আজ বিশ্ব মা দিবস। পড়ন্ত বেলায় দিনের শেষে মাকে নিয়ে কিছু লিখতে বসলাম। শুধু মায়ের সাথে ছবিও তোলা হয়েছে কম। আবার মাকে নিয়ে খুব একটা লেখাও হয়নি। মাকে সব সন্তানই ভালবাসে। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। অন্যান্যদের চেয়ে আমি হয়তোবা মার জন্য অনেক বেশিই ত্যাগ স্বীকার করতে পারি। এটা একটু দ্বিচারিতার পর্যায়েই পড়ে যায়। তবে বাস্তব সত্য হল সবকিছু শুধু প্রকাশ দিয়ে হয়না, হৃদয়ের গভীবে তা নিবিড়ভাবে লালন করতে হয়। অনেক সন্তান আছে সারাবছর খোঁজ থাকেনা অথচ মা দিবস এলে ফেসবুকে ব্লগে লেখার ঝড় তোলে। আমি তার থেকে একটু ব্যতিক্রম থাকতে চাই।
আমার মা আমাকে অনেকটা ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটের মধ্যে মানুষ করেছেন। কখনোই দৃষ্টিসীমার বাইরে যেতে দিতেন না। এসএসসি পর্যন্ত মা আমাকে ছাড়া একটা রাতও বাইরে কাটাননি। তার সমগ্র স্বত্তাজুড়ে শুধু আমি আর আমি। মা আমাকে ক্লাস থ্রি পর্যন্ত পড়িয়েছেন। তারপর পড়ানোর দ্বায়িত্বটা বাবার হাতে তুলে দিয়েছেন। মা আমাকে মেরেছেন। আবার রাতের বেলায় এজন্য কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন। বাবাকে কখনোই আমার গায়ে হাত তুলতে দেননি। এমনকি বাবা ধমক দিলেও মার মন খারাপ হতো। মার শুধু একটাই ধ্যান-জ্ঞান ছিল আমি শুধু তার। শাসন করার অধিকার শুধু তারই রয়েছে।
মা কখনোই আমাকে তার সুপারভিশনের বাইরে যেতে দিতেননা। এখন বড় হয়েছি তারপরও মায়ের কাছে সেই ছোট্ট বোচনটিই রয়ে গেছি। মা আমাকে বিচিত্র নামে ডাকেন। সবগুলো ডাকের মধ্যেই এক পৃথিবী সমান ভালবাসা জড়িয়ে আছে। মা সবসময় তাহাজ্জুদ পড়ে আমার জন্য দোয়া করতেন। মায়ের দোয়া বৃথা যেতনা। এখনো যায়না। আমি আগেও সবকিছু মায়ের সাথে শেয়ার করতাম এখনো করি। মা উপদেশ দেন। কিন্তু এমনভাবে দেন যেন আমার অনুভূতিতে আঘাত না লাগে।
ইন্টারের পর আমি স্কোর কম থাকার জন্য মেডিকেল ভর্তি কোচিং করতে চায়নি। মা অভয় দিলেন মেডিকেলে চান্স না পেলে জমি বিক্রি করে হলেও প্রাইভেট মেডিকেলে পড়াবেন। তখন আমি মেডিকেল ভর্তি কোচিং করতে রাজি হই। আসলে মা না চাইলে আমার ডাক্তার হওয়ায় হতোনা। যাই হোক প্রথম সারির মেডিকেলেই চান্স পায়। মেডিকেলের কঠিন পড়াশুনার কথা মায়ের সাথে শেয়ার করতাম আর মা আমার জন্য দোয়া করতেন। মায়ের দোয়ায় সবগুলো প্রফেশনাল পরীক্ষাতেই রেগুলার পাশ করে যাই। এরপর জীবনে যতগুলো চড়াই উতরাই আসে তা আমার নিজের ভূলের জন্যই। যখনই মার আদর্শের বাইরে গেছি তখনই কোন না কোন বিপদের মধ্যে পড়েছি।
মা আমাকে অতিরিক্ত আদর করাতে সবাই খুব ঈর্ষান্বিত থাকতো। আমার চাচাত ভাই বোনেরা বলত এই ছেলে যে আপনার কি করবে সেটা খোদাই ভাল জানেন। ছোট চাচি বলতো আমরাও তো পোলাপান মানুষ করেছি কিন্তু এমন করতে তো দেখিনি। আম্মা সব থোড়াই কেয়ার করতেন। নিজে কাপড় না পড়ে আমার জন্য শহরের সবচেয়ে দামি পোশাকগুলো কিনে দিতেন। আমার চাওয়ার দেরি হয়তো হতো কিন্তু মায়ের টাকা জোগাড় করে কিনে দেওয়ার দেরি হতোনা। আমি মাকে জিজ্ঞেস করি মা তুমি গ্রামের অন্য মা’দের থেকে এত বেশি কেন আমার জন্য কর। মা জবাব দিলেন, “তুমি না থাকলে তো আমি বেঁচেই থাকতাম না। তুমিই আমার দ্বিতীয় অস্তিত্ব।”
মার বয়স খব বেশি হয়নি। মাত্র ৫৭ বছর। ইদানিং মনে হচ্ছে আমার মা বুড়ো হয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এই বিষয়টা আমাকে খুব পীড়া দেয়। আমার মনে হয় মা বুড়ো হতে পারেননা। মা সবসময় আগের মতই থাকবেন। ক্যারিয়ারে বেশ কিছু বাধা বিঘ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। মা ধৈর্য্য ধরতে বলেন। তিনি বলেন অতীতের মত আবারো আমি ঘুরে দাড়াতে পারবো। আমারো বিশ্বাস এরকম মায়ের দোয়া থাকলে সন্তানের জীবন কিছুতেই বিপন্ন হতে পারেনা। সবার কাছে দোয়া চাই আমার মা যেন শতবর্ষ বেঁচে থাকেন সুস্থ শরীর নিয়ে, আমার আজীবন পথচলার অনুপ্রেরণা হয়ে।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই মে, ২০১৫ রাত ১০:৩৭