হযরত আবু হুরায়রাহ(রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে রাসুলুল্লাহ(সঃ) বলেছেন “মহান আল্লাহ্ এই উম্মতের জন্য প্রতি শতাব্দীর শুরুতে একজন মুজাদ্দিদ পাঠাবেন যিনি ঐ সময়ে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাকে সঞ্চারিত করবেন” (সুনান আবু দাউদ ৫/১০০)
ইমাম মেহেদী যে শেষ সময়ের মুজাদ্দিদ এই বিষয়ে সুস্পষ্ট হাদিস বর্ণিত আছে ।
হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুল (সঃ) বলেছেন,
“এই পৃথিবীর যদি মাত্র একদিন বাকি থাকে আল্লাহ্ সেই দিনটিকে প্রলম্বিত করে দিবেন যতক্ষন না আমার বংশধরের থেকে একজন প্রেরিত হয়।”
(সুনান আবু দাউদ, ৫/৯২)
ইমাম মেহেদীর আগমন সংক্রান্ত যেসব আলামত হাদিসে বর্ণিত আছে তা এই হিজরি শতাব্দীতে (১৪০০) এমনভাবে প্রকাশিত হচ্ছে যেমনভাবে একটি পুঁথির মালা ছিড়ে গেলে পুঁথিগুলো পরপর পড়তে থাকে। সেই হিসাবে এটা বলাই যায় যে ইমাম মেহেদী এই এই হিজরি শতকে আত্মপ্রকাশ করবেন। বর্তমান সময়ে তুরুস্কের লেখক হারুন ইয়াহিয়া এই বিষয়টিকে পবিত্র কোরআন এবং সহীহ হাদিসের আলোকে তুলে ধরেছেন। তার লেখার বাংলা অনুবাদ সেভাবে করা হয়নি। সম্মানিত পাঠকদেরকে এই বিষয়ে জানাবার প্রয়াস থেকে এই উদ্যোগ। আমরা ইতিপূর্বে আমাদের আগের পোস্টগুলোতে ইমাম মেহেদী আসার ব্যাপারে ধর্মীয় আলামতগুলো প্রকাশ করেছি যা নিচের লিংকে পাওয়া যাবে। এই পোস্টে ইমাম মেহেদী আসা বিষয়ক মহাজাগতিক আলামতগুলোর মধ্যে দুটি তুলে ধরেছি প্রয়োজনীয় রেফারেন্সসহ। পরবর্তীতে বাকিগুলো দেওয়া হবে ইনশাআল্লাহ্।
আগের পোস্টসমূহ
মহাজাগতিক আলামত
রমজানমাসেচন্দ্রএবংসূর্যগ্রহনহওয়া।
ধূমকেতুরউদ্ভব।
পূর্বদিগন্তেআলোকঝলকানি।
দুইলেজবিশিষ্টধূমকেতুরআগমন।
মহাকাশেহাতেরআকৃতিরউদ্ভব।
সূর্যেআলামতেরপ্রকাশ।
ইমাম মেহেদীর অপেক্ষায়ঃ রমজান মাসে চন্দ্র এবং সূর্য গ্রহন হওয়া।
“ইমাম মেহেদী আসার দুইটা নিদর্শন...... রমজানের প্রথম রাতে চন্দ্রগ্রহন এবং দ্বিতীয়টা হোলো এই মাসের মধ্যবর্তী সময়ে সূর্যগ্রহন।”
(ইবনে হাযার আল হাইতামী, আল- কাওয়াল আল মুখতাসার ফি আলামাত আল মেহদী আল মুন্তাধার, পৃঃ ৪৯)
(মুহাম্মাদ ইবনে আবদ আল – রাসুল বারযানজি, আল – ইশাআহ লি আসরাত আস সা’আহ, পৃঃ ১৯৯)
“ইমাম মেহেদীর আমলে রমজানের মধ্যবর্তী সময়ে সূর্যগ্রহন হবে এবং মাসের শুরুতে চন্দ্র অন্ধকারাচ্ছন্ন হবে।”
(ইমাম রাব্বানী, লেটারস অব রাব্বানী, ২:১১৬৩)।
“রমজান মাসের মধ্যে হবে সূর্যগ্রহন এবং শেষে হবে চন্দ্রগ্রহন।”
(আল-মুত্তাকী আল হিন্দি, আল বুরহান ফি আলামাত আল মেহদী আখির আল জামানা, পৃঃ৩৮)।
“হযরত মেহেদী আসার পূর্বে রমজান মাসে দুইটি চন্দ্রগ্রহন হবে।”
(মুহাম্মাদ ইবনে আবদ আল – রাসুল বারযানজি, আল – ইশাআহ লি আসরাত আস সা’আহ, পৃঃ ২০০)
“ইমাম মেহেদীর আগমনের আগে রমজান মাসে দুইটি সূর্যগ্রহন হবে।”
(আস-সারানী, মুখতাসার তাযকিরাহ আল-কুরতুবি, পৃঃ ৪৪০)
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল রমজান মাসের মধ্যবর্তী সময়ে সূর্যগ্রহন এবং একই মাসে দুইবারকরেচন্দ্রগ্রহন ও সূর্যগ্রহন; যা স্বাভাবিক অবস্থায় হয় না।যাইহোক অন্যান্য আলামতগুলো কিছু নির্দিষ্ট কারণে হয় এবং সেগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব।
একটু মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করলে দেখা যায় উপরোক্ত ঘটনার ব্যাপারে হাদিসগুলোতে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা আছে। প্রথম দুইটি হাদিসের বর্ণনা অনুসারে রমজান মাসের প্রথম দিনে চন্দ্রগ্রহন হবে এবং তৃতীয়টি অনুসারে মাসের শেষে চন্দ্রগ্রহন হবে। এক্ষেত্রে ব্যাখ্যার সঠিক পথটি হোলো এই হাদিসগুলো থেকে সাদৃশ্যগুলো অনুধাবন করা।
উপরে বর্ণিত হাদিসগুলো থেকে যে বিষয়গুলো পরিস্কার হয় সেগুলো হচ্ছে
রমজান মাসে চন্দ্র এবং সূর্য গ্রহন হবে।
এই গ্রহনগুলোর মধ্যবর্তী সময় সমান হবে (১৪-১৫ দিনের ব্যবধান)।
এই গ্রহনগুলো দুইবার পুনরাবৃত্তি হবে।
এই হিসাবের ভিত্তিতে অনুসন্ধান করলে দেখা যায়.........
১৫ রমজান শুক্রবার ১৪০১ হিজরি ইংরেজি ১৭ জুলাই ১৯৮১ সালে চন্দ্রগ্রহন হয়েছিল।
রেফারেন্স ১
রেফারেন্সে ২
২৯ রমজান শুক্রবার ১৪০১ হিজরি ইংরেজি ৩১ জুলাই ১৯৮১ সালে সূর্যগ্রহন হয়েছিল।
রেফারেন্স ১
রেফারেন্স ২
১৫ রমজান মঙ্গলবার ১৪০২ হিজরি ইংরেজি ৬ জুলাই ১৯৮২ সালে আবার চন্দ্রগ্রহন হয়েছিল।
রেফারেন্স ১
রেফারেন্স ২
২৯ রমজান মঙ্গলবার ১৪০২ হিজরি ইংরেজি ২০ জুলাই ১৯৮২ সালে পুনরায় সূর্যগ্রহন হয়েছিল।
রেফারেন্স ১
রেফারেন্স ২
হাদিসে বর্ণিত অন্যান্য আলামতের মত উপরোক্ত ঘটনাগুলোও অলৌকিকভাবে হিজরি ১৪০০ সালের শুরুর দিকে পরপর ২ বৎসর (১৪০১, ১৪০২) সংগঠিত হয় যা ইমাম মেহেদীর আগমনের ব্যাপারে ইঙ্গিতপূর্ণ।
ইমাম মেহেদীর অপেক্ষায়ঃ ধূমকেতুর উদ্ভব।
“উজ্জ্বল লেজ সমৃদ্ধ এক তারকার উদ্ভব ঘটবে ইমাম মেহেদীর আগমনের পূর্বে।”
(মুহাম্মাদ ইবনে আবদ আল – রাসুল বারযানজি, আল – ইশাআহ লি আসরাত আস সা’আহ, পৃঃ ২০০)
“তার আগমনের ক্ষণ আসন্ন হলে পূর্বাকাশে একটি আলোকবর্তিকা সদৃশ্য ধুমকেতুর আবির্ভাব হবে।”
(ইবনে হাযার আল হাইতামী, আল- কাওয়াল আল মুখতাসার ফি আলামাত আল মেহদী আল মুন্তাধার, পৃঃ ৫৩।)
“চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ শেষে ঐ তারাসদৃশ্য বস্তুর উদ্ভব হবে।”
(আল-মুত্তাকী আল হিন্দি, আল বুরহান ফি আলামাত আল মেহদী আখির আল জামানা, পৃঃ৩২)।
হাদিসের বর্ণনামত হ্যালীর ধুমকেতু হিজরি ১৪০০ সালের শুরুর দশক অর্থাৎ ১৪০৬ হিজরি ইংরেজি ১৯৮৬ সালে পৃথিবীর কাছ দিয়ে যায় এবং ঐ সালেই অন্তরীক্ষ থেকে ধুমকেতুটির খুঁটিনাটি প্রথমবারের মত পর্যবেক্ষণ করা হয়। রেফারেন্স
হাদিসের বর্ণনানুসারে ধূমকেতুটি হবে............
উজ্জ্বল তারকাসদৃশ্য।
গমনপথ ছিল পূর্ব থেকে পশ্চিম।
চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ সংক্রান্ত আলামতটি(১৯৮১-১৯৮২) প্রকাশিতহবার পর হ্যালীর ধুমকেতুর আগমন।
ইমাম মেহেদীর আগমনের অন্যান্য আলামতের মত ১৪০০ হিজরির শুরুতে হ্যালীর ধুমকেতুর আগমন তাৎপর্যপূর্ণ। যেহেতু হাদিসের বর্ণনা অনুসারে আলামতসমূহ ১৪০০ হিজরির থেকে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে একের পর এক যা অন্যকোন শতাব্দীতে এভাবে সংঘটিত হয়নি সেহেতু বলা যায় হাদিসে উল্লেখিত মহাজাগতিক বস্তুটি বস্তুতুই হ্যালীর ধুমকেতু এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই।
এখন প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে হ্যালীর ধুমকেতু প্রতি ৭৬ বছর পর পর আসে এতে অসাধারণত্বের কি আছে?
এই সিরিজের শুরুতেই বলা হয়েছিল আল্লাহর আসলে চোখে আঙ্গুল দিয়ে নিদর্শন প্রকাশ করার প্রয়োজন নেই, আমাদের নিত্যদিনের স্বাভাবিক ঘটনাবলীর মধ্যেই নিদর্শন আছে শুধু প্রয়োজন মনোযোগ দিয়ে খোঁজ করা। যারা বিশ্বাস নিয়ে নিদর্শনসমুহের খোঁজ করে তাদের সামনে নিদর্শনসমূহ প্রতীয়মান হয় কিন্তু যারা সন্দেহবাদী তারা সব সময়ই গোমরাহির মধ্যে থাকে। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত আছে
“নিশ্চয়, এতে নিদর্শন আছে এবং তাদের অধিকাংশই বিশ্বাসী নয়।”
সুরাঃ আশ-শুয়াআরা, আয়াতঃ ১০৩
“বিশ্বাসকারীদের জন্যে পৃথিবীতে নিদর্শনাবলী রয়েছে,”
সুরাঃ আদ-দারিয়াত, আয়াতঃ ২০
হ্যালীর ধুমকেতু সম্পর্কিত কিছু চমক জাগানিয়া তথ্য
• আশ্চর্যজনকভাবে হ্যালীর ধুমকেতুর সাথে সম্পর্কিত কিছু সংখ্যা ১৯ এর গুনিতক। যেমন হ্যালীর ধুমকেতু প্রতি ৭৬ বছর পর পর আসে, (১৯x ৪=৭৬)।
• এটা শেষবার দেখা গিয়েছে ১৪০৬ হিজরিতে, (১৯ x ৭৪=১৪০৬)।
• নবী (সঃ) নবুয়াত লাভের পর এটা হ্যালীর ধুমকেতুর ১৯ তম বার আগমন।
১৯ সংখ্যার বিশেষত্বের ব্যাপারে পবিত্র কুরআনের সুরা মুদাসসের (সুরা নং-৭৪) ৩০ নং আয়াতে বর্ণিত আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মে, ২০১৩ বিকাল ৩:৫২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



