন্য কোন মুমিনদের জন্য নয়!"
কাজেই বহুবিবাহের যে নিয়ম ছিলো সেটা একমাত্র রাসূল সা. এরজন্যই প্রযোজ্য ছিলো। আর কেউ বহুবিবাহ করার জন্য অনুমতি প্রাপ্ত নয়। কুরআন ১৪০০ বছর আগেই এক বিয়ের বিধান দিয়েছে। এটাই সুন্নাতাল্লাহ, বা আল্লাহর নিয়ম।
সামনে ইসলামের নামে কোরআনের নামে আরো নানা এরকম মিথ্যাচার নিয়ে লিখবো।
কোরআনই আল্লাহ প্রেরিত একমাত্র জীবনবিধান, প্রচলিত হাদীস তাফসীর ফিকাহ এসব সত্য মিথ্যা যেকোনটাই হতে পারে, এবং তা কখনোই কোরআনের সম্পূরক বা সমকক্ষ নয়। কোরআনের বাইরে কোন জিনিস কোন বিধান হতে পারে না। আল্লাহর প্রেরিত একমাত্র গ্রন্থ কুরআন। কাজেই প্রচলিত হাদীস তাফসীর অমুক তমুকের মতে কি আছে সেসব বলতে আসবেন না।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ২:৫৯