somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

একান্ত নিনাদ
জানিনা কি জন্য ব্লগ লিখতে শুরু করেছি। হয়তো আমার ভাবনা গুলো প্রকাশ করতে চাই। হয়তো আমার না বলা কথাগুলো, অনুভূতিগুলো অজানার কাছে চিৎকার করে বলতে চাই।প্রকাশ জিনিষটা একটুও সহজ না যখন আপনি একজন ইন্ট্রোভারট। জানিনা কতোটুকু পারবো, কতোদিন পারবো।

ফাইনেন্সিয়াল লিটারেসি নিয়ে কিছু কথা

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্কুলে থাকতে আমাদের কখনো পার্সোনাল ফাইনেন্স নিয়ে কোনো ক্লাস ছিলনা। বাংলাদেশী এজুকেশন সিস্টেমে আমাদের কোর সাবজেক্টগুলো নেয়ার পর ইলেক্টিভস দেয়া হতো হায়ার ম্যাথ, বায়োলজি (সায়েন্সে মেজরদের জন্য) আর নাহলে ছিল বাণিজ্যিক ভূগোল বা কৃষি বিজ্ঞানের মতো বিষয়গুলো। আর ব্যক্তিগতভাবে আমি আর্টস স্টুডেন্টদের ইলেক্টিভস নিয়ে ভালো জানিনা। আমি যে কলেজে ছিলাম, আমাদের ইলেক্টিভ সাব্জেক্টের চয়েস দেয়া হয়েছিল বিজনেস স্ট্যাটিসটিক্স, কম্পিউটার সায়েন্স আর শরটহ্যান্ড।

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে অর্থ (মানি) এর যে ব্যবহার এবং উপযোগীতা ফাইনেন্সিয়াল লিটারেসি বা আর্থিক জ্ঞান হওয়া উচিত অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কিন্তু এর মাধ্যমে আমি এটা বলতে চাচ্ছিনা যে, আমাদের যা পড়ানো হয়, সেগুলো কম গুরুত্বপূর্ণ। কলেজ বলতে আমরা বাংলাদেশে এইচএসসি লেভেলকে বুঝলেও অ্যামেরিকাতে আন্ডারগ্রেজুয়েট এজুকেশন সিস্টেমকে ধরা হয় আর ক্লাস টুয়েল্ভ পর্যন্ত এখানে বলে হাইস্কুল। আমার জানামতে অ্যামেরিকাতে সম্ভবত শুধুমাত্র ৬টি স্টেটে হাইস্কুল লেভেলেই স্টুডেন্টদেরকে পার্সোনাল ফাইনেন্স কোর্স নিতে বলা হয়। স্টেটগুলো হচ্ছে অ্যালাবামা, আইওয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, টেনেসি, ইউটাহ এবং ভারজিনিয়া। কেন এই কোর্স? কারন এই কোর্স একজন স্টুডেন্টের জীবন পরিবর্তন করতে, আর জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ডিসিশন গুলো নিতে তাকে সাহায্য করে।

এই কোর্স নেয়ার জন্য বা এই বিষয়ে পারদর্শী হবার জন্য কিন্তু কাউকে কোনো কিছুতে বিশেষ ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে আসতে হতে হয়না। বরং পার্সোনাল ফাইনেন্স বিষয়ের প্রাথমিক পাঠগুলো একজনকে শিখায় কিভাবে অর্থ অর্জন, সেই অর্থ ঠিক ভাবে ব্যবহার করার মাধ্যমে কিভাবে আরো নতুন অর্থ অর্জন করা যায়। অনেকেই বলতে পারেন অর্থ-এর জন্য আবার শিক্ষা কি? বিবিএ, এমবিএ পড়লেইতো হয়! কেউ আবার বলতে পারেন যারা ব্যবসায় শিক্ষায় পড়েনি তারা কি আবার অর্থ ব্যাবস্থাপনা করতে পারে?

মূলত আমাদের এজুকেশন সিস্টেমে আমরা যে অর্থ ব্যাবস্থাপনার জ্ঞান পাই, তা আমাদের একটা সামগ্রিক প্রাতিষঠানিক অর্থ ও অর্থনীতি সম্পরকে তৈরি করে বটে কিন্তু ব্যাক্তিগত অর্থ ব্যাবস্থাপনার বিষয়ে আমরা তেমন একটা সচেতন হইনা, কখনো কখনো রিলেটও করতে পারিনা। অনেকে এমনকি মনে করেন, আর্থিক ব্যাবস্থাপনায় তারাই ভালো যারা বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশান বা ব্যাবস্থাপনায় পড়েছেন।কিন্তু সত্য়ি কথা বলতে যার যার নিজস্ব আর্থিক ব্যাবস্থাপনার জ্ঞান ও দায়িত্ব তার নিজের আর এই বিষয়ে সবারই সচেতন থাকা জরুরি। এতে করে আপনার আর্থিক নিরাপত্তা আপনি নিজেই নিশ্চিত করার জন্য তৈরি হবেন। আর না হলে হয়তো কোনো লেন্ডার (ঋণদাতা), ক্রেডিট কার্ড স্ক্যামার, কমিশনড ফাইনেন্স প্রফেশনাল আপনার অসচেতনতার সুযোগ নিতে পারে।

আমার এই ব্লগের মূল উদ্দেশ্য থাকবে আমি নিজে এই বিষয়ে আরো জানার চেষ্টা করবো আর নিজে যা জানলাম, সবার সাথে তা শেয়ার করবো আমার ভাষায়। শুরুতে স্কুল, কলেজ সিস্টেম নিয়ে বললাম এই জন্য, কারন আমি নিজেও এই শিক্ষাটা পেয়ে বড় হইনি।জদিও আমি স্কুল, কলেজে বিজনেস পড়েছি, পরে একাউন্টিং পড়েছি কিন্তু আমার নিজস্ব মতামত এই যে, আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সামগ্রিক ভাবে পার্সোনাল ফাইনেন্স ম্যানেজমেন্টের জন্য যথেষ্ট না। এজন্য দরকার ফাইনেন্সিয়াল লিটারেসি।

মূলত ফাইনেন্সিয়াল লিটারেসি একজনকে ৫টি বিষয়ে পারদর্শী করে – বাজেটিং, ডেবট্, ট্যাক্স, ইনভেস্টিং, রিয়েল এস্টেট।

বাজেটিং বলতে আমরা অর্থ নিয়ে কোনো পরিকল্পনাকে ধরতে পারি এখানে। বেশির ভাগ বাজেট সাধারণত মাসিক হয়। এই বাজেটগুলো আমাদেরকে জানায় কোথায় আমরা প্ল্যান-এর চেয়ে বেশি ব্যয় করছি। এখানে উল্লেখ্য যে, ব্যাক্তি হিসেবে আমাদের মাসিক এর পাশাপাশি বাৎসরিক বাজেটও থাকা উচিত। এই বাজেট আমাদেরকে যেমন ব্যয় ব্যবস্থাপনা শিখায়, তেমনি কোথায় আয়-এর ঘাটতি বা আয় ব্যয় এর অসাম্যতা রয়েছে জানা যেতে পারে। একবার যখন আপনার নিজস্ব বাজেট থাকবে তখন আপনি জানতে শুরু করবেন কিভাবে স্পেন্ডিং হ্যাবিটটাও ডেভেলপ করা যায়।

ডেবট্ (বা ঋণ) ম্যানেজমেন্ট আপনাকে বুঝতে সাহায্য করবে কিভাবে ঋণ আমাদের ফাইনেন্সিয়াল লাইফ (অর্থনৈতিক জীবন)- এ ইম্পেক্ট ফেলে এবং আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা কতোটা প্রভাবিত করে। ঋণের ইন্টারেস্ট রেট (সূদহার) আর সেই রেট কিভাবে কম্পাউন্ডিং হয়, আর যদি তা সময় মতো পে-অফ না করা হয় সেই ইন্টারেস্ট কোথায় যেয়ে পৌছায়।

ট্যাক্স সম্পরকে জানলে আমরা জানতে পারবো কিভাবে আমরা ট্যাক্স কমপ্লায়েন্ট হতে পারি। ধরা গেল, আপনি ট্যাক্স নিজে হ্যান্ডেল করেননা, আপনি একজন ট্যাক্স অ্যাডভাইজরের সাহায্য নিয়ে থাকেন, কিন্তু ট্যাক্স-এর বেসিক বিষয়গুলো জানলে আপনি নিয়মের মধ্যে থেকে কিভাবে ট্যাক্স সেইভ করা যায়, কিভাবে ট্যাক্স ডেডলাইনের আগে আরও প্রস্তুত থাকবেন আপনি নিজেই জেনে যাবেন। আমার জানা মতে খুব কম ট্যাক্স অ্যাডভাইজরই আপনাকে এসব বিষয়ে গাইড করবে। বড়জোর তারা ডেডলাইন আসলে আপনার ট্যাক্স রিটার্ন আপনার হয়ে প্রিপেয়ার বা সাবমিট করে দিবে।

ইনভেস্টিং বা বিনিয়োগ সম্পরকে জানার জন্য সবার আসলে করপোরেট ফাইনেন্স বা এসব সম্পর্কে স্পেশালিস্ট হতে হয়না। মোটামুটিভাবে ইনভেস্টমেন্ট অপশনগুলোর মধ্যে বেসিক পার্থক্য কি জানা থাকা উচিত সবার। বেশিরভাগ মানুষ, তা সে যেই পেশায়ই থাকুন, যা করেন, যখন তার কিছু টাকা জমানো থাকে, হয় ব্যাংকে যান সেভিংস বা ফিক্সড ডিপজিট করতে বা বড়জোর কোনো ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার বা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকারের কাছে যান। কিন্তু সত্যি বলতে কিছু বেসিক জিনিষ জানলে আপনি নিজেই জানবেন, কি করা উচিত আপনার বা আপনার সুটেড-বুটেড ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার আপনারই জমানো টাকা দিয়ে কি করছেন জানতে পারবেন।

বাড়ি বা ফ্ল্যাট সম্ভবত একজন মানুষের সবচেয়ে বড় ইনভেস্টমেন্ট আর রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্টের খুটিনাটি বিষয়গুলোও (যেমন মার্কেট ভেলুয়েশন, মর্টগেজ টাইপ, রিপেয়মেণ্ট) তাই সবারই জেনে রাখা ভালো।

অ্যামেরিকাতে একটা স্টাডিতে দেখা গেছে, যেসব হাই স্কুল স্টুডেন্টরা পার্সোনাল ফাইনেন্স কোর্স নিয়েছিল তারা অর্থ ব্যবস্থাপনায় ও স্মার্ট সিদ্ধান্ত নেয়াতে ভালো করেছে। যতদিন পর্যন্ত সব দেশে এই বিষয়টি স্কুল বা কলেজ লেভেলে বাধ্যতামুলক না করবে অন্তত আপনি যদি এই বিষয়টি সম্পরকে জানেন, নিজের পাশাপাশি আপনার সন্তানকেও আপনিই পারবেন ফাইনেন্সিয়ালি লিটারেট করতে। পরিশেষে, জীবনে আপনি যা কিছুই চান বা হতে চান এই ফাইনেন্সিয়াল লিটারেসি বা আর্থিক জ্ঞান আপনাকে সেখানে দ্রুত পোঁছাতে সাহায্য করবে এইটুকুই বলতে পারি।

আমার ব্লগ/ পেইজের জন্য এই টপিক-এ আমি বেশ কিছু শব্দ ব্যবহার করছি বাংলার পাশাপাশি ইংলিশে, কারন আমার মনে হয়েছে মূল বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য আমাদের সেই টার্মটি ব্যবহার করাই যথার্থ হবে যেটিতে আমরা বেশি পরিচিত। আবারো বলছি, এই ব্লগের মাধ্যমে আমার উদ্দেশ্য কাউকে শেখানো না, সোশ্যালি আমরা জানবো, সচেতন হবো আর শেয়ার করবো, যাই আমরা প্রতিনিয়ত জানছি। যদি কারো উপকারে আসে এই প্রচেষ্টা, সেটাই হবে আশাজনক।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ৯:২৭
৮টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×