somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্রোহ এবং চিঠির দিনগুলোতে প্রেম।

১৪ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
সময়টা ছিল ১৯৯৬। একদিকে বিএনপির একপাক্ষিক নির্বাচন আর অন্যদিকে আওয়ামীলীগের কঠোর আন্দোলন। আবির তখন পঞ্চম শ্রেনীর ছাত্র। তার বয়স ছিল ক্লাসের সবার চেয়ে কম। ছোটবেলায় আবিরকে নিয়ে তার মা সিনেমা দেখতে যায়। সেটা ১৯৮৯ সালের কথা। আবিরের বয়স তখন মাত্র ২ বছর। মায়ের মুখ থেকে আবিরের গল্প শোনা।
তখন মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েরাও হলে সিনেমা দেখতে যেত। আবিরের মায়ের পাশে বসা মহিলাটা গল্প করছিল তার ছেলে মাত্র ১৫ বছর বয়সে এসএসসি পাশ করেছে। আবিরের মায়ের অবচেতন মনে বাসা বেঁধে যায় তার একমাত্র ছেলেকে ১৫ বছরের পূর্বেই এসএসসি পাশ করাবে। সেই ভাবনা থেকেই আবিরকে চার বছরের আগেই প্রি-প্রাইমারি ক্লাস এবং ৫ বছরের আগেই ক্লাস ওয়ানে ভর্তি করে দেয়। ছাত্র ভাল হওয়ায় আবিরের মাকে আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি।
২।
৯ বছরের পূর্বেই আবির ক্লাস ফাইভে উঠে যায়। আবিরের বৈষয়িক বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ খুব বেশি না হলেও পড়াশুনা এবং দেশ বিদেশের চলমান অবস্থার খবর সম্পর্কে ছিল অবাধ জ্ঞান। সেই বয়সেই আবির গণতন্ত্র- স্বৈরতন্ত্র বুঝতো। আবিরের পরিবার ছিল দুই রাজনৈতিক তাঁবুতে বিভক্ত। বাপ-চাচা ভাইবোন এমনকি বাবা-মাও রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত। আবির ছিল গণতান্ত্রিক দর্শনে বিশ্বাসী। স্বৈরতন্ত্র সে মোটেও পছন্দ করতোনা। সে মা-বাবা কারো পক্ষেই ছিলোনা। অল্প বয়সেই স্বাধীনভাবে ভাবতে পারতো। সে পরিবারের সবার তর্ক-বিতর্ক শুনত। কখনোবা নিজেও মতামত উপস্থাপন করত। দেশ ছিল আগ্নেয়গিরির মত উত্তপ্ত আর দুই দলের সম্পর্ক ছিল বরফ শীতল। সে তার বাবার সাথে সিক্স-ব্যান্ড রেড়িওতে বিবিসি বাংলা আর ডয়েস-এভেলে শুনতো। এত অল্প বয়সে বেশি রাজনৈতিক সচেতনতার জন্যে তাকে বকাও শুনতে হতো।
৩।
এরই মধ্যে ক্লাস ফাইভের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে চিঠির আদান-প্রদানের খবর তাকে কৌতুহলী করে তুলত। স্যারেরা রোজই চিঠির বিচার করতেন। শাস্তি হিসেবে ছিল তাচ্ছিল্য আর বেত্রাঘাত। বরাবরের ফার্স্ট বয় আবিরের ভদ্র হিসেবে খুব খ্যাতি ছিল। সে অবশ্য চিঠি লেখার কথা ভাবতেও পারতনা। বড় বড় সাইজের ছেলেরা চিঠি লিখত। তখনকার প্রেম শুধু চিঠি লেখা আর একটু তাকানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। প্রেমটা ছিল একটা প্লেটোনিক ব্যাপার। কয়েকটি মেয়ে বয়োঃসন্ধির কাছাকাছি পৌঁছালেও ছেলেরা তখন একদমই বয়োঃসন্ধির কাছাকাছি পৌঁছায়নি। অপরদিকে আবিরতো সবার চেয়ে ছোট। বয়সে সবচেয়ে বড় ছেলেটিও বয়োঃসন্ধির কাছাকাছি পৌঁছায়নি। এরই মধ্যে আবিরের মধ্যে প্রেম প্রেম একটা ভাব জন্ম নিল।
৪।
মেয়েটির নাম ছিল সঞ্চিতা। মেয়েটির একটু ভিন্ন ধরণের নাম প্রথমে আবিরকে মুগ্ধ করল। তারপর মুগ্ধ করল মেয়েটির কথা আর সৌন্দর্য্য। মেয়েটিও সবার মত আবিরের চেয়ে বয়সে বড় ছিল। আবির মনে মনে ভাবত একদিন মেয়েটিকে চিঠি দিয়ে তার ভাললাগার কথা জানাবে। কিন্তু আবিরের মনে সে সাহস নেই। তাই সে দুই বছর পরের জন্য চিঠি লেখা ফেলে রাখল।
৫।
আবির মেয়েটির সাথে স্কুলের মাঠে খেলত। ক্লাসে পাশপাশি বসত। এর বাইরে গিয়ে চিঠি লেখা মোটেও সম্ভব ছিলনা। আবির ভাবত মেয়েটিকে সে চিঠি দিয়েছে। দুজন একসাথে হাটছে আর পাশাপাশি বসে গল্প করছে। কিন্তু এ স্বপ্ন আবিরের কাছে মাউন্ট এভারেস্টে আরোহন করার চেয়েও কঠিন ছিল। তারপরও আবিরের স্বপ্ন জলে স্থলে বিচরণ করতে থাকল। একদিকে ছিল রাজনীতি আর দেশের ভবিস্যতের মাঠে উত্তেজনা আরেকদিকে ছিল আবিরের মনে উত্তেজনা। আবির ভাবত একদিন দুটোই একটি সুস্থ পরিনতির দিকে যাবে।
৬।
এভাবেই জানা-অজানার ভিড়ে আবির স্বপ্নের জাল বুনতে থাকে। কঠিন পরিস্থিতি পারি দিয়ে দেশে নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। দেশসচেতন মানুষের মত আবিরের মনেও স্বস্তি ফিরে আসে। কিন্তু ভাললাগার স্বপ্নের দেশে কোন স্বস্তি ফিরে আসেনা।
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×