ছবিটার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে সে।অপলক দৃষ্টি....ঠোটের কোণে আসে হালকা মিষ্টি একটা হাসি..এক মুহুর্তে তাকে নিয়ে সারা জীবনের স্বপ্ন দেখা..পরমুহুর্তে বাস্তবতায় ফিরে আসা...এবং একটি দীর্ঘশ্বাসের সাথে ভালোলাগাকে মাটিচাপা দিয়ে ছবিটা থেকে চোখ সরিয়ে নেয়া....
কাব্যের ছবি থেকে চোখ সরিয়ে নেয় মেঘ।প্রতিদিন একই কাজ করে সে।বইয়ের মাঝে খুব যত্ন করে ওর ছবিটা লুকিয়ে রাখে। ফেলেও দিতে পারে না।সারাদিন নানা কাজে ব্যস্ত থাকে সে এক মুহুর্তের জন্যও কাব্যকে মনে পড়ে না।সে মনে পড়তেই দেয় না।কিন্তু যখনই সে অবসর পায় কিভাবে যেন কাব্য তার ভাবনায় চলে আসে।
মেঘ জানে কাব্য তাকে বন্ধুর বেশি কখনো ভাবে নি,ভাববেওও না।কাব্য কখনো মেঘের সাথে সেভাবে আচরণও করে নি।তারপরও কেন যেন মেঘ কাব্যকে ভালোবেসে ফেলে।
সেও চায়নি কাব্যকে চাইতে।কিন্তু যখন বুঝতে পারল কাব্য হয়ত অন্য কাউকে পছন্দ করে তখনই মেঘের মনে অস্থিরতা জন্ম নেয়।বুঝে সে কাব্যকে হারাবার ভয় কাজ করছে তার মনে।সে যে কাব্যকে ভালোবেসে ফেলেছে.... কিন্তু স্বপ্ন সবসময় রঙিন হয় বাস্তবতা সাদাকালো হয়।
রঙিন স্বপ্নের জগত বাস্তবতার ঠিকানা খুঁজে পায় না সহজে।বন্ধুত্বের আড়ে ভালোবাসা লুকিয়ে রাখা মেয়েরা খুব ভালো জানে কিন্তু তারা পারে না রাতের বেলা বালিশকে শুকনো রাখতে...
সব কষ্টগুলো অশ্রু হয়ে ঝরে পরে...কষ্টের কারণ পুরনো হয় কিন্তু কষ্টটা পুরনো হয় না...
মেঘ আজ কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে।আজকের পর সে আর কখনো কাব্যের সামনে আসবে না।আজ তাদের ব্যাচ পার্টি শেষেই চলে যাবে সে শহর ছেড়ে।আজই কাব্যকে শেষ বারের মত দেখবে সে।ভেবেই চোখে পানি আসে।
না কাঁদা যাবে না... সব সাজ নষ্ট হয়ে যাবে।আজ সে কাব্যের জন্য সেজেছে নীল শাড়ি পরে।চায় না কাব্য যদি কখনো জীবনের কোন পর্যায়ে মনে করে তবে এমন কাঁদো চেহারা মনে রাখুক....তবে সে ভাবছে কাব্যকে কি বলবে। শেষ মুহুর্তে মনে হচ্ছে কত কিছু বলা হয় নি ওকে..বলা হয়নি ওকে একবার দেখার জন্য ওর প্রতীক্ষার কথা,তাকে নিয়ে দেখা স্বপ্নের কথা,তার সাথে বুড়ো হতে চাইবার ইচ্ছের কথা...
বাসে উঠে চোখ বন্ধ করে মেঘ....
কাব্য আজ সাদার মাঝে নীল নকশা করা পাঞ্জাবি পড়েছে। সদা হাস্যমুখ কাব্যকে দেখে মেঘ আরেকবার তার প্রেমে পড়ে যায়...কিন্তু এ ভালোবাসা কে যে বিদায় জানাতে হবে....
সে আর পারে না থাকতে।সে কাউকে বিদায় জানায় না।চায়না কারো স্মৃতিতে কোন দুঃখের ছাপ পড়ুক।কাব্যের জন্য লেখা চিঠিটা সে পাঞ্জাবির পকেটে রেখে দিয়েছিল।আরো দুর্বল হবার আগেই সে পা বাড়ায় বাইরের দিকে....
বাসের হর্নের আওয়াজে ঘুম ভাঙে মেঘের।পার্স খুলেই একটা চিরকুট পায় সে।তাতে লেখা "ভালোবাসি" আচ্ছা এটাকি কাব্যের হাতের লেখা।বুঝতে পারে না মেঘ।বাস থেকে নেমে যায় সে।নামতেই দেখে কাব্য দাঁড়িয়ে আছে...
কাব্য শুধু মেঘকে একটা কথাই বলে "আমার খুব ইচ্ছে আমার নাতি নাতনী কে বলব যে তোমাদের দাদী কলেজের শেষদিন নীল শাড়ি পরে নীল পরী হয়ে গিয়েছিল। ইচ্ছেটা পূরণ করবি???? প্লিজ? "
মেঘ ভাবতে পারে না।চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।সে জানে এটা স্বপ্ন।সে ঘুম থেকে উঠতে চায়।সে বুঝতে পারে না।কাব্য মেঘের হাত ধরে..মেঘ চায় এ স্বপ্নটা শেষ না হোক কিন্তু সে ঘুম থেকে উঠতে চায়. অদ্ভুত একটা ভয়মিশ্রিত ভালোলাগার অনুভুতি কাজ করছে তার মাঝে...
আচ্ছা যদি গল্পটা বাস্তব হত তবে মেঘকি আসলেই স্বপ্ন দেখছিল?নাকি সত্যিই তার রাজপুত্র এসে তার স্বপ্ন রাজ্য সত্য করে দিয়েছিল? এমন কি হয়?
থাক না..জানার কি দরকার। মন খারাপের গল্পগুলো আজ নাহয় নাই লিখলাম।ভালোলাগার কথাই আজ লিখি....
স্বপ্ন দেখে যদি একটু শান্তিই পাওয়া যায় তাহলে মন্দ কি? :-) স্বপ্ন আর বাস্তবতার মাঝের পার্থক্য আজকে নাহয় ভুলে গেলাম... আজ নাহয় গল্পেই কিছু স্বপ্ন বাস্তবতার ঠিকানা খুঁজে পাক...
সবার স্বপ্ন সত্য হোক।বেঁচে থাকুক ভালোবাসারা :-)
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:১২