ইদানিংকালে বাঙালিদের মধ্যে দুটি জিনিস স্বভাবজাত দোষে পরিনত হয়েছে , এক অন্যের ঘারে দোষ চাপানো, দুই আত্মসমালোচনা না করা । প্রতিটি খেলায় হার জিত থাকবেই কিন্তু খেলায় হেরেগিয়ে বা পরাজয়ের পর অন্যের ঘাড়ে দোষ দেয়ার লক্ষ্যণ ভাল নয় । হতে পারে আমপ্যায়ারদের কিছু দোষ ছিল কিন্তু তার মানে এই দাঁড়ায় না যে আমরা শুধু তাদের কারণেই হেরে গেছি, আমরা অজেয় ! আমরা পরাজয় হতে জানিনা । এমন ধারণা ঠিক নয় ।
যুদ্ধে পরাজয় ঘটলে যেমন আত্মসমালোচনা করে ঠিক করতে হয় আমাদের পরাজয়ের কারণগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ কি ত্রুটি আছে , তেমনি খেলার ক্ষেত্রেও তাই । আমাদের জনগণের উচিত ছিল আমাদের টিমের ভুলগুলো তুলেধরা যাতে করে ভবিষ্যতে ঐসকল ত্রুটি মুক্ত হয়ে ভাল টিম গঠন করা যায় । কি অভিজ্ঞতার অভাব ছিল, কোন জিনিসের ঘার্তি ছিল সেগুলো পর্যালোচনা করা ।
কয়েকটি উপমা তুলেধরা যাক,
*ক্রুসেডের যুদ্ধে বারংবার পরাজিত হত খ্রিষ্টানরা, কারণ তাদের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল । এমনও হত যে তারা মুসলীমদের হামলা করতে এসে ভূমধ্যসাগর পারি না দিতেই নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়ে যেত ।
এমনি করে আমাদের খেলোয়াড়দের মধ্যেও দ্বন্দ্ব আছে যা পরাজয়ের বার্তা বোঝা উচিত ছিল পূর্বেই । মাশরাফীর সাথে সাকিবের যে দ্বন্দ্ব আছে তা লক্ষ্য হয়েছে গতকাল খেলার মাঠে । খেলার মাঠে ফিল্ডিং নিয়ে মাশরাফিকে যথেষ্ট সমস্যায় পরতে হয় । তার নির্দেশনা অনেকেই শোনেনি , তাকে বহুবার চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে রাগঢাকের সাথে ফিল্ডিং পরিচালনা করতে দেখা গেছে ।
অপরদিকে উইকেট-কিপারের ডানপাশে বেশ অংশ ফাঁকা ছিল, মাত্র একজন উইকেট-কিপার কি করে এতবড় এলাকা সামাল দিবে ? তাই সেই ফাঁকা অংশ হতে বহু রান দিয়েছে বাংলাদেশ ।
অনেকগুলো ক্যাচ মিস হয়েছে কারণ কাছে কোন ফিল্ডার ছিল না ।
*দ্বন্দ্ব যতই থাক জেতার জন্য সবারই এক হয়ে খেলায় মনোনিবেশ করতে হত । কিন্তু সমন্বয় হীনতা বারংবার পরিলক্ষিত হয়েছে ।
*বলারগণ ভাল বল করলেও ফিল্ডিংএর ব্যর্থতায় রানের পাহাড় জুমেছে ভারতের পক্ষে আর সেটাই বাংলাদেশ টিমকে ঘাবড়িয়ে দিয়েছে । তারা হতাশায় পর্যবশিত হয়ে খেলায় পরাজয় বরণ করেছে বলে আমার বিশ্বাস ।
রান আউট হবার সময় এমন হতাশা ছাড়া আর কি প্রমাণ হয় ? এছাড়া তামিম ইকবালের ক্যাচ আউট কি এভাবে হবার কথা ? মনে হল তামিম চোখ বন্ধ করে খেলছেন । এর পর সকলেই যেন তাদের ব্যাট এমন করে হাকালেন যে তারা সবাই খেলায় বেশি রাত করতে বেশি তাড়াহুড়ো করছেন ।
* আচার-ব্যবহারও ভাল করা জরুরী, সত্যকথা কি আমাদের কিছু খেলোয়াড়েরা এখনও ব্যবহার শিখেনি । পাকিস্তানী কিছু খেলোয়াড়দের মত ব্যবহার করে । যা নিন্দনীয় । গতকাল তাসকিনের মেজাজটা খারাপ লেগেছে , মাশরাফি ত কলার উচিয়ে থাকে , মনে হয় ভদ্রতা কি তা শেখান দরকার । সাকিব ভাল খেলোয়াড় কিন্তু নিয়মের বাইরে থাকতে চান ।
এমন করে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়ে বারংবার অনিয়ম করে দেশের মাটিতে একজনকে ফিরিয়ে আনতে হল । এটাও ছিল লজ্জ্বার বিষয় ।
* অপরদিকে এবার বিশ্বকাপে কিছু নতুন নতুন নিয়ম করা হয়েছে যা আমরা খুব কোম মানুষই জানি , আগের দিনে পিচের যেকোন স্থানে বল পরেই স্ট্যাম লক্ষ্য হলেই এলবিডবলিউ হত , এখন দুটি স্ট্যামের বরাবর রেখা টেনে তার ভিরতে ৫১% বলের অংশ ড্রপ করার বিধান রাখা হয়েছে । যার ফলে মাশরাফীর বলে ইউকেট না পড়ায় আমাদের হতাশ করেছে । কারণ বলটি মাত্র ১ মিলিমিটার বাহিরে ছিল । এমন করে অনেক সূক্ষ হিসাব আমাদের অনেকেরই অজানা থাকায় আমরা কড়া সমালোচনা করছি ।
সমালোচনা অন্যের নয়, নিজের করূণ দেশের মঙ্গল হবে । অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে লাভ নেই । নিজের দোষগুলো পর্যালোচনা করে দেখে শিক্ষা গ্রহণ করে পরবর্তীতে আরও কত ভাল করা যায় সেদিকে খেয়াল করতে হবে ।