somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক অন্যরকম প্রেমের গল্প

১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাইফুদ্দিন খান মোটামুটি বিজয়ী জনতার কাঁধে কাধেই ঘুরছেন। তাকে ঘিরে উৎসব চলছে। দ্বিতীয় বারের মত তার অবদানে শ্রীরামপুর গ্রাম হাডুডু খেলায় নয়া পাড়া কে হারিয়েছে। চ্যাম্পিয়ন দল হিসেবে তারা পেয়েছে একটি গরু, আর সেরা খেলোয়াড় হিসেবে সাইফুদ্দিন খান পেয়েছে একটি কলস। ছেলে বুড়ো সবাই আনন্দে তাকে নিয়ে মিছিল বের করেছে। আর তার জেতা কলস টি আর একজন উচিয়ে ধরে মিছিলের সাথে সাথে বাজার এর বিভিন্ন দোকানে দোকানে ঘুরছে। সবাই পাঁচ টাকা দশ টাকা করে দিচ্ছে সে কলসে। এ টাকায় জয় করা গরু জবাই করে পিকনিক হবে রাতে ক্লাবে। গ্রামের সবার সেখানে অলিখিত দাওয়াত।

হালকা পাতলা গড়ন সাইফুদ্দিন খানের। বয়সের তুলনায় লম্বা একটু হয়েছেন বেশিই। আর তার লম্বা হাত গুলোর কারনে হাডুডু খেলায় বেশ কায়দা করতে পারেন। তবে এ খেলায় হাতের থেকেও সবার নজর কাড়ে, তাকে যখন বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা ধরে ফেলে তখন কিভাবে যেন চোখের নিমিষে পাতলা শরীর টাকে ছাড়িয়ে চলে আসে নিজের কোর্টে। ছোট করে কাটা চুল আর শামলা মুখে গোফের আভা বুঝিয়ে দেয় এ ছেলে এখনও কৈশরে আছে। সবে ক্লাশ ৭ এ পরে সে। চোখ গুলোতে কেমন মায়া মায়া ভাব আছে তার। ছোট হলেও খেলার কারনে তার নাম আশেপাশের দু চার গ্রামে বেশ ভালই ছড়িয়েছে। সাতক্ষীরা জেলা দলে খেলার কথা এখনই অনেকে বলছে। তার বাবা স্কুলের প্রধান শিক্ষক। স্বল্প ভাষী নিতীবান মানুষ তিনি। ভুল করেও কাউকে কখনও মনে হয় বকা দেননি। তবে সব সময়ই এক গাম্ভির্যে নিজের ব্যাক্তিত্ব কে ঢেকে রাখেন। এক কথায় এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় মানুষ তিনি। তার বাড়ি টা এলাকায় খাঁ বাড়ি নামে পরিচিত। এ বাড়ির তিন ছেলের মেঝ ছেলে সাইফুদ্দিন খান।
এত অল্প বয়সে নাম ডাক হলেও তার মাঝে তেমন এক গর্বিত ভাব দেখা যেত না। সে সভাব সুলভ ভঙ্গিতে বন্ধুদের সাথে মিশত। দুষ্টুমি করত। কিন্তু তার দুষ্টুমি গুলো কে নিয়ে কেউ কখনও নালিশ নিয়ে আসত না। আর বড়দের কাছে সবসময়ই সে বিনয়ী। এমন যে খ্যাপ খেলতে অন্য গ্রামে গেছে কিন্তু খেলা শেষে তাকে কত টাকা দিল তা কখনও তাদের সামনে গুণে দেখত না বা টাকা নিয়ে কখনও দড়াদড়ি করত না।

সময় টা তখন ১৯৮০ বা ৮১ হবে। সে সময় গ্রামের স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের বয়স ক্লাশ দিয়ে বিচার করা যেত না। হয়ত একই বয়সের দু জন দু ক্লাশে পরে কিন্তু ক্লাশের বাইরে তারা জিগরি দোস্ত। সাইফ উদ্দিন খান স্কুলের পাশে সাঁঝের পুকুর পারে প্রায়ই আড্ডা দেন বন্ধুদের সাথে। কখনও তাদের পরিচিত কয়েকটি মেয়েও বসে তাদের সাথে। বিভিন্ন ক্লাশের হলেও অনেক মেয়েই সাইফুদ্দিন খান কে ভাই বলে সম্বধোন করে। তার পরও তাদের মাঝে দুষ্টুমি খুনসুটি চলে ভালই। এদের মাঝে একজন মেয়ে আছে যে পড়ে ক্লাশ ৮এ। স্কুলের বিভিন্ন ফাংশনে গান করে। গান শেখার তেমন ব্যাবস্থা নেই গ্রামে, শুধু স্কুলের সমাজের শিক্ষক হরিপদ বাবু কয়েক জন ছেলে মেয়ে নিয়ে সপ্তাহে একদিন স্কুলের দক্ষিন পাশের একটা রুমে তবলা বা হারমনিয়াম বাজিয়ে গলা সাধান। মেয়েটির নাম শরিফা। আর কথা বলতে গেলেই প্রথমে বলতে হবে তার মাথা ভরতি কোমর পর্যন্ত নেমে আসা লম্বা চুল। হালকা কোঁকড়ানো হলেও এ চুলের গোছা সত্যিই তার সৌন্দর্য কে অন্যমাত্রা এনেদিয়েছে। কিছুটা চঞ্চল মেয়েটি। টানা টানা চোখ গুলোতে গান গাওয়ার সময় টেনে কাজল দিত। অনেকেই বলত তাকে না কি সুচিত্রা সেনের মত দেখতে। সে মাঝে মাঝে গাইত “ আকাশ প্রদীপ জলে, ভোরের তারার পানে চেয়ে” বা “আকাশের হাতে আছে এক রাশ নীল, বাতাসের আছে কিছু গন্ধ” এ গান গুলো। সাইফ উদ্দিন খানের এ আকাশের হাতে আছে এক রাশ নীল গানটি তার গলায় খুব ভাললাগত। কেন যেন মনে হত গানটা যদি বার বার শোনা যেত।
কিন্তু সেটা হয় না। স্কুলের এক প্রোগ্রাম শেষ হলে অপেক্ষা করতে হয় আবার কবে নতুন প্রোগ্রাম হবে তার জন্য। মেয়েটির বাড়ি শ্রীরাম পুর গ্রামের দক্ষিন পাড়ায়। প্রায়ই সে বাড়ি থেকে কুল, পেয়ারা বা আম এনে সাইফ উদ্দিন কে দিত। সাইফ উদ্দিন কে বেশ ভালই লাগত। তার সাথে বেশি কথা বলত না মেয়ে টি। হয়ত পুকুরে এসে তার সামনে দাঁড়িয়ে বলবে,
- এই কুলটা আপনার জন্য।
বা, আম টি এগিয়ে দিয়ে বলবে,
- কাঁচা কিন্তু একটু লবন দিয়ে খাবেন। লবন আনতে ভুলি গছি।

সাইফ উদ্দিন খানের বন্ধুরা একটু মজা করলেও তার মাথায় কখনও অন্য চিন্তা আসে নি। আসলে প্রেম ভালবাসা কি সেটা তার কাছে পরিষ্কার ছিল না। তবে মেয়েটির সেই গান গাওয়ার মুহূর্ত গুলো খুব ভাললাগত তার। মেয়ে টি যখন এসে এটা ওটা দিয়ে মুখটা বই দিয়ে ঢেকে প্রায় পালিয়ে যেত তখন কেমন এক অনুভূতিতে তার মনে ভরে যেত। সেটা সে কাউকে বুঝাতে পারবে না। মনে হত মেয়েটির সাথে যদি বসে গল্প করা যেত, যদি প্রতিদিন তার জন্য এটা ওটা নিয়ে আসত! কিন্তু কিছুই হত না। মনে মনে অনেক সময় অস্থির বোধ হত এ মেয়েকে নিয়ে ভাবতে গেলেই। আবার ভাবনা যে ইচ্ছা করে করতে হত তা না, যেন দৈব ভাবেই তা আসত।
এভাবেই দিন কাটছিল। খেলাধূলার দিকে বেশি ঝুঁকে পরায় পড়াশুনার অনেক ক্ষতি হয়ে গেল তার এরই মাঝে। তার সমবয়সী বন্ধুরা ম্যাট্রিক পাশ করে সবাই কলেজে চলে গেল। কিন্তু সে পারল না। তার বাবা তেমন কিছু বলেন না তাকে। শুধু বলেছেন যে,
“ তার রাজার সম্পত্তি নেই, তাই নিজের টা নিজে করেই খেতে হবে”
এ কথা শোনার পর থেকে সে ভাবতে থাকে কিছু একটা করা দরকার। একদিন খবর পেল সাতক্ষীরা শহরে সেনা বাহিনীতে লোক নেবে। বন্ধুরা কেউ আর না থাকায় সে পড়া শুনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। সে প্রায় লুকিয়ে সাতক্ষীরা গিয়ে সেনা বাহিনী তে ভর্তির জন্য লাইনে দাঁড়াল। বিভিন্ন পরীক্ষায় সে বেশ ভালোভাবে পাশ করে সৈনিক হিসেবে নিয়োগ পেল সেখানে। কিন্তু এ জন্য তাকে বাড়ি থেকে বেশ কিছুদিন বাইরে থাকতে হয়েছিল। যখন চাকরী নিয়ে গ্রামে ফিরল তখনই শুনতে পেল শরিফার বিয়ে হয়ে গেছে। খবর টা শুনে তার মন টা কেন যেন খারাপ হয়ে গেল। খারাপ হওয়ার মত তেমন যুক্তি যুক্ত কারন ছিল না, কিন্তু মন ত আর যুক্তি মানে না।
সেনা বাহিনী র চাকরির ট্রেইনিং এর সময় সে সেখান থেকে পালায়। প্রতিদিন বিভিন্ন গালাগালি তার ভালোলাগত না। পরে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরওয়ানা জারি হলে সে স্বেচ্ছায় সেখানে ফিরে যায় আর সাত দিন সাজা খেটে সেখান থেকে যেন মুক্তি নিয়ে ফিরে আসে।
এরপর নানা ঘাত প্রতিঘাত পার করে সে জাহাজের চাকরী জোগার করে। আর এ চাকরী তেই সে বেশ উন্নতি করে, সাথে কিছু সম্পদ বাড়ি কিছু ফসলী জমি করে ফেলে। সবাই তখন তাকে বিয়ের জন্য তাগাদা দেয়। সবার পছন্দে বিয়েও করে। সে যখন জাহাজে থাকে তখন তার বৌ টি বাড়ি ঘর বেশ আগলে রাখে। সাইফ উদ্দিন খান আলাহ্ র কাছে শুকরিয়া করেন এমন একটি মেয়েকে তার জীবনে দেয়ার জন্য। নিরহঙ্কারী মেয়েটি যেন আবহমান বাংলার বধূ। তার কোল আলো করে আসে দুটি ছেলে। একটি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ছে এখন আর একটি ক্লাশ ৫ এ।
এর মাঝেই একদিন ছুটিতে তার বাড়ির সাঁঝের পুকুরের পারে তার বৌ এর সাথে দুপুরে গোসল এর আগে বসে গল্প করছে। তার বৌ মাজা ঘোসা করছে আর তার কথার উত্তর দিচ্ছে। এমন সময় দেখতে পেল বাড়ির সদর দরজা ঠেলে কে যেন আসছে। একজন মহিলা আর সাদা শার্ট গায়ে দেয়া প্যান্ট পড়া এক ভদ্রলোক। দেখে বোঝা যাচ্ছে তারা স্বামী স্ত্রী। কিন্তু সাইফ উদ্দিন খান ঠিক ঠাহর করতে পারছেন না তাদের। সে বৌ কে বলল,
- বৌ, দেখত কে আসল?
তার বৌ মাথায় কাপড় দিতে দিতে এগিয়ে যায়।
পিছন থেকে সাইফ উদ্দিন খান বলে,
- কে? চিনতি পার??
তার বৌ এগিয়ে গিয়ে সেই দম্পতি কে সালাম দিল। বলল,
- এতদিন পর মনে পরল? আসেন আসেন যার সাথে দেখা করতি আসেন সে আজ বাড়িতেই আছে।

সেই মেয়েটি স্বামীর কাছ থেকে একটু সামনে এসে সাইফ উদ্দিন খানের বৌ কে জড়িয়ে ধরল। আর পুরুষ মানুষ টি মিষ্টির ব্যাগ হাতে নিয়ে সাইফ উদ্দিন খান যেখানে বসে ছিল সেই সাঁঝের পুকুর পারে বাধানো ঘাটের দিকে এগিয়ে গেল। সাইফ উদ্দিন খান কিছুটা হতভম্ব। বুঝতে পারছে না কে এরা। আবার তার বৌ এর ভাব দেখে মনে হচ্ছে তাদের অনেক দিনের চেনা। লোকটি মিষ্টির প্যাকেট রাখতে রাখতে সালাম দিল তাকে। সে সালামের উত্তর দিয়ে তাকে বসতে বলল। জাহাজে চাকরী করার জন্যই হয়ত অনেক চেনা মানুষ কেও অনেক সময় ভুলে যেতে হয় বা না দেখে দেখে স্মৃতি তে ধূলো জমে। সাইফ উদ্দিন খান সেই ধূলো ঝাড়তে চাইছেন, কিন্তু বয়সের চাপে তা আর হয়ে উঠছে না। মানুষ টাকে কোথায় যেন দেখেছেন কিন্তু মনে করতে পারলেন না। মানুষ টিও তার হাতে মিষ্টির প্যাকেট গুলো দিয়ে বসে পরল। দু জনই চুপ। কেউ কথা বলছে না। এর মাঝে দেখা গেল সাইফ উদ্দিন খানের স্ত্রী সেই মহিলা টি কে সাথে করে আসছে তাদের দিকে। তাদের ওখানে এসে বসার পর। সাইফ উদ্দিন খানের স্ত্রী প্রথম মুখ খুলল। তার দিকে তাকিয়ে বলল,
- কি, চিনতি পারতিছেন না?
সাইফ উদ্দিন খান চুপ করে মাথা নিচু করে অপস্তুত হয়ে পরল।
তার বৌ বলল,
- ঐ যে দক্ষিন পাড়ার রহিম কাকা কে মনে আছে? তার একটা মেয়ে ছিল না শরিফা? প্রায়ই এ বাড়ি আসত কুল কুড়োতে না হয় আম কুড়োতে।
এতক্ষনে তার ধূলো সরল। স্মৃতি গুলো হুড়মুড় করে আছড়ে পরতে লাগল। মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে সেই কৈশরে দেখা মুখটি খুজতে চাইল কিন্তু ততদিনে সময় ত অনেক হয়েছে। সেই চুল আর নেই কিন্তু মুখে সেই চঞ্চলতা এখনও আছে। মেয়েটি কিছুটা অভিমানের সুরেই বলল,
- ভাই, আমাকে চিনতি পারেন নি?
সাইফ উদ্দিন খানের মুখে কথা আটকে গেছে। বুকের ভেতর বইছে যেন সাগরের ভয়ঙ্কর কোন ঝড়। সে শুধু উত্তর দিল,
- অনেক আগে দেখিছিত, আর তোমার চেহারাও ত অনেক পালটে গেছে।
সাইফ উদ্দিন খান ভয়ে ভয়ে তার স্ত্রীর দিকে তাকাচ্ছেন। তার কেন জানি মনে হচ্ছে তার মনের মাঝে যা হচ্ছে তা তার স্ত্রী বুঝতে পারছে। আবার তার স্ত্রী র আচরন দেখে মনে হচ্ছে সে কিছুই বুঝছে না। আবার শরিফা র দিকে তাকিয়ে সেই কাজল টানা চোখ দেখতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে তাকে জিজ্ঞেস করে “সেই গানটা একবার গাও না”। কিন্তু সে কিছুই করতে পারছে না। ক্ষনিকেই তার বয়স যেন ওঠা নামা করছে কৈশর আর বার্ধক্যের দ্বার প্রান্তের মাঝে। সে ঠিক বুঝতে পারছে না কেন এমন হচ্ছে? আবার এও বুঝছে না যে এ মেয়ে এতদিন পর কেন স্বামীকে নিয়ে তার বাড়িতে আসল? আবার তার স্ত্রীর কথা শুনে মনে হচ্ছে সে বাড়ীতে না থাকলেও প্রায়ই আসে সে।
এর মাঝেই শরিফা সাইফ উদিন খানের দিকে তাকিয়ে বলল,
- আপনা কে সাঁঝের পুকুর পারে কুল খেতে দিছলাম মনে আছে? সেই যে ক্লাশ ফাকি দিয়ে বসি ছিলেন সেদিন আম এনি দিলাম......
সাইফ উদ্দিন খান শুধু মাথা নাড়েন আর বলেন,
- কত দিন আগের কথা। ভুলেই ত গেছি অনেক কিছু।
কিন্তু মনে তার অন্য চিন্তা। সে বুঝাতে পারছে না যে এ প্রায় ৩৫ বছর সময় এর মাঝে সে একদিনও ভোলেনি তাকে।
এর মাঝেই শরিফা আর এক পাগলামি করে ফেলে, সাইফ উদ্দিন খানের বৌ এর দিকে তাকিয়ে বলে,
- ভাবি, আপনার জামাই রে আমার ভালোলাগত সেই স্কুলে পড়ার কালে। আপনি যেন অন্য কিছু ভাইবেন না।
তার জামাই এর দিকে দেখিয়ে বলে,
- উনিও জানেন। ওনাকে সবই বলেছি। শুধু যারে ভালোলাগত তারেই বলি নাই কোন দিন।
সাইফ উদ্দিন খান মাথা নিচু করে বসে আছে। ঘামছে দর দর করে। সে তার স্ত্রীর দিকে মুখ তুলে চাইতে পারছে না। কিন্তু এর মাঝেই তার স্ত্রীর গলা শুনে চমকে উঠল,তার স্ত্রী বলছে,
- কেন বোন, আগে ভালোলাগত এখন লাগে না? আমার জামাই টি কি দেখতে ত খারাপ?
মুহূর্তেই সেখানকার পরিবেশ এক অন্যরকম মাত্রা নিল। সাইফ উদ্দিন খানের স্ত্রী শরিফা কে বুকে জড়িয়ে নিল। আর শরিফা বার বার বলতে লাগল,
- ভাবি, আমারে ভুল বুইঝ না।
সে উত্তর দিল শরিফার জামাইএর দিকে তাকিয়ে,
- জামাই, এ পাগলি কে নিয়ে এতদিন সংসার করছ কি করে?
জামাই টি একটি লাজুক হেসে বলল,
- কেমন করে আর ভাবি, ওর মত পাগলামি করেই ওরে আটকে রেখেছি।
সেদিন সাইফ উদ্দিন খানের পুকুরে জাল ফেলা হল। বাজার থেকে গরুর মাংস এনে রান্না হল শরিফা আর তার জামাই এর জন্য। বিকালে দেখা গেল শরিফা রান্নায় সাহায্য করছে। আর সাঁঝের পুকুর পারেই সাইফ উদ্দিন খান আর সেই জামাই বসে ব্যাবসার গল্প করছে।
সন্ধ্যায় তারা বিদায় নিল। আর রাতে সাইফ উদ্দিন খান বিছানায় শুয়ে আছে চুপচাপ। সাধারনত সে কথা বলে এ সময় খুব। কিন্তু আজ কেন জানি কথা বলছে না তার স্ত্রীর সাথে। তার মনের মাঝে কেমন এক অপরাধ বোধ কাজ করছে। কেন করছে তাও বুঝছে না। শুতে শুতে তার স্ত্রী একটু হেসে বলল,
- কি এখনও শরিফার কথা ভাবতিছেন?
সে বলল,
- কি যে বলনা বৌ এ বুড়ো বয়সে।
বৌ টি হাসল শুধু। মশারি টা তোশকের নিচে গুঁজে দিয়ে স্বামীর বুকে হাত রেখে বলল,
- ওকেই ত বিয়ে করলি পারতেন?
সাইফ উদ্দিন খান কিছুটা রেগেই গেলেন,
- কি শুরু করলা বৌ ছোট মানুষের মত?
তখন তার স্ত্রী আর কিছু বলল না । কিছুক্ষন দুজনেই চুপচাপ। একটুপর তার স্ত্রী, তার হাত টি বুকের মাঝে নিয়ে শুধু বলল,
- তারে আপনে ভালপাইতেন সেটা আমি জানি। আপনে আমারেও ভালো পান সেটাও আমি জানি। কথা দিতেছি আপনারে কোন দিন এসব ব্যাপারে খোটা দেবনা।
সাইফ উদ্দিন খান এক হাতে স্ত্রীকে বুকে নিয়ে আর হাতে চোখ মুছলেন। এত সুখ তার তার কপালে ছিল সে কখনো বুঝতে পারেন নি। আজ তার মনে হচ্ছে সেই উত্তাল সাগরের ঢেউ এর মত সুখ গুলো যেন আছড়ে পরছে তার বুকে।

এ পর্যন্ত বলে সত্যিই সাইফ উদ্দিন খান অর্থাৎ আমি এখন যে জাহাজে আছি সে জাহাজের পাম্প ম্যান মানে আমাদের প্রিয় দাদা চোখ মুছলেন। আমি আর আতিক নামের এক ডেক ক্যাডেট হতভম্ব হয়ে শুনলাম এতক্ষন।
ভালোবাসার অনেক গল্প শুনেছি, ছিনেমা দেখেছি বাস্তবে ত হরহামেশা দেখছিই। কিন্তু বাংলাদেশের কোন এক পাড়া গাঁয়ে এমন মধুর জীবনের গল্প থাকতে পারে তা কে জানত?
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×