somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিঝুম দ্বীপের নান্দনিক দৃশ্যমালা

১১ ই এপ্রিল, ২০১১ সকাল ৭:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিঝুম দ্বীপ নাম নিলেই গা ছমছম করে। সরকারিভাবে এই দ্বীপের নাম চর ওসমান। এবারের ভ্রমণ ছিল নিঝুম দ্বীপ। ভ্রমণসঙ্গী যথাক্রমে জসিম, কচি, লিটন, মানিক, আলাল, সায়েম, আঃ রহমান এবং কৌতুক রাজা মোস্তাক। বিকাল ৫টায় সদরঘাট থেকে লঞ্চ যাত্রা শুরু করে পরের দিন সকাল ৯টায় গিয়ে পৌঁছলাম নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার অন্তর্গত ইউনিয়ন চর তমুরুদ্দি। এই দীর্ঘ লঞ্চ ভ্রমণে আমাদের আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন পানামা লঞ্চের তত্ত্বাবধানকারী শাহিন ও সোহাগ। চর তমুরুদ্দি গিয়ে এবার জোয়ারের জন্য অপেক্ষা। ততক্ষণে দে ছুট ভ্রমণ সংঘের চর তমুরুদ্দি ঘোরা প্রায় শেষ। উল্লেখ্য, এক যুগ পার করে আসা আমাদের ভ্রমণ পিপাসু দলের এবার নাম রেখেছি ‘দে ছুট ভ্রমণ সংঘ’। দে ছুট নামটি উপস্থিত সবাইকে আলোড়িত করেছে। সায়েমের সৌজন্যে মিষ্টিমুখ করে লঞ্চেই দে ছুটের ব্যানার উন্মোচন করেছি। কাঙ্ক্ষিত জোয়ার এলো। ইঞ্জিনচালিত বোটে করে ছুটেছি এবার নিঝুম দ্বীপে। আহারে আহারে কী যে মজা মেঘনার বুকে! টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা প্রমত্তা মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে প্রায় সন্ধ্যায় পৌঁছলাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি আল্লাহপাকের অপার দয়ার স্বপ্নের সেই নিঝুম দ্বীপ। অবকাশ পর্যটন প্রা. লি.-এর চেয়ারম্যান শিবলুল আযম কোরাইশির সহযোগিতায় আগে থেকেই নিঝুম রিসোর্ট বুকিং করা ছিল। রাত হয়ে যাওয়ায় সেদিন আশপাশে ঘুরে শহীদের হোটেলে গরম গরম ইলিশ ভাজা দিয়ে রাতের খাবার খেয়ে রিসোর্টে ফিরে এলাম। রিসোর্টের পরিবেশ বেশ চমত্কার। মেঘহীন তারাভরা আকাশ, চারদিক নিস্তব্ধ, শুধু জেগে আছে ‘দে ছুট’ বাহিনী। উদ্দেশ্য রাতের সৌন্দর্য উপভোগ করা। জোনাকি পোকার মিটিমিটি আলো হাই ভোল্টেজের বাতির নিচে বাস করা মানুষের জন্য এক অন্যরকম অনুভূতি। সম্মিলিত কণ্ঠে ‘সেই তারা ভরা রাতে, আমি পারিনি বোঝাতে তোমাকে আমার মনের কথা’—শ্রুতিমধুর এই গানটি দিয়ে শেষ হলো রাতের আড্ডা। নিঝুম রিসোর্টের বারান্দায় রাতের আড্ডা দীর্ঘদিন স্মৃতি হয়ে রবে। পরদিন খুব ভোরে বের হয়ে গেলাম দ্বীপের বন্দর টিলা ঘুরতে। পায়ে হেটে গ্রামের মেঠা পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছলাম বন্দর টিলা, নীরব-নিস্তব্ধ কেওড় বন। মাঝে মধ্যে কেওড়া ফল মাটিতে পড়ার শব্দ। নিঝুম রাতের সার্থকতা সম্ভবত এ কারণেই। জোয়ারের পানি নেমে যাওয়ায় ম্যানগ্রোভগুলোকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছিল। এবার দ্বীপের চোখজুড়ানো নিসর্গ সুতার পুলের দিকে যাত্রা। এরই মধ্যে রাতে বারবিকিউ করার জন্য পথেই একটি খাসি ক্রয় করা হলো। দ্বীপের বাসিন্দা ১৩-১৪ বছরের ছেলে রিয়াজ আমাদের গাইড। বয়সে ছোট হলেও গাইড হিসেবে সে দারুণ অভিজ্ঞ। ছোট ডিঙ্গি নৌকায় করে মোক্তাইরার খাল দিয়ে যাচ্ছি, দু’পাশের নৈসর্গিক দৃশ্য শুধু চোখে দেখেই উপভোগ করা সম্ভব। গাইড খালের মাথায় ডিঙ্গি ভেড়াল। কেওড়া বৃক্ষ, অগণিত ম্যানগ্রোভ, চেনা-অচেনা পাখির কলকাকলী, বনের কিছু ভেতরে গেলেই ঝাঁকে ঝাঁকে চিত্রা হরিণের পাল কিন্তু খুবই দুরন্ত। ক্যামেরা তাক করার আগেই লাপাত্তা। ১৯৭৪ সালে তত্কালীন জনৈক বন প্রতিমন্ত্রী বন বিভাগের মাধ্যমে ৭টি হরিণ, পরে আরও ১০টি হরিণ অবমুক্ত করেছিলেন। সেই থেকে এখন প্রায় ২৭ হাজার হরিণের আবাস। এই বনে শিয়াল-কুকুর ছাড়া হিংস্র কোনো জন্তু নেই। তাই নির্ভয়ে বনের ভেতর ঘোরা যায়। প্রয়োজনে আলালের মতো নির্ভাবনায় প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়া যাবে। বন্ধুদের কাছে জায়গাটি তথা নিঝুম দ্বীপ আকর্ষণীয় হওয়ায় আমি বিশেষভাবে আনন্দিত। কারণ ভ্রমণের আয়োজন ও স্থান নির্ধারণ আমাকে করতে হয়। নিঝুক দ্বীপের আয়তন প্রায় দশ হাজার একর। জনসংখ্যা প্রায় ত্রিশ হাজার। দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অতুলনীয়। দক্ষিণে বঙ্গোপাসগার এবং পূর্ব ও পশ্চিমে মেঘনা নদী দ্বারা বেষ্টিত মনমাতানো নিঝুম দ্বীপ। এই দ্বীপে বাস করে বিরল প্রজাতির পানি কাটা পাখি। সরকার ইচ্ছে করলে যোগাগের ব্যবস্থার উন্নয়ন করে নিঝুম দ্বীপকে ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করতে পারে। দেশ-বিদেশের ভ্রমণ পিপাসুদের আকৃষ্ট করার মতো রয়েছে নয়নজুড়ানো নিসর্গের ছোঁয়া। নিঝুম দ্বীপে ঢাকার সদরঘাট টামির্নাল থেকে টিপু ও পানামা একদিন অন্তর বিকাল ৫টায় হাতির চর তমুরুদ্দির উদ্দেশে ছেড়ে যায়। ভাড়া ডাবল সিটের কেবিন ১৫০০ টাকা, ডেকে মাত্র ২০০ টাকা। সড়কপথেও যাওয়া যায়, নৌপথে আরামদায়ক। চর তমুরুদ্দি থেকে ট্রলারে (স্থানীয় ভাষায় টেম্পো) নিঝুম দ্বীপ। ভাড়ার রিজার্ভ ২৫০০ টাকা। রাতে থাকার সরকারি কিংবা বেসরকারি তেমন কোনো হোটেল-মোটেল নেই। তবে অবকাশ পর্যটন লি. পরিচালনায় উপজেলা ডাকবাংলো নিঝুম রিসোর্ট নামে পরিচিত, সেখানেই পর্যটকদের রাতে থাকা নিরাপদ। ভাড়া ডাবল বেড ১০০০ হাজার টাকা। ইলিশ ভাজার স্বাদ নেয়ার জন্য শহিদের ভাতের হোটেল ছাড়া আরও কয়েকটি খাবার হোটেল আছে। দ্বীপ বেড়ানোর জন্য পাবেন ১৪-১৫ বছরের গাইড। বয়সে ছোট হলেও সেবাদানে অভিজ্ঞ ও বিশ্বস্ত। ওদের চার্জ সারাদিন খাবারসহ ১০০ টাকা দিলেই খুশি। সব মিলিয়ে নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণে জনপ্রতি ৫০০০ টাকা হলেই যথেষ্ট। তবে খরচ নির্ভর করে থাকা, খাওয়া এবং যাতায়াতের ওপর। ভ্রমণপিপাসু বন্ধুরা, আর দেরি কেন? হাতে চারদিন সময় নিয়ে ‘দে ছুট’ ভ্রমণ সংঘের মতো আপনারাও ছুটে যান প্রকৃতির অপার দান নিঝুম দ্বীপে।

Click This Link
৮টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×