কাব্য আজ অনেকদিন পর বাড়ি যাচ্ছে।অনেকদিন বাবা মাকে দেখে না সে।পরীক্ষার কারণে বাড়ি যায় না অনেকদিন।আজ সে দুইদিন আগেই বাড়ি গিয়ে সারপ্রাইজ দিবে সবাইকে।
বাসে উঠে কাব্য ভাবতে থাকে বাড়ি গিয়ে কি কি করবে।সবার চেহারা কেমন হবে যখন তাকে হঠাৎ দেখবে।এটা ভেবেই বাচ্চাদের মত তার মন খুশিতে নেচে উঠছে।
কতদিন সে মায়ের হাতের রান্না খায় না।বাবার সাথেও সেভাবে কথা বলা হয়ে উঠে না।
ছোট্ট ভাইটাকে জ্বালায় না অনেকদিন হয়ে গেছে।এবার ইচ্ছেমতো জ্বালাবে ছোট্ট শয়তানকে।
আর বড় আপুটার কানমলাও মিস করছে সে। ভাবতে ভাবতেই সে মুচকি মুচকি হাসে
ব্যাগ থেকে ৩ টা নীল শাড়িটা বের করে।একটা মায়ের জন্য,একটা আপুর জন্য আরেকটা মেঘের জন্য।
ও হ্যা মেঘ... মেঘকে অনেক ভালো লাগে কাব্যের।সে ভাবছে এবার মা কে বলে দিবে কি না।
কাব্যের ভাবনায় ছেদ পরে একটা ধাক্কায়।কিছু বুঝতে পারে না সে।বুকের ভেতর হঠাৎ অনেক ব্যাথা। শ্বাস নিতে পারছে না।কাঁচ এসে বিধেছে তার গায়ে।তার হাতের নীল শাড়িগুলো কালো দেখাচ্ছে.....তার রক্তে ভেসে গেছে শাড়িটা..
আশেপাশে তাকিয়ে দেখে অন্যযাত্রীরাও আহত।আস্তে আস্তে সব ঝাপসা হয়ে যায়।সব......
বাড়ি ফিরে কাব্য।সারপ্রাইজের প্ল্যানটাও ফেল হয় না।পার্থক্য এটাই যে এবারই তার শেষ ঘরে ফেরা...লাশ হয়ে।কাব্য চলে গেছে না ফেরার দেশে।
কাব্য নেই।কিন্তু কাব্যের স্মৃতিগুলো আছে।
তার মা এখনো কাঁদে।রাতে ঘুম থেকে উঠে ভাবতে চায় যে তার খোকা ফিরে আসবে।এ যে এক।দুঃস্বপ্ন।
কাব্যের বাবা শক্ত মানুষ।কিন্তু গোপনে তিনি আজও স্টোর রুমে রাখা কাব্যের পুরনো সাইকেলের সাথে কথা বলেন।" ফিরে আয় বাবা...কোথায় গেলি তুই"
কাব্যের বোন নীল শাড়িটা আকড়ে ধরে বসে থাকে।তার বিয়ের দিন তার চোখ ছোট ভাইকে খুঁজে বেড়ায় যে তার বিয়েতে নাচবে বলেছিল।
ছোট ভাইটা অনেক চঞ্চল ছিল।সে এখনও ছাদে গিয়ে ভাবে ভাইয়া এখনই পিছন দিয়ে এসে তার পিঠে টিকটিকি ছেড়ে দিয়ে বলবে "বড় ভাইকে পাত্তা না দেয়ার শাস্তি ভুগ এখন... নাচ"। সে টিকটিকি আর ভয় পায় না।ভাইয়াকে খুব মিস করে।
আর মেঘ নামের মেয়েটা?তার বিয়ের কথা চলছে।কিছুই বলে না সে।কাব্যের সাথে জীবন নিয়ে দেখা স্বপ্নগুলোও শেষ হয়ে গেছে।সাজানো গোছানো জীবন ওলটপালট হয়ে গেলে তাকে পুনরায় সাজানো অনেক কষ্ট।কাব্যকে সে আজও খুঁজে অবচেতন মনে...
আর বন্ধুগুলোও ভালো আছে।আড্ডা দেয়,মজা করে কিন্তু হাসতে হাসতেও কাব্যের শূন্যতা তাদের আনন্দ মলিন করে দেয়।
রাতে ঘুমানোর আগে ওরাও ভাবে কাব্য এখনই এসে বলবে "হারামি উঠ,কালকে না পরীক্ষা"
জীবনটা একটা গল্পের মত।কাব্যের জীবনের গল্প তো সেই বাস এক্সিডেন্টেই শেষ কিন্তু তার সাথে জুড়ে থাকা মানুষগুলোর গল্প ওলটপালট হয়ে গেছে।
একটা মানুষের মৃত্যু কতগুলো মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলে।
এটা একটা গল্প।কিন্তু হয়ত এটাই সত্যি।মরতে তো হবেই কিন্তু যখন অন্যের অসাবধানতার কারণে মৃত্যু হয় তা মেনে নেয়া কষ্ট।
বাংলাদেশে এ মুহুর্তে সবচেয়ে বড় খুনি হয়ত এই সড়ক দুর্ঘটনা।প্রতিদিন কত কাব্য খুন হচ্ছে এর হিসেব নেই।এত বেশিই হচ্ছে যে একে আর দুর্ঘটনা বলা যায় না...বলতে হয় হত্যা...
নাটোরে সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের উপর দিয়ে নাকি হানিফ পরিবহনের বাস গেছে।ফলে আরো স্পটডেড হয়েছে যাদের বাঁচানো যেত।এর প্রমাণ থাকা সত্বেও কেও কিছু করছে না..
কিন্তু আমরা সুশীল নাগরিক।ফেসবুকে গলাবাজি করব আর দুদিন পর ভুলে যাব।আমাদের উপর দিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত আর হুশ হবে না।তদন্ত কমিটি তো হয়েছেই...আর কি চাই
আমরা।সুশীল মানুষ কি না।