নাম ইশা। আয়ত লোচনা চোখ। ফর্সা শ্যামলা গায়ের রং। সুইট একটা চেহারা। ডান গালে বিউটি স্পট স্বরূপ একটা তিল আছে। উচ্চতা ৫ ফিট। মিষ্টি ভাষী সেই সাথে স্পষ্ট ভাষীও। নম্র আচরণ, ঠান্ডা মেজাজ তবে মেজাজ খারাপ হলে চেহারার দিকে তাকানো যায় না। তখন তাকে দেখলে অগ্নি কন্যা মনে হবে। রাগে দুই চোখ লাল হয়ে যায়।
মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে ইশা। ইশা সবার বড়। ওর ছোট আরো দুইটা ভাই আছে। ছোট বেলা থেকেই তার বুদ্ধি অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশি। সবকিছুতেই চরম বাস্তবাদী। প্রতিটা বিষয় নিয়ে সূক্ষভাবে চিন্তা-ভাবনা করার অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে তার ভিতর।
ইশার সবচাইতে কাছের মানুষ হচ্ছেন তার 'মা' কিন্তু সবচাইতে প্রিয় মানুষটি হলেন তার বাবা।
বড় মেয়ে এবং একমাত্র মেয়ে। স্বভাবতই ইশা একটু বেশি আদর পায় সবার থেকে। আর এই কারণে ওর ভাই দুইটা ওকে নিয়ে অনেক হিংসা করে। করবেই না কেন? ইশা যা বলবে তাই হবে আর ওরা কিছু বললেও ইশার মতামত না থাকলে সেটা হবে না।
ইশার বাবা প্রতিদিনই অফিসে যাওয়ার সময় ওর কপালে চুমু খেয়ে যায়। ইশা যেদিন পৃথিবীতে এসেছিল সেদিন ওর বাবার মত এত খুশি কেউই হয়নি। খুশিতে সেদিন প্রতিবেশীদের বাড়িতে দুই মণ মিষ্টি বিতরন করেছিলেন। সেই থেকে আজ অবদি ইশার কপালে চুমু না খেয়ে অফিসে যাননি। অনেক আদরের মেয়ে।
SSC পাশ করার পর ঢাকার এক নামি দামি কলেজে ভর্তি হলো। ভালোই চলছে। পড়াশুনা আর ভাইদের সাথে দুষ্টমির মধ্য দিয়েই তার দিন কেটে যায়।
একদিন বিকেল বেলা বারান্দায় বসে চা খাচ্ছে ইশা। হঠাত্ খেয়াল করলো পাশের ফ্ল্যাটের বারান্দায় একটা ছেলে দাড়িয়ে আছে এবং ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। অনেকটা মুচকি হাসতেছে ছেলেটা। ছেলেটা দেখতে বেশ স্মার্ট। কি মনে করে জানি ইশা চা খাওয়া বাদ দিয়ে বারান্দা থেকে চলে গেলো।
রাত আটটা বাজে। পড়ার টেবিলে বসে আছে ইশা। কিন্তু পড়ায় মনযোগ নেই। ছেলেটার কথা মনে পরছে শুধু। আচ্ছা এভাবে তাকিয়ে থাকার মানে কী? মানে খুঁজার জন্য ইশা আবার বারান্দায় গেলো। মনের ভিতর কেমন জানি করতেছে। মনে হয়ে ছেলেটাকে তার ভালো লেগে গেছে।
বারান্দায় গিয়ে দেখলো ছেলেটা নাই। কি করা যায় কি করা যায় ভাবতে ভাবতে মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো। বারান্দায় রাখা ফুলের টব থেকে ছোট একটা ইটের কণা নিয়ে ছেলের বারান্দায় ছুড়ে মারলো।
গ্রিলে টাং করে শব্দ হলো। শব্দ শুনেই ছেলেটা বারান্দায় আসে এবং দেখতে পায় মেয়েটা তার দিকে তাকিয়ে আছে।
: ঢিল মারছেন কেন?
- ইচ্ছা হইছে তাই মারছি। কোন সমস্যা?
: সমস্যা মানে বিরাট সমস্যা। গায়ে পরে ঝগড়া করার ইচ্ছা হইছে বুঝি?
- ঠেকা পরছে তো....
: তা তো বুঝতেই পারতেছি।
: মেজাজ খারাপ করবেন না.....
কিছুক্ষণ পর ছেলেটা একটা কাগজ ছুড়ে মারলো। আসলে কাগজে একটা ফোন নাম্বার লেখা ছিল।
শুরু হলো তাদের মাঝে ফোনালাপ। চরম বাস্তবাদী, চিন্তাশীল মেয়েটা সব ভুলে গিয়ে প্রেম সাগরে ডুব দিলো।
দেখতে দেখতে তাদের সম্পর্কের এক বছর হয়ে গেছে। এক অপরকে অনেক ভালোবাসে। একে অপরের প্রতি অনেক বিশ্বাস। দুইজন তাদের সম্পর্কটাকে অনেক সম্মান করে।
ছেলেটা একটা প্রাইভেট কম্পানিতে জব করে। বউ পালার সামর্থ আছে। এদিকে কিছুদিন পর ইশার HSC পরীক্ষা। সবকিছু ঠিক থাকলে ইশার পরীক্ষা শেষ হলেই পারিবারিকভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিবে।
একদিন ইশার বাসায় তাদের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় বেড়াতে আসে। বিকেল বেলায় ইশার মা-বাবা শপিংয়ে গেছে। ছোট ভাই দুইটা গেছে ক্রিকেট খেলতে। বাসায় শুধু ইশা আর তার দূর সম্পর্কের সেই আত্মীয়।
ইশা তার রুমে বসে ছবি আঁকতেছে। হঠাত্ দরজা আটকানোর শব্দ। ইশা কিছু বুঝে উঠার আগেই লোকটা তার উপর ঝাপিয়ে পরলো। জোর করে ইশাকে ধর্ষণ করলো এবং এই বলে ভয় দেখালো যে, কাউকে কিছু না বলার জন্য। যদি বলে তাহলে তাকে খুন করা হবে।
ইশা মানসিকভাবে বিদ্ধস্ত। কি করবে কিছুই বুঝতে পারতেছে না। তার ভালোবাসার প্রতি অগাদ বিশ্বাস আছে। ভালোবাসার মানুষটিকে ফোন দিয়ে দেখা করতে বললো আর বললো তোমার সাথে জরুরী কথা আছে।
এদিকে ছেলের তো টেনশন হচ্ছে। হঠাত্ করে কি এমন জরুরী কথা।
বিকেলে দুইজন এক রেস্টুরেন্টে বসে আছে। ইশার মুখে হাসি নেই।
: ব্যাপারটা তোমার জানা দরকার।
- কী হইছে বলবা তো?
: কিছুদিন আগে আমি ধর্ষিত হয়েছি। আমি চাই আমাদের মাঝে কোন কিছু গোপন না থাকুক। এখন বাকিটা তোমার উপর নির্ভর করছে।
এই কথা শুনার পর ছেলেটার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরলো। কি বলবে কিছুই বুঝতে পারছে না। "আমি তোমাকে ভালোবাসি, কোন দুর্ঘটনা আমার কাছ থেকে তোমাকে দূরে সরাতে পারবে না।" এ কথা বলেই ছেলেটা চলে আসলো এবং পরবর্তীতে ইশাকে নানানভাবে উত্সাহ দিতে থাকলো। তার মনসিক অবস্থা যাতে কোনভাবেই ভেঙ্গে না পরে সেই চেষ্টা করতে থাকলো।
এদিকে ইশার HSC পরীক্ষা শেষ। অর্ণব তার পরিবারকে ইশার বাসায় পাঠালো বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার জন্য।
সব ঠিকঠাক। এই মাসের বিশ তারিখ ইশা আর অর্ণবের বিয়ে।
.
.
.
.
.
আসলে, যে মানুষ একটা সম্পর্ককে সম্মান করতে জানে তার দ্বারাই কেবল এই কাজটা সম্ভব।
ইশার মত চরম বাস্তবাদী আর চিন্তাশীল মেয়ের জন্যই ব্যাপারটা আরো সহজ হয়ে গেছে। অন্যথায় একটা জগা খিচুরী অবস্থা হয়ে যেতে পারতো। ব্রেক-আপ, সুইসাইডের মত মারাত্মক কিছু।
একটা কথা বলি, উপযুক্ত কোন মেয়েকে বাসায় একা রেখে কোথাও যাবেন না। দুর্ঘটনার হাত-পা নেই। কখন কোন দিক দিয়ে চলে আসবে টেরও পাবেন না। সাবধান থাকা ভালো। সাবধানের মাইর নেই।