আমাদের দশম শ্রেনীর ক্লাস চলছে।ক্লাসের মেয়েরা আমার দিকে অবাক হয়ে চেয়ে আছে।আসলে কি থেকে যে কি হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। এমনিতে আমি দুষ্ট ছেলে হিসাবে পরিচিত । কিন্তু এমন একটা কাজ করব কেউ ভাবতে পারেনি। এখন আমাদের হিসাব বিজ্ঞান ক্লাস আর সাইন্স এর হল সমাজ ক্লাস। বিজ্ঞান বিভাগে ছিল প্রায় সব ছেলে আর আমরা ক'জন ছেলে মেয়েদের সাথে কমার্স্ বিভাগে। আমি কেন যে এই কাজটা করতে গেলাম এখন আফসোস হচ্ছে।তার উপর জাহাঙ্গীর স্যারের ক্লাস। স্যার যদি এ ঘটনা জানতে পারে তাহলে আমাকে ভালই পেদাবে যদি ও আমাদের স্কুল লাইফ শেষ হতে চলেছে বলে স্যারেরা এখন আর বেত আনেনা ক্লাসে। তবু এই ঘটনা শুনলে স্যার যে আমাকে পেদাবে এটা শিউর।
মনির সমাজ বিজ্ঞান ক্লাসে যাচ্ছে আর আমাকে বলল
- দোস্ত একটু সাবধানে থাকিস,আজকে তোর খবর আসে।
আমি শুধু মাথা ঝাকালাম। আর একটু হাসার চেষ্টা করলাম।
বললাম
-শালা কই আমারে আরো সাহস দিবে তা না আমারে আরো ভয় লাগাইতেছে।
-এই কাজের পরে কাউকে সাহস দেয়া যায় না দোস্ত।
একবার মনে হইল ক্লাস থাইকা পলাই।কিন্তু সাহস হল না।সাহস করে একবার ঐ পাশটায় তাকালাম "রিনা এখনও নিচের দিকে তাকিয়ে আসে। কাদঁছে কিনা বুঝতে পারছি না। এবার আমার সত্যি মনটা খারাপ হয়ে গেল।এই মেয়েটা আসলেই ভাল একটা মেয়ে,আমাদের ক্লাস ওই সবচেয়ে কম কথা বলে। পড়াশোনায় ভাল আর আমার সাথে ওর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
আরেকবার তাকালাম তার দিকে এবার দেখলাম বাঁ হাত দিয়ে চোখ মুছতেসে।এবার আমার মনটা ভীষন খারাপ হয়ে গেল। নিজে নিজের কাছে ছোট হয়ে গেলাম।অন্যের কথায় এই কাজটা করা উচিত হয়নি।
রিফাত আমাদের ক্লাসের সবচেয়ে দুষ্টু ছেলে। ৩য় ক্লাসটা গ্যাপ ছিল।সবাই মিলে আড্ডা দিতেছি এমন সময় রিফাত বলল যে "দোস্ত রিনার গালে একটা চড় মারতে পারবি।"
আমি বললাম " মারতে পারলে কি দিবি"।
রিফাত বলল "আজ বিকালে তুই যা খেতে চাস তাই খাওয়াব।"
"ওকে দোস্ত আমি চড় মারব কিন্তু সবাই কে খাওয়াতে হবে।"
সোহেল বলল "দোস্ত কাজটা অনেক কঠিন"
মনির বলল "আমার মনে হয়না তুই পারবি"
সাকি সাহস দিয়ে বলল "আমাদের ক্লাসে কেউ যদি পারে তবে হাসান পারবে"
আমাকে আর পায় কে এত সাহসের পর আমি উঠে দাডালাম। বললাম
-দেখ আমি এক্ষনী কাজটা করছি।বলে হাটা দিলাম।
এতক্ষন সব ঠিক ছিল কিন্তু এবার আমার বুক ধরপড় শুরু করল। আস্তে আস্তে আগাচ্ছি আর বুকের ধরপড়ানি বাড়ছে। গিয়ে কোনরকমে রিনার সামনে দাড়ালাম। আমার দিকে চেয়ে একটা হাসি দিয়ে বলল
"কিছু বলবে"
"না মানে তোমার ধর্ম নোটটা একটু দরকার দিবে"
সে বলল "ধর্ম নোট ত করি নাই"
আমি বললাম "ধর্ম নোট করছ নাই কেন" এই বলে দিলাম একটা চড়।
ঘটনার আকষির্কতায় সে চমকে গেল।গালে হাত বুলাচ্ছে না শুধু আমার দিকে চেয়ে আছে। ক্লাসের সব মেয়েরাও আমার দিকে চেয়ে আছে। আমি চলে এলাম আমার জায়গায়।কিন্তু মনকে বুঝাতে পারছি না কাজটা ঠিক হয়নি।
স্যার এল ক্লাসে যথাসময়ে। ক্লাস শুরু হল আমি মনে করলাম এবার আমার নামে নিশ্চ্য় নালিশ দিবে। কিন্তু আশ্চর্য কেউ কোন নালিশ করলনা। ক্লাস যথা সময়ে শেষ হল। আমার যে কি খারাপ লাগতেছিল আমার নিজের কাছে নিজেকে খুব ছোট মনে হতে লাগল। তারপর আমার অভূতপূর্ব আনন্দ হতে লাগল আর মনে হতে লাগল আমি এই মেয়েটাকে প্রচন্ড রকম ভালবাসি।আগে ওর কাছে ক্ষমা চাওয়া দরকার।কিন্তু কোন মুখে ওর সামনে গিয়ে দাড়াব।
স্কুল ছুটি হল। রিনা আর আমার বাড়ী একিদিকে। রিনার বাড়ী একটু দুরে। সবাই যে যার মত তাদের বাড়ী চলে গেল। আমি এখন রিনার পিছনে পিছনে হাটছিঁ তাকে সরি বলব বলে। একটু সাহস করে এগিয়ে গেলাম তার সমানে সমানে হাটতে লাগলাম। সে কিছুই বলছে না শুধু হাটছে আর আমিও হাটছি তার পাশে। দু'জনে একি সাথে হাটছি আমার মনে হল এই ভাবে যদি সারা জীবন আমি তার পাশে হাটতে পারতাম। আমি অপরাধীর কন্ঠে বললাম
- রিনা আমি দু:খিত, আসলে আমার এই কাজটা করা উচিত হয়নি।
রিনা কিছুই বলল না। আমি আবার বললাম
-প্লিজ এইবারের মত মাফ করে দাও।
-ঠিক আছে।
আবার দুজনে পাশাপাশি হাটতে ছিলাম। ওর পাশে হাটতে হাটতে আমার এত ভাল লাগতেছিল যে আমি হঠৎাত করে বললাম
-রিনা তুমি আমার পাশে সারা জীবন হাটবা?
রিনা আমার দিকে কিছুক্ষন ছলছল চোখে চেয়ে থাকল। ওর চোখের কোনায় মুক্তর মত জ্বলছে চোখের পানি।
আমি আর রিনা পাশাপাশি হাটছি, পড়ন্ত বিকেলের সূর্যটা আমাদের দেখে মুচকি হেসে বিদায় নিচ্ছে। আর আমি ভাবছি এই বিকালটা যদি শেষ না হয়। আমার শুধু মনে হল আমি ওর দিকে তাকিয়ে হাজারটা বছর পার করে দিতে পারব।