কখনো ভাবিনি ছোট বেলায় ভালো লাগা সেই মেয়েটির সাথেই প্রেম করবো......................
আমাদের দুইজনের বাড়ি একই গ্রামে । আমাদের বাড়ির ছয়-সাতটা ঘর পরেই ওদের বাড়ি । ক্লাস থ্রি থেকে তাঁর সাথে পরিচয় । আস্তে আস্তে বন্ধুত্ব শুরু । ক্লাস ফাইভে উঠে হঠাত্ করেই দুইজন খুব ভালো বন্ধু হয়ে যাই । সোজা কথায় বেস্ট ফ্রেন্ড । প্রায় প্রতিদিনই দুইজন একসাথে স্কুলে আসা যাওয়া করতাম । ওর প্রতি আমার কেমন জানি একটা ভালো লাগা কাজ করতো । তাঁকে খুব ভালো লাগতো । তাঁর চেহারাটা খুব মিষ্টি ছিলো । যদিও তখন প্রেমের "প" আর ভালোবাসার "ভ" পর্যন্ত বুঝতাম না কিন্তু ভালোলাগাটা বুঝতাম । তারপরেও কেমন জানি একটা আকর্ষণ ছিলো ওর প্রতি । সবসময় ওর পাশে থাকতে ভালো লাগতো । ক্লাসে তো ছেলে মেয়ে একসাথে বসতে দিতো না তাই আমি ওর পাশের বেঞ্চটাতে বসার জন্য সবার আগে স্কুলে চলে যেতাম । আর বৃত্তি কোচিং করার সময় ওর পাশে বসতাম (তখন যে যার ইচ্ছামত বসতে পারতো) ।
আমার এখনো মনে আছে, একদিন স্কুল ছুটি শেষে বৃষ্টি হচ্ছিল । আমি ছাতা আনছি আর ঐ মেয়েটা ছাতা আনেনি । আমি বললাম চল আমার ছাতাতে করে দুইজন একসাথে বাড়ি যাই । যেই কথা সেই কাজ । এক ছাতার নিচে একসাথে দুইজন জড়সড় হয়ে হাটতেছি । একটু পর পর আড় চোখে তাঁর দিকে তাকাচ্ছিলাম আর ভাবছিলাম তাঁকে এত ভালো লাগে কেন । তাঁর চেহারাটা এত মিষ্টি কেন । এইসব ভাবতে ভাবতে সাহস করে আমার ডান হাতটা তাঁর কমড়ের উপর রাখলাম । ভয়ে বুক কাপতেছিলো যদি কিছু বলে ফেলে । কিন্তু নাহ কিছুই বলেনি । এরপর নির্ভয়ে তাঁর কমড়ে ধরে বাড়ি পর্যন্ত আসলাম । এরপর থেকে প্রায়সময়ই আমরা একে অন্যের কাধে হাত রেখে স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতাম ।
আরেকদিন তো টিফিন এর সময় ওর বেঞ্চটাতে গিয়ে ওর কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরছিলাম । সেও কি মনে করে জানি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিছিলো । ভালোই লাগছিলো (ভাবখানা এমন যেন দুইজনের মধ্যে অনেকদিন যাবত প্রেম চলতেছে ) ।
একদিন বাড়িতে যাওয়ার আগে সে আমাকে "I Like You" কথাটা বলছিলো । আমি বুঝেও না বুঝার ভান করে চলে আসছিলাম । পরেরদিন বাজারে যাওয়ার সময় ওকে রাস্তায় আটকিয়ে বললাম ওই "I Like You" কথাটার বাংলা অর্থটা কী ? আমি তো ইংলিশ বুঝি না । উত্তরে সে বলছিলো এর অর্থ "আমি তোমাকে পছন্দ করি না ।" এই কথা বলেই সে দৌড় দিয়ে চলে যায় । আমি তো ঠিকই বুঝতে পারছিলাম সে ইচ্ছে করেই 'না' শব্দটা বলছে । তারপর থেকে আমার ধারণা হলো আমাকেও তাঁর ভালো লাগে । কিছুদিন পর শুনতে পাইলাম আমাদের নেতা মানে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ওর বইয়ের ভিতর আই লাভ ইউ লিখে প্রপোজ করছে । আমি তো ভয়ে শেষ । সে যদি জানতে পারে আমি ঐ মেয়ের প্রেমে পরছি তাইলে কপালে মাইর আছে । কারণ ওকে স্কুলের প্রায় সব স্টুডেন্টই ভয় পাইতো । যদিও আমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম তারপরেও মেয়েলি ব্যাপার নিয়ে সে আমাকে ছেঁড়ে কথা বলবে না এটা জানতাম । তাই আমি মনে মনেই তাঁর প্রতি ভালো লাগাটা উপভোগ করে গেছি । কখনো প্রকাশ করিনি ।
২০০৬ সালে হাঠাত্ করেই আমি ঢাকা চলে আসি । সেই থেকে ঐ মেয়ের সাথে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পরে । মাঝে মাঝে গ্রামে যেতাম কিন্তু তাঁর সাথে দেখা হতো না । কিন্তু তাঁকে ভুলতে পারিনি । প্রায় সময়ই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার সময় তাঁর কথা বলতাম । বন্ধুরাও বুঝতে পারছিলো মেয়েটাকে আমি খুব পছন্দ করি ।
প্রায় ছয় বছর পর হঠাত্ করেই ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরের উনিশ তারিখ সেই বেস্ট ফ্রেন্ডের কাছ থেকেই ছোট বেলায় ভালো লাগা সেই মিষ্টি মেয়েটির ফোন নাম্বার পেয়ে যাই । এই ছয় বছর কোন মেয়ের প্রেমে পরিনি ঠিকই কিন্তু অনেক মেয়ের সাথে বন্ধু হিসেবে ফোনে কথা বলেছি ।
যাই হোক সেদিন বিকেলেই মেয়েটাকে ফোন দেই । প্রায় এক ঘন্টা কথা বলি পরিচয় না দিয়ে । এই এক ঘন্টা তাকে ছোট বেলার সব কিছু মনে করিয়ে দেই । সে কোন স্কুলে পড়তো, ক্লাস ফাইভে রোল কত ছিলো, টিফিনের সময় কোথায় খেলাধূলা করতো, কাদের সাথে স্কুলে আসা-যাওয়া করতো, বৃত্তি পরীক্ষা কোথায় দিছিলো সব বলছি । যখন দেখলো তার সম্পর্কে প্রত্যেকটা তথ্য নির্ভূলভাবে বলে দিছি তখনই সে আমার পরিচয় জানার জন্য পাগল হয়ে যায় । তাঁকে অনেক অপশন দেই আমাকে চিনার জন্য কিন্তু সে চিনতে পারেনি । শেষমেষ থ্রেট দিলো পরিচয় না দিলে কখনো আমার ফোন ধরবে না । কি আর করা এক পর্যায়ে পরিচয় দেই । পরিচয় দেওয়ার সাথে সাথে দুইজনই চুপ হয়ে যাই । ঐ মুহূর্তে দুইজন আবেগাপ্লুত হয়ে প্রায় কেঁদেই দিছিলাম । সে বিশ্বাসই করতে পারছিলো না আমি তার সাথে কথা বলতেছি । সে কখনো ভাবেনি তার সাথে আমার আবার যোগাযোগ হবে ।
সেদিন থেকে তার সাথে আবার নিয়মিত যোগাযোগ হতে থাকে । শুরু হয় নতুন করে বন্ধুত্ব । একদিন দুইজন দেখা করি । কিছু সময় একসাথে কাটাই । তারপর থেকে প্রতিদিনই ফোনে কথা বলি, সারাদিন SMS করি । আমার মোবাইলে ব্যালেন্স না থাকলে সে ফোন দিয়ে জোর করে কথা বলতে চাইতো । আমার সাথে কথা বলতে নাকি তার খুবই ভালো লাগে ।
এরপর একদিন হঠাত্ করেই আমি তাকে প্রপোজ করে বসি । সেও রাজি হয়ে যায় । ভাবতে পারিনি সাথে সাথেই রাজি হয়ে যাবে । প্রপোজ করছিলাম SMS এর মাধ্যমে অনেকটা থ্রেট দেওয়ার মত করে । SMS টা ছিলো এরকম, "ওই আমি তর লগে প্রেম করুম । তুই রাজি ? রাজি না হলেও আমার কিছু করার নাই । প্রেম তর লগেই করমু ।" তারপর তার মুখ থেকে বলা I Like You কথাটাকে I Love You তে রূপান্তর করলাম । তারপর থেকেই শুরু হয় ছোট বেলায় প্রকাশ করতে না পারা ভালোবাসার "ভ" আর প্রেমের "প" ।
হাসিখুশি, দুষ্টমি, আর মান-অভিমানের মধ্য দিয়ে ছোট বেলায় ভালোলাগার মিষ্টি চেহারার মানুষটির সাথে প্রেমটা বেশ ভালোই চলতেছে ।
তাছাড়া আমাদের সম্পর্কের কিছু ব্যাপার আমার খুব ভালো লাগে আর এই জিনিসগুলো আমি খুব উপভোগ করি। এই যেমন প্রতি মাসে আমাদের দুইজনের মোবাইলে খরচ হয় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা। ভাবতে পারেন পুরো টাকাটাই হয়তো আমার পকেট থেকে যায়। নাহ্ পুরো টাকা আমার পকেট থেকে যায় না। এই জিনিসটাই আমার খুব ভালো লাগে। এখানে আমাদের দুইজনের একটা ধারুন কম্বিনিশন আছে । যখন যার কাছে টাকা থাকবে তখন সে দুইজনের নাম্বারেই সমপরিমাণ টাকা রিচার্জ করবে ( এটা আমাদের মাঝে অটোমেটিক হয়ে গেছে । কোন পূর্ব শর্ত ছিলো না ) । আর ঘুরতে গেলে তো খাবারের বিল কে আগে দিবে সেটা নিয়েই হালকা পাতলা ঝগড়া হয়ে যায়। আর উনি আমাকে কোন ফালতু কাজে টাকা খরচ করতে দেন না। করলে ঐদিন আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দেন।
.
.
.
উনার এই ব্যাপার গুলাই আমাকে খুব আনন্দ দেয় । সবকিছুতেই দুইজনের একটা দারুণ কম্বিনিশন।
আল্লাহ চাহে তো তাকে জীবনসঙ্গী করে নিয়ে এভাবেই হেসে, খেলে, দুষ্টমি করে ভালোবাসার নৌকায় চরে বাকি জীবনটা একসাথে কাটিয়ে দিবো ।
উল্লেখ্য, আমার ক্লোজ কিছু বন্ধু ছাড়া সবাই (এমনকি আমার আপন এবং চাঁচাতো বোনেরাও) জানে আমি এত্তগুলা খারাপ । অনেক মেয়ের সাথে প্রেম করি । একটা মেয়ের সাথে দুই মাসের বেশি সম্পর্ক রাখি না । এক কথায় আমি প্লে বয়ের থেকেও খারাপ । ইনারা কিন্তু জীবনেও উপরের কথাগুলা বিশ্বাস করবে না ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২১