আমি এমন কেউ নই যার জীবনের ছোট ছোট ঘটনা গুলো অনেক মানুষ জানবে বা মনে রাখবে। আবার এটাও ঠিক সময়ের সাথে আমি নিজেও হয়তো অনেক কিছু ভুলে যাব। আমি যখন হারিয়ে যাবো সেগুলোও হারিয়ে যাবে। কাজেই স্মৃতিগুলোকে ধরে রাখার দায়িত্ব শুধুই আমার। এ কারণেই এ লেখার শুরু।একজন ও যদি পড়ে সেটাই অনেক। অচেনা-অজানা কেউতো একজন আমার সময় গুলো জানবে। দেখা যাক কতটুকু পারি।
আমরা বইবেলাঃ স্কুল জীবনে বইয়ের পোকা ছিলাম আমরা কয়েকজন। গোগ্রাসে গিলতাম তিন গোয়েন্দা, সেবার কিশোর ক্ল্যাসিক, কিশোর তারোকালোক, কুয়াশা, সায়েন্স ফিকশন।আর চলতো বইয়ের আদান প্রদান। যে স্যার বা ম্যাডামের ক্লাস বিরক্ত লাগতো , তার ক্লাসে পাঠ্য বইয়ের ফাঁকে থাকতো গল্পের বই। ভালোই চল ছিল এভাবে। কিন্তু একদিন নাজমা আপা ক্লাসে এসেই ক্যাপ্টেনকে হুকুম দিলেন গল্পের বই অভিযান চালাতে। সেদিন আমার ব্যাগে এবং ডেস্কে না হলেও ৩/৪ টা বই।ভয়ে তো হাল খারাপ। ধরা পরলে শ্যাস। সৌভাগ্যক্রমে বসে ছিলাম ক্লাসের মাঝামাঝি। আমার কাছে আসতে আসতে মাথায় বুদ্ধি এলো বইগুলো চেয়ারে রেখে তার উপর বসে পড়লে কেমন হয়। কাউকে তো আর সিট থেকে উঠিয়ে চেক করছে না।যে ভাবা সে কাজ। এবং সেদিন সত্যি আমি ছাড়া ক্লাসের বাকী সবার বই জব্দ হয়েছিল।
আমার স্কুল জীবনে আমার টিচার ছিল আমার বাপি।বইয়ের ভেতর বই রেখে পড়া বাসাতেও চলত।তাতেও যেন হচ্ছিল না। আমার তখন মাথায় বুদ্ধি এল বাথরুমে তো বসেই থাকি ঐ সময়টুকু কাজে লাগালেই তো পারি।আর কী এর পর থেকে শুরু আমার বাথ্মরুমে বই পড়া।মাঝে মাঝেই মামনির হাতের নরম-গরম চড় খাবার পরও আমি আমার পড়া চালিয়ে যাচ্ছি। বিরক্ত হয়ে আম্মাজান বাপিকে বলে দিল এবং একদিন তার হাতে ধরা পড়লাম। থাক সেই কথা আর মনে করতে চাই না
আমার সুখের আকাশে কালো মেঘ কয়দিন আর ভালো লাগে। এর মধ্যে বাসায় এল মেজমামা আর মামীমা।ভাবলাম এই সুযোগ। তারা বাসায় থাকলে তো আর বাপি-মামনি কিছু বলবে না। আবার শুরু করলাম বাথরুম অভিযান। কপালে সুখ সইল না। ভুল করে কিশোরতারকালোক তাকের উপর রেখে চলে এলাম।আর কী....বাপি র হাতেই পড়ল।
আমাকে বাঁচাতে মামা-মামী ছুটে এলেন এবং কাহিনি শুনে থ। মামী কিশোরতারকালোক দেখে হাসতে হাসতে বলল, "আমি তো ভাবছিলাম অন্যরকম কোন বই আর বাথরুমে যেয়ে বই পড়ার কী হলো!!!!!"
আমার মহৎ চিন্তাটার কেউ কোন দামই দিলো না।
এই ঘটনা পড়ে কেউ এটা মনে কইরেন না যে আমার আব্বাজান বা আম্মাজান বই পড়ার বিপক্ষে। তারাই কিনে দিত। প্রতিবছর বার্ষিক পরীক্ষার পর একটা বাজেট দেওয়া হত বই কেনার জন্য।
তিন গোয়েন্দা পড়ার আমাদের একটা আলদা গ্রুপ ছিল। আমরা নিজেরা নিজেদের তিন গোয়েন্দার চরিত্রগুলোর নাম ধরে ডাকতাম।আমি ছিলাম মুসা আমান, লিমা-কিশোর পাশা, স্নিগ্ধা-রবিন মিলফোর্ড, তৃণা-জিনা, জেসমিন-ফগ র্যাম্পার আর চুমকি-রাফিয়ানা(জিনার কুকুর)।চুমকি ভয়াবহ খেপত যখন ওকে রাফি বলা হত।
(চলবে)