somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একজন আলোকিত মানুষ কল্পনা সরোজ.............

২৭ শে মে, ২০১২ দুপুর ১:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কল্পনা সরোজ, জন্ম ভারতের নিম্নবর্ণের দলিত পরিবারে। ছোটবেলায় সবাই যখন তাকে অস্পৃশ্য হিসেবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করত, তখন মনে প্রশ্ন জাগত তিনি আদৌও মানুষ তো?
সমাজের বৈষম্য, দারিদ্র, বাল্যবিয়ে, শারীরিক নিপীড়ন—সব কিছুতে হতাশ কল্পনা একবার আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। তবে সেই চেষ্টা ব্যর্থ হলে ঘুরে দাঁড়ানোর পণ করেন তিনি। নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে তিনি এখন ভারতের বড় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।
শূন্য থেকে যার শুরু, তিনি কীভাবে এতোটা পথ পাড়ি দিলেন—সেই গল্প অনেকটা বলিউডি ছবির কাহিনীর মতো। এই কাহিনীতে নায়ক বা নায়িকা যেমন জীবনে অনেক বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে বিজয়ের শেষ হাসিটা হাসেন, কল্পনা সরোজের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছে।
ছোটবেলার বৈষ্যমের কথা বলতে গিয়ে ৫২ বছর বয়সী কল্পনা সরোজ বিবিসি অনলাইনকে বলছিলেন, ‘আমরা অনেক বন্ধুর বাবা-মা আমাকে তাদের বাড়িতে ঢুকতে দিত না। এমন কি স্কুলের কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের অনুমতিও আমি পেতাম না। কারণ আমি দলিত। আমার তখন ভীষণ রাগ হতো। আমি অসহায় বোধ করতাম। মনে হতো আমি মানুষ তো!’
স্কুল জীবনের ইতি টেনে মাত্র ১২ বছর বয়সেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বাধ্য হন কল্পনা। তার চেয়ে ১০ বছরের বড় স্বামীর সঙ্গে চলে যান মুম্বাইতে। সেখানকার এক বস্তিতে শুরু করেন নতুন জীবন। তবে সে জীবন সুখের হয়নি। ছোটখাট বিষয় নিয়ে তাঁর স্বামীর বড় ভাই ও তাঁর স্ত্রী কল্পনাকে বেদম মারধর ও অকথ্য গালিগালাজ করতেন। বাবার সহযোগিতায় তিনি স্বামীর বাড়ি থেকে চলে আসেন।
এই নিয়ে মানুষের বাঁকা কথা চলছিলই। তবে সেগুলো গ্রাহ্য না করে সেলাইয়ের কাজ শিখতে শুরু করেন তিনি। তবে জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ আয় করতে না পেরে হতাশ কল্পনা একদিন আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন। কিন্তু লোকজনের বাধার মুখে তাঁর কীটনাশক পানের চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। পরে সিদ্ধান্ত নেন ভালোভাবে বাঁচার, ভালো কিছু করার।
১৬ বছর বয়সে কল্পনা মুম্বাই গিয়ে কাপড় সেলাইয়ের কাজ শুরু করেন। তখন তাঁর আয় মাসে মার্কিন মুদ্রায় এক ডলারেও কম। কিন্তু তিনি হাল ছাড়েননি। সেলাইয়ের কাজের পাশাপাশি পোশাক কারখানার সেলাই মেশিন চালানো শেখেন তিনি। এর আয় কিছুটা বাড়ে। তবে সেই আয় দিয়ে কোনোভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকা যায়, এর বেশি কিছু করা যায় না। তাই নিজের বোন যখন অসুস্থ হলেন এই স্বল্প আয় দিয়ে তাঁর চিকিত্সা করাতে পারেনি কল্পনা। প্রায় বিনা চিকিত্সায় বোন মারা যাওয়ার পর কল্পনার মনে হয়, অর্থ জীবনের একটি বড় বিষয়। তখনই আরও অর্থ উপার্জনের জেদটা ভেতরে ঢুকে।
এরপর সরকারি ঋণ নিয়ে কল্পনা আসবাবপত্রের ব্যবসা শুরু করেন। পাশাপাশি চলছিল কাপড় সেলাইয়ের কাজ, সেটাকেও বাড়াতে থাকেন। তখন দিনে ১৬ ঘণ্টা কাজ করতেন বলে জানালেন তিনি। আসবাবপত্রের এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেন কল্পনা। তাঁদের দুটি সন্তান আছে।
পরিশ্রমী কল্পনার সুনাম ছড়িয়ে পড়ে আশপাশেও। ডাক পড়ে ঋণে জর্জরিত কামানি টিউব নামের একটি ধাতব কৌশল কোম্পানির হাল ধরার। দায়িত্ব নিয়ে কারখানাটি ঢেলে সাজান কল্পনা। সে অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এখানে যারা কাজ করেন, তাঁদের ন্যায্যটা দিতে চেয়েছি। পরিবারের মুখে খাবার দেওয়ার জন্য যারা উন্মুখ, সেসব মানুষদের এই কারখানার সঙ্গে যুক্ত করেছি। এতেই কাজ হয়েছে। কর্মীরা তাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে কাজ করেছে। এখন কামানি টিউবের সম্পদের পরিমাণ ১০ কোটি ডলারেও বেশি। ব্যবসা আরও বিকশিত হচ্ছে।
এই প্রতিষ্ঠানে এখন সব শ্রেণী-বর্ণের শত শত কর্মী কাজ করেন। তিনি দেখা করেছেন ভারতের শীর্ষস্থনীয় ব্যবসায়ী রতন টাটা ও মুকেশ আম্বানির সঙ্গে। ব্যবসায়িক উদ্যোগের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ২০০৬ সালে পুরস্কারও পেয়েছেন।
এতে দূর এসে কল্পনা তাঁর অতীত ভুলে যাননি। তাই নিয়মিত গ্রামে যান। চেষ্টা করেন নিজের সম্প্রদায়ের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য কিছু করতে। কল্পনা বিশ্বাস করেন, কেউ যদি তার সবটুকু দিয়ে কাজ করেন এবং তা চালিয়ে যান, একসময় তিনি সফল হবেই। এটাই তাঁর সাফল্যের মূলমন্ত্র।

সূএ: প্রথম আলো
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×