somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সংসদীয় গণতন্ত্র ও দোদুল্যমান মুসলিম ভোটার

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


গণতন্ত্র বৈধ কি অবৈধ—এই সংশয় আমাদের আজও কাটে নি। অথচ বিশ্বে আধুনিক সংসদীয় গণতন্ত্রের বয়স অন্তত দেড়শ’ বছর পার হয়েছে—‘ফ্রেন্স থার্ড রিপাবলিক’ প্রতিষ্ঠাকে (১৮৭০) যদি প্রথম ধরা হয়। যারা বৈধ বলেন, তারাও সর্বাংশে মেনে নিয়ে বলেন, তা নয়। সুদানের হাসান তুরাবি (১৯৩২-২০১৬), তিউনেশিয়ার রশিদ ঘানুশি (জন্ম: ১৯৪১) কিংবা বাংলাদেশের মুফতি আমিনী (১৯৪৫-২০১২)—তাদের সকলে মনে করেছেন— আধুনিক সময়ে সরকার গঠনে সমাজতন্ত্র ও গণতন্ত্রের বিকল্প যেহেতু নেই, তো গণতন্ত্রই মন্দের ভালো। যারা অবৈধ বলেন, সরকার পরিচালনায় তারাও যে জনপ্রিয় কোনও মডেল দাঁড় করাতে পেরেছেন, তা-ও নয়। এদের তালিকা দীর্ঘ এবং এদের বেশিরভাগই ‘এক্সট্রিমিস্ট’ হিশেবে চিহ্নিত।

এ ছাড়া লেখকের অভিজ্ঞতা বলে—ইউনিভার্সিটি ও মাদরাসা উভয় শিক্ষাক্ষেত্রে বিপুল পরিমাণ আলেম-শিক্ষক রয়েছেন, যারা ইসলামি রাজনীতিকে সরাসরি অস্বীকার করেন না বটে, কিন্তু নির্বাচনের সময় ভোট দিতে অনুসারীদের নিরুৎসাহিত করেন। তাদের অধিকাংশের মন্তব্য হলো—যাকে ভোট দেওয়া হবে তিনি নির্বাচিত হয়ে রাষ্ট্রীয় একটুকরো কাগজেও যদি দুর্নীতি করেন, ভোটার তার দায়ভার এড়াতে পারে না—পাপের অংশ ভোটারকে বইতে হয়। কিন্তু ভোটের দিন তো ভোটকেন্দ্রে না গিয়ে উপায় নেই। লোকজনের সমালোচনার শিকার হতে হয়, উগ্র দলান্ধদের মুখে পড়ারও হুমকি থাকে। তাহলে করণীয় কী? তাদের উপদেশ—যদি তা-ই হয়, আবার যোগ্য কাউকে পাওয়াও না যায় (বলাবাহুল্য, একটুকরো কাগজ পরিমাণ অসদুপায় অবলম্বন করবে না, এমন প্রার্থী এখন নেই), তাহলে ভোট নষ্ট করাই যৌক্তিক।

এমন যদি হয় নেতৃস্থানীয়দের অবস্থা, তাহলে সাধারণ প্রাক্টিসিং মুসলিমদের ভেতর সংশয়ের ক্ষত যে কতটা গভীর—তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসে এই সংশয়ের মাত্রা তত বাড়ে। একটি জাতীয় সিদ্ধান্তের বিষয়ে সংশয় লুকিয়ে রাখা যায় না, কারও অজানাও থাকে না। ফলত ভোটের হাওয়া যত উদ্বেল হোক, প্রার্থীরা হিসাবের বাইরেই রাখেন প্রাক্টিসিং মুসলিমদের ভোট। ধরে নেন—এসব ভোট হয়তো কাস্ট হবে না, নয়তো অবশ্য-পরাজিত বিভিন্ন ইসলামি দলের পেটে যাবে—যদি না আচমকা ধর্মীয় কোনো সেন্টিমেন্ট মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বললে অত্যুক্তি হবে না—ইসলামি দলগুলো ধর্মীয় সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করেও বটে। এভাবে সরকার গঠনের আগেই নতুন সরকারের প্রচ্ছন্ন প্রতিপক্ষে (অনেক সময় উৎকট ঝামেলায়) পরিণত হয় তারা। সরকার চায় তাদের না ঘাঁটাতে। ঝামেলা মেটানোর প্রয়োজনে সস্তাদরের টুকটাক উপহারও দেয় বটে।

প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, সেক্যুলার সরকার বা বিরোধী দল যে ইসলামি দলের সঙ্গে জোট করে, তা ভোটের প্রয়োজনে না, করে কোয়ালিটি কোটা পূরণ করতে। যেমন সেক্যুলার স্কুল একটা ঐচ্ছিক ধর্ম ক্লাস রাখে, যেমন মুক্তমনা প্রকাশনী দু-চারটা ‘পাঞ্জেসুরা অজিফা’ ছাপে, যেমন কট্টর কম্যুনিস্টও মৌসুমি হাওয়া সামাল দিতে হজ করে টুপি পরে—ঠিক তেমন। অর্থাৎ এটা কমিটমেন্ট নয়, জাস্ট কোয়ালিটি। ইসলামি দলের নেতৃবৃন্দ কি এটা বোঝেন, নাকি রাজনৈতিক চাপে ধন্দে পড়ে যান?

যা-ই হোক, দ্বন্দ্বে-ধন্দে কেটে যায় আমাদের সময়। সংশয় নিরসন হয় না। কে অস্বীকার করতে পারে, গণতন্ত্রের পুঁজিবাদি মোড়কের কারণে হোক, কিংবা নৈতিকতার সুচিক্কন অজুহাতে হোক, এ-যুগে সৎ-যোগ্য প্রার্থীর যেমন দুর্ভিক্ষ চলছে এবং ইসলামিস্টদের রাজনৈতিক ব্যর্থতা যেমন প্রকট হচ্ছে, তাতে ভোট দেওয়াটা ধার্মিক ভোটারদের কাছে দ্বিধাগ্রস্ত হাতের সৌজন্য টিপসই ছাড়া কিছুই নয়? অমুসলিম দেশে মুসলিমদের সমস্যা থাকে বিশ্বাসের পার্থক্য জেনেও প্রার্থীদের মধ্যে প্রায়োরিটি নির্ধারণ করা। তবে সেক্যুলার সংসদীয়নীতি বিবেচনা করলে আমাদের দেশকেও খুব একটা আলাদা ভাবা যায় না। পরিস্থিতি তো সবার সামনে স্পষ্ট। ফলাফল— হুজুগে উল্লাসের কৌশল খাটিয়ে দুর্বিনীতরা নিশ্চিত জয় ছিনিয়ে নেয়। ব্যালটের পশ্চাদ্দেশ উদোম হয়ে পড়ে। ধর্মভীরু মুসলিমগণ কলঙ্ক এড়াতে আরও বেশি নিষ্ক্রীয় থাকেন, নয়তো তাৎক্ষণিক চিন্তায় যাকে সুবিধার লাগে, তাকে সিল মেরে ইস্তেগফার পাঠ করেন।

তাই বলে কি ভোটকে কেবল ‘আমানত’ আখ্যা দিয়ে আমানতের শরয়ি গুরুত্ব আলোচনাই সার হবে? একজন মুসলিম কি এরপর পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে নির্বাক বসে থাকতে পারেন? সিটিজেন এঙ্গেজমেন্ট বিবেচনায় ভোটের প্রভাব কতখানি তা বোঝা, বিশ্বাসের জোড়মিল হিসাব করে ভোট দেবার শর্তে প্রার্থীকে সুনির্ধারিত প্রতিশ্রুতিতে বেঁধে ফেলা, বিপক্ষকে পাশ কাটিয়ে প্রত্যাশিত প্রার্থীকে নির্বাচিত করে আনা, ভোটের পরে নিয়মিত সংযোগ রেখে তাকে প্রতিশ্রুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া—মোটকথা গণতান্ত্রিক দেশে যেখানে ভোটই প্রজার একমাত্র ক্ষমতা, তার সর্বোচ্চ সুবিধাটুকু আদায় করার গরজ কি আমাদের নেই?


খ্যাতিমান ইসলামিক স্কলার ইমাম ওমর সুলাইমানকে মনে করা হয় আমেরিকার সবচে’ প্রভাবশালী মুসলিম। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হওয়া আমেরিকার মধ্যবর্তী নির্বাচনে মুসলিম ভোটারদের করণীয় সম্পর্কে তিনি বেশ কয়েকটি পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন “The Conflicted Muslim Voter And The Flawed Candidate” শিরোনামে। দেশকালের প্রভেদ সত্ত্বেও আমার মনে হয়, বাংলাদেশের ভোটব্যবস্থার বিচারে ধার্মিক ভোটারদের জন্য তা চমৎকার দিক-নির্দেশনা হতে পারে।

তিনি লিখেছেন—মুসলিম সমাজের অনেকগুলো আলোচিত বিষয়ের একটি হলো, যাদের ওপর আমাদের আস্থা নেই, যেই দলগুলো আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে মূল্যায়ন করে না, তাদের প্রার্থীকে কী করে ভোট দিতে পারি? এটা তো অসম্ভব যে, আমরা যা যা চাই তার প্রতিটি একজন প্রার্থীর মধ্যে আমরা খুঁজে পাবো। তবে হ্যাঁ, এমন পরিস্থিতি আমরা কিভাবে মোকাবেলা করবো, চাইলে তা চিন্তাভাবনা করে রাখতে পারি। যদিও তিনি ডিসক্লাইমেশন দিয়েছেন—এটা একান্তই আমার নিজস্ব চিন্তা যার সঙ্গে দ্বিমত থাকতে পারে; হতে পারে আমি নিজেও কোনো একদিন এর কোনো একটি চিন্তার সঙ্গে একমত হবো না। তার বক্তব্যের পয়েন্টগুলো হলো—

এক. সার্বিক কৌশল ঠিক করা। রাজনৈতিক পদ্ধতি অনুযায়ী পূর্ণাঙ্গ কৌশল নির্ধারণ করতে হবে; যেন আমাদের ভোটের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়। ভোট আমাদের নাগরিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং সামগ্রিক কৌশলের মধ্যে বিচারে একটা দারুণ বোঝাপড়ার ক্ষেত্রও বটে। এটা না বুঝলে আর কোনো আলোচনারই প্রয়োজন নেই। কেননা, পরবর্তী সবক’টি পয়েন্ট এর সঙ্গে সম্পৃক্ত।

দুই. তাদেরকে আমাদের কথা শোনানো। আপনি যদি ভোটে অংশগ্রহণ না করেন তবে আপনি রাজনীতিকদের দায়বদ্ধ রাখতে পারবেন না। সুতরাং যদি আমরা সকলে শরিক না হই তবে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রায়োরিটি থেকে তারা আরও দূরে চলে যাবে। ফলে প্রার্থী থাকাকালে তো বটেই, নির্বাচিত হলেও মুসলিম সমাজকে বোঝা কিংবা তাদের বিষয়ে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করার পথ বন্ধ করে দেবে। আমরা যদি তাদের শোনাতে চাই, তাহলে আমাদের নিজেদেরকে আগে শোনাতে হবে।

তিন. অবশ্যই মতবিনিময় করা। নিজেরা আলোচনায় বসতে হবে এবং কাকে সমর্থন দেবো তা নির্ধারণ করতে হবে প্রার্থীর জ্ঞান, বোধ ও অভিজ্ঞতা যাচাই করে—সোশ্যাল মিডিয়ার বিভিন্ন পোস্টের উত্তপ্ত কমেন্ট সামনে রেখে নয়। এরপর জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কৌশল নির্ধারণের জন্য বিশ্বস্ত বন্ধুদের সঙ্গে আবারও রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসতে হবে। তুলনামূলক অগ্রাধিকার পাবে কোনটি এবং সে-জন্যে কী পদক্ষেপ নিতে হবে, তা ঠিক করতে হবে।

চার. যুক্তিসঙ্গত দাবি উপস্থাপন করা। তাদের থেকে আমাদের কয়েকটি প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা এখনও প্রার্থী। পূরণ হওয়াটা অবশ্যই নির্ভর করে প্রত্যাশা কতটা যুক্তিসঙ্গত তার ওপর। কিন্তু তাই বলে রায় যেন নিঃশর্ত না হয়। আবার মুসলিম হিসেবে তো আমরা কিছুতেই নির্দিষ্ট দলের ‘পেইড’ হয়ে যেতে পারি না, তা সমর্থনযোগ্যও নয়। কিন্তু এটা নিশ্চিত করতে হবে যেন আমাদের ভোট সেইসব লোকের পক্ষে যায়, যাদের অবস্থান এক্ষণে জাতবিদ্বেষীদের বিরুদ্ধে।

পাঁচ. নির্বাচনের পরে দায়বদ্ধ থাকা। আমাদের ভোট যাদের সরকারি দপ্তরে যেতে সহায়ক হয়েছে, নির্বাচনপূর্ব ইশতেহারের বিষয়ে তাদের দায়বদ্ধ রাখতে হবে। প্রায়শই দেখা যায়, নির্বাচনে যাদের আমরা সাহায্য করি, কেবল রমজানে ইফতার-মাহফিল ছাড়া তারা আমাদের কাছে আসে না। সেখানে উপস্থিত গুটিকতক মানুষের কথা তারা শোনে বটে। না, তাদের আমরা দোষ দিচ্ছি না, দোষ আমাদেরই। আমার কাছে দু-চারজনের টুকটাক প্রতিবাদও কোনো অর্থবহন করে না। টেকসই সংঘবদ্ধতা ছাড়া প্রতিবাদের প্রভাব হয় না বললেই চলে। সুতরাং স্ট্র্যাটেজিক এঙ্গেজমেন্ট ছাড়া ভোট দেওয়া-না দেওয়া একই কথা।

ছয়. ভোটের পরে পূর্বের সব পছন্দ-অপছন্দের হিসাব বাদ দিতে হবে। নির্বাচিত প্রার্থীর সঙ্গে তাকেও আমাদের স্বাগত জানাতে হবে, এমনকি উত্তরোত্তর সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে—সামান্য মতবিরোদের কারণে যাকে আমরা সমর্থন দেই নি। কেননা, তারা তো আমাদের ভোট দিতে বাধ্য করে নি। কিংবা আমাদের আদর্শবিরোধী যেসব ইস্যু তাদের দলে রয়েছে তা চাপিয়েও দেয় নি। অাজকাল দেখা যায়, এমন কিছু বিস্রস্ত ধারণাকে কেন্দ্র করে আমরা নিজেদের বিশ্বাস, ক্ষমতা ও বিবেকবোধ হারানোর ভয়ে আতঙ্কিত থাকি, যা আদৌ সত্যি নয়। ফলে একজন প্রার্থীকে কোনোমতে বাছাই করতে পারাটাই আমাদের একক রাজনৈতিক ‘গোল’ হয়ে ওঠে। অথচ এটা কোনো শূন্য অংকের খেলা নয়। বরং তাকে ভোট দিলে তার গোটা দল কিংবা জোটকেই ভোট দেওয়া হবে, আর না দিলে তাদের কেউ পাবে না। অর্থাৎ একজন প্রার্থীকে গ্রহণ করা মানে ওই প্লাটফর্মের সবাইকে গ্রহণ করা। এর বিকল্প নেই। চাইলে এটাকে রাজনৈতিক ছলচাতুরি বলতে পারেন। কিন্তু আশা করি, আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ আন্তরিকতা বজায় রাখলে এবং নিয়মিত পরস্পরকে পরামর্শ প্রদানের ধারা অব্যাহত থাকলে মোকাবেলার সর্বোত্তম উপায়টা আমরা বের করতে পারবো। রাজনৈতিক দক্ষতা বজায় রেখেও নৈতিক স্বচ্ছতা অটুট রাখা অসম্ভব নয়।

সাত. ভুল থেকে শিক্ষা নেওয়া। হতে পারে ভুলই করতে যাচ্ছি, কিন্তু ভুলগুলো যেন যুক্তিহীন না হয়। কর্মসূচী পুনর্মূল্যায়নের পথ যাতে উন্মুক্ত থাকে। যেন ধ্বংসাত্মক উপায়ে সমাধানের চেষ্টা না করা হয়। আল্লাহর নির্দেশ আমরা জানি—কিছুতেই সীমালঙ্ঘন করা চলবে না। অথচ আজকাল আমরা যা করছি, তা আমাদেরকে ক্রমশ ধর্মীয় ও রাজনৈতিকভাবে অমীমাংসিত অঞ্চলগুলোর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। চেষ্টায় আন্তরিকতা থাকা, সঠিক ব্যক্তিদের পরামর্শ নেওয়া এবং অভিজ্ঞদের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। সমালোচনা গ্রহণ ও প্রদান উভয় ক্ষেত্রে নমনীয় হতে হবে। অনিশ্চিত পরিস্থিতি এড়িয়ে যাওয়াকে যদিও নিরাপদ বলে গণ্য করা হয়, কিন্তু টেড ক্রুজের মতো ব্যক্তি আপনার সিনেটর হলে এড়িয়ে যাওয়া আর নিরাপদ নয়।


আট. কোনো অবস্থাতেই নববী কর্মপন্থা পরিত্যাগ না করা। গরিবের অভাব মোচন করা কিংবা সুস্পষ্ট শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা নতুন করে না বললেও চলে। এসব ক্ষেত্রে একজন মুসলিমের কেবল উপস্থিতি যথেষ্ট নয়, বরং নেতৃত্বের ভূমিকায় থাকা উচিত। এ-কারণে নয় যে, এগুলো রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বেশ ভালো, বরং এজন্য যে, এটাই নববী পন্থা। অসহায়কে সাহায্য করার মধ্য দিয়ে আল্লাহকে পাওয়া যায়। এটাই খিদমা। এ-বিষয়ে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। সৃষ্টির সেবা করা, বিশেষ করে অসহায়কে সাহায্য করে যেতে হবে, চাই রাজনীতির বাতাস যেদিকেই প্রবাহিত হোক।

নয়. লোকলজ্জার পরোয়া না করে সবসময় নিরপেক্ষতা বজায় রাখা। রাজনীতিতে বায়াসড হলে নীতির পথ দুর্গম হয়। যদি বায়াসড বার্তা দিয়ে কাউকে আটকেও ফেলা হয়, তাহলেও তার উচিত, তাদেরকে রব্বে কারিমের দেওয়া সুন্দর সুন্দর বার্তা উপহার দেওয়া।

দশ. প্রতিটি ভোট মূল্যবান। একেকটি ভোট ধরে ধরে গণনা করা হয়। সুতরাং একপাশে চুপচাপ বসে থাকা অনুচিত কিংবা সামর্থ্যে থাকা প্রভাব নষ্ট করার কোনো মানে হয় না। যেহেতু আমরা নিরন্তর গবেষণা করছি যে, কিভাবে আরও ব্যাপক পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাজের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি, যার মধ্যে ব্যালটে সিল দেওয়ার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত, সুতরাং আমাদের করণীয় অংশটুকু ভুলে গেলে চলবে না।

সবিশেষ—নেতৃবৃন্দ যা-ই করুন, তাদের কৌশল ভুল হোক কিংবা সঠিক, একজন সাধারণ মুসলিম ভোটারের সর্বাবস্থায় ‘নববী পন্থা’ লক্ষ রাখা উচিত, যা ইমাম ওমর সুলাইমান আট নং পয়েন্টে উল্লেখ করেছেন। আমাদের প্রার্থীরা তো সৃষ্টির সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেই নির্বাচনে দাঁড়ান। তিনি তার প্রতিশ্রুতি পূরণ করুন আর নাই করুন, একজন মুসলিম কি তার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতিকে অবহেলা করতে পারে? আবার অন্যায় করার মতো অন্যায় সওয়াও যদি সমান অপরাধ হয়, তাহলে অন্যায়ের সুযোগ করে দেওয়ার অপরাধও কি কোনো অংশে উপেক্ষা করা যায়? ধার্মিক হওয়া কিংবা ধর্মপালন করার চেয়ে ধর্মীয় পরিবেশ নিশ্চিত করাও কি কম গুরুত্বপূর্ণ? সুতরাং রাজনীতিতে আস্থা নেই বলে ব্যালটের শক্তিকে অকার্যকর ভাবা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা এবং বিষে বিষক্ষয় করার মন্ত্র শিখতে হবে। বিশ্বাস রাখতে হবে—রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বজায় রেখেও নৈতিক স্বচ্ছতা অটুট রাখা সম্ভব।

১। ওমর সুলাইমান
২। টেড ক্রুজ: রাফায়েল অ্যাডওয়ার্ড ক্রুজ (জন্ম ১৯৭০) , মার্কিন সিনেটর। ২০১৬ সালের মার্চে তিনি আমেরিকাতে patrol and secure Muslim neighborhoods শীর্ষক একটি মুসলিম বিদ্বেষী ক্যাম্পেইন চালিয়েছিলেন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:১৩
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×