অদ্ভুত একদেশ, অদ্ভুত সব মানুষ আর সবথেকে অদ্ভুত এই দেশের অর্ধশিক্ষিত- অশিক্ষিত সাংবাদিকেরা। তারা কিছুই জানেনা, শুধু জানে কিভাবে সাধারণ মানুষের আবেগ নিয়ে অতি সূক্ষ্মভাবে খেলা করা যায়।
আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি আমার ইন্টার্নশিপের সময় ৮ ঘন্টা ডিউটিতে ৮ টা পর্যন্ত নবজাতক মারা গেছে। কিন্তুু কেন? নবজাতক বিভাগে বেশির ভাগ বাচ্চাকে ভর্তি করা হয় birth asphyxia নিয়ে। সংক্ষেপে আমরা বলি PNA with HIE।মানে হচ্ছে জন্মের পর শ্বাস নিতে যত দেরি হয় ব্রেন ততটাই damage হয়ে যায়। আমরা মেডিকেলের ভাষায় একে বলি Hypoxic Ishchaemic Encephalopathy.
এর আবার তিনটি স্টেইজ আছে। স্টেইজ ওয়ানের বাচ্চারা উপযুক্ত চিকিৎসায় বেচে যায়। স্টেইজ টু এর ক্ষেত্রে সম্ভাবনা ফিফটি ফিফটি। স্টেইজ টুয়ের যেসব বাচ্চা বেচেঁ যায় তাদের বেশির ভাগেরই সেরেব্রাল পালসি হয়ে যায়। এদের মানসিক বিকাশ তো হয়ই না উল্টো বিকলাঙ্গ হয়। স্টেইজ থ্রির বাচ্চারা সাধারণত বাচেনা। অভিভাবকদেরকেও একইভাবে কাউন্সেলিং করা থাকে।
অতএব ২৪ ঘন্টায় ৭৫০ শয্যাবিশিষ্ট হসপিটালে ১০ টার অধিক বাচ্চা প্রতিদিন স্বাভাবিকভাবেই মারা যায়। কোন অখ্যাত- অর্ধশিক্ষিত সাংবাদিকের আত্মীয়ের নবজাতক শিশু মারা গেছে অথবা কোন দূরভিসন্ধি থেকে ডাক্তার সমাজকে demoralize করার জন্য এরকম দ্বায়িত্বজ্ঞানহীন রিপোর্ট করেছে।
গতকাল আবার দেখলাম আরো অদ্ভুত এক সার্ভে নিয়ে হাজির হয়েছে দেশের প্রথম সারির পত্রিকা প্রথম আলো। এতে বলেছে প্রতিদিন গড়ে নাকি মাত্র ২ টা নবজাতক মারা যায় যা আরো বেশি দূরভিসন্ধিওমূলক এবং হাস্যকর।
ক্যাম্পাসের একটা দূর্ঘটনাকে নিয়ে দেখেছি পত্রিকাগুলো লোকাল এক অর্ধশিক্ষিত সাংবাদিকের করা রিপোর্ট সবকয়টা পত্রিকায় সিরিয়াল নিউজ হিসেবে ছাপা হয়েছে। সাংবাদিক ছেলেটার সাথে আমার সুসম্পর্ক থাকায় আমাকে আগেরদিনই এনে দেখিয়েছে যে পরেরদিন জাতীয় দৈনিকগুলোতে কি সংবাদ যাচ্ছে। আমি কিছুতেই বিশ্বাস করিনি।
কিন্তু পরদিন দেখলাম ঐ খবরটাই একটু পরিবর্তন পরিবর্ধণ করে সবগুলো জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে। এই গাজাখুরি নিউজ করার পর ছেলেটার লোকাল পত্রিকা থেকে জাতীয় দৈনিকের আঞ্চলিক প্রতিনিধি হয়ে গিয়েছিল অথচ ছেলে ইন্টারের গন্ডি পর্যন্ত পার হতে পারেনি। এই হচ্ছে আমাদের দেশ, দেশের মানুষ আর সাংবাদিকতার অবস্থা।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৪৯