somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি অপেক্ষাকৃত ভালো সমাজ-ব্যবস্থার প্রতীক্ষায়

১৯ শে আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মানবহত্যা একটি আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। একজনের জীবননাশ করার অধিকার রাষ্ট্র কাউকে দেয়নি। সেই মোতাবেক ঐশী আইনের দৃষ্টিতে অপরাধি, এটা অনস্বীকার্য। একইসাথে ঐশী একজন কিশোরি এটাও অনস্বীকার্য। সন্তানের বখে-যাওয়ায় সন্তান নিজে যেমন দায়ী তেমনি তার বাবা-মা, সমাজ এবং রাষ্ট্রও দায়ী। এই ‘দায়’ এর অনুপাত সমাজবিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানী, অপরাধবিজ্ঞানী এবং আইনজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের একটি সমন্বিত বোর্ডই সঠিকভাবে নির্ধারন করতে পারবেন বসে আমি আশাবাদী। এটি অত্যন্ত বেদনার যে নিজ সন্তানের পরিকল্পনায় মৃত্যবরন করতে হল বাবা-মাকে! আমার একটা ‘বটম-লাইন’ আছে সেটা হচ্ছে একটা সন্তান মানসিকভাবে ঠিক কতখানি বিপর্যস্ত হলে সে তার বাবা-মাকে হত্যা করতে পারে! আমি মানলাম সে মাদকাসক্ত। আমার প্রশ্নঃ কেন সে এরকম একটা পরিবারে বড় হবার পরেও মাদকাসক্ত হয়ে গেল? এর উত্তরগুলো দেবার চেষ্টা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের কিছু অধ্যাপক। তাঁরা অত্যন্ত চমৎকারভাবে এই ঘটনাটির ব্যাখ্যা-বিশ্লেষন করেছেন। কিন্তু এর থেকে উত্তোরণের কোন পথ তাঁরা দেখিয়েছেন কিনা সে ব্যাপারে আমি সন্দিহান। এই উত্তর-আধুনিক সমাজে এসে যৌথ পরিবার ভেঙ্গে গিয়ে অনু পরিবার হবে, সেখানে পরিবারের সদস্যদের মাঝে একটা ‘অদৃশ্য’ দূরত্ব থাকবে, বাচ্চারা খেলার মাঠের অভাবে কম্পিউটারে বিনোদন খুঁজবে এবং এসবের ফলাফলস্বরূপ একটা অবশ্যম্ভাবী জটিল-মনোস্তত্ত্ব গড়ে উঠবে আমাদের ভেতর যেখানে হতাশা, ক্লেদ, ক্ষোভ এবং অপ্রাপ্তি পুঞ্জিভূত হতে থাকবে আমাদের প্রতিটি কোষে, এটা তো জানা কথা! এটা কে ঠেকাবে? এই উত্তর-আধুনিকতা আমাদের যেমন দিয়েছে নগর, দিয়েছে চিন্তার স্বাধীনতা, তেমনি দিয়েছে নগরের কংক্রিটে নেচে-বেড়ানো হতাশার এক প্রকান্ড দানব। এর থেকে মুক্তি কিসে আমার জানা নেই। আমার পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক ডঃ এ, আই, মাহবুব উদ্দিন একদিন বলেছিলেনঃ এখনকার বাবা-মারা যারা চাকরি করেন তারা ঘরে যাবার সময় বাচ্চার জন্য একটা কিছু কিনে নিয়ে যায়- ঘুষ হিসেবে। যাতে এই সারাটা দিন বাবা/মা কে না পেয়ে বাচ্চার মনে যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে সেটা সে ভুলে যায় এই গিফট পেয়ে! আচ্ছা, আসলে কি এভাবে ক্ষোভ-ভোলানো যায় না সম্ভব? সেই সন্তানের মনের গহীনে যে ক্লেদ, যে না-পাওয়া ধীরে ধীরে বিষধর সাপ হয়ে উঠছে তা তো একদিন ছোবল দেবেই। সেই সাথে যুক্ত আছে চারপাশের বিষাক্ত এবং উত্তেজনাকর ‘সফিস্টিকেটেড’ পরিবেশ- অপসংস্কৃতির কালো থাবা! চাইলেই কি আমরা আর পেছনে ফিরে যেতে পারব? পারব আবার যৌথ পরিবার গড়ে তুলতে, এই কংক্রিটের আবর্জনাকে ভেঙ্গে সবুজ-সতেজ-পরিকল্পিত একটি নগর গড়ে তুলতে, পারব আকাশ-সংস্কৃতির তীব্র থাবা থেকে আমাদের ক্ষয়িষ্ণু সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে? একবার ভেবে দেখেছি ঐশী তার ১২ পৃষ্ঠার ‘সুইসাইডাল নোটে’ কি বলতে চেয়েছে? দিক হতে দিকচক্রবালে কিসের ইশারা বহন করে চলেছে তার এই চিঠি? কী ভীষন হতাশা তাকে চেপে ধরেছিল যার মাশুল দিতে হল নিজের বাবা-মাকে হারানোর মধ্যদিয়ে! আমি নিজে তার ‘সুইসাইডাল নোটে’ পাওয়া কিছু সুতীব্র অনুভূতির কথা তুলে ধরছি-

• একজনের দুঃখ সাধারণত আরেকজন কখনোই মন থেকে বুঝতে পারে না।
• একটা সময় ছিলো, এমন কোনোদিন যেত না যে আমি কাঁদতাম না। জীবনের দুইটা বছর নষ্ট হয়ে গেল। দুইটা বছর একা একা কাটালাম। এ দুইটা বছর যে কিসের ভেতর দিয়ে গিয়েছি, আমি আর ঈশ্বর ছাড়া আর কেউ জানে না।
• পৃথিবীতে এসে অনেক কষ্ট পেয়েছি ঠিকই, সবচেয়ে বড় কষ্টটা হলো আশা শেষ হয়ে যাওয়ার কষ্ট। তীব্র হতাশা মাথার ওপর ভেঙে পড়ার কষ্ট।
• মরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর এখন সবকিছুই সহজ মনে হচ্ছে। এক ধরনের স্বস্তি বোধ করছি। সবচেয় বেশি স্বস্তি বোধ করছি জীবন যুদ্ধ আর আমাকে করতে হবে না।
• জীবনযুদ্ধে হেরে গেলাম এই কথাটা আগে শুধু বইতে পড়তাম। তখন অনুভব করতে পারিনি, এখন বুঝতে পারছি জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া আসলে কী জিনিস।
• কারণ যে মানুষটা এখন স্বেচ্ছায় আত্মহত্যা করতে যাচ্ছে, তার ভেতরে কী পরিমাণ হতাশা, কষ্ট, দুঃখ থাকলেই না জানি সে এমন একটা কিছু করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে!
• হাজার কষ্টের মধ্যেও লড়াই করে যাই শুধুমাত্র এই জায়গাটাতে টিকে থাকার জন্য, একটু সুখে থাকার জন্য। একটা মানুষের বুক কতটা ভেঙে গেলে এই ধরনের, এই সাধের জীবন, পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারে
• লেখার মতো আরো অনেক কিছুই আছে। কিন্তু আর কিছুই লিখতে পারছি না। জ্বরের জন্য হাত কাঁপছে। শরীর জ্বলন্ত আগুনের মতো গরম। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে। এখন যে কেউ একজন গায়ে হাত রাখবে এমন কেউ নাই। থেকেও যেন নাই। এই কথাটা সত্যি- মানুষ পৃথিবীতে আসে একা, চলেও যায় একা। হায়রে পৃথিবী! কত ভালোবাসার, কত সাধের!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ড্রেনেই পাওয়া যাচ্ছে সংসারের তাবৎ জিনিস

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫০



ঢাকার ড্রেইনে বা খালে কী পাওয়া যায়? এবার ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (উত্তর) একটি অভুতপূর্ব প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। তাতে ঢাকাবাসীদের রুচিবোধ অথবা পরিচ্ছন্নতাবোধ বড় বিষয় ছিল না। বড় বিষয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×