somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বদলে গেল প্রাণের সংজ্ঞা

২১ শে আগস্ট, ২০১১ বিকাল ৪:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কার্বন, হাইড্রোজেন, নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, ফসফরাস এবং সালফার এই ছয়টি উপাদান হচ্ছে আমাদের সকল প্রাণের মূলে। ফসফরাস আমাদের ডিএনএ এবং আরএনএ এর রাসায়নিক গঠনের কেন্দ্রীয় উপাদান, যেগুলোকে আমাদের জিনের মূল হিসেবে আমরা চিহ্নিত করে থাকি। আমাদের প্রাণকে আবার কার্বন ভিক্তিক প্রাণও বলা হয়, কারণ কার্বনের রয়েছে নিজের সাথে নিজেকে যুক্ত করে যৌগিক অনু তৈরী করার ধর্ম। হকিং তার গ্রান্ড ডিজাইন বইয়ে কার্বন ভিক্তিক ব্যতীত প্রাণের কথা বলেছেন। কার্বনের মতই ধর্ম দেখা যায় সিলিকনের মাঝে। তাই হকিং তার বইয়ে বলেছেন বহিঃবিশ্বে আমরা হয়তো কার্বন ভিক্তিক প্রাণ পেলাম না, কিন্তু কে বলতে পারে, সিলিকন ভিক্তিক প্রাণ পেতে পারি। তারপরেও এটি কেবল তাঁর একটি অনুমান ছিল। তাই বহিঃবিশ্বে আমরা শুধু আমাদের মত প্রাণের কথাই চিন্তাই করেছি এবং আমাদের পৃথিবীর পরিবেশের মত আরেকটি পরিবেশই খুঁজছি।


কিন্তু আমরা যে আমাদের নিজেদের বাড়ির সীমানাই ভাল করে জানিনি তার একটি প্রমাণ পাওয়া গেল সাম্প্রতিক নাসার এস্ট্রোবায়োলজি গ্রুপের গবেষণায়। এবার নাসার গবেষকেরা গবেষণায় পেয়েছেন এমন একটি প্রাণ যার গঠন আমাদের প্রাণের গঠন থেকে ভিন্ন। এই গবেষণা আমাদের প্রাণের সংজ্ঞাকে আরো বৃহৎ ব্যাপ্তিতে নিয়ে যাবে, এবং পাঠ্য বইয়ের প্রাণের সংজ্ঞাকে বদলে দিবে। এর ফলে মহাবিশ্বে এখন আমরা শুধু আমাদের পৃথিবীর মতই পরিবেশ খুঁজবো না, কিংবা আমাদের মতই প্রাণ খুঁজবো না। আমরা এখন যে কোন বিরূপ পরিবেশেও প্রাণের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিবো না। এই গবেষণা মহাবিশ্বে প্রাণ খুঁজে পাওয়ার সম্ভাবনাকে আরো অনেক গুণে বাড়িয়ে দিল।

আর্সেনিক আমাদের মত ফসফরাস ভিক্তিক প্রাণের জন্য ক্ষতিকারক। কিন্তু আর্সেনিক এবং ফসফরাসের ধর্ম অনেক কাছাকাছি। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেছিল যে যদি ফসফরাসকে আর্সেনিক দ্বারা প্রতিস্থাপিত করা সম্ভবপর হয় তবে ভিন্ন প্রাণ সম্ভব হলেও হতে পারে। তাই গবেষকেরা যেটা করেছিলো ক্যালিফোর্নিয়ার মুনু লেক, যেখানকার পানি প্রচুর আর্সেনিকযুক্ত, লবনাক্ত, সেখানে হতে কিছু মাইক্রোব সংগ্রহ করেছেন। এই মাইক্রোবগুলো অনেক ক্ষুদ্র আকারের ব্যাকটেরিয়া সদৃশ প্রাণী। বিজ্ঞানীরা এরকম মাইক্রোবকে খুব অল্প ফসফরাস কিন্তু বেশি আর্সেনিক এর মত পরিবেশে রেখে দেখতে পেল যে মাইক্রোবগুলো সেই পরিবেশেও টিকে আছে এবং সংখ্যায় বৃদ্ধি করছে নিজেদেরকে। এর পর গবেষকেরা ফসফরাস সম্পূর্ণ সরিয়ে শুধু আর্সেনিক পূর্ণ পরিবেশে এই মাইক্রোবদেরকে পরীক্ষা করে দেখতে পেল যে সেই পরিবেশেও মাইক্রোবগুলো টিকে থাকছে এবং সংখ্যায় বৃদ্ধি করছে।

এটি একটি সম্পূর্ণ নুতন বিষয় বিজ্ঞানীদের জন্য। কারণ ফসফরাস ভিন্ন প্রাণের সম্ভাবনা বিজ্ঞানীরা কখনো ভাবেননি। দেখা যাচ্ছে যে এই মাইক্রোবগুলোর প্রাণের গঠন এখন সম্পূর্ণ আর্সেনিক ভিক্তিক এবং বিজ্ঞানীরা এই আর্সেনিক কোথায় যুক্ত হয়েছেন সেটাও জানতে পারছেন। এই নুতন মাইক্রোবগুলোর ডিএনএ তে ফসফরাসের বদলে এখন আর্সেনিক যুক্ত হয়েছে। আগের প্রাণের সংজ্ঞায় এদেরকে জীবিত বলা সম্ভবপর ছিল না। কিন্তু এই নুতন মাইক্রোবগুলো জীবিত এবং বংশবৃদ্ধি করছে। অর্থাৎ এদেরকেও এখন আমাদের পাশাপাশি নুতন প্রাণ হিসেবেই চিহ্নিত করতে হবে। এখন আমরা আশা করতে পারি যে অন্য কোন গ্রহেও প্রাণের অস্তিত্ব থাকতে পারে, কিন্তু তারা হতে পারে ভিন্ন রাসায়নিক গঠনের।

বিবর্তন বিদ্যাকেও এখন আবার নুতন ভাবে চিন্তা করতে হবে। শুধু মাত্র একটি ট্রি অফ লাইফ হিসেবে চিন্তা না করে একাধিক ট্রি অফ লাইফকে সম্ভাবনায় রাখতে হবে। কে বলতে পারে হয়তো বিলিয়ন বছর পরে এই আর্সেনিক যুক্ত প্রাণ থেকেও উন্নতর বুদ্ধিমত্তা বিশিষ্ট প্রাণ তৈরী হতে পারে। ততদিন এই মানুষ টিকে থাকবে না কিনা সেটা তারচেয়েও বড় প্রশ্ন। আমরা পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে বেশ উদ্বিগ্ন, ওজোন স্তর নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটলেও, মানুষ বা কার্বন/ফসফরাস ভিক্তিক প্রাণ ধ্বংস হয়ে গেলেও, এই আর্সেনিক ভিক্তিক প্রাণ হয়তো টিকে থাকতে পারে এবং কিংবা নুতন প্রাণের উদ্ভব হতে পারে এবং প্রাণের বিকাশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। কে জানে?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×