somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তোমরা যারা প্রশ্ন ফাঁস করে মেডিকেলে চান্স পেয়েছ।।

১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তোমাদের কৃতকর্মে আমি অবাক হইনি। অবাক হইনি অতি দ্রুত রাতের আধারে ফল প্রকাশ করে আবার দিনের আলোতে সর্বোচ্চ নাম্বার ৯৮ থেকে ৯৪ করাতে। এর জন্য তোমরা যারা টাকা খরচ করে সম্পূর্ণ নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে প্রশ্ন ফাঁস করে চান্স পেয়েছ তাতে আমি অবাক হয়নি। এটা আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের ব্যর্থতা। এটা আমাদের নৈতিক স্খলনের ফল। আমি তোমাদের দোষ দেইনা। একটা যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীই প্রশ্ন দেখেনি। তাতে কি বলব একজনও প্রশ্ন ফাঁস করা ছাড়া চান্স পাইনি? নাহ, তা বলবনা। যাদের প্রথম সারির মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়ার কথা ছিল তারা একদম নিচের সারির নতুন শিক্ষকবিহীন জেলা পর্যায়ের মেডিকেল কলেজগুলোতে চান্স পেয়েছে। তোমরা যারা সৎভাবে একদম নিচের দিকের মেডিকেল কলেজগুলোতে চান্স পেয়েছ তারা মোটেও হতাশায় ডুবে যেওনা। কারণ প্রকৃতির বিচার বলে একটা কথা আছে। ঐ স্টুডেন্টরা জীবনে কিছুই করতে পারবেনা। তোমরা যারা সৎ তারাই সামনে এগিয়ে যাবে।

এবার আগেরবার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং অনৈতিকভাবে চান্স পাওয়াদের পরিনতির প্রসঙ্গে আসি। যদিও আমরা জাতি হিসেবে অনেকটা গোল্ড ফিসের মত। আমরা সবকিছুই ভূলে যাই। ২০০৬-০৭ সেশনে আরেকবার তখনকার মত বাংলার মেডিকেল ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ফাঁসটি হয়েছিল। আমার দেখা অনেক অথর্বই প্রথম সারির মেডিকেল কলেজে চান্স পেয়েছিল। তবে তখন ফেসবুক হোয়াটসএপ আর ইন্টারনেটের জয়জয়কার না থাকাতে ঢাকাতে ব্যাপকভাবে ফাঁস হলেও ঢাকার বাইরে খুব বেশি একটা পৌঁছাতে পারেনি। ঐ ব্যাচেও ঢাকা মেডিকেলের প্রায় শতভাগ এবং পরেরদিকের মেডিকেল কলেজগুলোতে আনুপাতিক হারে প্রশ্ন পাওয়া শিক্ষার্থীরা চান্স পেয়েছিল। কিন্তু তাদের পরিনতি এখন পর্যন্ত খুব একটা ভালোনা। আর ভবিস্যতে পোস্টগ্র্যাজুয়েশনে এদের পরিনতি আরো অনেক ভয়াবহ হবে।

মেডিকেলে চান্স পাওয়ার পর আমাদের ওরিয়েন্টেশনে ঢাকা মেডিকেলের ফিজিওলজি বিভাগের শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক মহোদয় বলেছিলেন, “ তোমরা মাত্র তোমাদের জীবনের ইন্টারমিডিয়েট লাইফে প্রবেশ করলে। বাকি সবটুকু পথ সামনে পরে আছে। এই ভেবে আত্মতৃপ্তি লাভ করোনা যে অনেককিছু পেয়ে গেছ। তাহলে জীবনে আর সামনে এগুতে পারবেনা।’’ কথাগুলো চরম সত্য। পরে তা হাড়ে মর্মে উপলব্ধি করতে পেরেছি। প্রথম সারির মেডিকেলে পরেও মাঝে মধ্যে মনে হত মেডিকেল ছেড়ে দেই। প্রফেশনাল পরীক্ষাগুলো ছিল একেকটা পুলছিরাতের মত। তবে এখন পোস্ট গ্র্যাজুয়েশনে এসে দেখি ঐ পরীক্ষাগুলো ছিল নিতান্তই নস্যি। শিক্ষকরা আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেলে যতটা উদার তার চেয়ে শতগুণ কঠিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট লেভেলে।

এবার আমি ফাঁসকৃত প্রশ্নের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের উদ্দ্যেশ্যে কিছু বলতে চাইব। আপনারা জীবনের শুরুতেই আপনাদের সন্তানদের অনৈতিকতার পথে ঠেলে দিলেন। এর ফলে আপনাদের সন্তানদের তো ভাল হবেই না আপনারাও এর জন্য কঠিন পরিনতির জন্য অপেক্ষা করতে থাকুন। আপনার সন্তান মানুষমারা কোয়াক হবে। অনৈতিকতা দিয়ে খুব বেশি সামনে অগ্রসর হওয়া যায়না। এর চেয়ে আপনাদের সন্তানদের চোরাকারবারি ব্যাবসায় নামিয়ে দিতেন, তাও ভাল হত। আমি জানি আমার লেখা পড়ে অনেকেই আহত হবেন। এই অভিভাবকদের মধ্যে অনেক ডাক্তার, এমনকি প্রফেসর লেভেলের ব্যক্তিত্বও রয়েছেন। আপনাদের উদ্দ্যেশ্যে বলছি, আপনারা একেবারে জেনে বুঝে আপনাদের সন্তানদের নরকে নিক্ষেপ করলেন।

এবার আসি আমাদের সংগঠন বিএমএ’র প্রসঙ্গে। বিএমএ কর্তৃপক্ষ নিরব ছিলেন এই ব্যাপারে। অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রিন্ট মিডিয়াতে কথা বলেছেন। যারা বলেছেন তাঁরা বিবেকের তাড়না থেকে বলেছেন। প্রকাশ্যে কারো কিছু বলার সুযোগ ছিলনা। বিএমএর’র নিরব থাকা ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কিছু করার উপায় ছিলনা। যেখানে মহামান্য আদালত সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়ে রিট করা স্বত্বেও রিট খারিজ করে দিয়েছেন, সেখানে বিএমএ কি বলতে পারে? আমার প্রাণের সংগঠন স্বাচিপ সফলভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া এবং অত্যন্ত সুন্দর ও সুচারুরূপে রেজাল্ট প্রকাশ করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়কে অভিন্দন জানিয়েছে। এতে কিছুটা হলেও আহত হয়েছি। দালালির তো একটা সীমা আছে। তাঁরা দালালির সীমাটাও লংঘন করে গেছেন।

অনেকদিন ধরেই আমার মেডিকেল কলেজের কিছু দূর্নীতির ব্যাপারে কথা বলার ইচ্ছে ছিল। লিখি লিখি করে আর লেখা হয়ে উঠে নাই। আমিও রাজনীতি করেছি। কিন্তু পড়াশুনা আর নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে নয়। আমি আমার সিনিয়রদের প্রফেশনাল পরীক্ষার বোর্ডে একটা হরফ বলতে না পারা এবং হাস্যকর কৌতুকপূর্ণ উত্তর দিয়ে ৫০ এর মধ্যে ৫ পাওয়া স্বত্বেও নম্বরপত্র কারেকশন করে পাস করিয়ে দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, কোন ক্লাস আর এটেন্ডেন্স ছাড়া এমনকি চার বারে সেকেন্ড প্রফ পাস করার পর সাথে সাথে ফাইনাল প্রফে বসিয়ে পাস করিয়ে দিয়েছেন। আমি এ ব্যাপারে আমার শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যিনি নিজেকে অতীব ধার্মিক আর নৈতিকতা সম্পন্ন হিসেবে দাবি করেন। তিনি আমার ফ্রেন্ড লিস্টেও আছেন। তাঁকে আমি খুব শ্রদ্ধাও করি। তিনি প্রিন্সিপাল থাকার সময় মেডিকেলের সর্বকালের সবচেয়ে বেশি উন্নতি করেছেন এবং নিজে এক পয়সার দূর্নীতি করেননি। এদিক থেকে তিনি নৈতিকতার মাপকাঠি উতরে গেছেন। কিন্তু এভাবে রাজনৈতিক পরিচয়ের জন্য সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে কিছু অথর্ব ছেলেকে পাশ করানোর জন্য তাঁকে অবশ্যই বিবেক আর শেষ বিচার যদি থাকে, তবে অবশ্যই কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। স্যার আমি জানি আপনি আমার লেখাটা পড়বেন। কিন্তু দুঃখ পাওয়ার কিচ্ছু নেই। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ওদেরকে কমপক্ষে একটা সাপ্লিমেন্টারী তো দেওয়া উচিত ছিল, যেটা আমরা আগের সরকারের আমলে তার সহকর্মীদের করতে দেখেছিলাম। তিনি জবার দিলেন, পাশ না করালে ওরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করত আর রাজনৈতিক চাপতো ছিলই। আমি তার সাথে মোটেও একমত হতে পারিনি।

এবার শেষ অংশে আসি। ২০০৬-০৭ সেশনের ফাঁসকৃত প্রশ্নের একটা ছেলে শিবির থেকে দল পরিবর্তনের মাধ্যমে গ্রুপিংয়ের কারণে নেতা বনে যায়। যাইহোক মাথায় কিছু না থাকা এবং যথারীতি মাদকাসক্ত ছেলেটা ৪ বারে প্রথম প্রফেশনাল পরীক্ষায় পাস করে তাও রাজনৈতিক বিবেচনায়। তারপর দুই বছর পর যে সেকেন্ড প্রফে এটেন্ড করা যায় তা বাদ দিয়ে জিরো শাটার ডিলের মত তাঁকে সেকেন্ড প্রফেশনাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ব্যবস্থা করা হয়। সবচেয়ে আশ্চর্য্য যে ব্যাপারটা ঘটল সেটা মেডিকেল ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ঘটনা, যা আর কোনদিন ঘটবে তা ভাবাই যায়না। মাইক্রোবাইলোজি নামক সাবজেক্টের ভাইভাতে উপস্থিত না থাকার পরও তাকে উপস্থিত শুধু দেখানোই হয়নি, একেবারে পাশ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। একেবারে মুরগী বা ডিম কোনটি না থাকা স্বত্ত্বেও অলৌকিকভাবে বাচ্চা তৈরীর মত। তখন আমি প্র্যাকটিস লাইফে প্রবেশ করেছি আর ক্যারিয়ারের পেছনে ইঁদুর দৌড় দৌড়াচ্ছিলাম বলে কিছুই বলতে পারিনি। ফাঁসকৃত প্রশ্নের ছেলেরা কেউ কেউ এভাবে পার পেয়ে যাবে। কেউবা প্রফেশনাল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করে পরীক্ষা দিয়ে রিটেন পাস করে ভাইবাটা রাজনৈতিক বিবেচনায় অথবা জ্যাক দিয়ে অথবা দেহ দিয়ে অথবা অন্যকোনভাবে শিক্ষকদের ম্যানেজ করে আন্ডারগ্র্যাজুয়েট লেভেল পার হয়ে যাবে। কিন্তু পরবর্তি জীবন??!! লজ্জার হলেও নির্মম বাস্তবতা যে দেহ দিয়েও পাশ হয়। তোমরা তাই করবে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:৫৬
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×