somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ধর্ষণ মামলায় কেন আপসে বাধ্য হয় বাদীপক্ষ ???

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ধর্ষণের ভিডিও চিত্র সেলফোনে ধারণ করে ওই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে টাঙ্গাইলের সখীপুরে এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। মামলাও হয়। ততদিনে সেই শিক্ষার্থী অন্তঃসত্ত্বা (১৯ সপ্তাহ) হয়ে পড়েন। অভিযোগ ছিল ওই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে সেই স্কুলছাত্রী ধর্ষকের বাড়িতে বেড়াতে যায়। ওই বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে ধর্ষক মেয়েটিকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণের ভিডিও সেলফোনে ধারণও করে সে। ওই ভিডিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ধর্ষক একাধিকবার ধর্ষণ করে। মামলার খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায় গত সেপ্টেম্বরে মামলা হওয়া এই ঘটনার পর এখন সেই ধর্ষণকারীর সঙ্গে সংসার করছেন ধর্ষণের শিকার শিক্ষার্থী।

মামলার বিষয়ে অগ্রগতি জানতে ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায়, তারা এখন সংসার করছেন। তাদের অনুরোধ আগে কী ঘটেছে তা নিয়ে যেন আর নাড়াচাড়া না করা হয়। ভিকটিম জানায়, এই আপসের মধ্য দিয়ে যদি তার সংসারটি না হতো তাহলে সমাজে তিনি ‘মুখ দেখানোর যোগ্য’ থাকতেন না। পরিবারের চাপে তিনি বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন।

রাজশাহীর আরেক ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষণের শিকার নারী মামলা করেন। ধর্ষক পলাতক। এরপর মামলা তুলে নিয়ে এলাকা ত্যাগ করে ধর্ষণের শিকার সেই পরিবার। ধর্ষণের ঘটনার পরও বিচার না চেয়ে মামলা তুলে নেওয়ার বিষয়ে ভিকটিমের মামা বলেন, যা ঘটেছে এরপর এলাকার ক্ষমতাশালীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে মামলা চালিয়ে নেওয়া সম্ভব না। মেয়ের যা ক্ষতি হওয়ার হয়েছে, এখন কিছু টাকা দিয়ে যদি তার জীবনে কিছু করে খাওয়ার ব্যবস্থা কথা যায় সেজন্য দুই পরিবার মিলে আপস করা হয়েছে।

ধর্ষণের ঘটনায় প্রায়ই সামাজিক ও পারিবারিক পরিসরে আপসের কথা শোনা যায়। কেবল দুই পরিবারে বিয়ে দিয়ে দেয় এমন নয়। স্থানীয় মেম্বার-চেয়ারম্যানসহ সমাজপতিরা যেমন থাকেন তেমন কখনও কখনও আইনজীবী ও আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীও যুক্ত থাকে এবং আসামি আর ধর্ষণের শিকার নারীর বিয়ের ব্যবস্থা পর্যন্ত করে থাকেন।

ধর্ষণের মামলা নিয়ে কাজ করেন এমন সরকারি আই্নজীবীরা বলছেন, কোনও কোনও মামলায় ভেতরে ভেতরে আসামি ও বাদী আপসের বিষয়টা ঠিক করে নেন তারা সেটি বুঝতে পারেন। একজন সরকারি আইনজীবী বলেন,‘যখন দেখি কেউ সাক্ষী দিতে চায় না, বাদী আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে তখন বোঝা যায় বাইরে বাইরে সমঝোতা হয়েছে। তখন কোনও কোনও ক্ষেত্রে আদালতের সঙ্গে পরামর্শক্রমে আমরা তাদেরকে কাস্টডিতে নিয়ে বড় অংকের টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে বাধ্য করি। ওই টাকা ভিকটিমকে দিলেই কেবল আপস হবে। এরকম ঘটনা ঘটে।’

কিন্তু এধরনের অপরাধে আপস হওয়া উচিত নয় উল্লেখ করে রাজশাহীর নারী শিশু নির্যাতনের দ্রুত বিচার আদালতের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অনেকসময় ভিকটিম দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মামলা আপসে যেতে দেখেছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি ঘটে তখনই যখন নির্যাতনের শিকার মেয়েটি গরিব হয়। তারা আদালতের বাইরে সমঝোতায় বসতে বাধ্য হয়, এটি বাস্তবতা। তখন মেয়েটি ধর্ষণ হয়েছে বললেও কোনও সাক্ষী পাওয়া যায় না।’ তিনি আরও বলেন, ‘মামলাগুলো আপসযোগ্য না। আপস ঠেকাতে রাষ্ট্রপক্ষকে কড়া নজরদারি রাখতে হবে। উল্টো সাক্ষ্য দিলে সাক্ষীকে বৈরী ঘোষণা করতে হবে।’

মানবাধিকার আইনজীবীরা বলছেন, বিচারে দেরি হলে আপস-সমঝোতার চাপ বাড়ে। সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে আপসে রাজি হয়। ধর্ষকের হুমকি ধমকিও একটি অন্যতম কারণ।

সরকার পক্ষের আইনজীবী পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আপস করতে চায় যে কারণগুলোর জন্য তার বেশিরভাগই ভিকটিমের জন্য অপমানজনক। কিন্তু সামাজিক বাস্তবতায় তাকে সহযোগিতা করে তার এই কারণগুলো দূর করবে এমন কেউ থাকে না পাশে। ফলে পরিবারও চাপগুলো সহ্য করতে পারে না। এ পরিস্থিতিতে নিজেরা নিজেরা সমঝোতা করে নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। আদালতের খুব বেশি কিছু করার থাকে না। সমঝোতার ভেতরে আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ বেশি। বিবাহিত সম্পর্ক স্থাপনের কথা শোনা যায় তবে সেই হার কম।’ আইনজীবীরা এসব ক্ষেত্রে যুক্ত থাকেন কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সরকারের আইনজীবীর এখানে সম্পৃক্ততা থাকে না কিন্তু সমঝোতার সিদ্ধান্তের পর আসামির আইনজীবীর পরামর্শ মতোই তারা কাজ করে।’

সমঝোতা করে কেন প্রশ্নে উইক্যান বাংলাদেশের জাতীয় সমন্বয়ক জিনাত আরা হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ধর্ষণের শিকার হলে সেই নারী ও তার পরিবারের সম্মানহানি ঘটেছে এবং তাদের স্বাভাবিক জীবন নেই বলে সমাজে প্রতিষ্ঠিত ধারণা থাকার কারণে বিচার চাওয়ার চেয়ে ধর্ষণের ঘটনাটি তাড়াতাড়ি ভুলে যাওয়া এবং ধামাচাপা দেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়। সেই জায়গা থেকে সমঝোতা করা হয়। ধর্ষকের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার পর ধর্ষক সেই নারীকে নির্যাতন করছে, বিবাহবিচ্ছেদ ঘটছে কিন্তু তারপরও ধর্ষণের ঘটনাটি সামনে থাকছে না। তারপরও ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের টিকে থাকার জন্য সেটি জরুরি হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘ঘটনার শুরুতে শারীরিক মানসিক ক্ষতটা বেশি থাকায় বিচার হয়তো চায় কিন্তু সময় যত যায় সেই ঘটনার মুখোমুখি আর হতে চায় না। আমাদের সামনে যদি ধর্ষণের শিকার নারীর পুনর্বাসন ও লড়াইয়ের ইতিবাচক উদাহরণ অনেক বেশি থাকতো তাহলে সমঝোতা না করে বিচার চাওয়ার প্রবণতা বাড়তো।’
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×