somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিডিয়ার বিদ্রোহ , কলংকমুক্তি এবং কিছু কথা...............

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক
১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে বাংলাদেশে ঘটছে একের পর এক কলঙ্কজনক ঘটনা । ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ , ৭৫ এর শেখ মুজিব হত্যা , এরপর জিয়াউর রহমান হত্যা , স্বৈরশাসক এরশাদ কর্তৃক ক্ষমতা দখল , এরশাদ পরবর্তী সময়ে বিএনপি-আওয়ামীলীগের ক্ষমতার দ্বন্দ্ব , বিরোধীপক্ষকে দমন-নির্যাতন , গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা চেষ্টা , কথিত বাংলাভাইদের উত্থান , পিলখানা হত্যাযজ্ঞ , কথিত বন্দুকযুদ্ধের নামে বিরোধী মেধাবী তরুণদের হত্যা , সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়াকে গৃহবন্দী করা , বিশ্বজিৎ হত্যা , বোমা মেরে-পুড়িয়ে মানুষ হত্যা ইত্যাদি হেন কোন কাজ নেই যা বাংলাদেশে ঘটেনি । অথচ সোহরাওয়ারদী , শেরে বাংলা , শেখ মুজিব , শহীদ জিয়া , মাওলানা ভাসানি , নাম না জানা অসংখ্য বীর মুক্তিযুদ্ধা কারোরই স্বপ্ন ছিলনা এমন কলঙ্কযুক্ত বাংলাদেশের । তারা চেয়েছিলেন হানাহানি , সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত সম্প্রীতির এক সোনার বাংলা । আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এবং তার কেবিনেটরা যত-ই বলুক না কেন যে , যুদ্ধাপরাদের বিচারের পর দেশও জাতি কলংকমুক্ত হবে । আমার মনে হয় , দেশও জাতি কখনো কলংকমুক্ত হতে পারবেনা । কারণ , তথাকথিত রাজনীতিকদের ছত্রছায়ায় দেশে আজও ঘটে চলছে একের পর এক কলঙ্কজনক ঘটনা । অপরদিকে একই কথা মাননীয় মন্ত্রীরা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারের সময়ও বলেছিলেন । আর এখন আবার বলছেন , যুদ্ধাপরাদীদের বিচারের পর দেশও জাতি কলংকমুক্ত হবে । তবে, দেশও জাতি কি আদৌ কলংকমুক্ত হবে ? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কঠিন ।
দুই
স্বাধীন বাংলাদেশের কলঙ্কজনক ঘটনাগুলোর অন্যতম হল পিলখানা হত্যাযজ্ঞ । ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি এই ২ দিনে সামান্য ভুল বুঝাবুঝিকে কেন্দ্র করে রচিত হয় ইতিহাসের আরেক কলঙ্কজনক অধ্যায় । তবে এই ঘটনা আজও রহস্যজনক হয়ে আছে এদেশের বিবেকবান মানুষের কাছে । নির্দিষ্ট একটি পক্ষকে দায়ী করে তাদের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ তো আছেই , পাশাপাশি পিলখানা হত্যাযজ্ঞের বিচারের জন্য গঠিত ট্রাইব্যুনালে বেশিরভাগ নামাজী-দাড়িওয়ালা জওয়ানদের শাস্তি প্রদান সন্দেহটাকে আরো প্রকট করে তুলেছে । ২০০৯ সালের ঐদিনে স্থানীয় বিডিয়ার ক্যাম্পের পার্শ্ববর্তী এলাকায় থাকার কারনে দেখেছিলাম জওয়ানদের রণপ্রস্তুতি , শুনেছিলাম রণহুংকার । ঐদিন সকালে হঠাৎ খবর এলো পার্শ্ববর্তী সেনাক্যাম্প থেকে সেনাবাহিনী গুলি করতে করতে বিডিয়ার ক্যাম্পের দিকে এগোচ্ছে । এই খবর সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে দেয় । নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে মানুষ দিকবিদিক ছোটাছুটি শুরু করে । তখন আতংকিত মানুষদের সাহস দিতে বিডিয়াররা হ্যান্ড মাইকে বলেন , কেউ যদি জনগণকে গুলি করতে চায় , তাহলে আমাদের লাশের উপর দিয়ে গিয়ে করতে হবে । আপনারা ভয় পাবেন না । সত্যিই সেদিন অভিভূত হয়েছিলাম তাদের এমন সাহসী উচ্চারণে । বিমোহিত হয়েছিলাম এমন বিপদের দিনে দেশ ও জনগণের প্রতি তাদের ভালোবাসা দেখে ।
তিন
সীমান্তবর্তী এলাকার সন্তান হওয়ায় রাস্তাঘাটে প্রায়-ই দেখা হতো জওয়ানদের সাথে । সালাম দিতাম , অনেক সম্মান করতাম । ছোট হওয়ায় অনেকদিন চকলেট পর্যন্ত হাতে দিয়েছে । আমার স্পষ্ট মনে আছে , একদিন এক জওয়ানের মাথার ক্যাপ পরার বায়না করলে উনি নিজ হাতে আমার মাথায় তা পরিয়ে দেন । অনেক সময় স্থানীয় বাজারের চায়ের দুকানে বসে জওয়ানদের বীরত্বগাঁথা ইতিহাস শুনাতেন আমাদের । বিএসএফের বাড়াবাড়ির কারণে আমরা ভয়ের মধ্যে আছি । আপনারা কি ওদের শায়েস্তা করতে পারেননা ? এমন প্রশ্ন করলে এক জওয়ান বলেন , আমদের তো কিছু করার ( গুলি করার ) অনুমতি নাই , নাহলে শালাদের হাত-পা কেটে বস্তায় ভরে নদীতে ভাসিয়ে দিতাম । এই কথাগুলো যখন বলছিলেন , তখন উনার চোখদুটি ক্রুদ্ধভাবে জ্বলছিলো । সীমান্তে মাঝেমধ্যে সমস্যা হলে আমাদের অভয় দিতেন তারা আর বলতেন সেই এক-ই কথা , এদেশের জনগণের উপর হামলা করতে হলে আমাদের লাশ আর রক্তের স্রোতের উপর দিয়ে হামলা করতে হবে । উনাদের কথায় আশ্বস্ত হতাম আর আশ্চর্য হতাম উনাদের দেশপ্রেম দেখে ।
সেই সাহসী এবং দেশপ্রেমিক বিডিয়ারেরা সামান্য চাল-ডালের কারণে উনাদের ডিজি ও ৫৭ জন সেনা অফিসারসহ ৮৭ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করতে পারেনা । কখনো না । এই দেশের জনগণ বিশেষকরে সীমান্তবর্তী লোকজন , যারা বিডিয়ারদের সাহস ও দেশপ্রেম খুব কাছ থেকে দেখেছে তারা কখনো এটা বিশ্বাস করেনা । সমস্যা লুকিয়ে আছে অন্য জায়গায় । কাদের প্ররোচণায় ? কেন ? কারা বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে চেয়েছিল ? তা আজ জনগণ ধীরে ধীরে উপলব্ধি করতে পারছে । আজ যখন দেখি বিডিয়ার জওয়ানরা এদেশের জনগণকে হত্যা করছে , জনগণের দিকে বন্দুক তাক করছে , রাজনীতির দাবার গুটি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে । তখন মনে মনে ভাবি , হায়! এ কোন বিডিয়ার দেখছি ? এরা কি সেই জওয়ানদের উত্তরসূরি ? যারা বলেছিলো , এদেশের জনগণের উপর হামলা করতে হলে আমাদের লাশ ও রক্তের স্রোতের উপর দিয়ে হামলা করতে হবে । বিশ্বাস করেন , আজও বাড়ীতে গেলে বিডিয়ার জওয়ানদের সাথে দেখা হয় । কিন্তু পারিনা তাদেরকে সালাম দিতে , পারিনা তাদের সাথে একসাথে বসে চা খেতে , পারিনা প্রাণ খুলে গল্প করতে । কেনো যেন মনে হয় এরা আমাদের আপনজন না । কেন যেন মনে হয় , এদের হাত এখন এদেশের জনগণের রক্তে রঞ্জিত । তাই রাজনীতিবিদদের অনুরোধ , দোহাই আল্লাহর , আপনারা বিডিয়ারকে রাজনৈতিক দাবার গুটি হিসেবে ব্যাবহার করবেননা । এরা সীমান্ত পাহারায়-ই থাক । এরা আমাদের গৌরব । আমাদের অহংকার । আমরা চাইনা আমাদের গৌরব ধুলোয় মলিন হোক । আমরা চাই দেশের প্রতিটি ইঞ্চিকে এরা রক্ষা করুক জনগণের অফুরন্ত ভালোবাসা নিয়ে । আমরা তাদের মুখে আবার শুনতে চাই সেই ঐতিহাসিক উক্তি “ জনগণের উপর হামলা করতে হলে আমাদের লাশ ও রক্তের স্রোতের উপর দিয়ে হামলা করতে হবে ” । পরিশেষে বিডিয়ার হত্যাকাণ্ডে যেসব জওয়ান মারা গেছেন , তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করছি । মহান আল্লাহ যেন তাদেরকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করেন । মহান মনিবের কাছে এই মোদের প্রার্থনা ।



সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নেতানিয়াহুও গনহত্যার দায়ে ঘৃণিত নায়ক হিসাবেই ইতিহাসে স্থান করে নিবে

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:৩৮

গত উইকেন্ডে খোদ ইজরাইলে হাজার হাজার ইজরাইলি জনতা নেতানিয়াহুর সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে।
দেখুন, https://www.youtube.com/shorts/HlFc6IxFeRA
ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার উদ্দেশ্যে নেতানিয়াহুর এই হত্যাযজ্ঞ ইজরায়েলকে কতটা নিরাপদ করবে জনসাধারণ আজ সন্দিহান। বরং এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:৩১


আশেপাশের কেউই টের পাইনি
খুন হয়ে বসে আছি সেই কবে ।

প্রথমবার যখন খুন হলাম
সেই কি কষ্ট!
সেই কষ্ট একবারের জন্যও ভুলতে পারিনি এখনো।

ছয় বছর বয়সে মহল্লায় চড়ুইভাতি খেলতে গিয়ে প্রায় দ্বিগুন... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাম গাছ (জামুন কা পেড়)

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

মূল: কৃষণ চন্দর
অনুবাদ: কাজী সায়েমুজ্জামান

গত রাতে ভয়াবহ ঝড় হয়েছে। সেই ঝড়ে সচিবালয়ের লনে একটি জাম গাছ পড়ে গেছে। সকালে মালী দেখলো এক লোক গাছের নিচে চাপা পড়ে আছে।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×