somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

উন্নয়ন নয়—বাংলাদেশ এখন বৈষম্যের সেরা উদাহরণ

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিশ্বে সবচে’ দ্রুত গতিতে অতি ধনীর সংখ্যা বাড়ছে বাংলাদেশে, গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যুনতম মজুরি ৮ হাজার টাকা এবং ব্যাংক কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলো একই সূত্রে গাঁথা— একদম একসূত্রে..

আমেরিকা-ব্রিটেনের চেয়েও দ্রুতগতিতে ধনী হচ্ছে মুষ্টিমেয় মানুষ । যাদের সম্পদ ২৫০ কোটি টাকার বেশি, তাদের অতি ধনী বলে । এবং সেই পরিমাণ সম্পদের মালিক সবচে’ দ্রুত হচ্ছে বাংলাদেশে ।

অথচ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে— ২০১৬ সালে ২০১০ সালের তুলনায় বাংলাদেশে সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ পরিবারের আয় ৫৭ শতাংশ বেড়েছে৷ তাঁদের মাসিক আয় ৮৮ হাজার ৯৪১ টাকা ৷ এর মানে কাগজে-কলমে যারা ৯০ হাজার টাকাও মাসে কামাতে পারে না, গোপনে তারা শত কোটি টাকা কামায় ।

ব্যাংক হিসেবে কোটিপতি আমানতকারী বেড়েছে একবছরে প্রায় ৬ হাজার জন । এখন হিসাব করুন, যারা মাসে ৯০ হাজার টাকাও কামাই করে না, তারা কিভাবে ব্যাংকে কোটি টাকা আমানত রাখে ? এটা কি বাংলাদেশের মানুষের উপার্জন বৃদ্ধি পাওয়াকে প্রমাণ করে, নাকি দুর্নীতি বেড়ে যাওয়াকে ?

এবার দেখি, আসলেই দেশের মানুষের উপার্জন কি বাড়ছে ?

পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে— ২০১০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত হিসাবে ৫ শতাংশ মানুষের আয় ৫৭ শতাংশ বাড়লেও বিপরীতপক্ষে ৫ শতাংশ মানুষ অতি দরিদ্র কাতার থেকে আরও নেমে এসেছে । তাদের পরিবারের আয় কমেছে ৫৯ শতাংশ৷ মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ৭৩৩ টাকায়৷ যা আগে ছিল ১ হাজার ৭৯১ টাকা ৷

তাহলে কাদের পকেটের টাকা কোথায় গেছে—হিসাব করুন ।


আরও হিসাব মিলান— বাংলাদেশ থেকে গত ১০ বছরে দেশের বাইরে পাচার হয়েছে সাড়ে ৬ লাখ কোটি টাকা— অর্থাৎ গত দু'টি বাজেটের সমান ৷ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে অর্থ পাচার সবচেয়ে বেশি হয়েছে বাংলাদেশ থেকেই ৷

এটা কিভাবে পাচার হচ্ছে ?

শেয়ার বাজার কেলেংকারি থেকে শুরু করে ব্যাংক লুটপাট, বিরাট বিরাট ফ্লাইওভার থেকে নিয়ে পদ্মাসেতুর মতো প্রকল্পগুলোতে ক্ষণে ক্ষণে বাজেট বৃদ্ধি, এমনকি একটি হোটেলের সংস্কারে যেখানে ব্যয় হয় ৬২০ কোটি টাকা—সেখানে হিসাব মেলাতে আপনার কষ্ট হবার কথা নয় ।

অথচ গত ১০ বছরে বাংলাদেশে এমন শীর্ষস্থানীয় কোনো কারখানা তৈরি হয় নি, গ্লোবাল মার্কেটে যারা হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যবসা করেছে । যে কাজটি হয়েছে এবং হচ্ছে চীনে । তাই জরিপকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েলথ এক্স বিস্মিত হয়ে বলছে— ‘এটা আশ্চর্যজনক যে ধনকুবেরের সংখ্যা বৃদ্ধির হারের দিক দিয়ে চীন বিশ্বের এক নম্বর দেশ নয়, এ অবস্থান এখন বাংলাদেশের৷''

শুধু পাচার নয়, আরও কিছু ঘটনা বাংলাদেশে ঘটে । তা হলো, গত ১০ বছরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১০ গুণ বাড়লেও শ্রমিকদের মজুরি দ্বিগুণও হয় নি ।

গার্মেন্ট কারখানাগুলোতে বেতন বৈষম্য দেখলেও অবাক হতে হয় । যেখানে শ্রমিকরা ১২ ঘণ্টা ডিউটি করেও ১০ হাজার টাকা তুলতে পারে না । সেখানে একেকজন কর্মকর্তার বেতন থাকে নিম্নতম ২ লাখ টাকা থেকে ৩০ লাখ পর্যন্ত । মালিকদের হাবভাব থাকে যে, তারা সবসময়ের লোকসানের মধ্য দিয়েই যাচ্ছে । অথচ বাংলাদেশের বেশিরভাগ ধনী শিল্পপতিরা গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিরই মালিক ।

বাংলাদেশে এখনও দরিদ্র মানুষের সংখ্যা শতকরা ২৩ জন । এবং এর মধ্যে অতি দরিদ্র আছেন শতকরা ১২ জনের বেশি । অর্থাৎ ১৮ কোটি মানুষ থাকলে ৩ কোটির বেশি লোক যেখানে দরিদ্রসীমার নীচে বসবাস করে, সেখানে অতি ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধি একটা দেশের জন্য কতটা বৈষম্যের কলঙ্ক বহন করে— তা বিবেকবানরাও কি অনুভব করে ?

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন— বাংলাদেশে অতি ধনী বাড়ছে, এর মানে হলো উন্নয়নের সিংহভাগ একটি অংশের পকেটে চলে যাচ্ছে৷ জিডিপির হিসাব দিয়ে তো আর উন্নয়নের হিসাব হয় না ৷ এটা কোনো উন্নয়নের দৃষ্টান্ত নয়, বৈষম্যমূলক উন্নয়নের দৃষ্টান্ত ৷


তথ্যসূত্র :
১. ডয়েচে ভেলে : https://bit.ly/2Qt9Aec
২. বিবিসি : https://bbc.in/2MkrLzx
৩. বাংলাট্রিবিউন : https://bit.ly/2CVO7b5
৪. নয়াদিগন্ত : https://bit.ly/2CTCzoG
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৫৭
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেনারসী রঙে সাজিয়ে দিলাম চায়ের আসর=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫২



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনে কি পড়ে সেই স্মৃতিময় সময়, সেই লাজুক লাজুক দিন,
যেদিন তুমি আমি ভেবেছিলাম এ আমাদের সুদিন,
আহা খয়েরী চা রঙা টিপ কপালে, বউ সাজানো ক্ষণ,
এমন রঙবাহারী আসর,সাজিয়েছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজ্ঞানময় গ্রন্থ!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪২

একটু আগে জনৈক ব্লগারের একটি পোস্টে কমেন্ট করেছিলাম, কমেন্ট করার পর দেখি বেশ বড় একটি কমেন্ট হয়ে গেছে, তাই ভাবলাম জনস্বার্থে কমেন্ট'টি পোস্ট আকারে শেয়ার করি :-P । তাছাড়া বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

অস্ট্রেলিয়ার গল্প ২০২৪-৪

লিখেছেন শায়মা, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:৪৫


চলে যাবার দিন ঘনিয়ে আসছিলো। ফুরিয়ে আসছিলো ছুটি। ছোট থেকেই দুদিনের জন্য কোথাও গেলেও ফিরে আসার সময় মানে বিদায় বেলা আমার কাছে বড়ই বেদনাদায়ক। সেদিন চ্যাটসউডের স্ট্রিট ফুড... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসের নায়িকাকে একদিন দেখতে গেলাম

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৫

যে মেয়েকে নিয়ে ‘অন্তরবাসিনী’ উপন্যাসটি লিখেছিলাম, তার নাম ভুলে গেছি। এ গল্প শেষ করার আগে তার নাম মনে পড়বে কিনা জানি না। গল্পের খাতিরে ওর নাম ‘অ’ ধরে নিচ্ছি।

... ...বাকিটুকু পড়ুন

×