আমার শৈশব ১ -----১ম ব্যাঞ্চে বসা !!
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
স্কুল হোস্টেলে থাকার সময় নিয়ম ছিল ক্লাসে সব সময় ১ম ব্যাঞ্চে বসতে হবে।না বসলে জালি বেতের মাইর কনফার্ম।প্রতিদিন আসরের নামাজ পরে দাঁড়াতে বলা হত কারা ১ম ব্যাঞ্চ এ বসতে পারেনি তাদের এবং সে অনুযায়ী বেতের বাড়ি।আমার সামনে বসতে একদমই ভালো লাগত না,কিভাবে লাগবে? পড়ানোর সময় স্যারদের দিকে মনোযোগ দেয়া,স্যারদের প্রশ্নের উত্তর দেয়া,ক্লাসে কথা না বলা।এসব করা যায় নাকি ? ক্লাসে যেতাম ই তো গল্প গুজব করার জন্য,তাছাড়া আমার ইয়ার দোস্তরা সব পেছনের ব্যাঞ্চে বসত আর সেখানে বসে বোরিং ক্লাসে নানা রকম মজার কাজ করা যেতে যেমন তিন গোয়েন্দা পড়া,আলপিন বা কমিক্স পড়া।ব্যাঞ্চের সীমানা নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাটা চরম মজা লাগত।নিয়ম টা এমন ছিল ব্যাঞ্চকে স্কেল দিয়ে মেপে ৪টা ভাগ করে দাগ দিয়ে প্রত্যেকের জন্য আলাদা সীমানা দাগ দিয়ে দেয়া হত আর এই সীমানার বাইরে যার হাত পা শরীরের কোন অংশ আসবে সেই অংশটাকে নিজের মনে করে কিল,ঘুষি,কলমের খোঁচা দেয়ার অধিকার যার সীমানায় আসবে তার ছিল।তবে আচার ঝাল মুড়ি ফুচকা খাওয়ালে পাশের জনের সাথে শান্তি চুক্তি করা যেত।তো এভাবেই এই খেলা খেলতে খেলেতেই বোরিং ক্লাস গুলো পার করতাম।১ম ব্যাঞ্চে বসার নিয়ম হলেও আমরা সবাই পেছনেই বসতাম বিকেলে হাউজ টিউটর দাঁড়াতে বললে দাঁড়াতাম না।এভাবে অনেক দিন যাবার পর একদিন হাউজ টিউটরকে একজন বলে দেয় যে আমরা নিয়মিত পেছনে বসি কিন্তু দাঁড়ানোর সময় দাড়াই নাই।হাউজ টিউটর আমাদের কে নিজে একদিন দেখেও যায়,সেদিন আমাদের জন্য ৩ টা বেত তেল দিয়ে বিশেষ ভাবে যত্ন করে রেখে দেয়।সেদিন আসর নামাজের আগেই আমরা জেনে যাই কেউ আমাদের নামে নালিশ করেছে এবং হাউজ টিউটর যিনি আমাদের স্কুলের টিচারও দেখে গেছে আমাদের।শোনার সাথে সাথে এটাও জেনে যাই যে আমাদের জন্য ৩টা বেত রেডি আছে।চারজনই ভয়ে আধমরা।আজকে আমরা শেষ!আমাকে বলল দোস্ত কিছু একটা কর।দরকার হলে মাওলানার পায়ে পরব কিন্তু বেতের বারি খেতে পারব না।আমিও ভাবছি কি করা যায়।শেষ মেস বললাম এক কাজ কর দাঁড়াতে বললে আমরা দাঁড়াব না,যা হবার হবে।একজন ছাড়া বাকি গুলো বলল আমার কোন বুদ্ধিই নাকি শোনবে না,আমার সাথে চললেই নাকি বিপদ।নইলে আজকে মার খাওয়া লাগত না।যাই হোক সেদিন দুইজন সামনে ব্যাঞ্চে বসেনি বলে প্রচন্ড মার খেল , সেদিন একটু বেশীই মার দেয় কারন ওরা প্রতিদিন মিথ্যা বলত,সবার জন্য মারটা উদাহরন হিসেবেও যাতে থাকে ।এরপর আসল আমাদের পালা।নামাজের রুম জুরে থমথমে অবস্থা।মাওলানা আমাদের নাম ধরে হুঙ্কার দিয়ে বলে এই তোরা দাড়াসনি কেন?আমি তো দেখলাম পেছনে বসেছিস,আমার সাথে মিথ্যা? ৩টা বেত তো ছিলই আরও ২ টা আনবার জন্য বললেন।ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে আর আমার সাথের বন্ধু তো ভয়ে প্রায় অজ্ঞান হয় হয় দশা। মাওলানা আমার সামনে আসতেই সাহস করে বলে ফেললাম হুজুর আমরা তো সব সময় ১ম ব্যাঞ্চেই বসি।আজকেও বসছি।মাওলানা বলে ফাজিল আমি নিজ চোখে দেখলাম তোরা পেছনে বসেছিস আর বলছিস ১ম ব্যাঞ্চে। বেতের বাড়ি দিবে এমন সময় বললাম হুজুর আপনার ই তো দোষ আপনি তো বলেননি যে সব সময় সামনের দিক থেকে ১ম ব্যাঞ্চে বসতে,আপনি বলেছেন খালি ১ম ব্যাঞ্চে।তাই আমরা ১ম ব্যাঞ্চেই বসি পেছনের দিক থেকে।মারতে গিয়েও মাওলানা ফিক করে হেসে ফেলেছিলেন।আমার কান টেনে বললেন তুই দেখি ফাজিলের হাড্ডি।এই বুদ্ধি নিয়ে ঘুমাস তাইনা?
সেদিন আর মার খেতে হয়নি।তবে নতুন নিয়ম হয়েছিল যে সামনের দিক থেকে ১ম ব্যাঞ্চ এ বসতে হবে আর মাওলানা নিজে চেক করে যাবেন দুই বন্ধু যারা মার খেয়েছে তারা অনেক আফসোস করেছিল কেন আমার সাথে ছিল না।মার না খাওয়া বন্ধুটার কাছ থেকে চকবার আদায় করেছিলাম।যে আমাদের নামে নালিশ করেছিল তাকে তার মত করেই প্রতিশোধ নিয়েছিলাম।সেটা পরের গল্পে
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক
আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।
“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন
কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য
ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার
(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭
ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।
এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন
একাত্তরের এই দিনে
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন
হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে
তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন