দীর্ঘ ছয় বছর পর বহুল প্রতীক্ষিত বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির তালিকা আজ প্রকাশ করা হতে পারে। তালিকা এখন চূড়ান্ত। সারাদেশের লাখ লাখ শিক্ষক-কর্মচারী এখন এ তালিকার অপেক্ষায় উদগ্রীব। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে (িি.িসড়ঁবফঁ.মড়া.নফ) এ তালিকা প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কোনো কারণে আজ রাতে এ তালিকা প্রকাশ না করা গেলে আগামীকাল অবশ্যই প্রকাশ করা হবে। আজকের মধ্যেই তালিকা প্রকাশের জন্য আনুষঙ্গিক কাজ শেষ করতে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত অফিস করেন। ২০০৪ সালের পর এবার আবার নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি পাচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র গতকাল সমকালকে জানায়, এ মৌসুমে এক হাজারের কিছু কম প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হচ্ছে। তবে এ তালিকায় যেসব প্রতিষ্ঠান বাদ পড়বে, তাদের আগামী ডিসেম্বরের আগেই এমপিওভুক্ত করা হবে। এমপিওভুক্তির
তালিকা চূড়ান্ত করার আগ মুহূর্তে গত দু'দিনে সারাদেশের ৫৪ জন সাংসদ নিজ নিজ এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিওর জন্য তদবিরে নেমেছেন। এর জবাবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের শর্তানুসারেই এমপিওভুক্ত করা হবে। এখানে অন্য কোনো উপায়ে এমপিওভুক্তি সম্ভব নয়। গতকাল তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেন বলে জানা গেছে। এমপিওভুক্তি বাছাই কমিটি সূত্রে জানা গেছে, অত্যন্ত গোপনীয়তার মধ্যে কমিটির তৈরি করা তালিকা চূড়ান্ত হয়েছে। গত দু'সপ্তাহে এজন্য তাদের নাওয়া-খাওয়া বাদ দিতে হয়েছে। এমনকি ওই কমিটির কয়েকজন সদস্য এ কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
কমিটির কয়েকজন সদস্য জানান, মূলত অর্থ মন্ত্রণালয়ের শর্ত, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং নতুন এমপিও নীতিমালার কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা তৈরিতে কমিটি হিমশিম খেয়েছে।
এসব বিষয় নিয়ে গত বুধবার বিকেলে স্থানীয় সরকার, অর্থ, সংস্থাপন, আইন ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের পাঠানো নির্দেশনা অনুযায়ী মোট এক হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করতে হবে। এসবের মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক স্কুল ৪০০, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১০, কলেজ ৭৫, ভোকেশনাল স্কুুল ও কলেজ ৩০০, মাদ্রাসা ১০০ এবং বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ ১১৫টি। তবে অর্থ মন্ত্রণালয় প্রায় এক হাজার প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তির কথা বললেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ওই তালিকার চেয়ে কম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে যাচ্ছে। এ তালিকায় কলেজের চেয়ে স্কুলকেই বেশি এমপিও দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে সারাদেশে প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঁচ হাজার ৫৯০টি অপ্রয়োজনীয় বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। তার মধ্যে আবার তিন হাজার ৭০৭টি প্রয়োজনীয় স্থানে নেই কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আর সারাদেশে এমপিওভুক্তির অনুমোদন পায়নি এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা তিন হাজার ২১১টি। জানা গেছে, এসব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে লাগবে প্রায় সাড়ে ৪০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের বাজেটে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করার খাতে যে ১১২ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে, এ অর্থ সঠিকভাবে বণ্টনের লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় একটি নির্দেশনা দিয়েছে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অন্য একটি নির্দেশনা দিয়েছে। সদ্য তৈরি এমপিওভুক্তির নীতিমালা এবং এ দুই নির্দেশনার আলোকে এমপিওভুক্তির কমিটি নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির তালিকা প্রণয়ন শেষ করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাঠানো এক নির্দেশনায় বলা হয়, দেশের যেসব উপজেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাপ্যতা অনুযায়ী সমসংখ্যক প্রতিষ্ঠান এরই মধ্যে এমপিওভুক্ত করা আছে, সেসব উপজেলায় নতুন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আপাতত এমপিওভুক্ত করার দরকার নেই। গত সরকারের আমলে অন্যায়ভাবে বঞ্চিত করে ফলাফলে কম কৃতিত্বধারী যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এমপিও দেওয়া হয়েছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কম পারফরম্যান্সধারী প্রতিষ্ঠানের এমপিও বাতিল করে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এমপিও দেওয়ার কথাও এতে বলা হয়েছে। এছাড়া যেসব এলাকায় প্রাপ্যতা নেই, সেসব এলাকায় আপাতত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত না করে বরং শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিওভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে।
সূত্রমতে, এমপিওভুক্তির নীতিমালা ও প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে চূড়ান্ত করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোই নতুন এমপিও পেতে যাচ্ছে
বিস্তার জানতে সমকাল পত্রিকা দেখুন
লেখাটি সমকাল পত্রিকা থেকে নেওয়া