somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাঠগোলাপ অথবা কাঁঠালচাপা

০২ রা জুন, ২০১২ দুপুর ১২:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা মহাখালি বক্ষব্যাধি হাসপাতাল
১/২ ওয়ার্ডের ১৩ নং বেড।
অসহ্য যন্ত্রণায় ব্যথায় কাতরাচ্ছেন একজন রুগি। নাম রমেশ বাবু। বয়স আনুমানিক ৬০ বছর। ফুসফুসে ম্যালিগন্যান্ট ক্যান্সার ধরা পড়েছে তার। ফুসফুস থেকে পানি বের করা হল। তবুও কোনো লাভ হল না। তার ফুসফুসে আবার পানি জমতে থাকে। চিকিৎসা চলতে থাকে তার-কান্সারের বিরুদ্ধে। তার সারা শরীরে অসহনীয় মাত্রার ব্যথা আরও অসহনীয় হতে থাকে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের লেটেষ্ট জেনারেশনের এন্টিবায়োটিক, ব্যথা কমানোর ইনজেকশন “Ketorolac Tromethamine” চলতে থাকে। এরকম আরও অনেক ওষুধ ক্রমান্বয়ে চলতে থাকে। অবস্থার কোনো উন্নতি হয় না রমেশ বাবুর। সারাক্ষণ ব্যথায় কাতরাতে থাকেন তিনি। আমরা সান্তনা দেই ইনজেকশন দেয়ার পরেই ব্যথা থেমে যাবে। ব্যথা আর থামে না। আরেকটু পর ব্যথা থামবে। রাত পোহালেই ব্যথা থামবে। ব্যথা আর থামে না। রাতের পর রাত তিনি ঘুমুতে পারেন না। প্রথম প্রথম ডাক্তার- নার্সরা তার কাছে এসে বলত-রমেশ বাবু, একটু সহ্য করেন। কিছুক্ষণ পরেই আপনার ব্যথা কমে যাবে। আমরাও মাঝে-মাঝে কাছে এসে বসতাম- দু-চারটে কথা বলতাম। তার পরিবারের মানুষরা প্রথম দিকে ব্যথায় কাতরানো রমেশ বাবুর সাথে জেগে থাকত। সান্তনা দিত। ব্যথা ভুলানোর নানা ছোট-খাট বুদ্ধি বের করত-প্রয়োগও করত। এভাবে চলতে চলতে একসময় তারাও রমেষ বাবুর ব্যথায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ল। তার পরিবার একসময় বিরক্ত হতে শুরু করে। ব্যথায় কাতরানো রমেশ বাবুর সাথে আর রাত জাগে না। শুভ্র-সুন্দর ঝলমলে সকালে উনাকে দেখতে গিয়ে উনার চোখে বেচে থাকার অদম্য ইচ্ছে। এ সুন্দর পৃথিবী তে বেঁচে থাকতে চান আরও কিছুন দিন। উনার অব্যক্ত কথাগুলি সব শুনতে পাই আমি। এতদিনে উনি নিজেও বুঝতে পেরেছেন যে উনি আর বাঁচবেন না। তবুও তিনি চান এই শেষ সময়ে একটু ব্যথামুক্ত থাকতে-শান্তির ঘুম ঘুমুতে। এখনও মনে পড়ে সেদিনের কথা। যেদিন এই হাসপাতালে ভর্তি করা হল রমেশ বাবুকে। আমি ক’দিন পর গিয়েছিলাম উনার ওয়ার্ডে। একদিন উনার বেডের পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। কথা বললাম। উনি আমাকে “মা” সম্বোধন করলেন। এরপর কেন যেন প্রায়ই যেতাম উনার বেডে। কথা হত বেশ। কতদিন আমার চোখের পাতা ভিজেছে উনার জীবনের কথা শুনতে শুনতে! খুব কষ্ট হত যখন বলতেন যে মা, আমার মেয়েটার বিয়ে দিয়ে যেতে পারলাম না! আমার কষ্টে বুক ভেঙ্গে যেত। মনের ভিতর কেন যেন হু হু করে কেঁদে উঠত। কথায় কথায় একদিন আমার রান্না খেতে চেয়েছিলেন। আমার নানা ব্যস্ততায় আর তখন তার জন্য রান্না করা হয়ে উঠেনি। শেষের দিকে একদিন আমি উনার জন্য রান্না করে হাসপাতালে নিয়ে গেলাম। উনি লোভাতুর দৃষ্টিতে খাবার গুলোর দিকে তাকালেন। কিন্তু খেতে বসে এক বার মুখে নিয়েই আর নিলেন না। শুধু হাত দিয়ে খাবার গুলো নাড়তে থাকলেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি কাকু, রান্না মজা হয় নি? উনি বললেন, মা, তোমার রান্নার স্বাদ আমার মত হতভাগার কপালে বোধ হয় নেই। তুমি বড্ড দেরি করে ফেললে যে মা। ক্যান্সার আমার মুখের স্বাদ যে এরই মাঝে কেড়ে নিয়েছে। মুখে কোনো স্বাদই আর পাই না। রমেশ বাবুর এই কথা শুনে আমার এত খারাপ লাগল যে আমি এর পর থেকে ভালো কিছু খেতে গেলেই উনার কথা মনে হত। আমারও কেন জানি খাবার টা তখন বিস্বাদ লাগত।
রমেশ বাবু আজ আর নেই। অনেক দিন পর আজ পায়েশ খেতে বসে উনার কথা মনে হয়ে আমার বুকটা হু হু করে উঠল।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×