somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খেলাঘর

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১১ রাত ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

: হাসছেন কেন?
- না এমনি
: (স্টিয়ারিং হুইলের পেছনে বসে পথের দিকে দৃষ্টি রাখতে রাখতে) বাহ্‌! এমনি এমনি কেও হাসে নাকি?
- না ভাবছি, এই পর্যন্ত আসতে কত কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। এই এরেঞ্জন্ড ম্যারিজের কত যে নিয়ম কানুন! হাসছিলাম এই ভেবে যে, আগের জন্মে একবার বিয়ে করে সব নিয়ম কানুন বোধহয় শিখে আসা উচিত ছিল। বাহ্‌বা আপনাকে নিয়ে ঘুরতে যাব শুনে আপনার খালার মুখখানা যা হয়েছিল!
: হাহা
- উনারা বোধহয় কোনকালে শুনেননি, মেয়ের বাড়িতে এসে মেয়েকে নিয়ে ছেলে ঘুরতে যাবে, তাও আবার মেয়ে ড্রাইভ করে বেড়াবে!
: :-) কিছু মনে করবেন না, আসলে সব মেয়ের পরিবার বোধহয় এমন এক আধটু কনজারভেটিভ।
- আর্‌রে না। মনে করতে যাব কেন!
: আজকেই ফিরবেন?
- হুম সন্ধ্যার ফ্লাইটেই

(হাইওয়ে দিয়ে তর্পা গাড়ীটা নিয়ে যাচ্ছে মসৃণ গতিতে। থেকে থেকে তার দিকে ফিরে তাকাচ্ছি। একদম তর্পার মতো লাগছে তাকে। হাইওয়ের বাঁপাশে সাগরের বুকে রোদের আলো পড়ে চিকচিক করছে। তর্পার চোখেমুখেও এসে লাগছে সেই স্বর্ণালী রঙের আভা। গাড়ীর গ্লাস নামানো থাকায় বাতাস এসে তার চুলে ঢেউ খেলে যাচ্ছে।)

: ছুটি নিয়েছিলেন?
- হুম। আসলে আমার এইখানে আসবার কথা ছিল না। টেনেসী যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলাম আমার এক বন্ধুর সাথে। হঠাৎ করেই আমাকে বলা হল আপনাদের এইখানে আসতে। তাই আর কি করা। বন্ধুকে বললাম পারিবারিক কারণে বাইরে যাচ্ছি। সে অবশ্য ঠিকই আন্দাজ করে ফেলেছে কি "পারিবারিক কারণ"। হাহা।
: এহেম, আমিও না হয় শুনি সেই 'পারিবারিক' কারণ :-)

(উত্তরে শুধু হাসলাম। কিছু বললাম না। হাত বাড়িয়ে কোটের ভেতর আরেকবার যাচায় করে নিলাম ডায়মন্ডের রিং-এর অস্তিত্তটা। মনে পরে গেল মা-ছেলে মিলে পছন্দ করে রিংটা কিনতে যাওয়ার ইতিবৃত্তটা)

...

- তর্পা, গাড়ীটা কোথাও রাখা যায় না?
: শিওর, এই সামনেই দারুণ একটা স্পট আছে। সাগরটাকে বেশ ভালোভাবে দেখা যায়
- বেশ।

(একটু পর কাঙ্খিত জায়গায় পৌঁছে গাড়ী থেকে নেমে প্রাণভরে সাগরের ঘ্রাণ নিতে নিতে তাকে জিজ্ঞেস করলাম-)
- সাগর কেমন লাগে আপনার?
: ভীষণ ভালো!...

(তার "ভীষণ" বলার ধরণটা হঠাৎ এমন ভালো লাগলো মনে হল রিপিটে দিয়ে আবার শুনি। তর্পা বলে চলতে লাগলো...)

আমিতো সুযোগ পেলেই চলে আসি। পাথরের উপর বসে সাগরের পানিতে পা ডুবিয়ে বসে থাকি। ঢেউগুলো যখন একটু পরপর পা ছুঁইয়ে যায় কেমন একটা সুখানুভূতিতে ভরে যায় ভেতরটা। এখানকার ঢেউগুলো আমার ভক্ত জানেন। তর্পা বীচে পা দিয়েছে খবর পেলেই চলে আসে আমার পা-টা ছুঁইয়ে ছুঁইয়ে দেখতে। হিহি

- (তার বলার ধরণে হাসলাম) সাগর আমাকেও ভীষণ টানে। ঢেউগুলোর দিকে তাকিয়ে মনে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকি একমনে। ভাবনার লাগাম দিয় ছেড়ে। কত দূরদূর থেকে ঢেউগুলো ফেনার মুকুট মাথায় চাপিয়ে তর্জন গর্জন করতে করতে ছুটে আসে বালুর সৈকত জয় করবে বলে। কেও কেও সগৌরবে জয়ী হয়ে বিজয়ের ফেনীল হাসি নিয়ে ফিরে, আবার কেও কেও ব্যর্থ হয়ে পরক্ষণেই আগের চাইতে বিকট আরেকটা গর্জন করে আছড়ে পড়ে :-)।

সাগরের কণ্ঠ হতে কেড়ে নিয়ে কথা
সাধ যায় ব্যক্ত করি মানবভাষায়--
শান্ত করে দিই ওই চির ব্যাকুলতা,
সমুদ্রবায়ুর ওই চির হায় হায়।
সাধ যায় মোর গীতে দিবস রজনী
ধ্বনিতে পৃথিবী-ঘেরা সংগীতের ধ্বনি।

: ওয়াও! আপনার লেখা?!
- রবীন্দ্রনাথের :-)
: বাহ্‌! দারুণ তো! (বলতে বলতেই সে আলতো পায়ে হাঁটা ধরলো)

(আমিও হাঁটতে লাগলাম, পাশাপাশি দুজন, সন্তর্পনে। মনে কত নাম না জানা কৌতুহলী অনুভূতি থেকে থেকে উকিঁ মারছে। চোখ রাঙিয়ে ইশারায় তাদের কৌতুহল নিবারণ করছি)

- বলতে যাচ্ছিলাম, "তর্পা, তোমাকে একটা জিনিস দিতে চাইছিলাম"। তার আগে সেই বলে উঠলো-
: ইয়ে আপনাকে কিছু কথা বলার সাহস খুজছিলাম। এখন এইখানে এই সাগরের সামনে দাঁড়িয়ে মনে হচ্ছে কথাগুলো এখন বলা যায়।

(বুকের ভেতর হঠাৎ অজানা শঙ্কায় ধরাস করে উঠলো)

- হুম, নিশ্চই বলুন
: ভাবছি কি ভাবে কথাটা বলি। হুম। প্লীজ কিছু মনে নিবেন না। আসলে আমি মনে মনে যাকে আমার..মানে আমার হাজবেন্ড কল্পনা করছিলাম সে আপনি নন।

আমার কোটের ভেতর রিং-এর বক্স ধরা হাতটা সেখানেই স্থির হয়ে গেল। বলার মত কথা খুজছিলাম। কিন্তু মনে হল তার উচ্চারিত শব্দগুলো যেন সেই বিশাল আকাশে তখনো ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। সাগরের তর্জন গর্জন চাপিয়ে শুধু একটা কথায় কানে ভাসছে, "আপনি নন"। আশার বালুতটে মনে মনে স্বপ্নের যে খেলাঘর সাজাচ্ছিলাম মনে হল এক নিমিষেই একটা শব্দের ঢেউ এসে সব ধুয়ে মুছে দিয়ে গেল।

কাল সারাটি রাত শুয়ে শুয়ে কল্পনা করেছি কিভাবে তার আঙ্গুলে আমার ছোট্ট এই সম্মতির চিহ্নখানা পড়িয়ে দিব। কল্পনায় ভেসেছে তার উজ্জ্বল দীপ্তিময় মুখখানা...সূর্যরশ্মির বিকিরিত আলো আংটিতে পড়ে কিভাবে তার মুখের ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়েছে ঘুরে ফিরে শুধু সেই দৃশ্যটায় মনে পড়ছিল। একবারও মনে আসেনি প্রত্যাখ্যিত হওয়ার আশংকার কথা...

...

: এই আপনি কই হারালেন...কি ভাবছেন?
- উম, এহ্‌ ওহ্‌ না কিছু না। (আশেপাশে তাকিয়ে দেখি তখনো গাড়ীতে দুজন। বাইরে সূর্যদেব তখনো চোখে গগলস লাগিয়ে সমুদ্রদেবীর সাথে রসায়নে ব্যস্ত...একটা হাঁফ ছাড়লাম মনে মনে। মনে হল একটু আগে কল্পনায় ধরা দেয়া দৃশ্যগুলো যেন পেছনে ফেলে আসা পথের মতোই মিলিয়ে গিয়েছে)
: হাবিবের গান শুনেন?
- হুম শুনিতো মাঝে মাঝে

(সে একটা গান ছেড়ে দিল। বেশ ছন্দ আছে গানটায়। সুরগুলো, শব্দগুলো কেমন দোলা দিয়ে দিয়ে কোন একটা প্রণয় সম্ভাবনার আগমনী গান গেয়ে বেড়াচ্ছে যেন। দারুণ লাগছে)

: হঠাৎ এমন চুপচাপ হয়ে গেলেন যে?
- (হেসে বললাম) কই নাতো

হঠাৎ তার সেল ফোনটা বেজে উঠলো...সে নাম্বারটা দেখে হেসে বলে, "দিয়া"...মানে তার ছোট বোন...সে গাড়ীর গ্লাস তুলে দিয়ে স্পীকারেই কথা বলতে লাগলো-

: কি রে?
- তোমরা কই? কয়টা বাজে খেয়াল আছে? সবাই এদিকে ভেবে সারা...তোমরা কি সব কথা বিয়ের আগেই বলে ফেলবে নাকি?

আমার মুখ দিয়ে হাসি বেড়িয়ে গেল অজান্তে। তর্পা এইদিকে ফোনটা স্পীকার থেকে হাতে নিয়ে নিল...ওপাশ থেকে হাসির শব্দ...আর এই প্রান্তে, "আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে, তোকে আর পন্ডিতি করতে হবে না...রাখছি", বলে রেখে মিষ্টি করে হাসতে লাগল, বললো "একেবারে বান্দর হয়েছে"

আমার মনের ভেতর তখন প্রজাপতি ডানা মেলে উড়ে বেড়াতে শুরু করেছে...হাবিব এর গানটা তখনো বাজছে...বলেই ফেললাম,

- তর্পা, গাড়ীটা কোথাও রাখা যায় না?
: (সে আমার দিকে চাইলো একবার। তারপর হেসে বললো) আচ্ছা :-)

২৬টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×