somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামে দু’য়ার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত -০৪

১৩ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ইসলামে দু’য়ার গুরুত্ব, তাৎপর্য ও ফজিলত



আল্লাহপাক সকলের প্রার্থনাই শ্রবণ করেন : দয়ালু আল্লাহ সকলের প্রার্থনা শ্রবণ করেন ও মঞ্জুর করেন। ফেরাউন আখেরাত ত্যাগ করে দুনীয়ার রাজত্ব ও ক্ষমতায় সন্তুষ্ট ছিল। এ সম্পর্কীত একটি কাহিনী রয়েছে। মিশরের কৃষিকাজ নির্ভর করতো নীল নদের জোয়ারের উপর ভিত্তি করে। একবার নীল নদের জলোচ্ছাস বন্ধ হয়ে গেলে প্রজাগণ ফেরাউনের নিকট গিয়ে জানালো, তুমি নিজের খোদায়ী দাবী কর; আর আমরা পানির অভাবে দুর্ভীক্ষে মরতে বসেছি। তোমার এই খোদায়ী কোন দিন কাজে লাগবে? ফেরাউন প্রজাদের প্রশ্নের উত্তরে বললো, আগামীকাল নীল নদে আবশ্যই জলোচ্ছাস হবে। রাতে সে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করল, হে আল্লাহ! আমি এমন উপযুক্ত যদিও নই যে, আমার কোন দু’য়া কবুল হবে, কিন্তু আমার সাহস দেখুন আমি আপনাকে ত্যাগ করেছি, বেহেশতের আশা বিসর্জন দিয়েছি, অনন্তকালের জাহান্নামের শাস্তিকে বরণ করেছি। এ সমস্ত কিছুর বিনিময়ে শুধু একটা প্রার্থনা যে, আপনি আমার একটি দু’য়া কবুল করুন। আমি নীল নদকে আদেশ করামাত্রই যেন তার মধ্যে জলোচ্ছাস আরম্ভ হয়। এর ফলে তার প্রার্থনা কবুল হল এবং নীল নদে জলোচ্ছাসও হল। অভিশপ্ত কাফেরের দু’য়া কিভাবে কবুল হল? এমন প্রশ্ন করে বসবেন না যেন। কেননা আল্লাহ তায়ালা অসীম দয়ালু, তিনি সকলের দু’য়াই কবুল করেন। সবচেয়ে অধিক অভিসাপগ্রস্থ শয়তানের প্রার্থনাও আল্লাহ মঞ্জুর করেছিলেন। আবার সময়টিও এমন ছিল যখন মহান আল্লাহ শয়তানের প্রতি মারাত্বক রকম রাগান্বিত ছিলেন। শয়তান এমন প্রার্থনা করেছিল যা সাধারণত কেউ করে থাকে না, বিচিত্র রাকমের প্রার্থনা যখন কবুল হওয়ার কোন অবকাশও ছিল না। সে দু’য়া করল, “হে আল্লাহ! আমাকে কেয়ামত পর্যন্ত অবকাশ দান করুন।” অথচ আল্লাহর তরফ থেকে অভিশাপ এসেছিল- “ নিশ্চয় তোর প্রতি কিয়ামত দিবস পর্যন্ত আমার অভিশাপ।” এমন বিচিত্র সময়ে বিচিত্র রকমের প্রার্থনা যখন কবুল হয়ে গেল তখন ফিরাউনের দু’য়া কবুল হয়ে যাওয়া এমন কি আর অসম্ভব। আল্লাহ তায়ালা শয়তানের দু’য়া কবুল করলেন, তোমাকে কেয়ামত পর্যান্ত অবকাশ দেওয়া হল।
দৃষ্টান্ত দু’টি মুসলমানদের জন্য বড়ই আশাপ্রদ। কেননা আল্লাহর দরবারে যখন তার শত্রুর দু’য়াও কবুল হয় তখন একত্ববাদে বিশ্বাসী আল্লাহর জিকিরকারী গোলামের দু’য়া কিভাবে নামঞ্জুর হতে পারে।

দুনীয়া ও আখেরাতের কল্যান চেয়ে দু’আ করতে হবে : দুনীয়া ও আখেরাতের কল্যান চেয়ে দু’আ করতে হবে। হযরত আবদুল আজিজ বিন সুহায়েব বলেন, হযরত কাতাদা হযরত আনাসকে রা. জিজ্ঞাসা করেন, হযরত রাসুল স. কোন দুয়া দ্বারা বেশীরভাগ দু’য়া করতেন? হযরত আনাস রা. বলেন- বেশিরভাগ তিনি এই দু’য়া করতেন- “ হে আল্লাহ তুমি আমাদেরকে দুনীয়াতেও কল্যান দান কর ও পরকালেও কল্যান বিহিত কর এবং দোযখের আযাব থেকে রক্ষা কর।” কাতাদা বলেন, হযরত আনাস রা. যখনই কোন দু’আ করার ইচ্ছা করতেন, এ দু’য়া পড়তেন। অন্য কোন দু’য়া করতে চাইলে এ দু’য়ার সাথে করতেন।
আজকাল দু’য়ার উদ্দেশ্য অনেকটা দুনীয়া লাভের হাতিয়ার হয়ে পড়েছে। জৈনক অফিসার তার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করত, “তুমি নামায পড়ে কি পেলে?” এটা শুধু কথার কথা নয় বরং সবৈব সত্যি। আজকাল মহান আল্লাহর এবাদতের পিছনেও কারো কারো দুনীয়া লাভের উদ্দেশ্য কাজ করে থাকে (আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন)। একজন অফিসার মাত্রাতিরিক্ত ঘুষ গ্রহণ করতেন। আমার নামাযের প্রতি তিনি নিষ্ঠাবান ছিলেন। ফজরের নামাযের পরে এশরাক পর্যন্ত তিনি ওযিফা পাঠ করতেন। পীর সাহেবের নিষেধের কারণে তিনি ওযিফা আদায়ের সময় মুখে কোন কথা বলতেন না। মামলায় জড়িত তদবিরকারীদের সাথে তিনি ইশারায় কথা বলতেন। যেমন কোন আগন্তুক তাকে কোন মামলার তদবিরের বিনিময়ে একশত টাকা দিতে সম্মত হলে এক আঙ্গুল দেখাতেন। তিনি সম্মত না হলে দুই আঙ্গুল দেখাতেন অর্থাৎ দুইশত টাকায় তদবির সার্বস্থ করতেন। যেমনটা রফা হতো তদানুযায়ী ঘুষের টাকা গ্রহণ করার জন্য যায়নামাযের কোনা তুলে ধরতেন এবং সেখানেই টাকা জমা পড়তো। এশরাকের নামায পর্যন্ত তিনি কয়েকশ টাকা নিয়ে স্থান ত্যাগ করতেন। সত্য কথা বলতে গেলে আজকাল বিনিময় বা পাওয়া বলতে এটাকেই বুঝায়। এই ধরণের লোক আমাদের সমাজে কম নয়।
আজকাল দুনীয়া লাভের জন্যও দু’য়া করা হয়। মালে বরকত, চাকুরী লাভ, ঋণ মুক্তি, সুস্থতা ইত্যাদি উদ্দেশ্যকে মুখ্য করে দু’য়া করা হয়। দুনীয়া লাভের উদ্দেশ্যে দু’য়া করা নাযায়েজ তা নয় বরং দুনীয়াকে প্রাধান্য না দেয়া এবং আখেরাতের কামিয়াবির উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দুনীয়া চাওয়াটাই উদ্দেশ্য হওয়া বঞ্চনীয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:০৭
১০টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×