আল্লামা আহমদ শফি। বিরল ব্যক্তিত্ব। বয়েস এখন সেঞ্চুরির ধারে কাছে। তাকে নিয়ে এক এক গ্রপ এক এক সময় গর্ব করে। তবে সমস্যা হচ্ছে, যখন যেই গ্রুপ গর্ব করে, একটা কথার বুলেট ছুড়ে তিনি সেই গ্রুপকে সীমাহীন অস্বস্তিতে ফেলে দেন।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার শেষের কবিতায় লিখে গেছেন,
"যেসব লেখকেরা লজ্জা করেনা বাঁচিয়া থকিতে ৬০/৭০ বছর,
তাহারা নিজেরাই নিজদিগকে শাস্তি দেয়, নিজকে করে দেয় সস্তা"
আহমদ শফি অবশ্য সেরকম কোন লেখক নয়, কিন্তু তিনি বক্তা - না লিখলে কি হবে, তার কথাই এক একটা বুলেট। যখন যা বলেন, তাই ধন্বন্তরির মত কাজ দেখায়।
আমার দেশ পত্রিকায় ব্লগারদের ইসলাম সম্পর্কে আজেবাজে লেখা দেখে মাথা হইল গরম। মানুষেরে দিলেন খেপিয়ে। যে ব্লগারদের কারণে ইসলাম বিপন্ন হতে যাচ্ছিল, তাদের হাত থেকে বিপন্নপ্রায় মুসলিম জাতিকে রক্ষা করার জন্য গঠন করলেন হেফাজতে ইসলাম। মুখে মুখে যারা রাজা উজির মারে, এরকম বীর পুঙ্গবেরা ইসলাম হেফাজতের মহান শপথ জড়ো হতে থাকল শাপলা চত্বরে। কিন্তু রাত গভীরে যখন আওয়ামী কায়দায় মাইর শুরু হল, তখন তাদের বীরত্বের নমুনা টের পাওয়া গেল। হেফাজতের আমীর বা পাতি নেতারা তখন ভোজবাজির মত হাওয়া হয়ে গেল।
তবে হেফাজতের এই স্ট্র্যাটেজি সেদিন জামায়াত শিবিরের অনেক কাজে এসেছিল। গণজাগরণ মঞ্চ যেভাবে জামায়াত শিবিরের প্রতি
সাধারণ মানুষের ঘৃণা পুঞ্জিভূত করার প্রয়াস নিয়েছিল, হেফাজত কিছুদিনের মধ্যেই সেইসব মানুষের ক্ষোভ খোদ গণজাগরণ মঞ্চের দিকেই বিস্ময়করভাবে ডাইভার্ট করেছিল। আবার ৫ই মে'র রাতের ঘটনায় সেই ক্ষোভই সরকারের দিকে টার্ণ নিল। তখন আল্লামা শফিকে বলা হত বিপদাপন্ন জামায়াত শিবির প্রজাতির প্রতি আল্লাহর প্রেরিত রহমত। আর সরকারের চোখে সেই হয়ে উঠল চক্ষুশূল। কিন্তু সমস্যা হল উনি ইসলামের ঝান্ডা বহন করাতে এবং মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে তার কোন অপকর্মের রেকর্ড না থাকায় তাকে কোন মামলায় ফাঁসানো যাচ্ছিল না। এ অবস্থায় যখন তার চরিত্র হানির কোন রাস্তা পাওয়া যাচ্ছিল না, তখন সরকারের কাছে রহমত হইয়ে আসে তার বিখ্যাত তেঁতুল বিষয়ক ভাষণ। আর যায় কোথায়! সরকারের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-ঊপমন্ত্রী সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে তেঁতুল তত্ত্বের বিরুদ্ধে। এদিকে জামায়াত শিবিরের মুখও পাংশু হয়ে যায় তাদের রক্ষাকর্তা রূপে আবির্ভূত হওয়া শফি হুজুরের এরকম অসংলগ্ন উক্তিতে।
কিন্তু সময় সব সময় একরকম থাকেনা। সময় বদলায়। কালের পরিক্রমায় শফি হুজুর এখন আর জামায়াত শিবিরের নেই। চলে বলে কৌশলে আওয়ামী লীগ এখন শফি হুজুরের দখল নিয়ে নিয়েছে। তাই শফি হুজুর এখন বেফাঁস কোন উক্তি করলে তার দায় বা অস্বস্তি এখন আর জামায়াত শিবিরের নয় - ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। একথা আশা করি সবাই এখন বুঝে ফেলেছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জানুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:০২